নিজস্ব প্রতিবেদক: বরগুনায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে পশুর হাট বসানোর ঘটনায় সৃষ্ট তীব্র প্রতিবাদের আগুন আরও ছড়িয়ে পড়েছে। এই ঘটনাকে বিচ্ছিন্ন কোনো বিষয় হিসেবে না দেখে, ২০২৪ সালের জুলাই ষড়যন্ত্রের পর থেকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ওপর চলা ধারাবাহিক আক্রমণের অংশ হিসেবেই দেখছেন মুক্তিযোদ্ধা ও দেশপ্রেমিক জনতা। তাদের অভিযোগ, ডক্টর মুহাম্মদ ইউনূসের মদদেই একটি পাকিস্তানপন্থী চক্র এই ঔদ্ধত্য দেখাচ্ছে।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে, মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের জনতার পক্ষ থেকে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ইউনূস এবং তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়েছে। কোনো প্রতীকী কর্মসূচি নয়, বরং আগামী ঈদুল আজহায় ঢাকার গ্রামীণ ব্যাংক ভবনে গরুর হাট বসানোর আনুষ্ঠানিক শপথ গ্রহণ করেছেন তারা।
সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত ওই সংবাদ সম্মেলনে জনতার পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন বীর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার হাসানুল হক। তিনি তার বক্তব্যে বলেন, “২০২৪ সালের জুলাই ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের পর থেকেই একটি মহল দেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ওপর পরিকল্পিতভাবে আঘাত হেনে চলেছে। শহীদ মিনারের অবমাননা তারই একটি নগ্ন বহিঃপ্রকাশ। যারা এই কাজ করছে, তারা বিচ্ছিন্ন কেউ নয়। এরা ডক্টর ইউনূসের মদদপুষ্ট এবং তার ছত্রছায়াতেই এসব ন্যক্কারজনক কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে।”
তিনি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ এনে বলেন, “ডক্টর ইউনূস ক্ষমতায় এসেই প্রথম আঘাত করেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনায়। তিনি কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী এ.টি.এম. আজহারুল ইসলামসহ বহু রাজাকার ও আল-বদর আর জঙ্গি নেতাদের জেল থেকে মুক্ত করে দিয়েছেন। রাজাকারদের দল জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে তার মাখামাখি সম্পর্ক গোপন কিছু নয়। রাজাকারদের নাতিপুতিরা ‘জাতীয় নাগরিক পার্টি’র নামে সংগঠিত হয়েছে ড. ইউনূসের প্রত্যক্ষ। দেশের ইতিহাস ও সার্বভৌমত্বকে মুছে ফেলার এই নীলনকশা আমরা মুক্তিযোদ্ধারা বেঁচে থাকতে বাস্তবায়ন হতে দেব না।”
সংবাদ সম্মেলনে তীব্র আবেগ ও ক্ষোভের সঙ্গে কমান্ডার হাসানুল হক বলেন, “আমরা অনেক প্রতিবাদ করেছি, বিবৃতি দিয়েছি। কিন্তু কোনো কিছুতেই এই অপশক্তির আস্ফালন কমছে না। তাই আজ আমরা কোনো প্রতীকী কর্মসূচিতে সীমাবদ্ধ থাকব না। আমরা এখানে উপস্থিত সকল মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের জনতা শপথ গ্রহণ করছি, যদি এই অপশক্তির আস্ফালন বন্ধ না হয় এবং ডক্টর ইউনূস ও তার সহযোগীরা জাতির কাছে ক্ষমা না চায়, তাহলে আগামী ঈদুল আজহায় আমরা সত্যি সত্যিই গ্রামীণ ব্যাংক ভবনে গরুর হাট স্থাপন করব।”
তিনি আরও যোগ করেন, “যে ভবনে বসে মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হয়, যে ভবন থেকে যুদ্ধাপরাধীদের মুক্ত করার ফরমান জারি হয়, সেই ভবন হবে কোরবানির পশু বিক্রির কেন্দ্র। এটাই হবে জাতির পক্ষ থেকে তাদের প্রতি আমাদের জবাব। আমরা দেখতে চাই, তাদের পশ্চিমা প্রভুরা সেদিন তাদের কীভাবে রক্ষা করে।”
সংবাদ সম্মেলনের এই ঘোষণাটি উপস্থিত মুক্তিযোদ্ধা ও সুধীজনের মধ্যে ব্যাপক আবেগ ও সমর্থন তৈরি করে। অনেকেই মনে করছেন, ক্রমাগত উসকানির মুখে এমন কঠোর অবস্থান নেওয়া ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই।
এই শপথের ঘোষণাটি দেশের চলমান রাজনৈতিক উত্তেজনাকে এক নতুন মাত্রা দিয়েছে এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও তার বিরোধী শক্তির মধ্যকার বিভেদকে আরও একবার প্রকাশ্যে এনেছে। দেশপ্রেমিক জনতা এখন তাকিয়ে থাকবে, মুক্তিযুদ্ধবিরোধী ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের গৃহীত এই শপথ কীভাবে বাস্তবায়িত হয়, তা দেখার জন্য।