বিশেষ প্রতিবেদক, দৈনিক কার্টুনুস: অবৈধ ক্ষমতাধারণকারী অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের জ্ঞান ও প্রজ্ঞার বাতিঘর, পরম শ্রদ্ধেয় প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের পবিত্র কর্ণকুহরে যেন কোনো প্রকার জাগতিক কোলাহল প্রবেশ করিতে না পারে, সেই মহৎ উদ্দেশ্য সাধনের নিমিত্তে গতকাল রাজধানী ঢাকার শাহবাগ চত্বরে এক বিশেষ স্বাস্থ্য শিবিরের আয়োজন করা হয়। দেশের ভবিষ্যৎ কর্ণধার, প্রকৌশলবিদ্যার কচি শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক দৃঢ়তা বৃদ্ধির লক্ষ্যে আয়োজিত এই শিবিরে প্রধান পথ্য হিসেবে ‘ভিটামিন-এল’ (লাঠি) এবং ‘সুবাসিত জলীয় বাষ্প’ (কাঁদানে গ্যাস) উদার হস্তে পরিবেশন করা হয়।
ঘটনার সূত্রপাত কতিপয় ‘নাদান’ শিক্ষার্থীর কিছু ‘আজগুবি’ দাবিদাওয়া লইয়া। তাহারা নাকি কী সব গ্রেড, কোটা আর চাকরির অধিকার লইয়া কয়েক দিন ধরিয়া রাষ্ট্রের মূল্যবান কর্মঘণ্টা নষ্ট করিতেছিল। তাহাদের এহেন বালখিল্যতায় দেশের উন্নয়ন অভিযাত্রা যখন পা পিছলাইয়া পড়িয়া যাইবার উপক্রম, তখনই স্বয়ং উপদেষ্টা মহোদয় নিদ্রা হইতে জাগ্রত হইয়াছেন বলিয়া তাঁহার দপ্তর সূত্রে গুঞ্জন শোনা যায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চাপরাশি জানান, উপদেষ্টা মহোদয় নাকি বলিয়াছেন, ‘আমার শাসনামলে কোনো প্রকার আন্দোলন-ফান্দোলন চলিবে না। সব দাবিদাওয়া আগে আমার নিকট পেশ করিতে হইবে। আমি ঘুমাইয়া ভাবিয়া দেখিব। ভাবনার পর যদি আবারও ঘুমাইয়া পড়ি, বুঝিতে হইবে দাবি গুরুত্বহীন।’
কিন্তু দেশের ভবিষ্যৎ স্থপতিরা সেই গভীর দর্শন উপলব্ধি করিতে ব্যর্থ হইয়া গতকাল যমুনা অভিমুখে যাত্রা করিবার স্পর্ধা প্রদর্শন করে। তাহাদের উদ্দেশ্য ছিল নিদ্রামগ্ন উপদেষ্টাকে জাগাইয়া দিয়া নিজেদের যৌক্তিক দাবিদাওয়া পেশ করা। কিন্তু তাহারা ইহা অনুধাবন করিতে পারে নাই যে, উপদেষ্টার নিদ্রাভঙ্গ করা আর মৌচাকে ঢিল ছোঁড়া একই কথা। ইহাতে উপদেষ্টার দিবাশান্তি বিঘ্নিত হইবার সমূহ সম্ভাবনা দেখা দেওয়ায়, শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় সদা তৎপর পেটোয়া বাহিনী আর কালবিলম্ব করে নাই।
বেলা দেড়টার দিকে শিক্ষার্থীরা যখন উন্নত মস্তকে ‘আমাদের দাবি মানতে হবে’ জাতীয় অবৈজ্ঞানিক স্লোগান দিতে দিতে অগ্রসর হইতেছিল, ঠিক তখনই রাজপথ কাঁপাইয়া হাজির হয় উর্দি পরিহিত স্বাস্থ্যকর্মীগণ। শিক্ষার্থীদের হাড্ডিসার দেহ দেখিয়া তাঁহাদের মায়া জন্মে। ‘আহা, এই দুর্বল শরীর লইয়া ইহারা দেশের ভার বহন করিবে কী রূপে?’ – এই ভাবনায় উদ্বেলিত হইয়া তাঁহারা শিক্ষার্থীদের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিতকল্পে দ্রুত ‘ভিটামিন-এল’ প্রয়োগ শুরু করেন। বাঁশের লাঠির বাড়ি খাইয়া শিক্ষার্থীদের শরীর যখন চাঙ্গা হইয়া উঠিতেছিল, তখন তাহাদের ফুসফুসের কার্যকারিতা পরীক্ষার জন্য নিক্ষেপ করা হয় নয়নাভিরাম কাঁদানে গ্যাস। সঙ্গে ছিল শ্রবণশক্তি পরীক্ষার জন্য ‘সাউন্ড গ্রেনেড’ নামক শ্রুতিমধুর বাদ্য।
পুলিশের এই মহতী উদ্যোগে প্রায় অর্ধশত শিক্ষার্থী প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ করিয়া রাস্তায় গড়াগড়ি যাইতে থাকে। কেহ কেহ আনন্দে এতই আত্মহারা হইয়া পড়ে যে, তাহাদের চক্ষু দিয়া ‘সরিষার ফুল’ নির্গত হইতে দেখা যায়।
এই বিষয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার কার্যালয়ের এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা, যিনি উপদেষ্টার চায়ে চিনির মাত্রা ঠিক রাখেন, তিনি এক বিবৃতিতে বলেন, ‘ছাত্রছাত্রীরা দেশের ভবিষ্যৎ। তাহাদের শরীর লৌহের ন্যায় শক্ত হওয়া প্রয়োজন। উন্নয়নের মহাসড়কে হাঁটিতে গেলে পায়ের তলায় জোর লাগে। সেই জোর উৎপাদনের জন্যই এই বিশেষ শরীরচর্চার আয়োজন। ইহা লইয়া ভুল বুঝাবুঝির কোনো অবকাশ নাই।’
এদিকে, দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ বুয়েট এই ঘটনায় ‘তীব্র নিন্দা’ জানাইয়া এক বিবৃতি প্রদান করিয়াছে। বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমরা শিক্ষার্থীদের ওপর এই জোরপূর্বক স্বাস্থ্যসেবার নিন্দা জানাই। আমাদের মূল উদ্বেগ অন্যখানে। প্রকৌশল শিক্ষার্থীরা দেশের মূল্যবান সম্পদ। তাহাদের অস্থিসমূহ ভবিষ্যৎ গবেষণার উপকরণ। এইভাবে এলোপাতাড়ি ‘ভিটামিন-এল’ প্রয়োগের ফলে যদি কোনো শিক্ষার্থীর মূল্যবান কশেরুকা বা ফিমারে চিরস্থায়ী দাগ পড়িয়া যায়, তাহার দায় কে লইবে? আমরা আশা করি, ভবিষ্যতে এই প্রকার স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের পূর্বে সরকার যেন অন্তত শিক্ষার্থীদের এক্স-রে করিয়া তাহাদের হাড়ের গঠন দেখিয়া লয়।’
#Cartunus Daily, #অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, #কার্টুনুস ডেইলি, #ছাত্র আন্দোলন, #ছাত্র-পুলিশ সংঘর্ষ, #ড. ইউনূস, #ডক্টর মুহাম্মদ ইউনূস, #ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার, #দৈনিক কার্টুনুস, #পুলিশি হামলা, #প্রকৌশল শিক্ষার্থী, #প্রকৌশলীদের দাবি, #বিএসসি ইঞ্জিনিয়ার, #বুয়েট, #মানবাধিকার লঙ্ঘন, #যমুনা অভিমুখে যাত্রা, #লাঠিচার্জ, #শাহবাগ অবরোধ, #শিক্ষা উপদেষ্টা, #স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা