নির্বাচন এড়াতেই কি অন্তর্বর্তী সরকারের আগুন সন্ত্রাস?

নির্বাচন এড়াতেই কি অন্তর্বর্তী সরকারের আগুন সন্ত্রাস? Is the Interim Government Committing Arson to Avoid Elections? নির্বাচন এড়াতেই কি অন্তর্বর্তী সরকারের আগুন সন্ত্রাস? Is the Interim Government Committing Arson to Avoid Elections?

ক্ষমতার মোহে দেশজুড়ে অন্তর্বর্তী সরকারের আগুন সন্ত্রাস? ড. ইউনূসের পাঁচ বছর পূরণের অগ্নি-পরিকল্পনা।

বিশেষ প্রতিবেদক, দৈনিক কার্টুনুস: দার্শনিকেরা বহু কাল ধরে ক্ষমতার চেয়েও মধুর আর কী হতে পারে, তা নিয়ে বিস্তর গবেষণা ও বিতর্ক করলেও বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী শাসনব্যবস্থার বিজ্ঞজনেরা সেই জটিল প্রশ্নের এক সহজ সমাধান বের করে ফেলেছেন। তাদের মতে, ক্ষমতার চেয়ে মধুর হলো আরও বেশি দিনের জন্য ক্ষমতা। ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে একটি নির্বাচন আয়োজনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে মসনদে বসলেও, সেই প্রতিশ্রুতির হিমশীতল বাস্তবতা তাদের ঠিক মনঃপূত হচ্ছে না। তাই ক্যালেন্ডারের পাতা উল্টে শীত আসার আগেই সারা দেশে আগুন জ্বালিয়ে এক প্রকার ‘উন্নয়নের উষ্ণতা’ ছড়ানোর মহাকর্মযজ্ঞ শুরু হয়েছে। এই লেলিহান শিখায় কেবল দেশের কলকারখানা, বিমানবন্দর আর শ্রমিকের স্বপ্নই পুড়ছে না; বরং গণতন্ত্র, নির্বাচন আর জনগণের ভোটাধিকারের মতো ‘তুচ্ছ’ বিষয়গুলোও ভস্মীভূত হয়ে যাচ্ছে।

ক্ষমতায় আরোহণের পর থেকেই ক্ষুদ্রঋণ তত্ত্বের জনক এবং বৃহৎ ষড়যন্ত্রের রূপকার, প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে এক অভূতপূর্ব শৈল্পিক স্তরে পৌঁছে দিয়েছেন। তিনি এমন এক ব্যবস্থা কায়েম করেছেন যেখানে প্রকাশ্য রাজপথে যা-কিছু ঘটে, তাকেই ‘গণমানুষের স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিক্রিয়া’ বা ‘মব’ বলে চালিয়ে দেওয়া হয়। এই সুশৃঙ্খল বিশৃঙ্খলার মধ্যেই হুট করে দেশের একের পর এক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় আগুন লাগার ঘটনাকে নিছক দুর্ঘটনা বলে মেনে নিতে দেশের জনগণ নারাজ। যারা চাল, ডাল, তেল আর রাজনীতির নিত্যনতুন খেলার দাম ভালোই বোঝেন, তারা ঠিকই আঁচ করতে পারছেন এই আগুনের চুল্লিতে কোন বিশেষ ঘি ঢালা হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞ তাত্ত্বিকেরা বলছেন, এটি আসলে একটি সুগভীর এবং ত্রিস্তরীয় পরিকল্পনা, যা যেকোনো বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার পরিকল্পনাকেও হার মানাবে। প্রথমত, সারা দেশে এমন একটি ভীতি ও আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করা, যেখানে সাধারণ মানুষ জীবন ও জীবিকা বাঁচানো ছাড়া নির্বাচনের মতো ‘বিলাসিতা’ নিয়ে চিন্তা করার অবকাশ পাবে না। যখন একজন শ্রমিকের কর্মস্থল পুড়ে ছাই হয়ে যায় আর একজন ব্যবসায়ীর গুদাম ভস্মীভূত হয়, তখন কে আর গণতন্ত্র উদ্ধারের জন্য ভোটের লাইনে দাঁড়ানোর ঝুঁকি নিতে চাইবে? বরং তারা দুমুঠো ভাতের জন্যই সরকারের দিকে তাকিয়ে থাকবে, আর সরকার সেই সুযোগে বলবে, ‘আগে পেট, পরে ভোট।’

দ্বিতীয়ত, দেশের অর্থনৈতিক মেরুদণ্ড, অর্থাৎ পোশাকশিল্প, আমদানী-রপ্তানি সেক্টর এবং যোগাযোগ অবকাঠামো পরিকল্পিতভাবে পুড়িয়ে দেওয়া। এর ফলে দেশ যখন অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু হয়ে হাঁটু গেড়ে বসে পড়বে, তখন উপদেষ্টামণ্ডলী জাতির উদ্দেশে এক আবেগঘন ভাষণে বলবেন, “প্রিয় দেশবাসী, এই ভঙ্গুর অর্থনীতি ও নাজুক পরিস্থিতিতে নির্বাচন আয়োজন করা আত্মহত্যার শামিল। দেশকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচাতে, আবারও উন্নয়নের চাকাকে সচল করতে আমাদের আরও পাঁচ বছর প্রয়োজন।” এই ‘আরও পাঁচ বছর‘ তত্ত্বটি অবশ্য আকাশ থেকে পড়েনি। কিছুদিন আগেই ঈদের জামাতে কিছু আবেগাপ্লুত মুসল্লি ‘স্যার, পাঁচ বছর’ বলে যে করুণ সুর তুলেছিলেন, সেটি ছিল এই মহাপরিকল্পনারই একটি বাজার যাচাই মহড়া। কিন্তু সেই প্রচারণায় আশানুরূপ ফল না পাওয়ায় এখন ‘অগ্নি দিয়ে দেশ সেবা’ নামক প্রকল্পে হাত দেওয়া হয়েছে, যা আরও বেশি কার্যকর।

এই পরিকল্পনার তৃতীয় এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্তরটি হলো দেশের প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করে বিদেশি প্রভুদের তুষ্ট করা। চট্টগ্রাম বন্দর আর কক্সবাজারের রেলস্টেশন বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়ার সফল মহড়ার পর এখন দেশের বাকি লাভজনক বা গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলোকেও একই পথে বিক্রির জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে। বিমানবন্দরের কার্গো বিভাগ পুড়ে ছাই হয়ে গেলে স্বাভাবিকভাবেই একটি বিশ্বাসযোগ্য রব উঠবে যে, দেশীয় ব্যবস্থাপনায় আর বিমানবন্দর চালানো সম্ভব নয়। তখন দেশের সার্বভৌমত্বের কথা বলে কয়েক ফোঁটা চোখের জল ফেলে কোনও এক মার্কিন সওদাগরি প্রতিষ্ঠানের হাতে বিমানবন্দরের দায়িত্ব তুলে দেওয়া হবে ‘দক্ষ ব্যবস্থাপনার’ দোহাই দিয়ে। একইভাবে, পোশাক কারখানাগুলো একটার পর একটা পুড়তে থাকলে যখন বিদেশি ক্রেতারা ক্রয়াদেশ বাতিল করতে শুরু করবে, তখন পুরো খাতটিকেই কোনও বিদেশি গোষ্ঠীর হাতে তুলে দিয়ে বলা হবে, “পোশাকশিল্প এবং লক্ষ লক্ষ শ্রমিকের জীবন বাঁচাতে এর চেয়ে উত্তম কোনও পথ আমাদের সামনে খোলা ছিল না।”

অন্তর্বর্তী সরকারের আগুন সন্ত্রাস আর ধ্বংসযজ্ঞের মূল উদ্দেশ্য কেবল একটাই, মার্কিন মুলুকের প্রভুদের সন্তুষ্ট করে ক্ষমতার মসনদ আরও দীর্ঘস্থায়ী করা। দেশের জনগণ পুড়ে অঙ্গার হোক বা না খেয়ে মারা যাক, তাতে ক্ষমতার শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে বসে থাকা সুদী মহাজনদের কিছুই যায়-আসে না। তাদের প্রয়োজন কেবল মসনদ এবং বিদেশী প্রভুদের আশীর্বাদের অদৃশ্য ছাতা।

একটি বিশ্বস্ত উড়ো সূত্র থেকে জানা গিয়েছে, উপদেষ্টামণ্ডলীর পরবর্তী জরুরি বৈঠকে দেশের কোন কোন প্রতিষ্ঠানে আগুন লাগালে পরিস্থিতি আরও বেশি নাটকীয় হবে এবং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের দৃষ্টি আকর্ষণ করবে, তা নিয়ে একটি বিশদ উপস্থাপনা পেশ করা হবে। সেই গোপন তালিকায় নাকি দেশের খাদ্য গুদাম থেকে শুরু করে জাতীয় জাদুঘর, এমনকি সুন্দরবনও রয়েছে। কারণ, খাদ্যের অভাবে বাঘ-সিংহও যদি কঙ্কালসার হয়ে পড়ে, তবে বৈশ্বিক প্রভুদের কাছে দেশের করুণ পরিস্থিতি তুলে ধরে আরও কিছুকাল ক্ষমতায় থাকার আবেদনপত্রটি আরও বেশি জোরালো ও বিশ্বাসযোগ্য হবে।

সুতরাং, ২০২৬ সালের নির্বাচন এখন এক সুদূর পরাহত স্বপ্ন। দেশের মানুষ যখন পোড়া গন্ধ আর ধোঁয়ার মধ্যে নিজেদের ভবিষ্যৎ খুঁজছে, তখন অন্তর্বর্তী সরকার সেই ছাইয়ের স্তূপের ওপরই নিজেদের দীর্ঘস্থায়ী ক্ষমতার মসনদ তৈরি করছে। তারা প্রমাণ করতে চাইছে, গণতন্ত্রের চেয়ে ধ্বংসযজ্ঞ উত্তম, কারণ গণতন্ত্রে প্রতি পাঁচ বছর পর পর জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে হয়, কিন্তু একবার সব পুড়িয়ে দিতে পারলে সেই ছাইয়ের ওপর দাঁড়িয়ে আরও পাঁচ বছর কেন, আজীবন ক্ষমতা ভোগ করা যায়।

#, #, #, #, #, #, #, #, #, #, #, #, #, #, #, #, #, #, #, #, #, #

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *