আগস্টের ‘দরবেশ’ জুনে এসে নবাব: লাশের উপর দিয়ে গেল প্রধান উপদেষ্টার ভিআইপি প্রটোকল | The 'Dervish' of August Becomes the 'Nawab' of June: Dr. Yunus's Protocol Motorcade Passes Over a Dead Body.আগস্টের ‘দরবেশ’ জুনে এসে ‘নবাব’: লাশের উপর দিয়ে গেল ড. ইউনূসের প্রটোকল গাড়ি | The 'Dervish' of August Becomes the 'Nawab' of June: Dr. Yunus's Protocol Motorcade Passes Over a Dead Body.

নিজস্ব প্রতিবেদক: ধরিত্রীর বুকে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হইয়াছে। একদিকে যখন টেকনিক্যাল মোড়ে এক অভাগা নাগরিকের বুকের উপর দিয়া বাস চলিয়া গিয়াছে এবং সেই লাশের উপরই গাড়িটি ৩০ মিনিট ধরিয়া দাঁড়াইয়া থাকিয়াছে, তখন অন্যদিকে সেই পথ দিয়াই ‘সাধারণ’ মানুষের বেশে চলাচল করিয়াছেন এক ‘অসাধারণ’ ফেরেশতা। এই যুগান্তকারী ঘটনা দেখিয়া আসমানের দেবতারাও নাকি তৎক্ষণাৎ নিজ নিজ প্রোফাইল পিকচার পরিবর্তন করিয়া এই ফেরেশতার ছবি লাগাইয়া দিয়াছেন। এই ফেরেশতা আর কেহ নহেন, তিনি হইতেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান, গ্রামীণ ব্যাংকের বিশ্ববিখ্যাত কিস্তিবাজ, জিরোতত্ত্বের জনক ও মাইনাস সূত্রের ফেরিওয়ালা, গণতন্ত্রের স্নাইপার ও সংস্কারের কসমেটিক সার্জন অধ্যাপক ডক্টর মুহাম্মদ ইউনূস হাফিজাহুল্লাহ

ঘটনার সূত্রপাত গত ২৮ জুন, ২০২৫। দুপুর ১২:১৫ মিনিটে টেকনিক্যাল মোড়ে এক হৃদয়বিদারক দুর্ঘটনা ঘটে। একটি বাস নিয়ন্ত্রণ হারাইয়া ফুটপাতে উঠিয়া যায় এবং এক পথচারীকে চাপা দেয়। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হইল, চাপা দেওয়ার পরও বাসটি সেখানেই থামিয়া থাকে। আশেপাশে পুলিশ, উৎসুক জনতা, এমনকি ট্রাফিকের রেকার থাকা সত্ত্বেও বাসটি সরানো হয় নাই। কেন? কারণ, সেই রাস্তা দিয়া তখন ‘ভিভিআইপি প্রটোকল’ নামক এক ঐশ্বরিক কাফেলা আসিতেছিল। আর সেই কাফেলার নেতৃত্বে ছিলেন স্বয়ং ড. ইউনূস।

এই ঘটনায় দেশজুড়িয়া তোলপাড় শুরু হইলে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় হইতে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার ‘সত্যকে ধামাচাপা দেওয়ার জাতীয় পুরস্কার’ প্রেস সচিব, ডাহা মিথ্যার পাইকারি বিক্রেতা, আমতা আমতা বিদ্যার গোল্ড মেডালিস্ট, ডাস্টবিন পাগলা জনাব শফিকুল আলম বলেন, ‘আপনারা মিডিয়ার লোকজন সব কিছুতেই ভুল বোঝেন। প্রধান উপদেষ্টা মহোদয় কোনো ভিআইপি প্রটোকল নেন নাই। তিনি লাশ দেখিয়া আবেগাপ্লুত হইয়া পড়িয়াছিলেন। তিনি চাহিয়াছিলেন, লাশটি যেন ৩০ মিনিট ধরিয়া তাহার গাড়ির সামনে থাকিয়া সম্মান গ্রহণ করে। ইহা লাশের প্রতি উনার অভূতপূর্ব শ্রদ্ধা প্রদর্শন। আপনারা ইহাকে প্রটোকল বলিয়া ব্যাপারটিকে ছোট করিতেছেন।’

হুহু করিয়া কাঁদিয়া উঠিয়া ডাস্টবিন পাগলা শফিকুল আলম বলেন, ‘আপনারা কি ভুলিয়া গিয়াছেন গত বছরের আগস্ট মাসের সেই স্বর্গীয় দৃশ্যের কথা? যখন আমাদের ফেরেশতা সমতুল্য প্রধান উপদেষ্টা, ‘নাগরিক শক্তির স্বঘোষিত ইমাম’ এবং ‘প্রেসিডেন্সিয়াল মেডেল অব ফ্রিডম’ গলায় ঝোলানো মহান ব্যক্তিত্ব, ভিআইপি প্রটোকল না লইয়া রাজধানীর রাস্তায় সাধারণ মানুষের মতো যানজটে বসিয়াছিলেন? সেই ভিডিও দেখিয়া গোটা জাতি অশ্রুসিক্ত হইয়াছিল। এমনকি প্রশান্ত মহাসাগরের জলস্তরও নাকি আধা ইঞ্চি বাড়িয়া গিয়াছিল। তখন আপনারা বলিয়াছিলেন, “আহা! কী সাধারণ জীবনযাপন! এমন মানুষই তো দরকার!” আর এখন সামান্য লাশের উপর ৩০ মিনিট গাড়ি দাঁড়াইয়া থাকাকেই আপনারা প্রটোকল বলিতেছেন? ইয়ে কেয়সা অবিচার?’

এইদিকে, এই ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করিয়াছে দেশের সুশীল সমাজ। তেল-গ্যাস-খনিজ-সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির অন্যতম নীতিনির্ধারক ও ‘আন্দোলনের মৌসুমী আমীর’ খ্যাত অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ এক বিবৃতিতে বলেন, ‘আমরা আগে ভাবিতাম, শুধু সুন্দরবনের পাশ দিয়া রামপাল হইলেই পরিবেশের উপর চাপ পড়িবে। কিন্তু এখন দেখিতেছি, লাশের উপর দিয়া প্রটোকল গেলেও পরিবেশে মারাত্মক চাপ পড়ে। মৃতের আত্মা শান্তি পায় না। আমরা এই অমানবিক প্রটোকলের তীব্র নিন্দা জানাই এবং অবিলম্বে প্রধান উপদেষ্টাকে সুন্দরবনের কোনো চরে গিয়া প্রায়শ্চিত্ত করিবার আহ্বান জানাই।’

অপরদিকে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এসএসএফের এক সদস্য বলেন, ‘স্যারের গাড়ি যখন আসিতেছিল, তখন আমরা দেখিয়াছি লাশটি নড়িয়া উঠিতেছিল। হয়তবা স্যারের মতো একজন ফেরেশতাকে দেখিয়া সে পুনর্জীবিত হইতে চাইতেছিল। কিন্তু বাসটি এত ভারী ছিল যে, তা আর সম্ভব হয় নাই। স্যারের নির্দেশে আমরা বাস সরাই নাই। কারণ, স্যার বলিয়াছেন, “জীবন-মৃত্যু আল্লাহর হাতে। আমার প্রটোকল আমার হাতে।”’

এই ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়াইয়া পড়িলে সাধারণ মানুষের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। এক ফেসবুক ব্যবহারকারী লিখিয়াছেন, ‘যিনি যানজটে বসিয়া থাকার নাটক করিয়া জনপ্রিয়তা কামাইতে পারেন, তিনি লাশের উপর দিয়া গাড়ি চালাইয়া জনপ্রিয়তা হারাইবেন, ইহা হইতেই পারে না। হয়তবা ইহাও নতুন কোনো নাটক। হয়তো কয়েকদিন পর জানা যাইবে, ঐটা কোনো লাশই ছিল না, ছিল প্রধান উপদেষ্টার জনপ্রিয়তার পথে একটি স্পিডব্রেকার।’

সর্বশেষ প্রাপ্ত খবরে জানা গিয়াছে, সরকার একটি নতুন আইন প্রণয়নের কথা ভাবিতেছে। এখন হইতে রাস্তায় কোনো দুর্ঘটনা ঘটিলে এবং সেখানে প্রধান উপদেষ্টার ভিআইপি প্রটোকল বা কোনো ভিআইপি মুভমেন্ট থাকিলে, লাশটিকে সৎকার করিবার পূর্বে ভিআইপি মহোদয়ের নিকট হইতে ‘সাধারণ চলাচল সনদ’ গ্রহণ করিতে হইবে। এই যুগান্তকারী আইনের মাধ্যমে একদিকে যেমন ভিআইপিদের সম্মান বাড়িবে, তেমনই অন্যদিকে লাশও সম্মানিত বোধ করিবে। সাধারণ মানুষের অসাধারণ চলাচল নিশ্চিত করিতে ইহাই নাকি ইউনূস সরকারের যুগান্তকারী সংস্কার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *