ইলিশ কূটনীতি: ফরিদা আখতারের প্রতিশ্রুতি বনাম বাস্তবতা

ইলিশ কূটনীতি: ফরিদা আখতারের প্রতিশ্রুতি বনাম বাস্তবতা। Hilsa Diplomacy: Farida Akhter's Promise vs. Reality. ইলিশ কূটনীতি: ফরিদা আখতারের প্রতিশ্রুতি বনাম বাস্তবতা। Hilsa Diplomacy: Farida Akhter's Promise vs. Reality.

বিশেষ প্রতিবেদক, দৈনিক কার্টুনুস: গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মসনদে আসীন হয়েই যিনি এক ঐতিহাসিক ভাষণে মৎস্যপ্রেমী জনগণের হৃদয়ে আশার বাতি জ্বালিয়েছিলেন, সেই ‘ইলিশপ্রেমী মহীয়সী উপদেষ্টা’ ফরিদা আখতারের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডে দেশজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। দায়িত্ব গ্রহণ করেই তিনি বজ্রকণ্ঠে ঘোষণা দিয়েছিলেন, “আগে দেশের মানুষ পেটপুরে ইলিশ খাবে, তারপর রপ্তানির চিন্তা। বিগত সরকারের মতো প্রতিবেশীকে খুশি করতে গিয়ে দেশবাসীকে বঞ্চিত করা চলবে না।” এমন তেজোদীপ্ত ঘোষণায় রাজধানীর কারওয়ান বাজার থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত গ্রামের হাটে ইলিশের জন্য দীর্ঘশ্বাস ফেলা আমজনতা ভেবেছিল, যাক, এবার বুঝি ইলিশের সুদিন ফিরল। কিন্তু হায়! উপদেষ্টা মহোদয়ার এই ‘ইলিশি দেশপ্রেম’ যে মৌসুমী বায়ুর চেয়েও দ্রুত গতিপথ পরিবর্তন করবে, তা কে জানত?

সূত্রমতে, মহীয়সী উপদেষ্টার সেই ঐতিহাসিক ভাষণের কালি শুকানোর আগেই এক অদৃশ্য শক্তির ইশারায় ইলিশ রপ্তানির সকল রেকর্ড ভেঙে চুরমার করার এক মহাযজ্ঞ শুরু হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মৎস্য মন্ত্রণালয়ের এক ‘দীর্ঘশ্বাস বিশেষজ্ঞ’ কর্মকর্তা জানান, “বিগত সরকার গত ১৬ বছরে যত ইলিশ ভারতে পাঠিয়েছে, আমাদের এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তের মাসেই তার দশ গুণ পাঠানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এটাকে বলা হচ্ছে ‘ইলিশি সদ্ভাবনা মিশন’।” তিনি আরও যোগ করেন, “উপদেষ্টা মহোদয়া সম্ভবত আবিষ্কার করেছেন যে, ইলিশ মাছের ঘ্রাণ এর আসল স্বাদের চেয়েও বেশি পুষ্টিকর। তাই তিনি দেশের মানুষের জন্য ইলিশের পুষ্টিকর ঘ্রাণ নিশ্চিত করে আস্ত মাছগুলো সীমান্ত পার করে দিচ্ছেন। এটি একটি যুগান্তকারী ‘ঘ্রাণতত্ত্বীয় অর্থনীতি’ মডেল।”

এইদিকে ইলিশ রপ্তানির প্রক্রিয়া আরও বেশি রহস্যময়। দেশের বাজারে যে ইলিশের কেজিপ্রতি দাম আঠারোশ টাকা, সেই একই ইলিশ অবিশ্বাস্য যাদুর মাধ্যমে রপ্তানি দলিলে হয়ে যাচ্ছে মাত্র পনেরোশ টাকা। প্রতি কেজিতে তিনশ টাকার এই ‘ব্যবধান’ কীভাবে সমন্বয় হচ্ছে, তা নিয়ে অর্থনীতিবিদরা চুল ছিঁড়ছেন। তবে ‘রূপালি সিন্ডিকেট’-এর এক গোপন সদস্য মুচকি হেসে বলেন, “এটা হলো ‘হাওয়া থেকে টাকা কামানো’র আধুনিক সংস্করণ। আমরা কম দামে রপ্তানি করে দেশের সুনাম বাড়াচ্ছি, আর বাকি টাকাটা হাওয়া পথে চলে আসছে। এতে দেশের বাতাসও উন্নত হচ্ছে, আবার ব্যবসাও থাকছে।”

এই ‘হাওয়া বদলের পালায়’ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন দেশের সাধারণ ইলিশপ্রেমিকরা। রমজান আলী নামক এক মধ্যবিত্ত চাকুরে, যিনি নয় মাস ধরে ইলিশ কেনার জন্য একটি মাটির ব্যাংক কিনে টাকা জমাচ্ছিলেন, তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “উপদেষ্টার কথা শুনে ব্যাংকটা ভেঙেছিলাম। বাজারে গিয়ে দেখি, আমার জমানো টাকায় আস্ত ইলিশ তো দূরে থাক, ইলিশের একটা কানকোও মিলবে না। এখন ভাবছি, ইলিশ মাছের ছবি বাঁধিয়ে দেয়ালে টাঙিয়ে রাখব। অন্তত ছেলেমেয়েদের বলতে পারব, এই জিনিসটা একসময় আমাদের নদীতে পাওয়া যেত।”

বিষয়টি নিয়ে মহীয়সী উপদেষ্টা ফরিদা আখতারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি একটি আন্তর্জাতিক ‘ইলিশ ও পরিবেশ’ সম্মেলনে যোগ দিতে যাওয়ার পথে উড়োজাহাজের সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে বলেন, “আপনারা বিষয়টা বুঝছেন না। আমরা ইলিশ রপ্তানি করছি না, আমরা করছি ‘ইলিশি কূটনীতি’। এতে দুই দেশের সম্পর্ক মধুর হবে। দেশের মানুষ ইলিশ খেতে পারছে না, এটা সাময়িক। আমরা তাদের জন্য ‘ভার্চুয়াল ইলিশ ফেস্টিভ্যাল’ আয়োজন করার কথা ভাবছি, যেখানে বড় পর্দায় ইলিশ ভাজার দৃশ্য দেখানো হবে এবং গরম তেলের ঘ্রাণ স্প্রে করা হবে। এতে করে ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্নও পূরণ হবে, আবার ইলিশও রক্ষা পাবে।”

সর্বশেষ প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে, ইলিশ কূটনীতিতে এমন অভাবনীয় সাফল্যের জন্য মহীয়সী উপদেষ্টাকে প্রতিবেশী দেশের ‘সর্বোচ্চ ইলিশ মিত্র’ পুরস্কারে ভূষিত করার প্রস্তাব উঠেছে। এদিকে, দেশের সাধারণ মানুষ ইলিশের দামের কথা ভেবে দীর্ঘশ্বাস ফেলাকেই নিজেদের জাতীয় ক্রীড়া হিসেবে গ্রহণ করার কথা ভাবছে।

#, #, #, #, #, #, #, #, #, #, #, #, #, #, #, #, #, #, #, #, #, #

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *