গুলিতে চুলে আগুন: গুম-হত্যা নিয়ে ক্যাঙ্গারু আদালতে তাজুল ইসলামের মিথ্যাচার

গুলিতে চুলে আগুন: গুম-হত্যা নিয়ে ক্যাঙ্গারু আদালতে তাজুল ইসলামের মিথ্যাচার। Bullet Sets Hair on Fire: Exposing Tajul Islam's Lies on Killings and Disappearances. গুলিতে চুলে আগুন: গুম-হত্যা নিয়ে ক্যাঙ্গারু আদালতে তাজুল ইসলামের মিথ্যাচার। Bullet Sets Hair on Fire: Exposing Tajul Islam's Lies on Killings and Disappearances.

ক্রসফায়ারের গুলিতে চুলে আগুন? ক্যাঙ্গারু কোর্টে পদার্থবিদ্যাকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিলেন প্রধান কৌশুলী!

বিশেষ প্রতিবেদক, দৈনিক কার্টুনুস: রাজধানীর আন্তর্জাতিক মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্রে, থুক্কু, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে গতকাল এক ঐতিহাসিক মুহূর্তের অবতারণা হয়। মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার যুক্তিতর্কের এক পর্যায়ে রাষ্ট্রপক্ষের মহাজ্ঞানী প্রধান কৌশুলী তাজুল ইসলাম এমন এক বৈজ্ঞানিক সত্য উন্মোচন করেছেন, যা শুনে আইজ্যাক নিউটন থেকে আলবার্ট আইনস্টাইন পর্যন্ত সকল বিজ্ঞানীর আত্মা লজ্জায় সংকুচিত হয়ে পড়েছে বলে জানা গেছে। আদালতে এক শ্বাসরুদ্ধকর বর্ণনায় তিনি জানান, শত শত মানব নিধনে অভিজ্ঞ এক দক্ষ শুটার নাকি একেবারে কাছ থেকে গুলি করেও এক অচেতন ব্যক্তির মাথায় তা লাগাতে পারেননি! গুলিটি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে চুলে লাগে এবং সাথে সাথে দাউদাউ করে আগুন জ্বলে ওঠে।

এই যুগান্তকারী আবিষ্কারের পর থেকেই দেশের বিজ্ঞানী মহলে আনন্দের বন্যা বয়ে যাচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন পদার্থবিজ্ঞানী জ্ঞানতাপস মুহাম্মদ ইব্রাহীম বলেন, আমরা তো এতদিন জানতাম, বুলেট ঘর্ষণে যে তাপ উৎপন্ন করে, তাতে শুকনো খড়েও আগুন লাগানো কঠিন। আর সেখানে ঝাঁকড়া চুলে আগুন! এ তো রীতিমতো নোবেল পুরস্কার পাওয়ার মতো আবিষ্কার। প্রধান কৌশুলী মহোদয় একাধারে আইন ও পদার্থবিজ্ঞানের সকল জট খুলে দিয়েছেন। পদার্থবিজ্ঞানের জগতে এটিকে এখন থেকে ‘তাজুল-প্রভাব’ নামে চিহ্নিত করা হবে। আমরা সরকারের কাছে আবেদন জানাচ্ছি, স্কুলের পাঠ্যবই থেকে ঘর্ষণ ও তাপের পুরোনো সূত্রগুলো বাতিল করে এই নতুন ও যুগান্তকারী তত্ত্বটি অন্তর্ভুক্ত করা হোক।

চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলামের বয়ান থেকে জানা যায়, এক ব্যক্তিকে প্রথমে বিশেষ সিডেটিভ পুশ করে অচেতন করা হয়েছিল, যাতে তিনি সামান্য প্রতিরোধও করতে না পারেন। এরপর একজন পেশাদার শুটার, যার হাতের নিশানা বাজপাখির চেয়েও ক্ষুরধার বলে কথিত আছে, তিনি পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক দূরত্ব থেকে তার মাথায় গুলি করেন। কিন্তু বিস্ময়করভাবে, বুলেটটি মাথা নামক অতি পরিচিত টার্গেটকে পাশ কাটিয়ে নিরীহ চুলের গোছায় আঘাত হানে। আর আঘাত হানার সাথে সাথেই সেখানে সৃষ্টি হয় এক অগ্নিকাণ্ড। প্রত্যক্ষদর্শীরা নাকি এই দৃশ্য দেখে হাসাহাসি করে বলেছিলেন, আরে দেখছিস, হারামজাদার চুলে আগুন ধরে গেল!

এই বয়ান কয়েকটি গুরুতর প্রশ্ন সামনে এনেছে। দেশের শীর্ষস্থানীয় সামরিক কৌশল, অস্ত্রশস্ত্র এবং সরঞ্জাম বিশেষজ্ঞ লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) এস এম কামরুল হাসান বলেন, একজন পেশাদার শুটার, যিনি অবলীলায় মানুষ মারতে পারেন, তিনি একজন প্রায় ঘুমন্ত বা অচেতন মানুষের মাথায় গুলি লাগাতে পারলেন না, এটা মানা কঠিন। হতে পারে, ওই ব্যক্তির মাথায় এক অদৃশ্য চৌম্বকক্ষেত্র ছিল, যা ধাতব বুলেটকে বিকর্ষণ করে চুলের দিকে ঠেলে দিয়েছে। অথবা, শুটার হয়তো জীবনের প্রথম গুলিটি চালাচ্ছিলেন, তাই হাত কাঁপছিল। তবে সবচেয়ে সম্ভাবনাময় ব্যাখ্যা হলো, পুরো ঘটনাটাই বানোয়াট ও নির্জলা মিথ্যা।

এদিকে, দেশের প্রখ্যাত ত্বক ও কেশ বিশেষজ্ঞ তসলিমা খাতুন এই ঘটনায় গভীর বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, মানবদেহের চুলে কেরাটিন নামক প্রোটিন থাকে। আগুন ধরতে গেলে এর জন্য সরাসরি শিখা এবং অন্ততপক্ষে ২৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার প্রয়োজন। একটি সাধারণ বুলেট সেকেন্ডের ভগ্নাংশের জন্য চুলের সংস্পর্শে এসে এত তাপমাত্রা কীভাবে তৈরি করলো, এটা এক বিরাট রহস্য। ওই ব্যক্তির চুলে কি কোনো দাহ্য তরল মাখা ছিল?  নাকি তিনি হলিউডের ‘গোস্ট রাইডার’ সিনেমার ভক্ত ছিলেন? বিষয়টি গবেষণার দাবি রাখে।

তবে সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর ব্যাখ্যা দিয়েছেন দেশের একমাত্র আধিভৌতিক পদার্থবিজ্ঞানী কাইয়ুম চৌধুরী। তিনি বলেন, এখানে সাধারণ পদার্থবিজ্ঞানের সূত্র কাজ করবে না। ওই ব্যক্তির চুল ছিল ‘অগ্নিকেশ’। পৌরাণিক কাহিনীতে যেমন জটায়ুর কথা বলা আছে, তেমনি এই চুলও ছিল স্বয়ংক্রিয় দাহ্য ক্ষমতাসম্পন্ন। বুলেট তার কাছাকাছি আসতেই চুলের তেজস্ক্রিয় কণাগুলো স্বপ্রণোদিত হয়ে জ্বলে উঠেছে। আদালতের কাছে আমার আবেদন, ওই চুল উদ্ধার করে পারমাণবিক শক্তি কমিশনে পাঠানো হোক। হয়তো বাংলাদেশ নতুন এক জ্বালানি শক্তির উৎস পেয়ে যাবে। এই ‘অগ্নিকেশ’ দিয়ে হয়তো গোটা দেশের বিদ্যুৎ চাহিদা মেটানো সম্ভব। আমাদের আর অন্য কোনো বিদ্যুৎকেন্দ্রের দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে না।

ক্রসফায়ারের গুলিতে চুলে আগুন লাগা বিষয়ে জানতে ঢাকার ভিন্ন ভিন্ন এলাকার সাধারণ মানুষের সাথে কথা বলা হয়। মতিঝিলের ঝিলপাড়ের প্রবীণ চা-দোকানি মতিন মিয়া কপালে ভাঁজ ফেলে বলেন, আমাগো চুল তো খালি ঝইরাই পড়ে, আগুন তো দূরের কথা, বাতাসেই উড়ে যায়। এই সব বড় বড় মানুষের আজগুবি কথা বাপু!”

সকলের ক্ষুদ্র মস্তিষ্কে একটি সরল বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাই উঁকি দিচ্ছে। একটি সিসা বা তামার বুলেট কোনোভাবেই চুলে আগুন ধরাতে পারে না, যদি না সেটি ট্রেসার রাউন্ড বা বিশেষ কোনো দাহ্য পদার্থযুক্ত বুলেট হয়, যা ক্রসফায়ারে ব্যবহারের কথা নয়। বুলেটটি চুল ভেদ করে যাওয়ার সময় যে সামান্য তাপ উৎপন্ন হয়, তা চুলকে বড়জোর সামান্য ঝলসে দিতে পারে, কিন্তু চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বর্ণিত ‘দাউদাউ করে জ্বলে ওঠা’ আগুনের জন্য তা একেবারেই অপ্রতুল। আদালতে এমন অবৈজ্ঞানিক ও গাঁজাখুরি গল্পের অবতারণা মূলত বিচারিক প্রক্রিয়াকে কতটা প্রহসনে পরিণত করা হয়েছে, তারই এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তবে তাজুল ইসলামের এই আবিষ্কার যদি সত্যি হয়, তবে ভবিষ্যতে হয়তো দেখা যাবে, দিয়াশলাইয়ের বদলে মানুষ মাথার চুল দিয়েই চুলা ধরাচ্ছে।

#, #, #, #, #, #, #, #, #, #, #, #, #, #, #, #, #, #, #, #, #, #

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *