ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারে ওসমান হাদির কন্ঠে “আমাদের চুদলিংপং হয়ে গেছে” কবিতা আবৃত্তি।
বিশেষ প্রতিবেদক, দৈনিক কার্টুনুস: সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে এক অভাবনীয় বিচ্যুতির ঘটনা ঘটেছে। খোদ ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারের মতো গুরুগম্ভীর প্রতিষ্ঠানের মর্যাদাপূর্ণ(!) ‘কবিতার অক্ত’ অনুষ্ঠানে আবৃত্তি করা হয়েছে কার্টুনুস ডেইলি রচিত (বা কু) বিখ্যাত কবিতা ‘আমাদের চুদলিং পং হয়ে গেছে‘। এই নজিরবিহীন কাণ্ডটি ঘটিয়েছেন আবৃত্তি-কণ্ঠের অপব্যবহারকারী শরিফ ওসমান হাদি।
ঘটনার আকস্মিকতায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত কচি সংস্কৃতিসেবীরা হতবাক হয়ে যান। আসাদ বিন হাফিজ বা বশীর আল হেলালের মতো জামায়াতি আদর্শিক কবিদের বাদ দিয়ে কার্টুনুস ডেইলির কবিতা কেন আবৃত্তি করা হলো, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
মঞ্চের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারের এক শীর্ষ কর্মকর্তা ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে এই প্রতিবেদককে বলেন, “তুই আবৃত্তি করবি আসাদ বিন হাফিজের কবিতা, তুই আবৃত্তি করবি বশীর আল হেলালের কবিতা! খুব বেশি শখ হইলে না হয় লুঙ্গি মজহারের কবিতা আবৃত্তি করতি। তোরে কার্টুনুস ডেইলির কবিতা আবৃত্তি করতে কে বলছে! ওসমান হাদি জানে চুদলিং পং মানে কি? হালায় কামডা করলো কি! আমাদের সব ইজ্জত ধুলোয় মিশিয়ে দিলো।”
কী আছে এই ‘চুদলিংপং’ কবিতায়?
বিশ্লেষকদের মতে, ‘আমাদের চুদলিংপং হয়ে গেছে‘ কবিতাটি বর্তমান অবৈধ অন্তর্বর্তী সরকারের সামগ্রিক অপশাসন এবং বিশেষত জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-এর লাগামহীন দুর্নীতি ও ক্ষমতার নির্লজ্জ অপব্যবহারকে কেন্দ্র করে রচিত একটি রাজনৈতিক বিদ্রুপ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রবীণ রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানী এই প্রতিবেদকের কাছে কবিতাটির গভীরতর অর্থ ব্যাখ্যা করেন। তিনি বলেন, “এই কবিতাটি একটি মেটিকুলাস প্রতারণার প্রামাণ্য দলিল। এর প্রতিটি পঙ্ক্তি বর্তমান সময়ের রাজনৈতিক ভণ্ডামিকে তুলে ধরে।”
‘বটবৃক্ষ’ থেকে ‘প্রধান মইচোর’: বিশ্লেষক বলেন, “কবিতার প্রথম স্তবকে ‘মস্ত একখানা বটবৃক্ষ’ বলতে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসকে বোঝানো হয়েছে। জুলাই আগস্ট ষড়যন্ত্রে বোকা বনে যাওয়া সাধারন জনগণ তাকে ত্রাতা ভেবেছিল, গণমাধ্যম তার উদ্দেশে ‘প্রশস্তির ধ্রূপদী বিন্যাসে’ কলামের পর কলাম ছেপেছিল। কিন্তু কবিতাটি নির্মমভাবে সেই মুখোশ উন্মোচন করে দেখায় যে, এই নেতাই এখন ‘মই নিয়ে ভেগে যাওয়ার তালে আছেন’।”
এই ‘মই নিয়ে পালানো’র রূপকটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ উল্লেখ করে তিনি যোগ করেন, “ড. ইউনূস তার নিজ হাতে গড়া কিংস পার্টি এনসিপির অযোগ্য নেতাদের ক্ষমতার গাছে তুলে দিয়েছেন। এখন যখন দেশজুড়ে তাদের অপকর্ম, সীমাহীন দুর্নীতি এবং অযোগ্যতা প্রকাশ পাচ্ছে, যখন তাদের ‘খেঁকিভাব’ প্রকট হয়ে উঠছে, তখন তিনি এই টোকাই নেতাদের হাত থেকে জণগনকে রক্ষা না করে নিজেই মই নিয়ে নিরাপদে পালিয়ে যাওয়ার পাঁয়তারা করছেন।”
এনসিপি-এর ‘খেঁকিভাব’ ও অপশাসন: কবিতাটির দ্বিতীয় স্তবকটি সরাসরি এনসিপি-এর চরিত্র বিশ্লেষণ করে। বিশ্লেষকের মতে, “এই দলটিকে নিয়ে মেটিকুলাস ষড়যন্ত্রে সামিল হওয়া জনগণ যে আশা করেছিল, তা ভুল প্রমাণিত হয়েছে। ‘তের মাস ধরে ক্ষমতার বিরিয়ানি’ খাওয়ার সুযোগ পেয়েই এই নব্য পাকিস্তানপন্থী রাজনৈতিক শক্তি তাদের আসল রূপ দেখিয়েছে। দেশজুড়ে এনসিপি নেতারা লাগামহীন দুর্নীতি, ব্যাপক স্বজনপ্রীতি, টেন্ডারবাজি এবং ক্ষমতার যে নগ্ন অপব্যবহার করছেন, তাকেই কবি ‘খেঁকিভাব’ বলে অভিহিত করেছেন।”
তিনি বিশদভাবে বলেন, “ড. ইউনূসের অপশাসনের অধীনে এনসিপি একটি সিন্ডিকেটে পরিণত হয়েছে, যারা বিপ্লবী চেতনার নামে কার্যত লুটপাটে নেমেছে। তাদের নেতারা ‘কাগুজে বাঘ’ হয়ে উঠেছেন, যাদের একমাত্র কাজ হলো প্রেস রিলিজ দেওয়া আর পর্দার আড়ালে নিজেদের আখের গোছানো।”
চুদলিং পং মানে কি: বিশ্লেষক উপসংহার টেনে বলেন, “কবিতাটির চূড়ান্ত পঙ্ক্তি ‘আমরা বুঝতে পারিনি / আমাদের চুদলিংপং হয়ে গেছে’ জনগণের সেই সম্মিলিত হতাশা এবং চরমভাবে প্রতারিত হওয়ার অনুভূতিকেই ধারণ করে। যে পরিবর্তন বা সুশাসনের আশায় তারা মেটিকুলাস ডিজাইনড ষড়যন্ত্রে সামিল হয়েছিল, তা যে এমন একটি দুর্নীতিবাজ, অযোগ্য এবং ফ্যাসিস্ট সরকারের হাতে পড়ে দুঃস্বপ্নে পরিনত হবে, এটা ছিল তাদের কল্পনারও অতীত। এই কবিতাটি জনগণের প্রতারিত হওয়ার দলিল। বর্তমান অবৈধ অন্তর্বর্তী সরকার এসে নানা স্বপ্ন দেখিয়েছিল। কিন্তু তাদের প্রতিটি পদক্ষেপে, অপশাসনে এবং অযোগ্যতায় জনগণ এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে যে তাদের সাথে কী ঘটে গেছে। জনগণ যা ভেবেছিল, তার কিছুই হয়নি। তাদের যে চরম ‘সর্বনাশ’ হয়ে গেছে, সেই অনুভূতিটিই এই কবিতায় ‘চুদলিংপং’ শব্দটি দিয়ে বোঝানো হয়েছে। এটি একটি চূড়ান্ত হতাশা, বোকামি এবং প্রতারিত হওয়ার সম্মিলিত প্রকাশ।”