আগুন লাগলে করণীয়: জীবন বাঁচাতে জেনে নিন জরুরি পদক্ষেপসমূহ

আগুন লাগলে করণীয়: জীবন বাঁচাতে জেনে নিন জরুরি পদক্ষেপসমূহ। What to Do in a Fire: Essential Steps to Save Your Life. আগুন লাগলে করণীয়: জীবন বাঁচাতে জেনে নিন জরুরি পদক্ষেপসমূহ। What to Do in a Fire: Essential Steps to Save Your Life.

আগুন লাগলে করণীয় ও সুরক্ষার উপায়: একটি ছোট ভুল ডেকে আনতে পারে বড় বিপদ।

বিশেষ প্রতিবেদক, দৈনিক কার্টুনুস: আগুন এক বিধ্বংসী শক্তি, যা মুহূর্তের মধ্যে কেড়ে নিতে পারে জীবন ও সম্পদ। কিন্তু হঠাৎ আগুন লাগলে ভয় পাওয়া স্বাভাবিক হলেও আতঙ্কিত হওয়া চলবে না। ঠাণ্ডা মাথায় সঠিক পদক্ষেপ নিতে পারলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অনেকাংশে কমানো সম্ভব এবং নিজের ও অন্যের জীবন রক্ষা করা সম্ভব। চলুন জেনে নেওয়া যাক, অগ্নি দুর্ঘটনার সময় এবং এর আগে-পরে আমাদের কী কী করণীয়।

আগুন কীভাবে জ্বলে? যেকোনো আগুন জ্বলার জন্য তিনটি মূল উপাদান প্রয়োজন: দাহ্যবস্তু (জ্বালানি), অক্সিজেন এবং তাপ। এই তিনটির যেকোনো একটিকে সরিয়ে ফেলতে পারলেই আগুন নিভে যায়। আগুনের ধরন বুঝে তা নেভানোর ব্যবস্থা নিতে হয়।

আগুন লাগলে করণীয়

১. শান্ত থাকুন ও পরিস্থিতি বুঝুন: প্রথমেই বোঝার চেষ্টা করুন আগুন কোথায় এবং কী পরিমাণে লেগেছে। যদি আগুন ছোট থাকে এবং আপনার কাছে অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র থাকে, তবে সেটি ব্যবহার করে নেভানোর চেষ্টা করুন। আগুন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে নেভানোর বৃথা চেষ্টা করে সময় নষ্ট করবেন না।

২. দ্রুত বেরিয়ে আসুন: আগুন ছড়িয়ে পড়তে শুরু করলে এক মুহূর্তও দেরি না করে ভবন থেকে বেরিয়ে পড়ুন। মনে রাখবেন, আপনার জীবনের চেয়ে মূল্যবান আর কিছুই নয়। কোনো মূল্যবান সামগ্রীর জন্য জীবন বিপন্ন করবেন না। পরিবারের সবাইকে নিয়ে সাবধানে নিরাপদ স্থানে চলে আসুন।

৩. দমকল বাহিনীকে খবর দিন: যত দ্রুত সম্ভব দমকল বাহিনীকে খবর দিন। আপনার এলাকার দমকল কেন্দ্রের নম্বর আগে থেকেই সংগ্রহ করে রাখুন। জরুরি প্রয়োজনে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে যোগাযোগ করুন। স্পষ্টভাবে আপনার ঠিকানা এবং আগুনের পরিস্থিতি জানান।

৪. ধোঁয়ার বিপদ থেকে বাঁচুন: আগুনের চেয়েও ভয়ংকর হতে পারে ধোঁয়া। ধোঁয়ায় থাকা বিষাক্ত গ্যাস নিশ্বাসের সঙ্গে শরীরে প্রবেশ করে মৃত্যু ঘটাতে পারে। তাই ধোঁয়া থাকলে নাক ও মুখ ভেজা কাপড় দিয়ে ঢেকে নিন। ভবন থেকে বের হওয়ার সময় ধোঁয়া উপরের দিকে ওঠায়, যতটা সম্ভব নিচু হয়ে বা হামাগুড়ি দিয়ে বের হওয়ার চেষ্টা করুন।

৫. বের হওয়ার পথ পরীক্ষা করুন: দরজা খোলার আগে হাত দিয়ে এর হাতল ও উপরের অংশ স্পর্শ করে দেখুন। যদি গরম মনে হয়, তবে বুঝবেন দরজার ওপাশে আগুন রয়েছে। সেক্ষেত্রে ওই দরজা খুলবেন না এবং বিকল্প পথে বের হওয়ার চেষ্টা করুন।

৬. শরীরের কাপড়ে আগুন লাগলে: যদি আপনার পরিধেয় বস্ত্রে আগুন লেগে যায়, তবে দৌড়াবেন না। দৌড়ালে বাতাসের কারণে আগুন আরও বেড়ে যাবে। সঙ্গে সঙ্গে মাটিতে শুয়ে পড়ুন এবং দুই হাত দিয়ে মুখ ঢেকে সামনে-পেছনে গড়াগড়ি করতে থাকুন যতক্ষণ না আগুন নিভে যায়। এই পদ্ধতিকে “থামুন, মাটিতে নামুন ও গড়াগড়ি দিন” বলা হয়।

আরো পড়ুন: নির্বাচন এড়াতেই কি অন্তর্বর্তী সরকারের আগুন সন্ত্রাস?

যদি আপনি ভেতরে আটকা পড়েন

  • দরজার নিচের ফাঁকাসহ সব ফাঁকা জায়গা ভেজা তোয়ালে বা কাপড় দিয়ে আটকে দিন যাতে ধোঁয়া ভেতরে প্রবেশ করতে না পারে।
  • জানালার কাছে গিয়ে উজ্জ্বল রঙের কাপড় নেড়ে বাইরের উদ্ধারকারীদের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করুন।
  • জানালার কাঁচ ভেঙে লাফ দেওয়ার চেষ্টা করবেন না, যদি না উদ্ধারকারীরা নিচে জাল পেতে থাকে।

বিভিন্ন প্রকার আগুনে করণীয়

  • বৈদ্যুতিক আগুন: বৈদ্যুতিক যন্ত্র বা ত্রুটিপূর্ণ সংযোগ থেকে আগুন লাগলে প্রথমেই বাড়ির মূল বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করুন। এই ধরনের আগুনে কখনোই পানি ব্যবহার করবেন না, এতে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে। কার্বন ডাই-অক্সাইড জাতীয় অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র এক্ষেত্রে কার্যকর।
  • তেল বা চর্বি থেকে লাগা আগুন: রান্নাঘরে তেল বা চর্বি থেকে আগুন লাগলে তাতে পানি দেবেন না। এতে আগুন আরও ছড়িয়ে পড়বে। জ্বলন্ত পাত্রটি ঢাকনা দিয়ে চেপে ধরুন অথবা তার উপর বেকিং সোডা বা লবণ ছড়িয়ে দিন।
  • গ্যাস থেকে লাগা আগুন: গ্যাসের চুল্লি বা সংযোগ থেকে আগুন লাগলে সিলিন্ডারের চাবি বা মূল সংযোগ বন্ধ করে দিন। ঘরের দরজা-জানালা খুলে দিন এবং বিদ্যুৎ সংযোগের কোনো বোতাম চালু বা বন্ধ করবেন না, কারণ একটি স্ফুলিঙ্গও বিস্ফোরণ ঘটাতে পারে।

অগ্নি দুর্ঘটনা প্রতিরোধে সতর্কতা

  • বাড়ির বিদ্যুৎ সংযোগ ব্যবস্থা নিয়মিত পরীক্ষা করুন। নিম্নমানের তার ব্যবহার করবেন না।
  • রান্না শেষে গ্যাসের চুলার চাবি বন্ধ করেছেন কি না তা নিশ্চিত করুন।
  • সহজে আগুন ধরে এমন বস্তুর পাশে বাতি, মোমবাতি বা কয়েল জ্বালাবেন না।
  • বাড়িতে ও কর্মক্ষেত্রে অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র রাখুন এবং এর ব্যবহার শিখে নিন।
  • বাইরে যাওয়ার আগে বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতির খাপ খোলা আছে কি না এবং মূল চাবি বন্ধ করা আছে কি না, তা পরীক্ষা করে নিন।

সর্বোপরি, অগ্নি নিরাপত্তা বিষয়ে নিজে সচেতন হোন এবং পরিবারের সদস্যদেরও সচেতন করুন। পূর্বপ্রস্তুতি ও সতর্কতা বহুলাংশে কমিয়ে আনতে পারে আগুনের ভয়াবহতা।

#, #, #, #, #, #, #, #, #, #, #, #, #, #, #, #, #, #, #, #, #

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *