চাঁদা না ডোনেশন: জাতির প্রতি নাহিদ ইসলামের উদাত্ত আহ্বান

দেশ গড়তে ডোনেশন দিন: জাতির প্রতি নাহিদ ইসলামের উদাত্ত আহ্বান | Donate to Build the Nation: Nahid Islam's Earnest Call to the People. দেশ গড়তে ডোনেশন দিন: জাতির প্রতি নাহিদ ইসলামের উদাত্ত আহ্বান | Donate to Build the Nation: Nahid Islam's Earnest Call to the People.

বিশেষ প্রতিবেদক, দৈনিক কার্টুনুস: সারাদেশে বর্তমানে এক প্রকার স্বর্গীয় শান্তি ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বিরাজ করছে, যার পুরো কৃতিত্ব জাতীয় নাগরিক পার্টির একেবারেই নিঃস্বার্থ, দেশপ্রেমিক ও জনগণের জন্য নিবেদিতপ্রাণ নেতাদের। জুলাই ষড়যন্ত্রের পূর্বে যারা দেশের আনাচে-কানাচে দুই বেলা আহারের সংস্থান করতে হিমশিম খেতেন, তারাই এখন জাতির অর্থনৈতিক মুক্তির দিশারী হয়ে আবির্ভূত হয়েছেন। ফুটপাতের টং দোকানদার থেকে শুরু করে গুলশানের শতকোটি টাকার মালিক, সকলেই এখন নির্দ্বিধায় প্রতিদিন বা মাস শেষে পার্টির তহবিলে অর্থ জমা দিচ্ছেন, যা নিয়ে কতিপয় কুচক্রী মহল ‘চাঁদাবাজি’ বলে অপপ্রচার চালানোর চেষ্টা করছে। এই সকল অপপ্রচারের দাঁতভাঙা জবাব দিতেই আজ জাতীয় প্রেসক্লাবে এক জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে দলটি।

সংবাদ সম্মেলনে মঞ্চ আলো করে বসে ছিলেন জাতীয় নাগরিক পার্টির স্বপ্নদ্রষ্টা, ‘স্বেচ্ছায় ডোনেশন’ তত্ত্বের প্রধান উদ্ভাবক, জুলাই পরবর্তী অর্থনীতির অন্যতম কাণ্ডারি এবং সারাদেশে ভ্রাতৃত্বের চাদর বিছানো কমিটির চেয়ারম্যান, আল্লামা নাহিদ ইসলাম। তার পাশেই বসা ছিলেন জুলাই ষড়যন্ত্রের মহান সমন্বয়ক, স্বেচ্ছায় প্রদানকৃত ডোনেশনের প্রধান সংগ্রহকারী, ‘আঙুল ফুলে কলাগাছ’ প্রকল্পের জনক সারজিস আলম।

সভার শুরুতেই বক্তব্য দিতে এসে হুহু করে কেঁদে ফেলেন আল্লামা সারজিস আলম। গামছার খুঁটে চোখ মুছতে মুছতে তিনি বলেন, “ভাইসব, আপনারা আমাদের দিকে তাকান। এই যে দামী স্যুট পরে এসেছি, চকচকে জুতো পায়ে দিয়েছি, এগুলো কি আমাদের টাকা দিয়ে কেনা? না! এগুলো সব জনগণের ভালোবাসা। তারা আমাদের ভালোবেসে ‘ডোনেশন’ দেয়, আর সেই ভালোবাসার টাকায় আমরা দুটো ভালোমন্দ খাই, পরি। আর কিছু ঈর্ষান্বিত লোক এটাকে বলে চাঁদাবাজি। আপনারা বলুন, ভালোবাসা কি কখনো চাঁদাবাজি হতে পারে?”

এ সময় উপস্থিত এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, “কিন্তু আপনাদের লোকেরা যে দোকানে দোকানে গিয়ে বাধ্যতামূলকভাবে টাকা তুলছে, এটাকে কী বলবেন?”

প্রশ্ন শুনে তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠেন ‘আঙুল ফুলে কলাগাছ’ প্রকল্পের জনক সারজিস। তিনি মেজাজঘন কণ্ঠে বলেন, “বাধ্যতামূলক? কোন মূর্খ আপনাকে এই কথা বলেছে? আমরা ভালোবাসা বিলি করতে যাই, আর মানুষ খুশিতে আমাদের হাতে যা তুলে দেয়, তাই আমরা গ্রহণ করি। গতকালও আমি মতিঝিলের এক চানাচুরওয়ালার কাছে গিয়েছিলাম। বেচারা সারাদিন চানাচুর বেচে পাঁচশ টাকা লাভ করেছে। আমি তার কাছে যেতেই সে আনন্দে আত্মহারা হয়ে পুরো পাঁচশ টাকাই আমার হাতে তুলে দিয়ে বলল, ‘সারজিস ভাই, এই টাকা দিয়ে আপনারা দেশ গড়বেন, এর চেয়ে বড় পাওয়া আমার জীবনে আর কী হতে পারে?’ বলুন, এই নিষ্পাপ ভালোবাসাকে আপনারা চাঁদাবাজি বলবেন?”

তিনি আরও যোগ করেন, “জুলাইয়ের আগে আমাদের কত কষ্ট ছিল! তিনবেলা তো দূরের কথা, দেড়বেলাও ঠিকমতো খেতে পারতাম না। আজ জাতির ভালোবাসায় আমাদের পেট ভরেছে, মন ভরেছে। আমাদের আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়নি, আমাদের হৃদয় ফুলে ভালোবাসার মহাসাগর হয়েছে।”

সারজিস আলমের আবেগঘন বক্তব্যের পর মাইক্রোফোনের সামনে আসেন জাতীয় নাগরিক পার্টির প্রধান, আল্লামা নাহিদ ইসলাম। তিনি তার স্বভাবসুলভ জ্ঞানী ও দার্শনিক ভঙ্গিতে বলেন, “আপনারা অর্থনীতি বোঝেন না, তাই ‘ডোনেশন’ আর ‘চাঁদা’র পার্থক্য ধরতে পারছেন না। আমরা দেশে এক নতুন অর্থনৈতিক মডেল চালু করেছি, যার নাম ‘সার্কুলেশন অব লাভ ইকোনমি’ বা ‘ভালোবাসার সঞ্চালন অর্থনীতি’। এই মডেলে, যাদের কাছে অতিরিক্ত টাকা আছে, অর্থাৎ ব্যবসায়ী ও ধনীক শ্রেণি, তারা তাদের ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ হিসেবে সেই টাকা আমাদের হাতে তুলে দেয়। আমরা, অর্থাৎ দেশের সেবকেরা, সেই টাকা দিয়ে নিজেদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন করি। এতে করে কী হয়? আমাদের দেখে দেশের তরুণ প্রজন্ম অনুপ্রাণিত হয়। তারাও দেশের সেবা করতে চায়। ফলে দেশে এক কর্মচাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। টাকা এক জায়গায় জমে না থেকে সঞ্চালিত হয়। এটাই তো অর্থনীতির মূল কথা।”

“চাঁদা না ডোনেশন” ব্যাখ্যা করে তিনি আরও বলেন, “ধরুন, একজন কোটিপতি মাসে এক কোটি টাকা ‘ডোনেশন’ দিলেন। সেই টাকা পেয়ে আমাদের দশজন নেতা দশটা নতুন গাড়ি কিনলেন। গাড়ি কোম্পানি লাভবান হলো। গাড়ির তেল কিনতে হলো, সরকার ট্যাক্স পেল। গাড়ির চালকের চাকরি হলো। দেখুন, একটা ডোনেশন থেকে কতগুলো অর্থনৈতিক সেক্টর সচল হয়ে গেল! আর আপনারা এটাকে বলছেন চাঁদাবাজি? ছি ছি! আপনাদের চিন্তার দৈন্য দেখে আমার করুণা হয়।”

এ সময় আরেক সাংবাদিক দাঁড়িয়ে বলেন, “কিন্তু যারা ডোনেশন দিতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছে, তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে, তাদের ওপর হামলা হচ্ছে। এটা কোন ধরনের ভালোবাসা?”

এই প্রশ্নের জবাবে মুচকি হাসেন আল্লামা নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, “দেখুন, ভালোবাসা যেমন পবিত্র, ভালোবাসার অবমাননাও তেমন মহাপাপ। কেউ যখন জাতির প্রতি তার ভালোবাসা দেখাতে কার্পণ্য করে, তখন বুঝতে হবে তার মনে স্বৈরাচারের প্রতি ভালবাসা আছে। সে দেশের ভালো চায় না। তখন দেশপ্রেমিক জনতা যদি ক্ষুব্ধ হয়ে তার প্রতিষ্ঠান দু-একদিনের জন্য বন্ধ করে দেয়, সেটাকে হামলা বলা চলে না। ওটা হলো ‘দেশপ্রেমিক ভর্ৎসনা’। আমরা চাই, সবাই ভালোবাসার মাধ্যমে দেশটাকে গড়ে তুলি, ভর্ৎসনার পর্যায়ে যেন কাউকে যেতে না হয়।”

সম্মেলনের শেষে জাতীয় নাগরিক পার্টির পক্ষ থেকে ঘোষণা দেওয়া হয়, এখন থেকে ‘ডোনেশন’ সংগ্রহ আরও সহজ করতে একটি মোবাইল অ্যাপ চালু করা হবে, যার নাম ‘ডোনেট ফর নেশন’। এই অ্যাপের মাধ্যমে দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে যে কেউ তাদের ভালোবাসা বা ডোনেশন পাঠাতে পারবে। সর্বোচ্চ ডোনেশন প্রদানকারীকে মাসে একবার আল্লামা সারজিস আলমের সাথে সেলফি তোলার সুযোগ দেওয়া হবে। এই ঘোষণা দেওয়ার সাথে সাথে উপস্থিত নেতাকর্মীরা ‘নাহিদ ভাই, সারজিস ভাই, এগিয়ে চলো, আমরা আছি তোমার সাথে’ স্লোগানে প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণ মুখরিত করে তোলে।

#, #, #, #, #, #, #, #, #, #, #, #, #, #, #, #, #, #, #, #, #, #, #

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *