জামায়াত-এনসিপির পিরিতির পালে ভাঙনের হাওয়া: ছায়া মওদুদীবাদের অভিযোগ

জামায়াত-এনসিপির পিরিতির পালে ভাঙনের হাওয়া: ছায়া মওদুদীবাদের অভিযোগে মহব্বতের তালাক! Jamaat-NCP's Political Romance Hits the Rocks: Divorce Looms Over 'Shadow Maududi-ism' Allegations! জামায়াত-এনসিপির পিরিতির পালে ভাঙনের হাওয়া: ছায়া মওদুদীবাদের অভিযোগে মহব্বতের তালাক! Jamaat-NCP's Political Romance Hits the Rocks: Divorce Looms Over 'Shadow Maududi-ism' Allegations!

পুরাতন পাকিস্তানীর সাথে নব্য পাকিস্তানীর সংসার ভাঙার উপক্রম, নেপথ্যে ‘ছায়া মওদুদী’ আতঙ্ক!

বিশেষ প্রতিবেদক, দৈনিক কার্টুনুস: রাজনীতির আঁকাবাঁকা প্রেমময় গলিতে এক শোকাবহ বিচ্ছেদের সুর ধ্বনিত হইতেছে। যে প্রেম কাহিনীকে আদর্শ করিয়া দেশের অগণিত ছাগু-অনুরাগী জুটি বাঁধিবার স্বপ্ন দেখিতেছিল, সেই অমর প্রেম কাহিনীতেই দেখা দিয়াছে ভাঙনের কালো মেঘ। পুরাতন পাকিস্তানপন্থী দল জামায়াতে ইসলামীর সহিত নব্য পাকিস্তানপন্থী ও ছাত্র আন্দোলনের ফসল জাতীয় নাগরিক পার্টি ওরফে এনসিপির রাজনৈতিক নিকাহ্ প্রায় চূড়ান্ত হইয়াছিল। কিন্তু ‘কবুল’ বলিবার পূর্বেই সেই সংসারে লাগিল আগুন। ‘আপাতত একসাথে পথ চলছি না’ বলিয়া জামায়াতের হাতে তালাকনামা ধরাইয়া দিয়াছে এনসিপি।

এই আকস্মিক বিচ্ছেদের খবরে রাজনৈতিক পাড়ায় চলিতেছে তুমুল শোক ও গুঞ্জন। সোমবার ইসলামী আন্দোলন, খেলাফত মজলিসসহ স্বগোত্রীয় চারিটি দলের সহিত জামায়াতে ইসলামী যুগপৎ আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করিলেও সেই মোবারক মঞ্চে দেখা মেলে নাই এনসিপির কচি মুখ। যে এনসিপি বছরখানেক ধরিয়া জামায়াতের আঁচলের তলে থাকিয়া রাজনৈতিক দুগ্ধপান করিতেছিল, সেই এনসিপি কেন আজ এমন আচরণ করিল, তাহা লইয়া হতাশায় নিমজ্জিত হইয়াছেন বৃহত্তর জামায়াতের নীতিনির্ধারকেরা।

ঘটনার নেপথ্যে অনুসন্ধান করিতে গিয়া জানা যায়, এই বিচ্ছেদের কারণ এক বা দুইটি নহে, বরং বহুবিধ। এনসিপির অন্দরে কান পাতিলে শোনা যাইতেছে, জামায়াতের সহিত জোট বাঁধা লইয়া দলটির বামপন্থী ও ইসলামপন্থী বলয়ের মধ্যে তুমুল মারামারি চলিতেছে। ডাকসু ও জাকসু নির্বাচনে জামায়াতের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরের নিকট এনসিপির ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ ওরফে বাগছাসের শোচনীয় পরাজয়ের পর এই অভ্যন্তরীণ কোন্দল আগ্নেয়গিরির রূপ ধারণ করিয়াছে।

এহেন পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের তথ্য উপদেষ্টা, ফেসবুকের দেয়ালে বিপ্লবী স্ট্যাটাস নিক্ষেপের স্বঘোষিত জনক এবং ছাত্র আন্দোলনের ডিজিটাল মুখচ্ছবি জনাব মাহফুজ আলম তাহার মুখপুস্তিকায় এক রহস্যময় বোমা নিক্ষেপ করিয়াছেন। তিনি লিখিয়াছেন, “বাংলাদেশে রাজনৈতিক অঙ্গনে আরেকটি ‘ছায়া মওদুদীবাদী’ দল প্রয়োজন নেই”। যদিও তিনি কোনো দলের নাম উল্লেখ করেন নাই, তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলিতেছেন, জামায়াতের সহিত এনসিপির মাখামাখি দেখিয়া এবং ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ধরা খাইয়া তিনি এই ডিজিটাল জেহাদ ঘোষণা করিয়াছেন। তাহার স্ট্যাটাসখানা দেখিয়া জামায়াতের নেতারা বলিয়াছেন, ‘যারে দেখতে নারি, তার চলন বাঁকা। আমরা হইলাম আসল মওদুদীবাদী, ছায়ার ব্যবসা আমরা করি না।’

এই বিষয়ে এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক, দুই নৌকায় পা রেখে চলার অলিম্পিক গোল্ড মেডালিস্ট এবং জামায়াতের সহিত লুকোচুরি খেলার জাতীয় প্রশিক্ষক জনাব আরিফুল ইসলাম আদীবের সহিত যোগাযোগ করা হইলে তিনি একগাল হাসিয়া বলেন, ‘আরে না না, কিসের বিচ্ছেদ? ইহাকে বিচ্ছেদ বলা যাইবে না। ইহা একটি কৌশলগত দূরত্ব। জামায়াতের সহিত আমাদের কিছু সংস্কার প্রস্তাবে মতের অমিল রহিয়াছে। উনারা চাহেন সংসদীয় নিম্নকক্ষ ও উচ্চকক্ষ উভয় স্থানেই পিআর পদ্ধতি। আর আমরা চাহিতেছি শুধু উচ্চকক্ষে পিআর। বুঝিলেন না, উনারা চাহেন ফুল প্যাকেজ আর আমরা চাহিতেছি শুধু টপ-আপ। এই সামান্য টপ-আপের গরমিলের জন্য আপাতত যুগপৎ আন্দোলনে যাইতেছি না। কিন্তু আমাদের মহব্বত আগের মতোই অটুট আছে।’ তিনি আরও যোগ করেন, ‘জামায়াতের সহিত এখন আমাদের দূরত্ব বা সখ্যতা কোনটিই নেই। ইহা অনেকটা ‘ইন এ রিলেশনশিপ’ এবং ‘ইটস কমপ্লিকেটেড’ স্ট্যাটাসের মাঝামাঝি ঝুলিয়া আছে।’

জনাব আদীবের এই ‘কৌশলগত’ ব্যাখ্যার পর জামায়াতে ইসলামীর সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল, যেকোনো পরিস্থিতিতে ‘সব ঠিক হ্যায়’ বলার জীবন্ত কিংবদন্তী এবং এনসিপির দুঃখে কাতর কুমিরের অশ্রু বিসর্জনকারী জনাব এহসানুল মাহবুব জুবায়েরের মন্তব্য জানিতে চাওয়া হয়। তিনি এক দীর্ঘশ্বাস ফেলিয়া বলেন, ‘এনসিপি আমাদের ছোট ভাইয়ের মতো। ছোট ভাইরা মাঝেমধ্যে রাগ করিয়া আলাদা থাকতে চায়। তাই বলিয়া কি সম্পর্ক শেষ হইয়া যায়? আমাদের সহিত উহাদের অনেক দাবীর মিল রহিয়াছে। আজ আমাদের সহিত কর্মসূচিতে নাই, কাল হয়তো ফুল ও মিষ্টি লইয়া আমাদের দ্বারে হাজির হইবে। আমরা সেই শুভক্ষণের অপেক্ষায় পথ চাহিয়া রহিলাম।’ তিনি আরও বলেন, ‘উহারা তারুণ্যের জোশে হয়তো কিছু ভুল সিদ্ধান্ত লইতেছে, কিন্তু আমরা অভিভাবক হিসেবে উহাদের ক্ষমা করিয়া দিয়াছি। ভোটের সময় ঘনাইয়া আসিলে উহারা ঠিকই আমাদের কোলে ফিরিয়া আসিবে।’

এদিকে এনসিপির এক নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিনিয়র নেতা, যিনি দলের বামপন্থী বলয়ের গোপন নাটের গুরু বলিয়া পরিচিত, তিনি কার্টুনুস ডেইলিকে বলেন, ‘দেখুন ভাই, জামায়াতের সহিত নিকাহ্ বসিয়া যদি এইবারই ক্ষমতার মসনদে বসা যাইত, তাইলে আমরা সানন্দে কবুল বলিতাম। কিন্তু জামায়াতের সহিত ভোট করিয়া যদি বিরোধী দলেই বসিতে হয়, তবে দীর্ঘমেয়াদে আমাদের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের বারোটা বাজিবে। তখন লোকে আমাদের ‘বি-টিম’ বা ‘ছোট জামায়াত’ বলিয়া গালি দিবে। তাই আমরা ভাবিয়া দেখিলাম, পরের ঘাড়ে বন্দুক রাখিয়া শিকার করিবার চাইতে আপাতত নিজের বন্দুক নিজেই পরিষ্কার করা উত্তম।’

এই পুরো পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করিয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, রাজনীতির মাঠে ‘ইহা তো হইবারই ছিল’ তত্ত্বের উদ্ভাবক এবং স্বার্থের দ্বন্দ্বে বিচ্ছেদ ঘটিলে অবাক না হওয়ার পরামর্শ প্রদানকারী বিশেষজ্ঞ ড. রাশেদা রওনক খান বলেন, ‘লক্ষ্যের জায়গা এক থাকলেও লক্ষ্য অর্জনের পর যখন স্বার্থের বিষয়গুলো সামনে আসে, তখন স্বাভাবিকভাবেই দূরত্ব তৈরি হয়। এনসিপি একটি নতুন দল, বিভিন্ন মতের তরুণরা এখানে আসিয়াছে। মতাদর্শগত ভিন্নতার কারণে অনেকেই হয়তো চাহিতেছে না এখনই কোনো পুরাতন দলের সহিত জোটবদ্ধ হইয়া নিজেদের স্বতন্ত্র পরিচয় হারাইতে। আপাতদৃষ্টিতে ইহাকে টানাপোড়েন মনে হইলেও, ভোটের রাজনীতি বড়ই বিচিত্র। আজ যাহারা ‘তালাক’ দিতেছে, কাল তাহারাই আবার ‘রুহ আফজা’ লইয়া ইফতার পার্টিতে হাজির হইতে পারে।’

আপাতত, জামায়াত-এনসিপির এই রাজনৈতিক বিচ্ছেদের পর উভয় পক্ষই নিজ নিজ শক্তি প্রদর্শনে ব্যস্ত। জামায়াত তার পুরাতন সঙ্গীদের লইয়া আন্দোলনের পথে নামিয়াছে, আর এনসিপি ‘একলা চলো রে’ নীতিতে বিশ্বাসী হইয়া নিজেদের রাজনৈতিক কর্মসূচি লইয়া মাঠে নামিবার প্রস্তুতি লইতেছে। তবে ভোটের বাজার যখন পুরোদমে গরম হইবে, তখন এই পুরাতন ও নব্য পাকিস্তানপন্থীর ভাঙা সংসার আবার জোড়া লাগে কিনা, তাহা দেখিবার জন্য দেশবাসী অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করিতেছে।

#, #, #, #, #, #, #, #, #, #, #, #, #, #, #, #, #, #

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *