‘স্মুথ স্কিন, স্মুথ নেশন’ স্লোগানে পূজামণ্ডপে দাড়িওয়ালা অসুর এর দাড়ি কামাতে মাঠে নামলো বিশেষ তৌহিদি টাস্কফোর্স
বিশেষ প্রতিবেদক, দৈনিক কার্টুনুস: গোটা দেশে শারদীয় উৎসবের আমেজ লেগে থাকলেও এক বিশেষ চক্রান্তে সরকারের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। কয়েকটি পূজামণ্ডপে নির্মিত অসুরের মূর্তিতে ঘন দাড়ি ও গোঁফের উপস্থিতি লক্ষ্য করে একে ‘রাষ্ট্রীয় মসৃণ ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার গভীর ষড়যন্ত্র’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে সরকার। দেশের সর্বপ্রধান ও অনুকরণীয় অসুরের মুখমণ্ডলে যেখানে একটি পশমের অস্তিত্বও নেই, সেখানে মাটির তৈরি অসুরের মুখে এহেন জঙ্গলসম দাড়ি-গোঁফ রাষ্ট্রদ্রোহের শামিল বলে মনে করছেন নীতি নির্ধারকরা।
এই গুরুতর পরিস্থিতি মোকাবেলায় গতকাল সচিবালয়ে ‘আইনশৃঙ্খলা, মূর্তি ও জাতীয় মসৃণতা’ বিষয়ক এক কোর কমিটির জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভা শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন সরকারের স্বরাষ্ট্র-গরম বিষয়ক উপদেষ্টা এবং চক্রান্ততত্ত্ব বিশারদ লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। উত্তেজিত কণ্ঠে তিনি বলেন, “আপনারা বুঝতেই পারছেন, এটা একটা ভয়ংকর চক্রান্ত। যেদেশের প্রধান অসুরের মুখে একটাও পশম গজায় না, সেই দেশের পূজামণ্ডপে বানানো অসুরের মুখে জুলফির জঙ্গল থাকবে, এটা আমরা কোনভাবেই মেনে নিতে পারি না। এটা আমাদের জাতীয় আদর্শের পরিপন্থী।”
তিনি আরও যোগ করেন, “আমাদের কাছে গোয়েন্দা তথ্য আছে, কিছু ফ্যাসিস্ট ও তাদের দোসর বুদ্ধিজীবী পার্শ্ববর্তী দেশের ইন্ধনে এই দাড়িওয়ালা অসুর তৈরি করে দেশের কোমল ত্বকের মতো মসৃণ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করার পায়তারা করছে। দেশের মানুষ মসৃণ গণতন্ত্রে বিশ্বাসী, দাড়িওয়ালা স্বৈরতন্ত্রে নয়। আমাদের প্রধান উপদেষ্টা মহোদয়কে দেখুন, তাঁর মুখশ্রী কতটা নির্মল, কতটা মসৃণ! দেশের সকল অসুরকে তাঁর মতো হতে হবে। এটাই জাতীয় স্ট্যান্ডার্ড।”
এই ঘোষণার পরপরই সরকার এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। ‘জাতীয় মূর্তি শ্মশ্রুমোচন প্রকল্প’ নামের এই প্রকল্পের আওতায় দেশের সকল দাড়ি-গোঁফওয়ালা মূর্তিকে সরকারি খরচে শেভ করিয়ে দেওয়া হবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে ‘মূর্তি ক্লিন শেভ টাস্কফোর্স’ নামে একটি বিশেষ তৌহিদি বাহিনী গঠন করা হয়েছে, যারা অত্যাধুনিক শেভিং ফোম, জিলেট ম্যাক-থ্রি টার্বো রেজর এবং আফটার শেভ লোশন নিয়ে মণ্ডপে মণ্ডপে অভিযান চালাবে।
এ বিষয়ে প্রকল্পের পরিচালক এবং অতিরিক্ত সচিব এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানান, “আমাদের তৌহিদি টাস্কফোর্স সম্পূর্ণ বিনামূল্যে দেশের সকল মূর্তির দাড়ি-গোঁফ কামিয়ে দেবে। আমরা কোনো মূর্তিকেই খাপছাড়া রাখতে চাই না। আমাদের স্লোগান হলো—‘স্মুথ স্কিন, স্মুথ নেশন’। অসুরের মুখ হবে বেবি সফট, যাতে দেবতারাও ত্রিশূল মারার আগে একটু আদর করতে ইচ্ছা পোষণ করেন।”
এদিকে এই রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে অবশেষে মুখ খুলেছেন স্বয়ং প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস। এক ভিডিও বার্তায় তিনি জাতির উদ্দেশে বলেন, “দেশের ভাবমূর্তি মসৃণ রাখার এই সরকারি উদ্যোগকে আমি সাধুবাদ জানাই। একটি জাতির সাংস্কৃতিক প্রতীকগুলো তার মূল দর্শনকে প্রতিফলিত করে। আমাদের দর্শন হলো মসৃণ অগ্রগতির, সেখানে দাড়ি-গোঁফের মতো অপ্রয়োজনীয় জঞ্জালের কোনো স্থান নেই। বিদেশে যখন আমাদের দেশের প্রতিমার ছবি যায়, তখন এই দাড়িওয়ালা অসুর দেখলে তারা কী ভাববে? তারা ভাববে, এ এক অমসৃণ, পশ্চাৎপদ জাতি। তাই জাতীয় ব্র্যান্ডিং-এর স্বার্থেই সকল অসুরকে ‘জিরো-হেয়ার’ নীতি অনুসরণ করতে হবে। এটি আমাদের ‘জিরো ইজ বিউটিফুল’ দর্শনেরই এক নান্দনিক প্রতিফলন মাত্র।”
প্রধান উপদেষ্টার এমন দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্যে অনুপ্রাণিত হয়ে ‘মূর্তি ক্লিন শেভ টাস্কফোর্স’ দ্বিগুণ উদ্যমে মাঠে নেমেছে। তবে সরকারের এই সিদ্ধান্তে বিপাকে পড়েছেন সারা দেশের মৃৎশিল্পীরা। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন মৃৎশিল্পী বংশের প্রদীপ শ্রী পরেশ পাল মাথায় হাত দিয়ে বলেন, “বাপ-ঠাকুরদার আমল থেকে অসুরকে রাগী, দাড়িওয়ালা হিসেবেই বানিয়ে আসছি। আগে তো কখনো সমস্যা হয় নাই! এখন বলে কি না অসুরকে ক্লিন শেভ করে চকচকে বানাতে হবে!”
তবে বিরোধী শিবির এই ঘটনাকে ভিন্ন চোখে দেখছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বর্ষীয়ান বামপন্থী নেতা বলেন, “এটা আসলে ‘শেভিং-গেট কেলেঙ্কারি’। পূজামণ্ডপে দাড়িওয়ালা অসুর এর উছিলায় জনগণের টাকা দিয়ে রেজর আর শেভিং ক্রিম কিনে বিশেষ একটি কোম্পানিকে লাভবান করার জন্যই এই প্রকল্প। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই এবং দাড়িওয়ালা অসুরের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার দাবি জানাচ্ছি।”
সর্বশেষ প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে, ‘মূর্তি ক্লিন শেভ টাস্কফোর্স’ পুরান ঢাকার একটি মণ্ডপে অভিযান চালিয়ে সফলভাবে প্রথম অসুরের শেভিং সম্পন্ন করেছে। শেভ করার পর অসুরকে দেখতে এতটাই নিষ্পাপ ও কোমল লাগছিল যে, স্থানীয় শিশুরা তাকে চকলেট সাধতে শুরু করে। এই সফলতার পর সরকার ভাস্কর্য, স্মৃতিস্তম্ভ এমনকি দোকানের সামনে রাখা প্লাস্টিকের পুতুলের মুখেও দাড়ি-গোঁফ আছে কি না, তা খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে।
#Cartunus Daily, #অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, #অসুরের দাড়ি, #কার্টুনুস ডেইলি, #ড. ইউনূস, #ডক্টর ইউনূস, #ডক্টর মুহাম্মদ ইউনূস, #তৌহিদি জনতা, #দাড়িবিহীন অসুর, #দুর্গাপূজা, #দৈনিক কার্টুনুস, #পূজা মণ্ডপ, #প্রতিমা বিসর্জন, #প্রধান উপদেষ্টা, #ফ্যাসিবাদী দোসর, #বিনা খরচে শেভ, #মসৃণ গনতন্ত্র, #রম্য প্রতিবেদন, #রাজনৈতিক রম্য, #ষড়যন্ত্র তত্ত্ব, #সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, #স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়