একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড: গোপালগঞ্জ গণহত্যা দিবসের আদ্যোপান্ত

একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড: গোপালগঞ্জ গণহত্যা দিবসের আদ্যোপান্ত | A Planned Massacre: The Story of Gopalganj Genocide Day. একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড: গোপালগঞ্জ গণহত্যা দিবসের আদ্যোপান্ত | A Planned Massacre: The Story of Gopalganj Genocide Day.

বিশেষ প্রতিবেদক, দৈনিক কার্টুনুস: ইতিহাসের পাতায় আবারও একটি কালো দিন যুক্ত হইয়াছে। তবে এইবার আর পাকিস্তানি হানাদার বা একাত্তরের রাজাকারদের হাতে নহে, এইবার কালো অধ্যায় রচিত হইয়াছে ‘গণতন্ত্র’ ও ‘নাগরিক অধিকার’ এর ঝান্ডা হাতে লইয়া। গত ১৬ জুলাই, ২০২৫ তারিখে ‘মার্চ টু গোপালগঞ্জ’ নামক এক ‘শান্তিপূর্ণ’ কর্মসূচিতে গোপালগঞ্জের মাটিতে রক্তের বন্যা বহাইয়া দিয়াছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) নামক এক আগাছা সদৃশ সংগঠন এবং তাহাদের ভাড়াটিয়া রক্ষকগণ। জাতি স্তম্ভিত হইয়া দেখিয়াছে, কীভাবে জাতির পিতার কবরে ‘উন্নয়নমূলক ভাঙচুর’ চালাইবার ‘গণতান্ত্রিক অধিকার’ আদায় করিতে গিয়া পাঁচটি জলজ্যান্ত মানুষকে লাশ হইতে হইয়াছে।

ঘটনার সূত্রপাত এনসিপির বালপাকনা নেতা, ফেসবুক ওয়াল গরম করা স্বঘোষিত বুদ্ধিজীবী এবং আন্তর্জাতিক ভাঁড় সমিতির আজীবন সদস্য আল্লামা হাসনাত আব্দুল্লাহ কতৃক ঘোষিত ‘মার্চ টু গোপালগঞ্জ’ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করিয়া। সংবাদ সম্মেলনে হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, “জাতির পিতার কবরখানা বড়ই অবহেলিত। উহার সংস্কার প্রয়োজন। আমরা সেখানে গিয়া কিছু সংস্কারমূলক কার্যক্রম, যেমন— দুই-চারটা ইট খসাইয়া দেখা, পিলারে ধাক্কা দিয়া উহার শক্তি পরীক্ষা করা, এবং সর্বোপরি কবরের মাটি উর্বর কিনা তাহা পরীক্ষা করিবার জন্য কিছু কোদাল ও শাবল লইয়া একটি শান্তিপূর্ণ পদযাত্রা করিব।”

এইরূপ ‘শান্তিপূর্ণ’ কর্মসূচির ঘোষণায় গোপালগঞ্জের আমজনতার হৃদয়ে আনন্দের বন্যা না বহিয়া, বহিল সন্দেহের চোরাস্রোত। তাহারা ভাবিল, যাহাদের মুখে গণতন্ত্রের খই ফোটে, তাহাদের হাতে কোদাল-শাবল কেন? তাহারা কি কবরের পাশে ফুলকপি চাষ করিতে যাইতেছে? গোপালগঞ্জের পলিমাটির সন্তান এবং প্রয়োজনে খালি হাতে অজগর সাপ ধরিবার কিংবদন্তি জনাব জব্বার শেখ হুংকার ছাড়িয়া বলিলেন, “বাপের কবর জিয়ারত করতে কোদাল লাগে না, দোয়া লাগে। আর যদি কেউ কোদাল লইয়া আসে, তবে বুঝিয়া লইতে হইবে তাহার নিয়ত খারাপ। গোপালগঞ্জের মানুষ বাঁশের লাঠি লইয়া প্রস্তুত থাকিবে।”

কথামতোই কাজ। ১৬ জুলাই সকালে শ খানেক এনসিপি জঙ্গি, মুজিববাদ মুর্দাবাদ শ্লোগান দিয়া টুঙ্গিপাড়ার দিকে অগ্রসর হইতে শুরু করে। তাহাদের হাতে দেখা যায় নানান আকৃতির কোদাল, শাবল, হাতুড়ি এবং ‘গণতন্ত্রের বিজয় সূচিত হউক’ লেখা কিছু ডিজিটাল ব্যানার। বাধা দিতে আগাইয়া আসে নিরস্ত্র গোপালগঞ্জবাসী। তাহাদের হাতে কোনো অস্ত্র ছিল না, ছিল বুকে বঙ্গবন্ধুর প্রতি ভালোবাসা আর চোখে জল।

কিন্তু এনসিপির জঙ্গিরা যখন দেখিল যে জনগণের ভালোবাসার ব্যারিকেডের সামনে তাহাদের ‘সংস্কার কার্যক্রম’ চালানো সম্ভব নহে, তখন তাহারা নিজেদের আসল রূপ প্রদর্শন করে। আড়াল হইতে বাহির হইয়া আসে তাহাদের রক্ষাকর্তা, সেনাবাহিনীর একটি বিশেষ দল।

এক পর্যায়ে জনতার প্রতিরোধ ভাঙিতে না পারিয়া সেনাবাহিনী মাইকে ঘোষণা করে, “আপনারা ছত্রভঙ্গ না হইলে আমরা আপনাদের ছত্রভঙ্গ হইয়া পড়িয়া থাকিতে সাহায্য করিব।” নিরস্ত্র জনতা যখন ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়া মাটি কামড়াইয়া পড়িয়াছিল, তখন ঢাকার কন্ট্রোলরুমে বসা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার নির্দেশে বৃষ্টির মতো গুলি চালানো হয়। মুহূর্তেই পাঁচজন শহীদ মাটিতে লুটাইয়া পড়েন। তাহাদের অপরাধ? তাহারা নিজেদের পিতার কবরকে ‘উন্নয়নমূলক ভাঙচুর’ হইতে রক্ষা করিতে চাহিয়াছিল।

এই ঘটনার পর জাতির বিবেকের দরজায় কড়া নাড়িয়াছেন দেশের খ্যাতনামা বুদ্ধিজীবী, টকশোর সাবেক ময়না পাখি, যেকোনো সরকারের আমলে ক্ষমতার উচ্ছিষ্টভোগী, ‘তেলবাজি একটি শিল্প’ আন্দোলনের পুরোধা ব্যক্তিত্ব, বর্তমান অবৈধ অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। এক টিভি সাক্ষাৎকারে তিনি হুহু করিয়া কাঁদিয়া ফেলিয়া বলেন, “আহা! এনসিপির মতো একটি গণতান্ত্রিক দলের কর্মসূচিতে বাধা দেওয়াটা কি ঠিক হইলো? তাহাদেরও তো কবর ভাঙিবার বা সংস্কার করিবার একটি নাগরিক অধিকার রহিয়াছে। আর সেনাবাহিনী তো গুলি চালাইবেই। তাহারা কি তেহারি রান্না করিতে আসিয়াছে? আমি গোপালগঞ্জের জনগণের বাড়াবাড়ির তীব্র নিন্দা জানাই, এনসিপির নেতার উপর যে ইট বৃষ্টি হলো এর সম্পূর্ন দায় গোপালগঞ্জবাসীকেই নিতে হবে।”

এদিকে, হাসনাত আব্দুল্লাহ এক গোপন আস্তানা হইতে ভিডিও বার্তায় বলিয়াছেন, “আমরা তো শুধু শক্তি পরীক্ষা করিতে চাহিয়াছিলাম। কিন্তু গোপালগঞ্জের লোকজন আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে হামলা চালাইয়া পরিস্থিতি ঘোলাটে করিয়াছে। নিজেদের পাঁচজন কর্মীকে তাহারা নিজেরাই মারিয়া এখন সেনাবাহিনীর ঘাড়ে দোষ চাপাইতেছে। আমরা ইহার তীব্র প্রতিবাদ জানাই এবং অবিলম্বে একটি আন্তর্জাতিক তদন্ত কমিটি গঠন করিয়া আমাদিগকে ক্ষমতায় বসানোর দাবি জানাই।”

এইদিকে গোপালগঞ্জের বাতাস এখনও ভারী। কান পাতলেই শোনা যায় স্বজন হারানোদের কান্না আর ঘাতকদের প্রতি তীব্র ঘৃণা। শহীদদের রক্তে ভেজা মাটি আজ বিচার চাইছে। আমরা, যাহাদের কলমই একমাত্র অস্ত্র, তাহাদের পক্ষ হইতে প্রশ্ন রাখিতে চাই, কবর ভাঙার এই নব্য ‘গণতান্ত্রিক অধিকার’ এর বৈধতা কী? নিরস্ত্র মানুষের বুকে গুলি চালাইয়া অর্জিত এই ‘শান্তি’ কাহার জন্য?

যতদিন এই প্রশ্নের উত্তর না মিলিবে, যতদিন না সেনাবাহিনী ও তাহাদের হুকুমের আসামীদের বিচার না হইবে, যতদিন না আসিফ নজরুলের মতো ‘বিবেকবানরা’ ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত না হইবে, ততদিন ১৬ই জুলাই কেবল একটি তারিখ নয়, একটি রক্তক্ষয়ী ‘গোপালগঞ্জ গণহত্যা দিবস’ হিসেবেই আমাদের হৃদয়ে গাঁথা থাকিবে। ন্যায়বিচারের দাবিতে এই কলম চলিতে থাকিবে, কারণ শহীদের রক্ত কখনো বৃথা যাইতে পারে না।

#, #, #, #, #, #, #, #, #, #, #, #, #, #, #, #, #, #, #, #, #, #

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *