ড. ইউনূসের দাবী সোশ্যাল বিজনেস: মাহফুজ আলমদের লুটপাট কি নতুন সামাজিক ব্যবসা? | Dr. Yunus Claims 'Social Business': Is the looting by Mahfuz Alam and his associates a new form of social business?ড. ইউনূসের দাবী সোশ্যাল বিজনেস: মাহফুজ আলমদের লুটপাট কি নতুন সামাজিক ব্যবসা? | Dr. Yunus Claims 'Social Business': Is the looting by Mahfuz Alam and his associates a new form of social business?

রাষ্ট্রীয় কোষাগারকে পার্সোনাল মালখানায় রূপান্তর: মাহফুজ আলমের ‘আলকেমি’ তত্বে তোলপাড়

কার্টুনুস ডেইলি প্রতিবেদক, ঢাকা: মধ্যযুগের আলকেমিস্টরা যেমন সাধারণ ধাতুকে সোনায় রূপান্তরের নিরন্তর সাধনা করিতেন, একবিংশ শতাব্দীর বাংলাদেশে তাহার চাইতেও যুগান্তকারী এক আবিষ্কার সাধিত হইয়াছে। দেশের আপামর ছাত্র-জনতাকে ‘মেটিকুলাস ডিজাইনের’ ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন করিয়া রাষ্ট্রীয় কোষাগারকে সরাসরি পার্সোনাল মালখানায় রূপান্তরের এক জাদুকরী ফর্মুলা আবিষ্কার করিয়া ফেলিয়াছেন হাড়সর্বস্ব অতীত ও ভুঁড়িসর্বস্ব বর্তমানের সেতুবন্ধনকারী, বিপ্লবের নামে স্বৈরতন্ত্রের অন্যতম খুঁটি, বর্তমান সরকারের তথ্য-সম্প্রচার বিষয়ক উপদেষ্টা জনাব মাহফুজ আলম। তাঁহার এই আলকেমি বা ‘টাকা বানানোর কারসাজি’ দেখিয়া দেশের অর্থনীতিবিদগণ জ্ঞান হারাইতে বসিয়াছেন।

অনুসন্ধানে জানা যায়, এই আলকেমির প্রধান উপাদান হইল—জুলাই মাসে ঝরিয়া পড়া শত শত ছাত্রের রক্ত, কোটা আন্দোলনের সৃষ্ট ধোঁয়া এবং ক্ষমতার চূড়ান্ত অপব্যবহার। এই উপাদানগুলোকে একত্র করিয়া ‘দুর্নীতি’ নামক চুল্লিতে উত্তাপ দিলেই নাকি তৈরি হয় শত শত কোটি টাকার নগদ নোট। এই ফর্মুলার কার্যকারিতা পরীক্ষা করিবার জন্য তিনি তাঁহার একান্ত সচিব (পিএস) ও সহকারী একান্ত সচিবদের (এপিএস) উপর ‘ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল’ চালান। ফলাফলে দেখা যায়, মাত্র কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে তাঁহার সহকারীরা প্রত্যেকেই শত কোটি টাকার মালিক হইয়া গিয়াছেন। অন্যদিকে, নিজের সততা প্রমাণের স্বার্থে তিনি নিজ ব্যাংক একাউন্টকে ‘কন্ট্রোল গ্রুপ’ হিসেবে ব্যবহার করিতেছেন, যেখানে মাত্র ৩৬ হাজার টাকা রাখিয়া তিনি দেখাইতেছেন যে, এই ফর্মুলা প্রয়োগ না করিলে মানুষ কতটা গরিব থাকিতে পারে।

এই বিষয়ে কার্টুনুস ডেইলির পক্ষ হইতে সরাসরি প্রশ্ন করা হইলে উপদেষ্টা মহোদয় প্রথমে কিছুটা বিরক্ত হইলেও পরক্ষণেই নিজেকে সামলাইয়া এক নতুন অর্থনৈতিক তত্ত্ব হাজির করেন। তিনি বলেন, “দেখুন, আপনারা সাংবাদিকরা সবসময় নেতিবাচক বিষয় খোঁজেন। আমার সহকারীরা যে শত শত কোটি টাকার মালিক হয়েছে, এটা তো দেশের জন্য সুখবর! এটাকে বলা হয় ‘লোকাল ইকোনমিক স্টিমুলাস প্যাকেজ’। তারা এই টাকা দিয়ে গাড়ি কিনবে, বাড়ি বানাবে, মার্কেটে খরচ করবে। ফলে অর্থনীতিতে টাকার প্রবাহ বাড়বে, জিডিপি তরতর করে উপরে উঠবে। আর আমার একাউন্টে ৩৬ হাজার টাকা রাখাটা হলো একটা আর্ট, একটা জুলাই স্মরণে একটা স্যাক্রিফাইস! আমি চাই জনগণ আমাদের আন্দোলন শুরুর দিনগুলোর কথা মনে রাখুক, আমাদের বিনয়ী রূপটা দেখুক। আমি নিজে গরিব থেকে তাদের জন্য কাজ করছি, আর আমার টিম অর্থনীতিকে সচল রাখছে—এর চেয়ে ভালো মডেল আর কী হতে পারে?”

তবে ইতিহাস ঘাঁটিতে গিয়া দেখা যায়, এই আলকেমির ফর্মুলা নতুন কিছু নহে। ইহার পেটেন্ট মূলত ‘মেড ইন পাকিস্তান’। পাকিস্তানের সামরিক জান্তা ও রাজনৈতিক লুটেরারাই সর্বপ্রথম এই ‘রাষ্ট্রীয় সম্পদকে ব্যক্তিগত সম্পদে’ রূপান্তরের তত্ত্ব আবিষ্কার করে। আইয়ুব খান হইতে শুরু করিয়া ভুট্টো ও শরীফ পরিবার—সকলেই এই বিদ্যার পারদর্শী ছিলেন। তাঁহারা যেভাবে দেশের টাকা বিদেশে পাচার করিয়া সম্পদের পাহাড় গড়িয়াছিলেন, আমাদের এই নব্য রাজাকার নেতারা যেন সেই পাকিস্তানি মডেলেরই বাংলাদেশি ফ্র্যাঞ্চাইজি খুলিয়া বসিয়াছেন। নব্য রাজাকারদের দুর্নীতির এই ফর্মুলা দেখিয়া বিশ্লেষকরা ইহাকে পাকিস্তানি ডিশ বলিয়া আখ্যায়িত করিতেছেন। তাঁহারা বলেন, আমাদের এই নবীন উপদেষ্টারা যেন পাকিস্তানিদেরই আধ্যাত্মিক উত্তরসূরী। পাকিস্তানের বীর্য ধারণ করিয়াই যেন তাঁহারা দুর্নীতির এই মহাযজ্ঞে নামিয়াছেন। তাঁহাদের ভাবখানা এমন যে, ‘পিতাও লুটেছে, আমরা লুটলে দোষ কী?’

আর এই সকল কর্মকাণ্ডের প্রধান থিঙ্ক ট্যাঙ্ক হিসেবে কাজ করিতেছেন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা, শান্তিতে নোবেল বিজয়ী, ক্ষুদ্রঋণের পিতা কিন্তু বৃহৎ দুর্নীতির দাদা, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন জাতীয় সম্পদ ভক্ষক এবং গণতন্ত্রের লেবাসে প্রতিষ্ঠিত লুটপাটতন্ত্রের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ডক্টর মুহাম্মদ ইউনূস। সম্প্রতি এক আন্তর্জাতিক সংবাদ সম্মেলনে তাঁহাকে এই বিষয়ে প্রশ্ন করা হইলে তিনি তাঁহার ট্রেডমার্ক হাসি দিয়া প্রশান্তির সহিত বলেন, “আপনারা বিষয়টিকে ভুলভাবে দেখছেন। এটি দুর্নীতি নয়, এটি একটি নতুন ধরনের ‘সোশ্যাল বিজনেস’ বা সামাজিক ব্যবসা। ছেলেরা নিজেদের দারিদ্র্য দূর করার মাধ্যমে দেশ থেকে দারিদ্র্য হটানোর পরীক্ষামূলক প্রকল্পে হাত দিয়েছে। এই মডেলে, প্রথমে উদ্যোক্তা নিজে আর্থিকভাবে স্বচ্ছল হবে, তারপর তার সুফল অবশেষে জনগণের কাছে পৌঁছাবে। তরুণদের এই উদ্ভাবনী শক্তিকে আমাদের প্রশংসা করা উচিত, কোষাগার বা রাষ্ট্রীয় সম্পদের মতো সেকেলে বিষয় নিয়ে প্রশ্ন তুলে তাদের চলার পথকে বাধাগ্রস্ত করা উচিত নয়।”

এই বিষয়ে এক ভুক্তভোগী রিকশাচালক কার্টুনুস ডেইলিকে বলেন, “কইলো দ্যাশের বৈষম্য কমাইবো, অহন দেহি ওরাই সবচেয়ে বড়লোক আর আমরা যেই লাউ, হেই কদুই রইলাম। হালায় কয়, ওর টেকা নাই। ওর চামচারা যে আঙ্গুল ফুইলা কলাগাছ হইলো, হেই টেকা কি আসমান থাইকা পড়ছে? এইগুলারে দেইখা পাকিস্তান আমলের কথা মনে পইড়া যায়। ওরাও এমনেই লুট করছিলো আমাগো জাতীয় সম্পদ।”

জনাব মাহফুজের অতীত জীবনের দিকে তাকাইলেও এই পরিবর্তনের একটি রূপরেখা পাওয়া যায়। একসময় তিনি হিজবুত তাহরীরের মতো জঙ্গি সংগঠনের সহিত জড়িত থাকিয়া ‘ইসলামী খিলাফত’ কায়েমের জিহাদে লিপ্ত ছিলেন। বিশ্লেষকরা মনে করিতেছেন, তিনি পথ বদলাইলেও মত বদলান নাই। এখন তিনি ‘গণতান্ত্রিক খিলাফত’ কায়েম করিয়াছেন, যেখানে ‘গনিমতের মাল’ হিসেবে রাষ্ট্রীয় কোষাগারকে ভক্ষণ করা জায়েজ। তাঁহার জিহাদ এখন ‘টাকার বিরুদ্ধে’ নহে, বরং ‘টাকার জন্য’।

সর্বশেষ পরিস্থিতি হইল, জনাব মাহফুজের এই আলকেমি ফর্মুলা এতই জনপ্রিয়তা পাইয়াছে যে, দেশের অনেক বেকার যুবক এখন রাজনীতিতে আসিয়া রাতারাতি বড়লোক হইবার স্বপ্ন দেখিতেছে। সরকারের উচিত, এই ‘মাহফুজ মডেল’ পেটেন্ট করিয়া বিদেশে রপ্তানি করা। ইহাতে হয়তো দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংকট কিছুটা হইলেও কাটিয়া উঠিবে।

জাতি এখন অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করিতেছে, কবে এই সকল মহান উপদেষ্টারা দেশের সকল টাকা খাইয়া শেষ করিবেন এবং তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলিয়া বলিবেন, “আলহামদুলিল্লাহ, মিশন অ্যাকমপ্লিশড!!

আপনার মতামত জানান

By Cartunus Daily

Cartunus Daily delivers cartoons that add a touch of humor and perspective to the latest happenings in Bangladesh. Our goal is simple: to make you smile. We’re not connected to any brand, business, or public figure—just here for some fun & fresh insights.