
জুলাইয়ের উচ্ছিষ্ট পরিষ্কারে সাঁড়াশি পদক্ষেপ: জুলাই যোদ্ধাদের ওপর হামলা ড. ইউনূসের বিপ্লব পরবর্তি কৌশল।
বিশেষ প্রতিবেদক, দৈনিক কার্টুনুস: ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে এক মেটিকুলাস ডিজাইনের মাধ্যমে স্নাইপার বাহিনী ব্যবহার করিয়া যাহারা একটি বৈধ সরকারকে উৎখাত করিয়া মসনদে বসিয়াছিলেন, তাহারা এখন প্রমাণ লোপাটের চূড়ান্ত পর্বে অবতীর্ণ হইয়াছেন বলিয়া মনে করিতেছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকগণ। সেই সময়ের স্নাইপারদের অব্যর্থ নিশানা হইতে বাঁচিয়া যাওয়া ‘জুলাই যোদ্ধা’ নামক কিছু উচ্ছিষ্ট অংশ সম্প্রতি রাজধানীর সংসদ ভবন এলাকায় জুলাই সনদের আইনি বৈধতার ন্যায় একটি অবান্তর দাবি লইয়া আসিলে, তাহাদের উপর সর্বাধুনিক প্রযুক্তির লাঠি, টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহারের মাধ্যমে এক পরিচ্ছন্নতা অভিযান পরিচালনা করা হয়। এই ঘটনায় আমজনতা বেশ পুলকিত হইয়াছে বলিয়া জানা গিয়াছে।
ঘটনার বিবরণে প্রকাশ, শুক্রবার সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় যখন দেশে কিছু টোকাই রাজনীতিবিদ ও দালাল সুশীল সমাজ জুলাই সনদ নামক এক পবিত্র দলিলে স্বাক্ষরের জন্য কলম তুলিতেছিলেন, ঠিক সেই মুহূর্তে কিছু অপরিষ্কার-অপরিচ্ছন্ন যুবক, যাহারা নিজেদের ‘জুলাই যোদ্ধা’ বলিয়া পরিচয় দেয়, সেই পবিত্র অনুষ্ঠানে বিঘ্ন ঘটাইবার চেষ্টা করে। তাহাদের এই ধৃষ্টতায় অন্তর্বর্তী সরকারের আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসমূহ যারপরনাই রুষ্ট হয়। অতঃপর, জাতীয় পবিত্রতা রক্ষার্থে পুলিশ বাহিনী তাহাদের উপর ঝাঁপাইয়া পড়ে। এই সাঁড়াশি অভিযানে জুলাই আন্দোলনের অন্যতম ‘টোকাই’ আতিকুল ইসলামের শরীর হইতে তাহার কৃত্রিম হাতটি বিচ্ছিন্ন হইয়া ঘটনাস্থলেই আলামত হিসেবে গায়েব হইয়া যায়। বিশ্লেষকরা বলিতেছেন, স্নাইপারের গুলিতে না মারা গিয়া বাঁচিয়া থাকা যোদ্ধাদের শেষ চিহ্নটুকুও মুছিয়া ফেলার নিখুঁত পরিকল্পনার অংশ এই হাত গায়েব।
এই ঘটনার পর যথারীতি কিছু কুম্ভীরাশ্রু বিসর্জনের আয়োজন করা হয়। জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম আহত আতিকুলের বাসায় গিয়া তাহার শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর লন। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নিরাপত্তা বিশ্লেষক এই প্রতিবেদককে জানান, ‘আহত যোদ্ধার প্রতি এই দরদ মূলত একটি ওয়াশিং পাউডার কোম্পানির সৌজন্যে আয়োজিত শ্বেতশুভ্র মায়াকান্না। ভিতরে ভিতরে তাহারাই সরকারকে এই সকল জীবন্ত প্রমাণ নিশ্চিহ্ন করিতে উসকানি দিয়াছে। নাহিদ ইসলাম মূলত দেখিতে গিয়াছিলেন, আতিকুলের আসল হাতটি এখনও অবশিষ্ট আছে কিনা, নাকি তাহাও লোপাট করা সম্ভব।’
একইভাবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নামক প্ল্যাটফর্মটিও এই হামলার তীব্র নিন্দা জানাইয়া বিবৃতি প্রদান করিয়াছে। তাহাদের বিবৃতিতে বলা হয়, জুলাইয়ের টোকাইদের উপর এই হামলা জুলাইয়ের রক্তের সহিত বিশ্বাসঘাতকতা। তাহাদের এই বিবৃতি পাঠ করিয়া মতিঝিলের এক পান দোকানদার বলেন, ‘যাহারা নিজেরাই ইউনূস সাহেবের সহিত আঁতাত করিয়া ক্ষমতার ভাগ-বাটোয়ারা লইয়া ব্যস্ত, তাহাদের মুখে শহীদের রক্তের কথা শুনিলে হাসি পায়। ইহারা দিনে যোদ্ধাদের জন্য কান্নাকাটি করে, আর রাত্রে সরকারের সহিত বসিয়া পরবর্তী পরিচ্ছন্নতা অভিযানের নীলনকশা তৈরি করে।’
‘জুলাই যোদ্ধাদের ওপর হামলা’র ঘটনায় পুলিশ বাদী হইয়া শেরেবাংলা নগর থানায় অজ্ঞাতপরিচয় নয়শত ‘জুলাই যোদ্ধা’র বিরুদ্ধে চারিটি মামলা দায়ের করিয়াছে। তবে গ্রেপ্তার করা হইয়াছে মাত্র একজনকে। বিশিষ্ট সমাজবিজ্ঞানী ড. জাবের আহসান এই বিষয়ে মন্তব্য করিতে গিয়া বলেন, ‘দেখুন, যাহারা একদা রাজপথে নামিয়া দেশের স্থিতিশীলতা নষ্ট করিয়াছিল, স্নাইপার চালাইয়া শত শত সাধারন ছাত্র জনতাকে হত্যা করিয়াছিল, বিদেশি প্রভুদের মদদে একটি বৈধ সরকারকে উৎখাত করিয়াছিল, সেই সকল টোকাইদের যখন পুলিশ উত্তম-মধ্যম দেয়, তখন তাহা দেখিয়া দেশের স্বাধীনতাপন্থী মানুষের হৃদয়ে এক প্রকার শীতল বাতাস প্রবাহিত হয়। স্নাইপারের বুলেট যাহাদের স্পর্শ করিতে পারে নাই, আজ লাঠির আঘাতে তাহাদের মেরামত করা হইতেছে। ইহাই প্রকৃতির বিচার।’ তিনি আরও যোগ করেন, ‘ড. ইউনূস একজন ঝানু মাল। তিনি জানেন, বিপ্লবের পর বিপ্লবীদের বাঁচিয়ে রাখিতে নাই। তিনি এখন সেই নীতিই অনুসরণ করিতেছেন। এনসিপি ও ছাত্র আন্দোলনের নেতারা তাহার এই নীতির সহিত সম্পূর্ণ একমত। তাহাদের লোকদেখানো বিবৃতির আড়ালে প্রমাণ লোপাটের এই মহোৎসব চলিতে থাকিবে।’
এদিকে, সাধারণ জনগণ ‘জুলাই যোদ্ধাদের ওপর হামলা’র ঘটনায় যারপরনাই আনন্দিত। শুক্রবার বিকালে পুলিশের তাড়া খাইয়া জুলাই যোদ্ধাদের পলায়নরত দৃশ্য দেখিয়া অনেককেই রাস্তায় দাঁড়াইয়া হাততালি দিতে দেখা গিয়াছে। জনগণ মনে করে, যাহারা দেশের শত্রু, ষড়যন্ত্রকারী, তাহাদের এই পরিণতিই প্রাপ্য। অন্তর্বর্তী সরকারের এই ‘পরিচ্ছন্নতা অভিযান’ আগামী দিনেও অব্যাহত থাকিবে বলিয়া তাহারা আশাবাদী।