স্কুলে ‘সা-রে-গা-মা’র আড়ালে ভারতের সাংস্কৃতিক আগ্রাসন, গানের শিক্ষক নিয়োগ বাতিলের দাবি।
বিশেষ প্রতিবেদক, দৈনিক কার্টুনুস: দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে গানের শিক্ষক নিয়োগের প্রজ্ঞাপনকে ‘সাংস্কৃতিক সার্বভৌমত্বের উপর পারমাণবিক হামলা’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জ্যেষ্ঠ নায়েবে আমির ও সঙ্গীত বিষয়ক নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ হযরত সৈয়দ ফয়জুল করীম। শুক্রবার বাদ জুমা বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে আয়োজিত এক ‘কান পবিত্রকরণ’ সমাবেশে তিনি এই আশঙ্কার কথা জানান।
সৈয়দ ফয়জুল করীম বলেন, “আপনাদের কী মনে হয়, এটা শুধু একটা গানের শিক্ষক নিয়োগের ব্যাপার? না! এর পেছনে রয়েছে ভারতের সুদূরপ্রসারী এক নীল নকশা। আমাদের নিজস্ব গোয়েন্দা সংস্থা ‘আল-বয়ান রিসার্চ ফাউন্ডেশন’ দীর্ঘ গবেষণার পর জানতে পেরেছে যে, সা-রে-গা-মা-পা-ধা-নি-সা আসলে কোনো সুর নয়, এগুলো হলো ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ এর গোপন সাংকেতিক চিহ্ন।”
বিষয়টি আরও পরিষ্কার করতে গিয়ে তিনি বলেন, “‘সা’ দিয়ে তারা বোঝাচ্ছে ‘সার্বভৌমত্ব আমাদের দাও’, ‘রে’ দিয়ে ‘রাষ্ট্রধর্ম তুলে নাও’, ‘গা’ দিয়ে ‘গরু কোরবানী বন্ধ করো’ আর ‘মা’ দিয়ে ‘মা ইলিশ ইন্ডিয়াকে দিয়ে যাও’। বাকিগুলো এতটাই ভয়াবহ যে জনসমক্ষে বলা যাচ্ছে না। কোমলমতি শিশুদের মাথায় ছোটবেলা থেকেই এই কোডগুলো ঢুকিয়ে দেওয়া হবে। বড় হয়ে তারা যখন কোনো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে যাবে, তখন ভারত শুধু হারমোনিয়াম বাজালেই তারা দেশের সব গোপন তথ্য পাচার করে দেবে।”
সমাবেশে উপস্থিত এক অভিভাবক, আলহাজ বাতেন হাওলাদার, তার উদ্বেগের কথা জানাতে গিয়ে বলেন, “আমার ছোট ছেলেটা সেদিন ‘আয় আয় চাঁদ মামা’ গাইতেছিল। হুজুরের বয়ান শুনে বুঝলাম, সর্বনাশ হয়ে গেছে! এটাতো সরাসরি ভারতের চাঁদকে বাংলাদেশে আমন্ত্রণ জানানো। মামা ডেকে আত্মীয়তার সম্পর্ক পাতানো। এরপর তো তারা আমাদের আকাশে নিজেরা চাষাবাদ শুরু করবে।”
সমাবেশে আরও জানানো হয়, গানের ক্লাসের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মন থেকে জিহাদের চেতনা মুছে দিয়ে সেখানে কাওয়ালি ও ভজন ঢোকানোর পাঁয়তারা চলছে। হযরত ফয়জুল করীম প্রধান উপদেষ্টার উদ্দেশে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে বলেন, “আপনার যদি সৎ সাহস থাকে, তাহলে গানের শিক্ষক নিয়োগ না দিয়ে প্রতিটি স্কুলে একজন করে ‘ইসলামী রক’ সঙ্গীত শিল্পী নিয়োগ দিন। আমরা ট্যাংকের সামনে দাঁড়িয়ে গজল গাইব, কিন্তু ভিনদেশি সংস্কৃতির তারানা সইব না। আপনি কাদের নিয়ে ঘোরেন? যারা দুই লাইন হামদ-নাত গাইতে পারে না, তাদের নিয়ে? ধিক আপনাকে!”
তিনি আরও যোগ করেন, “আওয়ামী লীগ যা পারেনি, আপনারা তা বাস্তবায়নের দুঃসাহস দেখাচ্ছেন। সুখে থাকতে আপনাদের ভূতে কিলায় কেন? দেশ তো ভালোই চলছিল। শিশুরা ‘অ-আ-ক-খ’ পড়ছিল, নামতা শিখছিল। এর মধ্যে ‘মিয়া কি মল্লার’ রাগের আমদানি করার কী দরকার পড়ল? আমরা স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, দেশের কোনো স্কুলে যদি একটিও হারমোনিয়াম ঢোকে, তাহলে আমরা সব হারমোনিয়াম জব্দ করে সেগুলো দিয়ে দেশের সীমান্ত বেড়া তৈরি করব, যাতে ভারতের কোনো গরু আর ঢুকতে না পারে।”
বিক্ষোভ সমাবেশে ‘জাতীয় ওলামা-মাশায়েখ আইম্মা পরিষদ’-এর পক্ষ থেকে কিছু দাবি পেশ করা হয়। দাবিগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:
১. অবিলম্বে গানের শিক্ষক নিয়োগের আত্মঘাতী প্রজ্ঞাপন বাতিল করতে হবে।
২. প্রতিটি স্কুলে শরীরচর্চার বদলে ‘ইসলামী কসরত’ চালু করতে হবে।
৩. নারী শিক্ষার হার কমাতে পাঠ্যপুস্তক পুরুষবান্ধব করতে হবে।
৪. সেক্স এডিকেশনের নামে নোংরামি বাদ দিয়ে, পাঠ্যক্রমে বলাৎকারী বিদ্যা অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
৫.বিজ্ঞানের ক্লাসে বিবর্তনবাদের পরিবর্তে ‘হঠাৎ আগমনবাদ’ পড়াতে হবে।
সমাবেশ শেষে গানের শিক্ষক নিয়োগ বাতিলের দাবিতে একটি ছোট মিছিল ‘হারমোনিয়ামের দালালেরা, হুঁশিয়ার সাবধান’ স্লোগান দিতে দিতে প্রেস ক্লাবের দিকে এগিয়ে যায়। মিছিলে অংশগ্রহণকারী অনেকেই কটনবাড দিয়ে কান বন্ধ রেখেছিলেন, যাতে পথিমধ্যে কোনো রিংটোনের সুর তাদের ঈমানী চেতনায় আঘাত হানতে না পারে।
#Cartunus Daily, #আওয়ামী লীগের এজেন্ডা, #ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, #ওলামায়ে কেরাম, #কার্টুনুস ডেইলি, #গানের শিক্ষক নিয়োগ, #দৈনিক কার্টুনুস, #প্রধান উপদেষ্টা, #বিক্ষোভ সমাবেশ, #ভারতীয় ষড়যন্ত্র, #ভারতের সংস্কৃতি, #রম্য প্রতিবেদন, #সা রে গা মা, #সাংস্কৃতিক আগ্রাসন, #সৈয়দ ফয়জুল করীম, #হারমোনিয়াম