
জুলাইয়ের অস্ত্রভাণ্ডার হইতে ঝরিয়া পড়িল একখানা ম্যাগাজিন, আসিফ মাহমুদের ব্যাগে গণ-অভ্যুত্থানের স্মৃতিচিহ্ন।
নিজস্ব প্রতিবেদক: জুলাই-আগস্ট মাসে তথাকথিত গণ-অভ্যুত্থানের নামে হাজার হাজার স্বয়ংক্রিয় মারণাস্ত্র ব্যবহার করিয়া, একটি নির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতাচ্যুতকারী জুলাই ষড়যন্ত্রকারীদের গোপন অস্ত্রভাণ্ডারের একটি ক্ষুদ্র অংশ অবশেষে জনসমক্ষে আসিয়াছে। ফেসবুকীয় বিপ্লবের ডিজিটাল মহানায়ক, ‘আনইন্টেনশনাল’ ভুলের জাতীয় ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর এবং জুলাই ষড়যন্ত্র পরবর্তী অস্ত্রশস্ত্র ব্যবস্থাপনা কমিটির অলিখিত চেয়ারম্যান, মাননীয় যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা জনাব আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ওরফে একে-সজীবের হাতব্যাগে মিলল ভয়ংকর একে-৪৭ এর একটি গুলিভর্তি ম্যাগাজিন। এই ঘটনায় দেশজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হইলেও, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইহাকে ‘চশমা ভুলিয়া মোবাইল নিয়া রওনা হওয়ার’ মতই একটি সাধারণ ঘটনা বলিয়া আখ্যা দিয়াছে।
রবিবার ভোরে ‘ওআইসি ইয়ুথ ক্যাপিটাল ইন্টারন্যাশনাল প্রোগ্রাম’ নামক এক বিশেষ আনন্দভ্রমণে মরক্কো যাত্রার প্রাক্কালে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ভিআইপি টার্মিনালে এই যুগান্তকারী ঘটনাটি ঘটে। স্ক্যানার মেশিনে মাননীয় উপদেষ্টার ব্যাগ প্রবেশ করানো মাত্রই বিকট শব্দে সাইরেন বাজিয়া উঠে এবং স্ক্রিনে ভেসে ওঠে একটি সুদৃশ্য ম্যাগাজিনের ছবি, যাহা সাধারণত শান্তিপ্রিয় ছাত্র-জনতার বুকে গুলি চালাইবার কাজে ব্যবহৃত হইয়া থাকে। ঘটনার আকস্মিকতায় বিমানবন্দরের নিরাপত্তা কর্মীরা কিংকর্তব্যবিমূঢ় হইয়া পড়িলেও, জুলাই ষড়যন্ত্রের একজন শীর্ষ নেতাকে চ্যালেঞ্জ করিবার দুঃসাহস দেখাইতে পারেন নাই।
প্রত্যক্ষদর্শী এক নিরাপত্তা কর্মী নাম প্রকাশ না করার শর্তে আমাদের প্রতিবেদককে বলেন, “স্যার যখন আসিলেন, আমরা ভাবিলাম দেশের কোনো সূর্যসন্তান বিদেশ যাইতেছে। তাহার ব্যাগ আমরা কী করিয়া চেক করিব? নেতারা হইলেন ভিআইপি, তাহাদের ব্যাগে ম্যাগাজিন থাকিবে, গ্রেনেড থাকিবে, দুই-একটা রকেট লঞ্চারও থাকিতে পারে। ইহা লইয়া প্রশ্ন তোলা বেয়াদবি। তবে মেশিনটা বড়ই বেতমিজ, নেতার ব্যাগ বলিয়া খাতির করে নাই।”
ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, ম্যাগাজিন শনাক্ত হইবার পর উপদেষ্টা মহোদয় কিঞ্চিৎ বিরক্ত হইয়া ফিরিয়া আসেন এবং ব্যাগ হইতে ম্যাগাজিনটি বাহির করিয়া তাহার এক প্রটোকল অফিসারের হস্তে তুলিয়া দিয়া বলেন, “রাখিয়া আসো, বডিটা তো যেখানে রহিয়াছে, সেখানেই রাখিয়া আসো।” অতঃপর তিনি এমন ভাব করিয়া উড়োজাহাজের দিকে হাঁটা দেন, যেন তিনি ম্যাগাজিন নহে, বরং ভুলে একটি চুইংগামের প্যাকেট ব্যাগে রাখিয়াছিলেন।
আসিফ মাহমুদের ব্যাগে ম্যাগাজিন পাওয়ার ঘটনা সামাজিক মাধ্যমে ছড়াইয়া পড়িলে দেশবাসী প্রশ্ন তুলিতে শুরু করে, জুলাই-আগস্ট মাসে রাজধানীসহ সারাদেশে যে হাজার হাজার রাউন্ড গুলি বর্ষণ করিয়া শত শত নিরীহ ছাত্র-জনতাকে হত্যা করা হইয়াছিল, সেই অস্ত্রের উৎস কী? এই ম্যাগাজিনটি কি সেই বিশাল অস্ত্রভাণ্ডারেরই একটি অংশ, যাহা ভুলবশত প্রকাশ হইয়া পড়িল?
বিষয়টি লইয়া ব্যাপক সমালোচনা শুরু হইলে মরক্কোর মারাকেশ শহর হইতে মাননীয় উপদেষ্টা তাহার ২৩ লক্ষ ফলোয়ার সম্বলিত আনভেরিফায়েড আইডি হইতে একটি স্ট্যাটাস প্রদান করেন। স্ট্যাটাসে তিনি ঘটনাটিকে ‘সম্পূর্ণ আনইন্টেনশনাল’ বা অনিচ্ছাকৃত ভুল বলিয়া দাবি করেন। তিনি লিখেন, “ভোরে প্যাকিং করার সময় অস্ত্র সহ একটা ম্যাগাজিন রেখে আসলেও ভুল বশত আরেকটি ম্যাগাজিন ব্যাগেই রয়ে যায়। শুধু ম্যাগাজিন দিয়ে আমি কি করবো ভাই? ইন্টেনশন থাকলে অবশ্যই অস্ত্র রেখে আসতাম না।”
তাহার এই বক্তব্যে জনগণ আরও বিভ্রান্ত হইয়া পড়ে। একজন সচেতন নাগরিক মন্তব্য করেন, “উপদেষ্টা মহোদয় বলিতেছেন, ‘শুধু ম্যাগাজিন দিয়া কী করিব?’ কথা সত্য। আসল একে-৪৭ ছাড়া শুধু ম্যাগাজিনের কোনো মূল্য নাই। তার মানে, তাহার নিকট আসল অস্ত্রটিও রহিয়াছে! এইবার বুঝিলাম, গণ-অভ্যুত্থানের সময় কীভাবে ছাত্র নামধারী কিছু টোকাই সশস্ত্র হইয়া উঠিয়াছিল।”
এদিকে উপদেষ্টার ভুলের পক্ষে সাফাই গাহিতে আসিয়াছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা উপদেষ্টা, ভিআইপিদের ভুলের আইনগত রক্ষাকবচ, সাবেক সেনাকর্তা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “আরে, এটা জাস্ট একটা ভুল। অনেক সময় এমন হয় যে, আপনি একটা চশমা নিয়ে যাবেন কিন্তু চশমা না নিয়ে মোবাইল নিয়ে রওনা হয়ে গেছেন। উনি যদি আগে জানতে পারতেন তাহলে কোনো অবস্থাতেই এটা নিতেন না।”
তাহার এই ‘চশমা-মোবাইল’ তত্ত্বে সাংবাদিকরা আরও প্রশ্ন করিলে তিনি ঈষৎ বিরক্ত হইয়া বলেন, “নেতা হইলে অনেক সময় বিমানবন্দরে অন্যদের থেকে কিছুটা প্রিভিলেজ পায়। এই প্রিভিলেজ যেন আর কেহ না পায়, সেই ব্যবস্থা নেওয়া হইবে।” তাহার কথায় স্পষ্ট বোঝা যায়, জুলাই ষড়যন্ত্রকারীদের জন্য ভুল করা একটি প্রিভিলেজ বা নাগরিক অধিকার, যাহা সাধারণ জনগণের জন্য প্রযোজ্য নহে। সাধারণ কেহ ভুলের বশে একটি নেইল কাটার নিয়া বিমানবন্দরে গেলে যেখানে হাতকড়া পড়িতে হয়, সেখানে ষড়যন্ত্রকারী নেতা একে-৪৭ এর ম্যাগাজিন নিয়া গেলেও তাহা ‘চশমা ভোলার’ মতই নিরীহ একটি ঘটনা।
এদিকে, উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ তাহার দ্বিতীয় ফেসবুক পোস্টে আরও ভয়ঙ্কর তথ্য প্রকাশ করিয়াছেন। তিনি বিমানবন্দরের সিসিটিভি ফুটেজ ফাঁসের ঘটনায় দেশের নিরাপত্তা নিয়া গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করিয়াছেন। তিনি লিখিয়াছেন, “যেভাবে মুহূর্তের মধ্যেই দেশের প্রধান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টের সিসিটিভি ফুটেজ এজেন্সির মাধ্যমে বিদেশে অবস্থানরত কারও হাতে পৌঁছে গেল, তা রীতিমত ভয়ংকর। …গতকালকের ঘটনায় এটা বুঝতে পারলাম যে, পিস্তল কেন, মিসাইল সঙ্গে রাখলেও আমি, আপনি কেউই নিরাপদ নই।”
তাহার এই পোস্টে জনগণ স্তম্ভিত। একজন রসিক ব্যক্তি কমেন্টে লিখিয়াছেন, “উপদেষ্টা মহোদয়ের ব্যাগে মিসাইল রাখারও পরিকল্পনা ছিল বলিয়া মনে হইতেছে। তিনি দেশের নিরাপত্তা নিয়া এতটাই চিন্তিত যে, নিজেই একটি ভ্রাম্যমাণ মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেম হইয়া উঠিতে চাহিয়াছিলেন। কিন্তু ভুলবশত শুধু ম্যাগাজিনটিই নিতে পারিয়াছেন।”
সর্বশেষ প্রাপ্ত খবরে জানা গিয়াছে, জুলাই ষড়যন্ত্রকারীরা তাহাদের গোপন অস্ত্রভাণ্ডার আরও সুরক্ষিত স্থানে সরাইয়া ফেলিবার উদ্যোগ নিয়াছে। একটি বিশ্বস্ত সূত্র জানাইয়াছে, এখন হইতে বিমানবন্দরে প্রবেশের পূর্বে সকল ষড়যন্ত্রকারী নেতা নিজেদের ব্যাগ ভালো করিয়া চেক করিবেন, যেন ভুল করিয়া কোনো একে-৪৭, রকেট লঞ্চার বা মিসাইলের কোনো অংশ ব্যাগে থাকিয়া না যায়। কারণ, ষড়যন্ত্র ফাঁস হইয়া গেলে ‘চশমা-মোবাইল’ তত্ত্ব দিয়া বারবার পার পাওয়া যাইবে না।