জনতার ‘জুলাই চুদি’ গালির কারণ খুঁজে না পেয়ে, ‘স্বৈরাচারের ষড়যন্ত্র’ দেখছেন উপদেষ্টারা, জুলাই স্মৃতি উদ্যাপন উৎসবের কোটি টাকা জলে।
নিজস্ব প্রতিবেদক: ব্যাপক উৎসাহ, উদ্দীপনা এবং মাসব্যাপী কর্মসূচির ঝাঁপি খুলে আজ সকালে যাত্রা শুরু করেছে অন্তর্বর্তী সরকারের বহুল প্রতীক্ষিত ‘জুলাই স্মৃতি উদ্যাপন অনুষ্ঠানমালা’। কিন্তু দিনের আলো ফুরানোর আগেই সেই উৎসাহের বেলুন ফুটো হয়ে চুপসে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। সরকারের দেওয়া ‘জুলাই চেতনা’র ইনজেকশন গ্রহণ না করে আমজনতা নিজেদের উদ্ভাবিত এক সম্পূর্ণ ভিন্ন চেতনার প্রোফাইল পিকচার লাগিয়ে সোশ্যাল মিডিয়া সয়লাব করে ফেলায় প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে রীতিমতো শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
মঙ্গলবার (১ জুলাই) সকালে, গ্রামীণ ব্যাংকের বিশ্ববিখ্যাত কিস্তিবাজ, জিরোতত্ত্বের জনক ও মাইনাস সূত্রের ফেরিওয়ালা, গণতন্ত্রের স্নাইপার ও সংস্কারের কসমেটিক সার্জন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ডক্টর মুহম্মদ ইউনূস যখন ‘জুলাই ক্যালেন্ডার’-এর মোড়ক উন্মোচন করছিলেন, তখনও পরিস্থিতি সহনীয় পর্যায়ে ছিল। কিন্তু বাদ যোহর থেকে পরিস্থিতি অন্যদিকে মোড় নিতে শুরু করে। সরকারের পক্ষ থেকে শহীদদের আত্মার শান্তির জন্য দোয়া-প্রার্থনার কর্মসূচি চললেও, ফেসবুক, এক্স (সাবেক টুইটার) এবং ইনস্টাগ্রামের দেয়ালে দেয়ালে জনগণ একযোগে ‘জুলাই চুদি’ নামক এক অভিনব ক্যাম্পেইনে ঝাঁপিয়ে পড়ে। কোটি কোটি প্রোফাইল পিকচারে শোভা পেতে থাকে এই দুই শব্দের কালজয়ী স্লোগান।
জুলাই স্মৃতি উদ্যাপনের মাসব্যাপী এই মহাযজ্ঞের উদ্বোধন করে ড. ইউনূস তাঁর ভাষণে বলেন, “জুলাই ছিল ফ্যাসিবাদ বিলোপ করে নতুন বাংলাদেশ গড়ার ডাক। সেই ডাকে সাড়া দিয়ে ছাত্র-জনতা যে ইতিহাস গড়েছে, তা আমরা প্রতি বছর স্মরণ করব। এই জুলাই মাস হবে গণজাগরণ ও ঐক্যের মাস।” তিনি যখন এই ঐক্যের ডাক দিচ্ছিলেন, ঠিক তখনই ফেসবুক-মাতার সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী প্রায় এক কোটি তেত্রিশ লক্ষ আট হাজার চারশ বিশ জন নাগরিক তাদের প্রোফাইল পিকচার বদলে ‘জুলাই চুদি’ লিখে ঐক্য প্রকাশ করে ফেলেছেন।
পরিস্থিতির আকস্মিকতায় হতভম্ব হয়ে পড়েন অনুষ্ঠানে উপস্থিত সরকারের অন্যান্য উপদেষ্টাগণ। এ সময় কোটা আন্দোলনের ফেসবুক লাইভ তারকা ও নবগঠিত রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামকে ঘন ঘন জলপান করতে দেখা যায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নিরাপত্তা কর্মী জানান, নাহিদ ফিসফিস করে পাশের উপদেষ্টাকে বলছিলেন, “ভাই, পাবলিক এইটা কী স্লোগান দিচ্ছে? ‘ জুলাই চুদি’র মানে কী? এটা কি জুলাই চেতনার কোনো নতুন রূপ?”
বিকাল নাগাদ বিষয়টি নিয়ে জরুরি বৈঠকে বসেন উপদেষ্টামণ্ডলী। বৈঠকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক, জুলাই ষড়যন্ত্রের অন্যতম প্রধান তাত্ত্বিক, পশ্চিমা প্রেসক্রিপশনের গণতন্ত্রের মানসপুত্র, ছাত্রী লাগানো বিষয়ে বিশেষ পারদর্শী প্রেমিক পুরুষ এবং বিশ্ববিখ্যাত কারড্যান্সার, আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন। টেবিল চাপড়ে তিনি বলেন, “আমি আগেই বলেছিলাম, জনগণকে বেশি লাই দিলে মাথায় চড়ে বসে। জুলাই মাসটাকে নিয়ে এমন অশালীন কথা লিখবে? এর পেছনে নিশ্চয়ই পূর্ববর্তী স্বৈরাচারদের হাত রয়েছে। তারা জনগণের সরলতার সুযোগ নিয়ে আমাদের মহৎ উদ্যোগকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চাইছে।”
তাঁর এই বক্তব্যে সায় দিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেন, “আসিফ সাহেব ঠিকই বলেছেন। আমি আমার দীর্ঘ আইন পেশায় বহু ষড়যন্ত্র দেখেছি। এটাও একটি গভীর ষড়যন্ত্র। আমি প্রস্তাব করছি, অবিলম্বে ‘আগস্ট নিরাপত্তা আইন’-এর আওতায় ‘জুলাই চুদি’ স্লোগানদাতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক।”
তবে এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করেন ড. ইউনূস। কাঁদো কাঁদো হয়ে তিনি বলেন, “না, না, শক্তিপ্রয়োগ নয়। আমাদের বুঝতে হবে, জনগণ কেন এমন করছে। হয়তো জুলাই স্মৃতি উদ্যাপন এর মাসব্যাপী উৎসব তাদের ভালো লাগেনি। আচ্ছা, আমরা কি তাদের জন্য কনসার্টের আয়োজন করতে পারি? যেখানে জেমস, মাইলস আর ওয়ারফেজ গান গাইবে? তরুণরা তো কনসার্ট ভালোবাসে।”
এ সময় এক জুনিয়র উপদেষ্টা বলেন, “স্যার, কনসার্ট পরে হবে, আগে গণ-স্বাক্ষর কর্মসূচি নিয়ে ভাবেন। ‘জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই’ ব্যানারে স্বাক্ষর সংগ্রহের জন্য যে খাতা খোলা হয়েছিল, সেখানে হাজার হাজার মানুষ বিচার চাওয়ার বদলে বড় বড় করে ‘জুলাই চুদি’ লিখে দিয়ে গেছে। একজন তো আরও একধাপ এগিয়ে লিখেছেন, ‘আগে জুলাইকে চুদি, তারপর বিচার’।”
এই কথা শোনার পর ড. ইউনূস তাঁর চেয়ারে ঢলে পড়েন। তাঁর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ছুটে এসে তাঁর চোখেমুখে জলের ঝাপটা দেন। কিছুক্ষণ পর জ্ঞান ফিরলে তিনি বাষ্পরুদ্ধ কণ্ঠে বলেন, “ষোলো বছর পর আমরা একটা অভ্যুত্থান করলাম। ভেবেছিলাম, মানুষ আমাদের মাথায় তুলে নাচবে। তারা আমাদের স্বপ্নের কথা শুনবে। কিন্তু তারা তো মাসটাকেই গালি দিচ্ছে! আমার কিচ্ছু ভালো লাগছে না।”
এদিকে, এই পরিস্থিতি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে হাসির রোল। সুপরিচিত অনলাইন এক্টিভিস্ট ও ডিজিটাল ভাঁড় সোলাইমান সুখন তার ভেরিফায়েড পেজ থেকে লিখেছেন, “সরকার চেয়েছে ‘জুলাই চেতনা’। জনতা দিয়েছে ‘জুলাই বেদনা’র একটু ভিন্ন ভার্সন। দোষটা কার?”
অপরদিকে, সরকারের এই উদযাপনকে ভাঁওতাবাজি আখ্যা দিয়ে এক সংবাদ সম্মেলন করেছেন তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির প্রাণভোমরা, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির স্বঘোষিত দিকপাল, আন্দোলনের মৌসুমী আমীর’ খ্যাত অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ ওরফে কমরেড আনু। তিনি বলেন, “সরকার বদল হয়েছে, কিন্তু ব্যবস্থার বদল হয়নি। মানুষ ভেবেছিল, জুলাইয়ের পর তাদের জীবনের দুঃখ ঘুচবে। কিন্তু নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম তো কমেইনি, বরং বেড়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পাল্টে ‘আগস্ট নিরাপত্তা আইন’ হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে মানুষ যখন দেখছে যে, সরকার তাদের মৌলিক সমস্যার সমাধান না করে হাজার কোটি টাকা খরচ করে উৎসব করছে, তখন তারা তো এমন প্রতিক্রিয়া দেখাবেই। ‘জুলাই চুদি’ কোনো গালি নয়, এটি একটি প্রতীকী প্রতিবাদ। এটি রাষ্ট্রযন্ত্রের গালে জনতার চপেটাঘাত।”
সর্বশেষ প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। ‘জুলাই ক্যালেন্ডার’-এর পরবর্তী কর্মসূচিগুলো স্থগিত করা হবে কি না, তা নিয়ে গভীর রাত পর্যন্ত বৈঠক চলার কথা রয়েছে। আপাতত, সরকারের ‘জুলাই চেতনা’ জনতার ‘জুলাই চুদি’ ক্যাম্পেইনের নিচে চাপা পড়ে খাবি খাচ্ছে।