এপিসির স্নেহ ভুলিয়া গিয়া ‘ব্যারাকে যাও তাড়াতাড়ি’ স্লোগান, পিতৃস্থানীয় সেনাবাহিনীর প্রতি সন্তানদের এ কেমন অবিচার?
বিশেষ প্রতিবেদক, দৈনিক কার্টুনুস: রাজপথের পিচঢালা পথে কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে এক অভিনব সুর। কোটাবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের স্বঘোষিত খলিফা, আন্তর্জাতিক কান্নাকাটি বিষয়ক সম্পাদক নুরুল হক নুর ও তাঁহার অনুসারীবৃন্দ সম্প্রতি এক মহতী পিটুনি সেবনের পর রাজপথে নামিয়া আসিয়াছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা কর্মিরা। তাহাদের কচি কণ্ঠে ফুটিয়া উঠিতেছে এক বজ্রকঠিন স্লোগান ‘নো মোর মিলিটারি, ব্যারাকে যাও তাড়াতাড়ি।’ এই স্লোগান শুনিয়া দেশের সুশীল সমাজ হইতে শুরু করিয়া চাটখিল বাজারের চান্দুমিয়া পর্যন্ত সকলেই যারপরনাই বিস্মিত ও হতবাক হইয়াছেন। সকলের মনে একটাই প্রশ্ন, যাহাদের স্নেহে গোপালগঞ্জ হইতে বাঁচিয়া ফিরিল এই টোকাইরা, আজ তাহাদের বিরুদ্ধেই এই হুংকার কেন?
ঘটনার গভীরতা অনুধাবনের জন্য আমাদের ফিরিয়া যাইতে হইবে কতিপয় মাস পূর্বে। জাতির পিতার জন্মস্থান গোপালগঞ্জের পরিস্থিতি তখন ছিল থমথমে। গোপালগঞ্জবাসীর প্রতিরোধের মুখে জাতীয় নাগরিক পার্টির টোকাইরা যখন খাটের তলায় আশ্রয় লইয়াছিলেন। সেই বিপদসংকুল পরিস্থিতি হইতে কে তাহাদের উদ্ধার করিয়াছিল? ইতিহাস সাক্ষী, এই মিলিটারি, অর্থাৎ সেনাবাহিনীর পিতৃস্থানীয় সদস্যরাই তাহাদের পরম স্নেহে নিজেদের লৌহবর্ম-নির্মিত বাহন, অর্থাৎ এপিসিতে তুলিয়া লইয়াছিলেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, এপিসির ভিতরে বসিয়া অনেক বিপ্লবী নেতা ভয়ে ও উত্তেজনায় এমনভাবে কাঁদিতেছিলেন যে, সেই কান্নার জলে এপিসির ভিতরে এক মনোরম সুইমিং পুলের সৃষ্টি হইয়াছিল। সেদিনের সেই পিতৃস্নেহে সিক্ত বিপ্লবীগণ ঢাকায় ফিরিয়া বুক ফুলাইয়া বলিয়াছিলেন, ‘সেনাবাহিনী আমাদের বাপের মতো, তারাই আমাদের জান বাঁচিয়েছে।’
কিন্তু হায়! সময় বদলাইয়াছে, বদলাইয়া গিয়াছে বুলি। সম্প্রতি এক হামলায় আমাদের স্লোগান-সর্বস্ব বিপ্লবী নেতা নুরুল হক নুর কিঞ্চিৎ কিল-ঘুষি হজম করিবার পর শুধু তাঁহারই সকল স্মৃতি মুছিয়া যায়নাই। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন আর জাতীয় নাগরিক পার্টির টোকাইরাও বোধ করি ভুলিয়া গিয়াছেন সেই এপিসির স্নিগ্ধ হাওয়া, সেই জলপাইরঙা পোশাকের নির্ভয় আশ্রয়। এখন এই টোকাইরা রাজপথে দাঁড়াইয়া সেই পিতৃস্থানীয় সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধেই স্লোগান তুলিয়াছেন। তাহাদের ভাবখানা এমন যে, সেনাবাহিনী ব্যারাকে থাকিলেই দেশের সকল সমস্যার সমাধান হইয়া যাইবে এবং তাহারা মনের সুখে টিকটক করিতে পারিবে।
এই বিষয়ে মতামত জানিতে চাহিলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নিরাপত্তা বিশ্লেষক, যিনি নিজেকে ‘চড়-থাপ্পড়োলজি’র বিশেষজ্ঞ বলিয়া দাবি করেন, তিনি বলেন, “ইহাকে বলে ‘শর্ট টার্ম মেমরি লস উইথ লং টার্ম ক্রন্দন সিনড্রোম’। ইহারা বিপদে পড়িলে পিতার সাহায্য লয়, আবার বিপদ কাটিয়া গেলে সেই পিতাকেই বৃদ্ধাশ্রমে পাঠাইতে চায়। গোপালগঞ্জে যখন জনতার তাড়া খাইয়াছিল, তখন ‘মিলিটারি, বাঁচাও তাড়াতাড়ি’ বলিয়া চিৎকার করিয়াছিল। আর এখন দুই-চারটা চড় খাইয়া বলিতেছে ‘ব্যারাকে যাও তাড়াতাড়ি’। ইহা এক প্রকার রাজনৈতিক দ্বিচারিতা।”
এদিকে, বৈষম্যবিরোধী কান্নাকাটি সংঘের এক তরুণ নেতা নাম গোপন রাখার শর্তে জানান, “আমরা আসলে সেনাবাহিনীর উপর রাগ করি নাই। আমরা বুঝাইতে চাহিতাছি, আপনারা আমাদের রক্ষা করিবার জন্য সার্বক্ষণিক রাজপথে থাকিবেন কেন? আপনারা ব্যারাকে আরাম করুন। আমরা মার খাইলে আপনাদের ডাকিয়া লইব। উনাদের মোবাইল নাম্বার তো আমাদের কাছে আছেন। একটা মিসকল দিলেই এপিসি নিয়া হাজির হইয়া যাইবেন বলিয়া আমরা বিশ্বাস করি।”
তবে সচেতন নাগরিক সমাজ এই স্লোগানকে অন্যভাবে দেখিতেছে। মতিঝিলের এক পান দোকানদার বলেন, “ভাইজান, কাহিনী হইলো গিয়া অন্য। সেনাবাহিনী যদি সত্যি সত্যি ব্যারাকে ফিরা যায়, তাইলে তো পুলিশরে একলা সবকিছু সামলাইতে হইবো। তখন এই পুলাপানরে কে বাঁচাইবো? পরের বার তো আর এপিসি পাইবো না, তখন হয়তো ঠেলাগাড়িতে কইরা পলাইতে হইবো। তাই আসলে ওনারা স্লোগান দিতেছে, কিন্তু মনে মনে কইতেছে, ‘আব্বাজান, তুমি যাইও না, আমাদের একা ফেলে।’”
সর্বশেষ প্রাপ্ত খবরে জানা গিয়াছে, ‘ব্যারাকে যাও তাড়াতাড়ি’ স্লোগানের পাশাপাশি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের টোকাইরা একটি বিকল্প স্লোগানও প্রস্তুত রাখিয়াছে। সেনাবাহিনী যদি সত্যি সত্যি তাহাদের কথা শুনিয়া ব্যারাকে ফিরিয়া যায় এবং তাহারা পুনরায় গণধোলাইয়ের শিকার হন, তখন তাহারা এই নতুন স্লোগানটি ব্যবহার করিবেন— ‘এপিসি পাঠাও তাড়াতাড়ি, নইলে গেলাম নানার বাড়ি!’
#Cartunus Daily, #অন্তর্বর্তী সরকার, #অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, #এপিসি, #কার্টুনুস ডেইলি, #গণঅধিকার পরিষদ, #গোপালগঞ্জ, #ছাত্র আন্দোলন, #ছাত্র রাজনীতি, #জেনারেল ওয়াকার উজ জামান, #দৈনিক কার্টুনুস, #নুরকে মারধর, #নুরুল হক নুর, #নো মোর মিলিটারি, #প্রহসন, #বাংলাদেশ, #বাংলাদেশ রাজনীতি, #বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, #ব্যারাকে ফের তাড়াতাড়ি, #ব্যারাকে যাও তাড়াতাড়ি, #মবোক্রেসি, #রম্য প্রতিবেদন, #রাজনৈতিক রম্য, #সেনাবাহিনী