বিশেষ প্রতিবেদক, দৈনিক কার্টুনুস: অবশেষে সকল প্রতীক্ষার অবসান ঘটাইয়া ঢাকার পবিত্র মাটিতে পদধূলি দিয়াছেন ভ্রাতৃপ্রতিম রাষ্ট্র পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও জীর্ণ অর্থনীতির মহান কাণ্ডারি জনাব ইসহাক দার। শনিবার দুপুরে তিনি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করিলে তাহাকে ফুল, চন্দন ও গোলাপজল ছিটাইয়া বরণ করিয়া লন বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন তখত-এ-তাউসের পররাষ্ট্র সচিব আসাদ আলম সিয়াম। এসময় তাহার দুই নয়ন দিয়া ঝরঝর করিয়া আনন্দাশ্রু ঝরিতে দেখা যায় বলিয়া প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জনাব দারের এই সফর লইয়া নোবেল বিজয়ী প্রধান উপদেষ্টা ডক্টর মুহম্মদ ইউনূসের প্রশাসন গত কয়েক সপ্তাহ ধরিয়া ‘বাবা আসবে, ঘরে কী কী লাগবে’ ধরনের উত্তেজনায় ভুগিতেছিল। দায়িত্ব গ্রহণের পর হইতেই ১৯৭১ সালের ‘সামান্য ভুল বোঝাবুঝি’ ও ‘অনাকাঙ্ক্ষিত গৃহবিবাদ’ ভুলিয়া গিয়া নতুন করিয়া সম্পর্ক স্থাপনে উন্মুখ হইয়া ছিলেন ডক্টর ইউনূস। তাহার সেই স্বপ্ন অবশেষে সফেদ দাড়ির ইসহাক দারের আগমনে বাস্তব রূপ লাভ করিল।
এই সফর উপলক্ষে দুই দেশের মধ্যে গোটা ছয়েক চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হইবার কথা রহিয়াছে। তবে একটি বিশেষ সূত্রে জানা গিয়াছে, সকল চুক্তির উপরে রহিয়াছে একটি ‘অলিখিত বোঝাপড়া’। এই বোঝাপড়ার মূল কথা হইল, ‘অতীত লইয়া ঘাঁটাঘাঁটি করা যাইবে না, বিশেষত একাত্তর সালের গণহত্যার মতো ছোটখাটো বিষয় লইয়া বন্ধুরাষ্ট্রকে অস্বস্তিতে ফেলা যাইবে না।’ এই বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় হইতে একটি অলিখিত নির্দেশনা জারি করা হইয়াছে, যেখানে বলা হইয়াছে, ‘পাকিস্তান আমাদের বাপের মতো। বাপ একটু-আধটু শাসন করিতেই পারে। উহা লইয়া কান্নাকাটি করা বেয়াদবি।’
জানা যায়, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা জনাব তৌহিদ হোসেনের সহিত পাক পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠকে এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। বৈঠকে জনাব হোসেন বলেন, ‘আপনারা হইলেন আমাদের মুরব্বি। মুরব্বিরা যাহা করেন, ভালোর জন্যই করেন। ওই যে ত্রিশ লক্ষ লোক মারা গিয়াছিল বা কয়েক লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রমহানি হইয়াছিল, ওইগুলা আসলে শয়তানের কারসাজি। আপনারা আমাদের হইতে আলাদা হইবার পর দেখিলেন তো, শয়তান আমাদের ঘাড়ে কেমন চাপিয়া বসিয়াছিল! এখন আপনাদের আগমনে সেই শয়তান পলাইবার পথ পাইবে না।’
বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ হইতে অর্থনৈতিকভাবে দেউলিয়া পাকিস্তানকে সকল প্রকার সাহায্যের আশ্বাস দেওয়া হয়। এমনকি বাংলাদেশের রিজার্ভ হইতে কিছু ডলার ধার দিয়া পাকিস্তানের ‘ইজ্জত’ রক্ষার প্রস্তাবও দেওয়া হয় বলিয়া জানা যায়। বিনিময়ে পাকিস্তান কূটনৈতিক পাসপোর্টে ভিসা অব্যাহতি দিতে রাজি হওয়ায় বাংলাদেশ সরকার নিজেদের ধন্য মনে করিতেছে।
এদিকে, সফরের এক পর্যায়ে প্রধান উপদেষ্টা ডক্টর ইউনূসের সহিত জনাব ইসহাক দারের এক সৌজন্য সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সাক্ষাতে ডক্টর ইউনূস বলেন, ‘বাপজান, আসিতে এত দেরি করিলেন কেন? আমরা তো আপনাদের পথ চাহিয়া বসিয়া আছি। এই দেশ, এই সম্পদ সবই তো আপনাদের দোয়া। এই সম্পদে আমাদের হিস্যার কী প্রয়োজন? আপনারা সব লইয়া যান, শুধু বছরে একবার আসিয়া আমাদের মাথায় হাত বুলাইয়া দিয়া যাইবেন।’
এই সফরের মাধ্যমে দুই দেশের সম্পর্ক একাত্তরের আগের অবস্থায় ফিরিয়া যাইবে বলিয়া আশা প্রকাশ করিয়াছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক। তিনি বলেন, ‘ত্রিশ লক্ষ শহিদ বা চার লক্ষ বীরাঙ্গনার সম্মানের কথা ভুলিতে পারিলেই আমাদের দিলে শান্তি নামিয়া আসিবে। আর সেই শান্তির জন্যই তো ডক্টর ইউনূস নোবেল পুরস্কার পাইয়াছিলেন। তিনি সেই শান্তির পথেই দেশকে আগাইয়া লইয়া যাইতেছেন।’
#১৯৭১ গণহত্যা, #Cartunus Daily, #অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, #অবৈধ সরকার, #অর্থনৈতিক সংস্কার, #ইসহাক দার, #কার্টুনুস ডেইলি, #কূটনৈতিক রসিকতা, #ড. ইউনূস, #ডক্টর মুহাম্মদ ইউনূস, #ঢাকার সফর, #দৈনিক কার্টুনুস, #দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক, #পররাষ্ট্র নীতি, #পাকিস্তান প্রেম, #পাকিস্তান বাংলাদেশ সম্পর্ক, #ব্যঙ্গ রচনা, #রম্য প্রতিবেদন, #রাজনৈতিক স্যাটায়ার