সংসদ ভবনের সামনে মেয়াদোত্তীর্ণ জুলাই যোদ্ধা আতিকুলকে পুলিশের লাঠিপেটা

সংসদ ভবনের সামনে মেয়াদোত্তীর্ণ জুলাই যোদ্ধা আতিকুলকে পুলিশের লাঠিপেটা। 'Expired July Warrior' Atikul beaten by police outside the Parliament Building. সংসদ ভবনের সামনে মেয়াদোত্তীর্ণ জুলাই যোদ্ধা আতিকুলকে পুলিশের লাঠিপেটা। 'Expired July Warrior' Atikul beaten by police outside the Parliament Building.

আমার একটা হাত নাই, আর্টিফিশিয়াল হাত, এটাও ইউনূস সরকার ভেঙে ফেলছে: জুলাই যোদ্ধা আতিকুল ইসলাম।

বিশেষ প্রতিবেদক, দৈনিক কার্টুনুস: অবশেষে বহু আকাঙ্ক্ষিত জুলাই সনদ স্বাক্ষরিত হওয়ার মাহেন্দ্রক্ষণে সংসদ ভবন চত্বরকে জুলাই যোদ্ধাদের রক্তে রাঙিয়ে এক নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। তবে সরকারের একটি অতি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, এটা কোনো হামলা নয়, বরং জুলাই-আগস্টের সেই গোপন ষড়যন্ত্রের তথ্য যেনতেন প্রকারে ফাঁস হওয়া ঠেকাতে আয়োজিত একটি ‘শান্তি প্রতিষ্ঠা মহড়া’ মাত্র। এই মহড়ার মাধ্যমে ষড়যন্ত্রের জীবন্ত দলিল, অর্থাৎ জুলাই যোদ্ধাদের বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে যে, বেশি বাড়াবাড়ি করলে কৃত্রিম হাত কেন, আসল হাতও হাওয়া হয়ে যেতে পারে।

জানা যায়, জুলাই সনদ স্বাক্ষরের আগে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা জুলাইয়ের আসল কারিগর, অর্থাৎ আহত যোদ্ধারা সংসদ ভবনের সামনে জড়ো হয়েছিলেন কিছু ‘অপ্রয়োজনীয়’ দাবিদাওয়া নিয়ে। তাদের দাবি ছিল, যে সনদে তাদের কৃত্তিম হাতের উল্লেখ নেই, সেই সনদ তারা মানবেন না এবং সনদের আইনি বৈধতা দিতে হবে। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ক্ষুদ্রঋণের মহাজন ও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা এই ‘অনধিকার চর্চা’ দেখে যারপরনাই বিরক্ত হন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সরকারের এক গুরুত্বপূর্ণ উপদেষ্টা জানান, “স্যার বলেছেন, ‘শান্তি আনতে হলে প্রথমে অশান্তি সৃষ্টিকারীদের সরাতে হবে।’ জুলাই যোদ্ধারা জুলাইয়ের চেতনা বাস্তবায়নের পথে কাঁটা হয়ে দাড়িয়েছিল। তাদের কাছে এমন কিছু গোপন তথ্য ছিল, যা ফাঁস হয়ে গেলে কেঁচো খুঁড়তে সাপ বেরিয়ে পড়তো। তাই জাতির বৃহত্তর স্বার্থে সাপকে মাটির নিচেই রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।”

এই সিদ্ধান্তের অংশ হিসেবেই শুক্রবার দুপুরের দিকে বিশেষজ্ঞ পুলিশ বাহিনী জুলাই যোদ্ধাদের ওপর এক আকস্মিক ‘স্বাস্থ্য সচেতনতামূলক কার্যক্রম’ পরিচালনা করে। এই কার্যক্রমে তাদের ওপর আন্তর্জাতিক মানের কাঁদানে গ্যাস প্রয়োগ করে চোখ পরিষ্কার এবং লাঠিচার্জের মাধ্যমে শরীরচর্চার সুব্যবস্থা করা হয়। এই মহড়ায় জুলাই যোদ্ধা আতিকুল ইসলামের কৃত্রিম ডান হাতটি শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে উড়াল দেয়। এই বিষয়ে এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, “আমরা শুধু তাদের জায়গা ছাড়তে বলেছিলাম। কিন্তু তার হাতটা এতটাই হালকা ছিল যে, বাতাসের ধাক্কায় উড়ে গেছে। এখানে আমাদের কোনো দোষ নেই। বরং আমরা এখন তদন্ত করে দেখছি, এত নিম্নমানের কৃত্রিম হাত কোন প্রতিষ্ঠান সরবরাহ করেছে।”

এই ঘটনা সম্পর্কে একদল গবেষক দাবি করেছেন যে, জুলাই যোদ্ধারাই আসলে জুলাই-আগস্ট ষড়যন্ত্রের একমাত্র সাক্ষী। সাড়ে ৩ হাজার পুলিশ হত্যা করার মাধ্যমে যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হলো, সেই সরকার কীভাবে ক্ষমতায় এসেছে এবং কাদের সঙ্গে কী কী চুক্তি করে জুলাই-আগস্ট ষড়যন্ত্র সফল করেছে, সেইসব তথ্য এই জুলাই যোদ্ধাদের নখদর্পণে। ড. ইউনূসের ভয় ছিল, এই যোদ্ধারা সনদ স্বাক্ষরের সময় সেইসব গোপন তথ্য ফাঁস করে দিলে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হবে। তাই ‘অপারেশন সাইলেন্স’ নামের এক বিশেষ অভিযানের মাধ্যমে তাদের মুখ বন্ধ করার এই মহড়া চালানো হয়।

এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও ষড়যন্ত্রবিষয়ক বিশেষজ্ঞ ডক্টর রিজওয়ান হাসান এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “বিষয়টা অত্যন্ত পরিষ্কার। জুলাই যোদ্ধারা হলো জীবন্ত প্রমাণ। তাদের স্মৃতিতে সেইসব ঘটনা রয়েছে, যা নতুন সরকার মুছে ফেলতে চায়। সনদ হলো একটি লিখিত দলিল, যা চাইলেই পরিবর্তন করা যায়। কিন্তু এই যোদ্ধাদের স্মৃতি পরিবর্তন করা যায় না। তাই সরকার তাদের স্মৃতি নয়, বরং স্মৃতির ধারককেই সরিয়ে দিতে চেয়েছে। আতিকুলের হাত বিচ্ছিন্ন হওয়া একটি প্রতীকী ঘটনা। এটা দিয়ে বোঝানো হয়েছে, যারা জুলাই-আগস্ট ষড়যন্ত্রে সামনের কাতারে কাজ করেছে, প্রয়োজনে তাদের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কেটে নিতেও সরকার দ্বিধা করবে না।”

এই মহড়ার পর ৯০০ জন অজ্ঞাতনামা জুলাই যোদ্ধার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে, যাতে ভবিষ্যতে তারা কোনো ষড়যন্ত্র ফাঁস করার দুঃসাহস না দেখায়। রিমন চন্দ্র বর্মণ নামের একজনকে গ্রেপ্তার করে বাকিদের জন্য কঠোর বার্তাও দেওয়া হয়েছে।

সব মিলিয়ে, জুলাইয়ের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে প্রতিষ্ঠিত সরকার সেই চেতনার ধারকদের ওপর ‘শান্তি মহড়া’ চালিয়ে এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। আহত যোদ্ধারা এখন ভাবছে, যে গণতন্ত্রের জন্য তারা হাত-পা হারালো, সেই গণতন্ত্রের চাপে তাদের বাকি অঙ্গপ্রত্যঙ্গও হারাতে হবে কিনা।

#, #, #, #, #, #, #, #, #, #, #, #, #, #, #, #, #, #, #, #, #, #, #, #, #

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *