শাপলা নয়, বেগুন উত্তম! জাতীয় নাগরিক পার্টির জন্য ইসির যুগান্তকারী ‘প্রতীক’ নির্ধারণে জনমনে স্বস্তি
বিশেষ প্রতিবেদক, দৈনিক কার্টুনুস: সকল জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টিকে (এনসিপি) তাদের কাঙ্ক্ষিত শাপলা প্রতীকের বদলে বেগুন, খাট, বালতি, থালার মত অতি জরুরি ও জনসম্পৃক্ত ৫০টি প্রতীকের একটি তালিকা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এই ঐতিহাসিক সিদ্ধান্তে দেশের আপামর জনসাধারণের মধ্যে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফিরে এসেছে। তবে এনসিপি নামক দলটি ইসির এই গণমুখী তালিকাকে প্রত্যাখ্যান করে জানিয়েছে, তারা ‘শাপলার মত রক্তাক্ত’ থাকতে চায়। তাদের এই রক্তাক্ত থাকার আকুতিকে অবশ্য আমলে নিচ্ছেন না দেশের বিশিষ্ট প্রতীক বিশেষজ্ঞরা।
সূত্র জানায়, এনসিপি প্রথমে শাপলা, কলম ও মোবাইল ফোন প্রতীক হিসেবে চেয়ে আবেদন করে। কিন্তু কিছুদিন পরেই তারা নিজেদের আবেদনে সংশোধন এনে জানায়, তাদের সাদা শাপলা, পিংক শাপলা, অথবা লাল শাপলা চাই। তাদের এই শাপলাপ্রীতি দেখে নির্বাচন কমিশনের এক কর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “এরা কি রাজনীতি করতে এসেছে নাকি শাপলা ফুলের চাষাবাদ করতে? কথায় কথায় শুধু শাপলা শাপলা করে। আমরা তাই তাদের এমন কিছু প্রতীক দিতে চেয়েছি যা তাদের রাজনৈতিক দর্শনের ভেতর একেবারে ‘ঢুকে’ যায়।”
দেশের শীর্ষস্থানীয় রাজনৈতিক প্রতীক বিশেষজ্ঞ ও বিশিষ্ট বেগুন ব্যবহারকারী জুলি বেগম এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে বলেন, “এনসিপির জন্য বেগুন প্রতীকের চেয়ে ভালো, জনবান্ধব ও ব্যবহারোপযোগী প্রতীক আর দ্বিতীয়টি হতে পারে না। আমি নির্বাচন কমিশনকে তাদের এই যুগান্তকারী ও দূরদর্শী সিদ্ধান্তের জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। তাদের এই একটি সিদ্ধান্ত দেশের রাজনৈতিক প্রতীক বরাদ্দের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।”
জুলি বেগম ক্ষণিকের জন্য তাঁর হাতের মুঠোয় থাকা একটি বেগুন নেড়েচেড়ে মুখের কাছে এনে বললেন, “দেখুন, বাস্তবতা বুঝতে হবে। শাপলা থাকে কাদাপানিতে, শত শত পোকামাকড়ের ভিড়ে। চাইলেই কি তাকে ছোঁয়া যায়? যায় না। দূর থেকে দেখতেই কেবল সুন্দর। এনসিপির নেতারা কি জনগণের সাথে এমন দূরত্ব বজায় রাখতে চান? নিশ্চয়ই না। কিন্তু বেগুন? বেগুন হলো একেবারে আপন জিনিস। সে জনগণের হাতের মুঠোয় থাকতে ভালোবাসে। তাকে যখন খুশি ধরা যায়, ছোঁয়া যায়, তার ত্বকের কোমলতা নিজের ভেতরে অনুভব করা যায়।”
তিনি আরও যোগ করেন, “বেগুনের সবচেয়ে বড় গুণ হলো এর মসৃণ ত্বক এবং আকারের বৈচিত্র্য। এর কোনো নির্দিষ্ট আকার নেই। লম্বা, গোল, খাটো, মোটা, ৩ ইঞ্চি, ৭ ইঞ্চি সব রকমের হয়। জনগণের চাহিদা এবং পছন্দ অনুযায়ী এটি নিজেকে বিলিয়ে দেয়। প্রত্যেকের ব্যক্তিগত সাইজ ও রুচি অনুযায়ী এটি বাজারে সহজলভ্য। খুঁজে নিতে বিন্দুমাত্র বেগ পেতে হয় না। বেগুন একাকীত্ব দূর করে এবং জীবনে অনাবিল আনন্দ বয়ে আনে, তা কি অস্বীকার করতে পারবেন? বেগুনের এই ‘বিশেষ গুণ’ বা ‘বহুমুখী ব্যবহারিক উপযোগিতা’ই একে অন্য সব প্রতীক থেকে আলাদা করেছে। এই প্রতীকের মাধ্যমে এনসিপি সহজেই জনগণের একেবারে গভীরে প্রবেশ করতে পারবে। আমি তো বলব, এই প্রতীক পেলে নারী ভোটারদের মন জয় করা এনসিপির জন্য সময়ের ব্যাপার মাত্র।”
এদিকে, এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামকে এই বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করে বলেন, “আমরা রাজনীতিতে এসেছি সাড়ে তিন হাজার পুলিশ হত্যার মাধ্যমে, সেই পুলিশের লগোতে ছিল শাপলা। তাই শাপলা প্রতীক আমাদের জন্ম অধিকার। পুলিশের রক্তে ভেজা হাতের সাথে কি তেলতেলে বেগুন যায়? নির্বাচন কমিশন আমাদের সাথে তামাশা করছে। তারচেয়ে বড় কথা হলো, বেগুন একটি এলার্জি উদ্রেককারী সবজি। এটা খেলে অনেকেরই শরীর চুলকায়, চাকা চাকা হয়ে যায়। আমার নিজেরই তো এই সমস্যা আছে। যে জিনিস খেতে পারি না, তাকে আমরা প্রতীক হিসেবে গ্রহণ করব কীভাবে?”
তার এই ‘এলার্জি-সম্পর্কিত’ বক্তব্যের জবাবে নিয়মিত বেগুন ব্যবহারকারী জুলি বেগম তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “নাহিদ তো দেখছি বেগুনের আসল ব্যবহারটাই জানেন না! লজ্জা করে না বলতে যে বেগুন খেলে ওনার চুলকানি হয়? আরে বাবা, সব জিনিস কি শুধু খাওয়ার জন্য? কিছু জিনিসের ব্যবহারিক উপযোগিতা তার স্বাদের চেয়েও অনেক বেশি। আমি এনসিপির সকল নেতাকে একটা চ্যালেঞ্জ দিতে চাই। আপনারা বাজার থেকে বেশি না, মাত্র তিন ইঞ্চি সাইজের একটা কচি ও মসৃণ বেগুন কিনে আনুন। এরপর সেটার সঠিক ব্যবহার করে দেখুন, সব চুলকানি ভালো হয়ে যাবে। ব্যবহারের আগেই যদি এলার্জির কথা বলে লাফান, তাহলে তো জীবনে আসল সুখ থেকেই বঞ্চিত হবেন। আগে ব্যবহার করুন, তারপর এর গুণ নিয়ে কথা বলুন।”
নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা এনসিপিকে যে ৫০টি প্রতীকের তালিকা দিয়েছে, তার প্রতিটিই জনগণের দৈনন্দিন জীবনের সাথে জড়িত। একজন কর্মকর্তা বলেন, “আমরা চেয়েছি দলটি জনগণের কাছাকাছি থাকুক। তাই তাদের জন্য বেগুন, খাট, বালতি, মগ, থালা, জগ, টেবিলের মত প্রতীক দিয়েছি। দিনশেষে তো তাদের জনগণের খাটের নিচেই আশ্রয় নিতে হবে। জনগণের বালতি দিয়েই তো তাদের রাজনৈতিক ময়লা পরিষ্কার করতে হবে। আর বেগুন তো খুবই পুষ্টিকর একটি সবজি। এটি ব্যবহার করলে তাদের রাজনৈতিক একাকিত্ব কেটে যাবে বলেই আমাদের বিশ্বাস।”
সর্বশেষ পাওয়া খবরে জানা গেছে, এনসিপি কোনোভাবেই বেগুন প্রতীক নিতে রাজি নয়। তারা আবারও শাপলার জন্য আবেদন করবে। তবে দেশের সাধারণ জনগণ মনে করছে, এনসিপি নিজেদের গুরুত্ব বুঝতে পারছে না। মতিঝিলের এক তরুণ চাকরিজীবী বলেন, “বেগুন প্রতীক পেলে তো ভালোই হতো। দলটার নাম মুখে আনতে সুবিধা হতো। ‘জারা ভাবীর গর্তে আগুন, এনসিপির মার্কা বেগুন’ এমন স্লোগানও বানানো যেত। এনসিপি আসলে সুযোগটা হেলায় হারাচ্ছে।”
#৩ হাজার পুলিশ হত্যা, #Cartunus Daily, #অনড় অবস্থানে নির্বাচন কমিশন, #এনসিপি, #এনসিপি বেগুন, #এনসিপিকে বেগুন প্রতীক, #কার্টুনুস ডেইলি, #চুদলিংপং, #জাতীয় নাগরিক পার্টি, #দৈনিক কার্টুনুস, #নির্বাচন কমিশন, #নির্বাচনী প্রতীক, #পুলিশ হত্যা, #বাংলাদেশ রাজনীতি, #বেগুন প্রতীক, #বেগুন প্রতীক ইসির রুচিবোধের প্রকাশ, #রম্য প্রতিবেদন, #রাজনৈতিক রম্য, #রাজনৈতিক স্যাটায়ার, #শাপলা প্রতীক, #শাপলার দাবিতে অনড় এনসিপি