বদরুদ্দীন উমর – ইতিহাসচর্চার এক মহীরুহের বিদায়: যে রণাঙ্গনে সেনাপতি হওয়া হলো না, কলম দিয়েই চালালেন আজন্ম লড়াই
বিশেষ প্রতিবেদক, দৈনিক কার্টুনুস: ইতিহাস বিকৃতি জগতের এক অপূরণীয় ক্ষতি হইয়া গেল। পাকিস্তানতত্ত্বের একনিষ্ঠ সাধক, ইতিহাসের স্বঘোষিত পোস্টমর্টেম বিশেষজ্ঞ এবং বিকল্প ইতিহাসচর্চার মুকুটহীন সম্রাট বদরুদ্দীন উমর (৯৪) ইহলোক ত্যাগ করিয়াছেন। রোববার সকালে ঢাকার এক বিশেষায়িত হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তাহার মৃত্যুতে বিশ্বের সকল পাকিস্তানপ্রেমী, ইতিহাস সংশোধক এবং মুক্তিযুদ্ধকে ‘গ্যাঞ্জাম’ মনে করা গোষ্ঠীর মধ্যে গভীর শোকের ছায়া নামিয়া আসিয়াছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গিয়াছে, জনাব উমরের জীবনের একমাত্র বড় আফসোস ছিল ১৯৭১ সালের রণাঙ্গনে সরাসরি অংশগ্রহণ করিতে না পারা। তাহার এক ঘনিষ্ঠ (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) ইতিহাসবিদ বন্ধু জানান, একাত্তরের উত্তাল দিনগুলিতে তিনি নাকি রাজাকার কমান্ডারের পদের জন্য আবেদনপত্রও দাখিল করিয়াছিলেন। সেই আবেদনপত্রে তিনি উল্লেখ করেন, “বুদ্ধিজীবী হত্যার মতো সূক্ষ্ম কার্য সম্পাদনে আমার চাইতে যোগ্য প্রার্থী আর দ্বিতীয়টি মিলিবে না। তাছাড়া, মুক্তিকামী বাঙালীদের শায়েস্তা করিবার উদ্ভাবনী কৌশল আমার মস্তিষ্কে গিজগিজ করিতেছে।” কিন্তু তৎকালীন পাকিস্তানি প্রশাসন তাহার আবেদনপত্রখানা আমলে না লইয়া জানায়, “আপনাকে দিয়া বন্দুকের চাইতে কলমের কাজই ভালো হইবে। আপনি মুক্তিকামী জনতার মনোবল ভাঙিয়া দিবার জন্য যাহা লিখিবেন, তাহা হাজারটা বুলেটের চাইতেও বেশি কার্যকর হইবে।”
কর্তৃপক্ষের সেই আদেশ তিনি শিরোধার্য করিয়াছিলেন। যে সুযোগ বদরুদ্দীন উমর রণাঙ্গনে পান নাই, সেই ক্ষোভ তিনি উগরাইয়া দিয়াছেন তাহার লেখনীতে। দীর্ঘ পাঁচ দশক ধরিয়া তিনি একনিষ্ঠভাবে প্রমাণ করিবার চেষ্টা করিয়াছেন যে, মুক্তিযুদ্ধ বলিয়া কিছুই হয় নাই, যাহা হইয়াছে তাহা একটি সামান্য ভুল বোঝাবুঝি। তাহার গবেষণার মূল বিষয় ছিল, “মুক্তিযুদ্ধের ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ ইতিহাসই মিথ্যা।” এই বিষয়ে তিনি একটি অপ্রকাশিত গবেষণাপত্রও তৈরি করিয়াছিলেন, যাহার শিরোনাম ছিল, ‘আমার চোখে একাত্তর: কী হইতে পারিত, আর কী হইল!’
এই মহান তাত্ত্বিকের মতে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে মুক্তিযুদ্ধের মহানায়ক বানানো ছিল “ইতিহাসের আবর্জনা”। বদরুদ্দীন উমর প্রায়শই তাহার শিষ্যদের বলিতেন, “আরে, মুজিব কিসের জাতির পিতা? আসল পিতা তো অন্য দেশে বসিয়া ছিলেন।” তাহার এই সকল বক্তব্যে অনুপ্রাণিত হইয়া দেশের তরুণ প্রজন্মের একটি ক্ষুদ্র অংশ ইতিহাসের মূলধারার বাহিরে গিয়া ‘বিকল্প সত্য’ অনুসন্ধানে ব্রতী হইয়াছে।
তাহার মৃত্যুতে ‘আন্তর্জাতিক ইতিহাস পুনঃলিখন ও সংস্কার সমিতি’ গভীর শোক প্রকাশ করিয়াছে। সমিতির মহাসচিব, বিশ্ববিখ্যাত ইতিহাসবিদ ও প্রত্নতাত্ত্বিক ডক্টর চুদলিংপং চৌধুরী এক বিবৃতিতে বলেন, “বদরুদ্দীন উমর সাহেব ছিলেন আমাদের বাতিঘর। কীভাবে কোনো প্রমাণ ছাড়াই একটি প্রতিষ্ঠিত সত্যকে বছরের পর বছর ধরিয়া মিথ্যা প্রমাণ করিবার সাধনা করিতে হয়, তাহা আমরা তাহার নিকট হইতেই শিখিয়াছি। তাহার মৃত্যুতে ইতিহাস বিকৃতি শিল্পে যে শূন্যতার সৃষ্টি হইল, তাহা সহস্র বছরেও পূরণ হইবার নহে।”
তিনি আরও বলেন, “উমর সাহেব প্রায়ই বলিতেন, তিনি নাকি মুক্তিযুদ্ধের সময় ঢাকার রাস্তায় নির্বিঘ্নে ঘুরিয়া বেড়াইতেন। পাকিস্তানি সেনারা নাকি তাহাকে দেখিয়া স্যালুট ঠুকিত। কারণ তাহারা জানিত, এই ব্যক্তি বন্দুক হাতে না লইলেও তাহাদের উদ্দেশ্য সাধনে বড় ভূমিকা রাখিতেছে।”
জীবদ্দশায় তিনি সকল প্রকার রাষ্ট্রীয় পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করিয়া নিজের ‘মহান আদর্শের’ প্রতি অবিচল ছিলেন। তাহার মতে, যে রাষ্ট্র মুক্তিযুদ্ধের ‘মিথ্যা’ ইতিহাসের উপর দাঁড়াইয়া আছে, সেই রাষ্ট্রের নিকট হইতে কোনো পুরস্কার গ্রহণ করা তাহার আদর্শের সহিত বিশ্বাসঘাতকতা।
বদরুদ্দীন উমরের মৃত্যুর পর এখন একটাই প্রশ্ন ঘুরপাক খাইতেছে, ইতিহাস বিকৃতির এই মহান দায়িত্ব এখন কে কাঁধে তুলিয়া লইবেন? উমরের অসংখ্য শিষ্য থাকিলেও তাহার মতো এতটা নিষ্ঠা, এতটা পাকিস্তানপ্রেম এবং এতটা নির্লজ্জভাবে সত্যকে অস্বীকার করিবার সাহস আর কাহার আছে? জাতি আজ এক মহান ‘সত্য-বিরোধী’কে হারাইল।
#Cartunus Daily, #ইতিহাস বিকৃতকারী, #ইতিহাস বিকৃতি, #এক পাকিস্তান, #কার্টুনুস ডেইলি, #জঙ্গিবাদ, #দৈনিক কার্টুনুস, #পাকিস্তানপন্থী, #বদরুদ্দীন উমর, #বিতর্কিত লেখক, #মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১, #স্বাধীনতা বিরোধী