শেখ হাসিনাকে শুভেচ্ছা জানানোই সাকিব আল হাসানের অপরাধ?

শেখ হাসিনাকে শুভেচ্ছা জানানোই সাকিব আল হাসানের অপরাধ? Is wishing Sheikh Hasina well the actual crime of Shakib Al Hasan?শেখ হাসিনাকে শুভেচ্ছা জানানোই সাকিব আল হাসানের অপরাধ? Is wishing Sheikh Hasina well the actual crime of Shakib Al Hasan?

ফ্যাসিবাদী রোষের শিকার বাংলাদেশের জান: সাকিব আল হাসানের অপরাধ সর্বশ্রেষ্ঠ স্বৈরাচারদের পক্ষ না নেওয়া।

বিশেষ প্রতিবেদক, দৈনিক কার্টুনুস: জাতির সামনে আজ এক বিরাট প্রশ্ন হাজির হইয়াছে, একজন মানুষকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানানো কি অপরাধ হইতে পারে? নব্য প্রতিষ্ঠিত গণতন্ত্র আর মত প্রকাশের স্বাধীনতার এই স্বর্ণযুগে উক্ত প্রশ্নের উত্তর অত্যন্ত পরিষ্কার। হ্যাঁ, পারে এবং ইহা একটি ক্ষমার অযোগ্য রাষ্ট্রদ্রোহিতামূলক অপরাধ। বিশেষ করিয়া, যদি সেই শুভেচ্ছা জানানো হয় এমন একজনকে, যাহাকে বর্তমান সময়ের সর্বশ্রেষ্ঠ স্বৈরাচারগণ নিজেদের শত্রু বলিয়া চিহ্নিত করিয়া রাখিয়াছেন। আর এই ‘ভুল’ পক্ষ নেওয়ার কারণেই ফ্যাসিবাদী রোষের শিকার হইয়াছেন ‘বাংলাদেশের জান’ সাকিব আল হাসান। তাঁহার একমাত্র অপরাধ, তিনি বর্তমানের সর্বশ্রেষ্ঠ স্বৈরাচারদের পক্ষ অবলম্বন না করিয়া একজন ক্রিকেটপ্রেমী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জন্মদিনে স্বরণ করিয়াছেন।

ঘটনা সামান্য কিন্তু ইহার তাৎপর্য ব্যাপক। বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান তাঁহার ফেসবুক পাতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাইয়াছিলেন। আর যাইবে কোথায়! জাতির নতুন বিবেক, স্বঘোষিত গণতন্ত্রের ঠিকাদার এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ক্রীড়া উপদেষ্টা ও ক্রীড়াঙ্গনে ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠার স্বঘোষিত কমান্ডার-ইন-চিফ আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়ার চোখে এই সামান্য শুভেচ্ছা বার্তা যেন পারমাণবিক বোমার চাইতেও ভয়ংকর হইয়া দেখা দেয়। তিনি এবং তাঁহার সহযোদ্ধাগণ, যাহারা ‘স্বৈরাচার হটাও’ বলিয়া নিজেরাই এক নূতন, উন্নত ও সর্বগ্রাসী স্বৈরাচারের চাষাবাদ শুরু করিয়াছেন, তাঁহারা তৎক্ষণাৎ সিদ্ধান্ত নেন যে, এই ঔদ্ধত্যের বিনাশ আবশ্যক। কারণ, তাঁহাদের প্রতিষ্ঠিত ‘নব্য স্বৈরতন্ত্রে’ সহনশীলতা, মানবিকতা এবং ব্যক্তিগত শ্রদ্ধাবোধের মতো নরম অনুভূতির কোনো স্থান নাই।

ক্রীড়া উপদেষ্টার এই ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত এটাই প্রমাণ করে যে, তাঁহারাই প্রকৃত স্বৈরাচারী। তাঁহাদের চোখে, সাকিব আল হাসানের ক্রিকেটীয় অর্জন, দেশের জন্য তাঁহার অবদান, এই সবকিছুই তুচ্ছ। আসল বিষয় হইল, আপনি নতুন প্রভুদের প্রতি কতটা অনুগত। আপনি কি তাহাদের ভাষায় কথা বলেন? আপনি কি তাহাদের মতো করিয়া ঘৃণা করিতে শিখিয়াছেন? যদি না পারেন, তাহা হইলে আপনি যতই বড় কিংবদন্তি হোন না কেন, আপনাকে ছুঁড়িয়া ফেলিতে তাহাদের এক মুহূর্তও লাগিবে না। সাকিব আল হাসানের অপরাধ হইল, তিনি এই নতুন প্রভুদের মনস্তত্ত্ব বুঝিতে পারেন নাই। তিনি ভাবিয়াছিলেন, সামান্য শ্রদ্ধা প্রদর্শন হয়তো সবকিছুর ঊর্ধ্বে। কিন্তু তিনি জানিতেন না যে, সর্বশ্রেষ্ঠ স্বৈরাচারদের রাজত্বে মানবিকতাই সবচেয়ে বড় অপরাধ।

এ বিষয়ে এক ‘বিশিষ্ট ঘৃণাতত্ত্ববিদ ও ফ্যাসিবাদ বিশেষজ্ঞ’ নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানাইয়াছেন, “আপনারা বিষয়টি মোটেই বুঝিতেছেন না। আগের সরকার যে স্বৈরাচার ছিল, সেই অভিযোগ প্রমাণিত নাকি ষড়যন্ত্রের অংশ, সেই অনাবশ্যক বিতর্কে যাইবার কোনো সুযোগ আর নাই। তবে, একটি বিষয় স্পষ্ট যে, উহারা যদি স্বৈরাচার হইয়াও থাকে, তবে উহারা ছিল নিতান্তই আনাড়ি, অপেশাদার ও শিক্ষানবিশ স্বৈরাচার। স্বৈরাচারের পাঠ্যবইয়ের প্রথম অধ্যায়ও উহারা সম্ভবত উল্টাইয়া দেখে নাই। তাহাদের প্রধান কাজ হওয়া উচিৎ ছিল দমন-পীড়ন করিয়া ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করা, কিন্তু সেই কঠিন দায়িত্ব ঠিকঠাকভাবে পালন না করিয়া উহারা দেশজুড়ে পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, বিদ্যুৎ কেন্দ্র আর টানেলের মতো অপ্রয়োজনীয় সব উন্নয়নের জোয়ার বহাইয়া দিয়াছিল। একজন স্বৈরাচারের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত জনগণের জীবনকে দুর্বিষহ করিয়া তোলা, কিন্তু উহারা করিয়াছে ঠিক তাহার উল্টো। উহাদের উন্নয়ন আর দৃশ্যমান ভালো কর্মের মহিমায় জনগণ এতটাই বিভ্রান্ত হইয়া পড়িয়াছিল যে, উহারা আসলেই স্বৈরাচার ছিল, নাকি উন্নয়নের ফেরিওয়ালা, সেই জটিল তত্ত্বে প্রবেশ করিবার ক্ষমতাই সাধারণ মানুষ হারাইয়া ফেলিয়াছিল। ইহা একজন স্বৈরাচারী শাসকের জন্য চরম ব্যর্থতা। অপরদিকে, আসিফ মাহমুদরা হইলেন খাঁটি, সনদপ্রাপ্ত এবং আপাদমস্তক পেশাদার ও সর্বশ্রেষ্ঠ স্বৈরাচার। উহারা ভালো করিয়াই জানে যে, অবকাঠামো বা অর্থনীতি নয়, একজন শ্রেষ্ঠ স্বৈরাচারের আসল যুদ্ধ হইল জনগণের মনস্তত্ত্বের বিরুদ্ধে। আর সেই যুদ্ধের প্রথম ও প্রধান কাজ হইল, জনগণের মন ও মস্তিষ্ক হইতে পুরাতন সরকারের সকল ভালো কাজের স্মৃতি ও অনুভূতিকে সম্পূর্ণরূপে মুছিয়া ফেলা এবং সেই শূন্যস্থানে নিজেদের ভয়, বিভীষিকা আর একচ্ছত্র মহিমা স্থাপন করা। সাকিব আল হাসান ঠিক সেই মহৎ প্রক্রিয়াতেই এক বিরাট বাধা হইয়া দাঁড়াইয়াছেন। তিনি একজন ‘আনাড়ি ও ব্যর্থ স্বৈরাচার’কে সামান্য শুভেচ্ছা জানাইয়া প্রকারান্তরে সেই ভুল উন্নয়নের যুগকেই স্মরণ করাইয়া দিয়াছেন। তাঁহার এই কাজ শ্রেষ্ঠ স্বৈরাচারদের বিরুদ্ধে এক সুস্পষ্ট অবাধ্যতা। তিনি প্রমাণ করিয়াছেন যে, তিনি এই নতুন, মেধাবী ও পেশাদার স্বৈরাচারের প্রতি অনুগত নন। সুতরাং, এই নতুন স্বৈরাচারী শাসনকে টেকসই করিতে হইলে তাঁহার শাস্তি তো কেবল উচিতই নয়, বরং অপরিহার্য।”

বোর্ডের এক কর্তা, যিনি নিজের চেয়ার বাঁচাইতে উপদেষ্টা মহোদয়ের নামে দিনে পাঁচবার জিকির করেন, তিনি আমাদের প্রতিনিধিকে বলেন, “সাকিব দেশের জন্য কী করিয়াছে, তাহা বড় কথা নয়। বড় কথা হইল, সে আসিফ ভাইদের প্রতিষ্ঠিত পবিত্র ঘৃণা ও বিভাজনের আদর্শকে মান্য করে নাই। সে এখনো ভালোবাসা, শ্রদ্ধার মতো সেকেলে জিনিস আঁকড়াইয়া ধরিয়া আছে। এই ধরনের ক্রিকেটার ক্রীড়াঙ্গনে ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠার পথে বড় বাধা।”

অতএব, ‘বাংলাদেশের জান’ আজ ফ্যাসিবাদী রোষের আগুনে দগ্ধ হইতেছেন। সাকিব আল হাসানের অপরাধ, তিনি অন্ধকারের উপাসক না হইয়া আলোর কথা স্মরণ করিয়াছিলেন। তাঁহার অপরাধ, তিনি ঘৃণার বদলে ভালোবাসাকে বাছিয়া লইয়াছিলেন। তাঁহার অপরাধ, তিনি বর্তমানের সর্বশ্রেষ্ঠ স্বৈরাচারদের পক্ষ না লইয়া সত্য, সুন্দর ও সত্যের পক্ষে দাঁড়াইয়াছিলেন। আর এই ‘অপরাধেই’ আজ তাঁহার ক্রিকেটীয় সমাধি রচিত হইতেছে।

#, #, #, #, #, #, #, #, #, #, #, #, #, #, #, #, #, #, #, #, #, #

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *