সততার সুনামিতে ভাসছেন উপদেষ্টারা, দুর্নীতির টাইফুনে উড়ছে পিএসদের টাকা

‘সততার সুনামিতে’ ভাসছেন উপদেষ্টারা, ‘দুর্নীতির টাইফুনে’ উড়ছে পিএসদের টাকা Aides in a Typhoon of Corruption as Advisors Drown in a Tsunami of Honesty.‘সততার সুনামিতে’ ভাসছেন উপদেষ্টারা, ‘দুর্নীতির টাইফুনে’ উড়ছে পিএসদের টাকা Aides in a Typhoon of Corruption as Advisors Drown in a Tsunami of Honesty.

পিএস-এপিএসদের অলৌকিক ধনবৃদ্ধি; সততা প্রমাণ করিবার জন্য গণহারে নিজেদের ব্যাংক একাউন্টের স্টেটমেন্ট গলায় ঝুলাইয়া ঘুরিতেছেন উপদেষ্টারা!

বিশেষ অনুসন্ধানী ডেস্ক: জুলাই ষড়যন্ত্রের পর প্রতিষ্ঠিত হওয়া গণ-অধিকার, সাম্য ও ন্যায়ের ভিত্তিতে পরিচালিত সততার মিনার সরকারের অভ্যন্তরে এক অবিশ্বাস্য অলৌকিক ঘটনা ঘটিয়া গিয়াছে। উপদেষ্টাগণের সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) ও ব্যক্তিগত কর্মকর্তাদের আঙ্গুল সামান্য ফুলে কলাগাছ হওয়া তো কোন ছাড়, একেবারে কলার বাম্পার ফলন হইয়াছে বলিয়া খবর পাওয়া গিয়াছে। জুলাই ষড়যন্ত্রের পূর্বে যাহারা দুইবেলা ডাল-ভাত পাইত কিনা সন্দেহ, তাহারা এখন শত শত কোটি টাকার মালিক হইয়া জমিদারের নাতি-পুতির ন্যায় চালচলন শুরু করিয়াছেন। এইদিকে, এই সকল মহান পিএস-এপিএসদের মালিক উপদেষ্টাগণ নিজেদের ব্যাংক একাউন্টে মাত্র ১০ হাজার টাকার অস্তিত্ব আবিষ্কার করিয়া তীব্র ‘শক’ অবস্থায় প্রায় মূর্ছা যাইতেছেন বলিয়া জানা গিয়াছে।

ঘটনার সূত্রপাত হয় যখন যুব ও ক্রীড়া এবং স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হযরত আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া (দাঃ বাঃ) এর সহকারী একান্ত সচিব, অধুনা ‘সচিবালয়ের সুলতান’ খেতাবপ্রাপ্ত মো. মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠে। অভিযোগ উঠার সাথে সাথেই হযরত আসিফ মাহমুদ তাহাকে অব্যাহতি দিয়া নিজের সততার নিশান উড্ডীন করেন। একই পথে হাঁটেন স্বাস্থ্য উপদেষ্টা, জ্ঞানমাতা নূরজাহান বেগম। তিনিও তাহার ব্যক্তিগত কর্মকর্তা, সাবেক ছাত্র প্রতিনিধি ও বর্তমান ‘শতকোটির মহানক্ষত্র’ তুহিন ফারাবীকে দুর্নীতির গন্ধ পাইবামাত্র স্যান্ডেল হাতে তাড়া করেন।

এই বিষয়ে সততার ঠেলায় ন্যুব্জ উপদেষ্টাগণ সম্প্রতি প্রেস ক্লাবে ‘অব্যাহতিপ্রাপ্ত পিএস-এপিএস দ্বারা নির্যাতিত উপদেষ্টা সংঘ’র ব্যানারে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন।

আমার নোকিয়া ফোনের সাপের চেয়েও বড় ছিলো তার লোভ!

সংবাদ সম্মেলনে হযরত আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া (দাঃ বাঃ) বুকে হাত চাপড়াইতে চাপড়াইতে বলেন, “ভাইসব, আমি কাকে বিশ্বাস করেছিলাম! এই মোয়াজ্জেমকে আমি আমার সাধের নোকিয়া ১১১০ ফোনটা পর্যন্ত বিশ্বাস করে দিয়েছিলাম। ভাবতাম, ছেলেটা সৎ। সে আমার ফোনের ব্যালেন্স চেক করত, সময়মতো ২০ টাকা রিচার্জ করে দিত। আমি ভাবতাম, যে ছেলে ২০ টাকার হিসাব রাখে, সে কি কখনো কোটি টাকার দিকে তাকাবে? এখন খবরে দেখি, সে নাকি আমার চেয়ারের তলা দিয়া শত কোটির সুরঙ্গ খুঁড়ে ফেলেছে! জুলাই আন্দোলনের স্নাইপার ভাইদের মাথায় হাত রেখে বলতে পারবো আমি এসবের কিচ্ছুটি জানতে পারি নাই।”

এই কথা বলিয়া তিনি দুঃখে তাহার নোকিয়া ফোনটি মাটিতে আছাড় মারিতে উদ্যত হইলে পাশে বসা জ্ঞানমাতা নূরজাহান বেগম তাহাকে আটকাইয়া রাখেন।

জ্ঞানমাতা নূরজাহান বেগম টিস্যু পেপার দিয়া নিজের চোখ মুছিয়া বলেন, “ভাইজান ঠিকই বলিয়াছেন। আমার পিও তুহিন, ছেলেটা এত ভালো ছিল। প্রতিদিন আমার ব্লাড প্রেসার মাপিয়া দিত। আমি ভাবিতাম, ছেলেটা বুঝি দেশের মানুষের স্বাস্থ্যের কথা ভাবিয়া অস্থির। এখন দেখিতেছি, সে আসলে দেশের অর্থনীতির স্বাস্থ্য লইয়া ভাবিত। কীভাবে অর্থনীতির টাকা নিজের একাউন্টে চালান করা যায়, সেই চিন্তায় সে বিভোর ছিল। ছি ছি ছি! এতো প্রমান রেখে কেউ এসব করে? এভাবে আমাদের বিশ্বাস ভাঙতে পারলো?”

‘ডিজিটাল ফকির’ এর কান্না এবং ‘ধনীদের দান’ রহস্য

এইদিকে সাবেক তথ্য উপদেষ্টা ও অধুনা ‘ডিজিটাল ফকির’ খেতাবপ্রাপ্ত নাহিদ ইসলামের কান্না দেখে উপস্থিত জনতার হৃদয় বিগলিত হইয়াছে। তাহার পিএ, ‘অ্যাপের ভেতর আলাদিন’ খ্যাত আতিক মোর্শেদের বিরুদ্ধে ‘নগদ’ হইতে ১৫০ কোটি টাকা বেহাত করার অভিযোগ উঠিলে তিনি সংবাদ সম্মেলনে আসিয়া কান্নায় ভাঙিয়া পড়েন।

হুহু করে কাঁদতে কাঁদতে নাহিদ ইসলাম বলেন, “আমি কী পাপ করিয়াছিলাম! আতিককে আমি নিজ সন্তানের মতো দেখিতাম। সে প্রতিদিন সকালে আমার জন্য দুটি টোস্ট বিস্কুট আনিত। খরচ বাঁচানোর জন্য মাখনও চাহিতাম না। আর সেই ছেলে আমার চেয়ারের পাশে বসিয়া শত কোটির কারবার করিয়া ফেলিল? আমি কিছুই টের পাইলাম না! আমার একাউন্ট চেক করিয়া দেখেন, মাত্র দশ হাজার টাকা পড়িয়া আছে। এই টাকা দিয়া আমি গত তিন মাস ধরিয়া সভা, সমাবেশ, রিকশা ভাড়া, কর্মীদের বিরিয়ানি সবই চালাইতেছি। এখন আপনারাই বলেন, আমার কী দোষ?”

তবে এই কান্নার মধ্যেই ঘি ঢালিয়া দিয়াছেন গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খাঁন। তিনি ফেসবুক স্ট্যাটাসে প্রশ্ন তুলিয়াছেন, নাহিদ ইসলাম দায়িত্বে থাকাকালীন কেন তাহার পিএ-র বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেন নাই? রাশেদ খাঁন আরও বলেন, “নাহিদ ভাইয়ের একটা কথা আমার কানে বাজে- ‘আমাদের ডোনেট করছে ধনীরা’। এখন প্রশ্ন হইলো, এই ধনীরা কারা? উনার পিএ আতিক সাহেব ও তাহার স্ত্রীর মতো নবগঠিত ধনীরাই কি সেই ডোনার?”

অনুসন্ধানে আরও জানা গিয়াছে, ‘অ্যাপের ভেতর আলাদিন’ আতিক মোর্শেদ ক্ষমতার দাপটে ‘নগদ’ ভবনের ভেতরেই প্রেমের তাজমহল বানাইয়া নিজের বেগম জাকিয়া সুলতানা জুঁইকে বসিয়েছেন নগদের ম্যানেজার (কমপ্লায়েন্স) পদে। নিজেও কোনো পদে না থাকিয়া নগদের ছয় তলায় অদৃশ্য চেয়ারে বসিয়া কলকাঠি নাড়েন। এমনকি নগদের ডেপুটি সিইও-কে ডিবি পুলিশ আটক করিলেও আতিকের এক ফুঁৎকারে তিনি কারাগারের পরিবর্তে সরাসরি বাসায় চলিয়া যান, যাহা আলাদিনের চেরাগের দৈত্যের ক্ষমতাকেও হার মানায়।

দুদকের অসহায়ত্ব ও নতুন সমিতির আত্মপ্রকাশ

এদিকে, ‘যুব অধিকার পরিষদ’ খালি মানিব্যাগ ও ল্যাংড়া আম হাতে নিয়া ‘মার্চ টু দুদক’ কর্মসূচি পালন করিলে দুদকের চেয়ারম্যান জনাব ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন সাংবাদিকদের বলেন, “বিষয়টি আমাদের নজরে আসিয়াছে। আমাদের গোয়েন্দা ইউনিট অভিযোগের গভীরে সাঁতার কাটিতেছে। আশা করি শিগগিরই আপনারা কিছু একটা জানিতে পারিবেন… হয়তো বা!”

এই সকল ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে, দেশের সকল দুর্নীতিগ্রস্ত পিএস-এপিএসগণ ঐক্যবদ্ধ হইয়া ‘বাংলাদেশ শতকোটিপতি পিএস-এপিএস মালিক সমিতি’ নামে একটি সংগঠন তৈরি করিয়াছে। গতকাল এক পাঁচতারা হোটেলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের নব নির্বাচিত সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, “আমরা উপদেষ্টাদের ছায়াতলে থাকিয়া সততা ও নিষ্ঠার সহিত দুর্নীতি করিয়া উপদেষ্টাদের সেবা করিয়া যাইতেছি। ছোটখাটো কিছু ভুলের জন্য আমাদের দুর্নীতির খবর প্রকাশ হইয়া গেলে উপদেষ্টারা নিজেদের পশ্চাৎদেশ বাঁচাইতে অমানবিক ভাবে আমাদের পশ্চাৎদেশে বাঁশ দিয়া যাইতেছে। আমাদের সাথে এই অন্যায় করিতে পারিতেছে কারন সাংবিধানিকভাবে আমরা সুরক্ষিত নই। আমরা আমাদের কাজের স্বীকৃতি এবং সিকিউরিটি চাই।”

সর্বশেষ খবরে জানা গিয়াছে, উপদেষ্টাগণ নিজেদের সততা প্রমাণ করিবার জন্য গণহারে নিজেদের ব্যাংক একাউন্টের স্টেটমেন্ট গলায় ঝুলাইয়া ঘুরিতেছেন। অন্যদিকে, তাহাদের পিএস-এপিএসগণ সেই টাকায় সুইস ব্যাংকের নতুন শাখা খোলার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করিতেছেন।

আপনার মতামত জানান

By Cartunus Daily

Cartunus Daily delivers cartoons that add a touch of humor and perspective to the latest happenings in Bangladesh. Our goal is simple: to make you smile. We’re not connected to any brand, business, or public figure—just here for some fun & fresh insights.