তুমি কি আমাকে লাগাতে দিবা? নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের নতুন ফর্মুলা, তুষার-রিফাতের ‘লাগানো’ একাডেমিতে উপচেপড়া ভিড়।
নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের রাজনৈতিক দর্শনের ইতিহাসে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হলো। যুগ যুগ ধরে চলে আসা ক্ষমতার দ্বন্দ্ব, আদর্শিক বিভাজন আর রাজপথের আন্দোলনের গতানুগতিক ধারাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) এক নেতা এমন এক যুগান্তকারী তত্ত্বের জন্ম দিয়েছেন, যা শুনে প্লেটো, অ্যারিস্টটল থেকে শুরু করে কার্ল মার্ক্স পর্যন্ত সকলের আত্মা কেঁপে উঠেছে বলে জানা গেছে। ‘তুমি কি আমাকে লাগাতে দিবা?’ এই একটিমাত্র প্রশ্নকে কেন্দ্র করে যে সুবিশাল রাজনৈতিক ও দার্শনিক কাঠামো দাঁড় করানো সম্ভব, তা এতদিন ছিল সকলের কল্পনার বাইরে। এই যুগান্তকারী তত্ত্বের আবিষ্কর্তা, ‘নব্য রাজনীতির একিলিস’, ‘পরিপ্রেক্ষিতহীন আলাপচারিতার মহানায়ক’ এবং ‘জাতীয় রাজনীতিতে লাগানোর গুরুত্ব অনুধাবনকারী একমাত্র দার্শনিক’ জাতীয় নাগরিক পার্টির যুগ্ম লাগায়ক, আল্লামা সারোয়ার তুষার এক সংবাদ সম্মেলনে এই তত্ত্বকে অবিলম্বে জাতীয় শিক্ষাক্রমে অন্তর্ভুক্ত করার জোর দাবি জানিয়েছেন।
আজ রাজধানীর এক অভিজাত হোটেলে আয়োজিত ‘লাগানো বনাম না লাগানো: এক রাজনৈতিক পর্যক্ষেক্ষণ’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি উত্থাপন করা হয়। সম্মেলনে আল্লামা তুষারের পাশে উপবিষ্ট ছিলেন তার প্রথম ও প্রধান শিষ্য, ‘গণ-অভ্যুত্থানের স্পিরিট রক্ষাকারী’, ‘বুবিসে মেহেন্দি ডিজাইনের আন্তর্জাতিক ঠিকাদার’, ‘প্রেমিকাদের ন্যুড ভাইরাল করার হুমকিদাতা সংঘের প্রধান’ রিফাত রশিদ।
আল্লামা তুষার তার উদ্বোধনী ভাষণে বলেন, “আমার একটি নিরীহ প্রশ্নকে কেন্দ্র করে যে ঘৃণ্য রাজনৈতিক চক্রান্ত ও সোশ্যাল মিডিয়া ট্রায়াল চালানো হয়েছে, তা দেখে আমি মর্মাহত। কিন্তু আমি ভুলের ঊর্ধ্বে না। আমার ভুল ছিল, আমি এমন এক গভীর দার্শনিক প্রশ্ন এমন একজনের কাছে করেছিলাম, যার রাজনৈতিক বোধ সেই স্তরে পৌঁছায়নি। ‘তুমি কি আমাকে লাগাতে দিবা?’ এটা কোনো সাধারণ প্রশ্ন নয়, ভায়েরা আমার। এটা হলো গণতান্ত্রিক সম্মতির চূড়ান্ত পরীক্ষা। একজন নারী সহযোদ্ধা যখন রাজনীতিতে আসেন, তখন তার আস্থা, তার ত্যাগ এবং দলের প্রতি তার আনুগত্য কতটুকু, তা যাচাই করার এটিই একমাত্র নির্ভরযোগ্য উপায়।”
এ সময় উপস্থিত সাংবাদিকরা হতভম্ব হয়ে একে অপরের দিকে তাকাতে থাকলে আল্লামা তুষার পুনরায় হুঙ্কার দিয়ে বলেন, “আপনারা পরিপ্রেক্ষিত বোঝেন না। এই প্রশ্ন করার আগে আমাদের মধ্যে ৩২ মিনিটের ভিডিও কল হয়েছে, চ্যাটিং হয়েছে। একটা পরম্পরা আছে। এই প্রশ্নটি হলো সেই পরম্পরার ক্লাইম্যাক্স। এটা অনেকটা কোয়ান্টাম ফিজিক্সের মতো। যারা বোঝে না, তাদের কাছে এটা অর্থহীন মনে হবে। কিন্তু এর গভীরে রয়েছে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ, পারস্পরিক আস্থা এবং বিপ্লবী চেতনা। যে নারী এই প্রশ্নের উত্তরে ‘হ্যাঁ’ বলতে পারেন, তিনিই প্রকৃত বিপ্লবী। তিনিই দলের জন্য জীবন দিতে পারেন। আর যিনি এই প্রশ্ন শুনে কল রেকর্ড করে ফাঁস করে দেন, তিনি হলেন এজেন্সির দালাল, তিনি হলেন প্রতিবিপ্লবী।”
এসময় আল্লামা সারোয়ার তুষার ‘জ্বলন্ত আগুনের উপর দিয়ে হেঁটে আসা চরিত্র’, ‘২৬ জন কাজের লোকের বাড়ি ছাড়া নারী’ এবং ‘সুফি চেহারার শ্বশুরের বিভৎস রূপ উন্মোচনকারী’ নীলা ইস্রাফিলের কথা উল্লেখ করে আফসোস করে বলেন, “উনার মতো একজন নারী, যিনি এত লড়াই করেছেন, তিনি আমার এই সহজ রাজনৈতিক পরীক্ষাটিই বুঝলেন না। তিনি যদি সেদিন ‘হ্যাঁ’ বলে দিতেন, তাহলে আজ এনসিপির রাজনৈতিক ইতিহাস অন্যভাবে লেখা হতো। তিনি হতেন দলের নারী শাখার অবিসংবাদিত নেত্রী। কিন্তু তিনি সেই সুযোগ হেলায় হারিয়েছেন।”
আল্লামা তুষারের বক্তব্যের পর মাইক হাতে তুলে নেন তার সুযোগ্য শিষ্য, আল্লামা রিফাত রশিদ। তিনি তার গুরুর তত্ত্বকে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে গিয়ে বলেন, “গুরুজি যা বলেছেন, তা ধ্রুব সত্য। এই ‘লাগানো’ তত্ত্বটি সমগ্র গণ-অভ্যুত্থানের স্পিরিট। যারা এই তত্ত্বের বিরোধিতা করছে, তারা আসলে গণ-অভ্যুত্থানের চেতনাকেই আঘাত করতে চায়। তারা চায় না যে আমারা বিজয়ী হই।”
তিনি নিজের অভিজ্ঞতা থেকে উদাহরণ টেনে বলেন, “আমার বিরুদ্ধেও একই ষড়যন্ত্র হয়েছে। আমি যখন আমার এক নারী সহযোদ্ধার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে ছিলাম, তখন আমাদের বোঝাপড়া ছিল সর্বোচ্চ পর্যায়ে। আমাদের মধ্যে চুক্তি ছিল, যদি আমাদের সম্পর্ক নিয়ে কোনো সমস্যা হয় এবং সে যদি আমাকে ‘এক্সপোজ’ করে জুলাই আন্দোলনের ক্ষতি করতে চায়, তাহলে আমি প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে তার ব্যক্তিগত ছবি ভাইরাল করে দেব। এটা কোনো হুমকি নয়, এটা হলো ‘মিউচুয়াল অ্যাসিওরড ডেস্ট্রাকশন’ পলিসির দেশীয় সংস্করণ। এর মাধ্যমে আমরা একে অপরের প্রতি সর্বোচ্চ আস্থা স্থাপন করেছিলাম। কিন্তু স্বৈরাচারের দোসররা এই গভীর রাজনৈতিক দর্শনকে ‘ন্যুড ভাইরালের হুমকি’ বলে প্রচার করে আমার চরিত্রহনন করেছে। আসলে, ‘লাগানো’ এবং ‘প্রতিরোধমূলক ন্যুড ভাইরাল’ এই দুটি বিষয় অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। একটি সম্মতি আদায়ের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া, অন্যটি সেই সম্মতি রক্ষার বিপ্লবী রক্ষাকবচ।”
রিফাতের এই বক্তব্যে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত দর্শকদের মধ্যে তুমুল হাততালির ঝড় ওঠে। এই পর্যায়ে সারোয়ার তুষার এবং রিফাত রশিদ যৌথভাবে ‘জাতীয় লাগানি তত্ত্ব গবেষণা ও প্রশিক্ষণ একাডেমী’ প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেন। এই একাডেমিতে নিম্নলিখিত কোর্সগুলো পড়ানো হবে বলে জানানো হয়:
১. এনসিপি-১০১ (লাগানোর তত্ত্ব ও প্রয়োগ): এই কোর্সে শেখানো হবে কীভাবে, কখন এবং কোন পরিস্থিতিতে একজন নারী সহযোদ্ধাকে ‘লাগানোর’ প্রস্তাব দিতে হয়। পরিপ্রেক্ষিত নির্মাণ ও সম্মতি আদায়ের বিপ্লবী কৌশল এই কোর্সের মূল আলোচ্য বিষয়।
২. এনসিপি-১০২ (প্রতিরক্ষামূলক ভাইরালকরণ): এই কোর্সে হাতে-কলমে শেখানো হবে কীভাবে নারী সহযোদ্ধার ব্যক্তিগত ছবি ও তথ্য সংগ্রহ করে তা আন্দোলনের স্পিরিট রক্ষার কাজে ব্যবহার করা যায়। এখানে ‘হুমকি’ ও ‘প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা’র মধ্যকার দার্শনিক পার্থক্য তুলে ধরা হবে।
৩. এনসিপি-১০৩ (ফেসবুক আদালত ও সারভাইভাল স্ট্র্যাটেজি): কীভাবে সোশ্যাল মিডিয়া ট্রায়ালের শিকার হলে নিজেকে ‘রাজনৈতিক চক্রান্তের শিকার’ হিসেবে উপস্থাপন করতে হয় এবং ‘ভুলত্রুটির ঊর্ধ্বে নই’ জাতীয় পোস্ট দিয়ে সহানুভূতি আদায় করতে হয়, তার ওপর বিশেষ কর্মশালা।
৪. এনসিপি-১০৪ (আলফা মেল এভেইলিবিলিটি স্টাডিজ): রাজনৈতিক অঙ্গনের নারীদের কেন ‘এভেইলএবল’ মনে করতে হবে এবং নিজের যোগ্যতার প্রমাণ দিতে ‘আলফা মেলদের’ ফেভারিট হওয়ার গুরুত্ব কতখানি, তার ওপর বিশেষ নৃতাত্ত্বিক পাঠ।
সংবাদ সম্মেলনের শেষে এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, “আপনাদের দলের আহ্বায়ক জনাব নাহিদ ইসলাম কি এই তত্ত্ব সমর্থন করেন?”
জবাবে আল্লামা তুষার মুচকি হেসে বলেন, “নাহিদ ভাই তো আমাদের মুরব্বি। তিনি শৃঙ্খলা কমিটি নিয়ে পেরেশান আছেন। তবে আমরা আশা করি, তিনি শীঘ্রই এই তত্ত্বের গভীরতা অনুধাবন করতে পারবেন। এই তত্ত্ব ছাড়া নতুন বাংলাদেশে নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন অসম্ভব।”
আল্লামা রিফাত রশিদ শেষে যোগ করেন, “আমরা চাই, দেশের প্রতিটি নারী যেন এই তত্ত্বে দীক্ষিত হয়। তারা যেন নির্দ্বিধায় বলতে পারে, ‘হ্যাঁ, কমরেড, লাগাতে দিবো’। তবেই প্রতিষ্ঠিত হবে নতুন ধারার গণতন্ত্র। আর যারা এর বিরোধিতা করবে, তাদের সকল ষড়যন্ত্র আমরা ন্যুড দিয়ে… থুক্কু, রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করবো।”
এই যুগান্তকারী ঘোষণার পর দেশের সুশীল সমাজ ও নারী অধিকার কর্মীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেলেও, জাতীয় নাগরিক পার্টির তরুণ রাজনীতিবিদদের দুই এক জন বাদে প্রায় সবাই এই তত্ত্বকে স্বাগত জানিয়েছে বলে জানা গেছে। তাদের মতে, এর মাধ্যমে রাজনীতিতে নারী-পুরুষের সম্পর্কের এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হলো, যা পশ্চিমা লিবারেলিজমকেও হার মানাবে।