
নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশের রাজনীতির কর্পোরেট জগতে সম্প্রতি এক নতুন আলোড়ন সৃষ্টি করেছে ‘ড. ইউনূস অ্যান্ড সন্স লিঃ’। প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার, ম্যানেজমেন্ট গুরু, এবং ‘সিইও অব দ্য নেশন’ পদে স্ব-নিয়োজিত ড. মুহম্মদ ইউনূস সম্প্রতি বাজারে এনেছেন তাঁদের সর্বশেষ এবং সবচেয়ে বিধ্বংসী পণ্য ‘মব’ (MOB)। ক্ষুদ্রঋণ, দই, আর সামাজিক ব্যবসার পর এটিই হতে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটির ফ্ল্যাগশিপ প্রোডাক্ট। ড. ইউনূস অ্যান্ড সন্সের হেড অফ ইনোভেশন (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) জানিয়েছেন, দীর্ঘ গবেষণার পর তাঁরা এই ‘পলিটিক্যাল প্রোডাক্ট’টি ডিজাইন করেছেন, যার মূল লক্ষ্য হলো দেশের রাজনৈতিক বাজারের সকল প্রতিযোগীকে দেউলিয়া করে দিয়ে একটি একচ্ছত্র মনোপলি প্রতিষ্ঠা করা।
‘মব’ প্রোডাক্টটির মার্কেটিং ক্যাম্পেইন চলছে অত্যন্ত সুক্ষ্মভাবে। ড. ইউনূস অ্যান্ড সন্সের ব্র্যান্ডিং টিম (যারা বর্তমানে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে কর্মরত) এই প্রোডাক্টের কোনো নির্দিষ্ট সংজ্ঞা দিচ্ছে না। গ্রাহকদের চাহিদানুযায়ী এর পরিচয় বদলাচ্ছে। যেমন, যখন ভাঙচুর বা অগ্নিসংযোগের প্রয়োজন হয়, তখন এটি ‘বিপ্লবী ছাত্রসমাজ’। যখন কোনো বিশিষ্ট ব্যক্তিকে (যেমন সাবেক সিইসি নূরুল হুদা) হেনস্তা করার দরকার হয়, তখন এর নাম হয় ‘ক্ষুব্ধ জনতা’। আবার, যখন আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় সাক্ষাৎকার দেওয়ার প্রয়োজন হয়, তখন এর ব্র্যান্ড নাম হয়ে যায় ‘গণতন্ত্রের জন্য চাপ সৃষ্টিকারী গোষ্ঠী’ বা ‘প্রেশার গ্রুপ’। এই ‘স্ট্র্যাটেজিক ব্র্যান্ডিং’-এর কারণে বাজারের বিশ্লেষকরা, যেমন সাংবাদিক মাসুদ কামাল কিংবা রাজনীতিবিদ রুমিন ফারহানা, বিভ্রান্ত হয়ে পড়ছেন। তাঁরা তাঁদের টকশোতে বসে এর ‘বৈশিষ্ট্য’ নিয়ে আলোচনা করছেন, কিন্তু বুঝতে পারছেন না যে, তাঁরা আসলে একটি সুচতুরভাবে বাজারজাত করা পণ্যের ফ্রি মার্কেটিং করে দিচ্ছেন।
ইউনূস অ্যান্ড সন্সের মানবসম্পদ বিভাগ এই ‘মব’ প্রোডাক্ট পরিচালনার জন্য দেশজুড়ে একদল ‘ম্যানেজমেন্ট ট্রেইনি’ নিয়োগ দিয়েছে, যাদেরকে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হচ্ছে ‘ছাত্র’ হিসেবে। এই ট্রেইনিদের কোনো বেতন দেওয়া হয় না, তবে ভালো পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে ভবিষ্যতে ‘পদোন্নতি’র লোভ দেখানো হয়েছে। তাদের প্রধান কেপিআই (Key Performance Indicator) হলো, কী পরিমাণ ভয় ও আতঙ্ক সমাজে তৈরি করা গেল, এবং কত দ্রুত আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে নিষ্ক্রিয় করে দেওয়া গেল। কুমিল্লার ট্রিপল মার্ডার এবং চট্টগ্রামের থানা আক্রমণের ঘটনাগুলো ছিল এই ট্রেইনিদের জন্য একটি সফল ‘অন-দ্য-জব অ্যাসেসমেন্ট’। এই অ্যাসেসমেন্টে সর্বোচ্চ নম্বর পাওয়ায় ডক্টর ইউনূস তাঁদেরকে একটি ধন্যবাদ জ্ঞাপক ই-মেইল পাঠিয়েছেন বলে জানা গেছে।
প্রতিষ্ঠানটির সিইও ড. ইউনূস বিশ্বাস করেন, কোনো বাজারে মনোপলি প্রতিষ্ঠার আগে পুরনো ও বড় প্রতিযোগীদের সরিয়ে দিতে হয়। তাই তাঁর প্রথম টার্গেট ছিল দেশের দুটি বড় রাজনৈতিক দল। ‘জুলাই ষড়যন্ত্র’ নামক একটি ‘মার্কেট ডিসরাপশন’ ইভেন্টের মাধ্যমে তিনি সফলভাবে একটি বড় দলকে কোণঠাসা করেছেন এবং অন্য দলটিকে রেখেছেন উভয় সংকটে। তাঁর এই কর্পোরেট স্ট্র্যাটেজি এতটাই কার্যকর যে, বাম গণতান্ত্রিক জোটের মতো ছোটখাটো ‘রিটেইলার’ বা খুচরা বিক্রেতারা এখনও বন্দর ইজারা দেওয়ার মতো পুরনো ইস্যু নিয়ে প্রেস রিলিজ দিয়েই খালাস। তারা টেরই পাচ্ছে না যে, পুরো বাজারটাই বেহাত হয়ে যাচ্ছে।
‘ড. ইউনূস অ্যান্ড সন্স লিঃ’-এর পরবর্তী পরিকল্পনা হলো একটি ‘আইপিও’ (IPO) ছাড়া, যার পোশাকি নাম ‘নির্বাচন’। তবে কোনো সফল কোম্পানিই বাজারের অবস্থা নিজের অনুকূলে না এনে আইপিও ছাড়ে না। তাই ডক্টর ইউনূস এখন ‘মার্কেট কন্ডিশনিং’ করছেন। ‘মব’ নামক প্রোডাক্টটি ব্যবহার করে তিনি বাজার থেকে সব ‘বুল রান’ দূর করে একটি কৃত্রিম ‘বেয়ার মার্কেট’ বা মন্দা তৈরি করছেন। তিনি বিনিয়োগকারীদের (অর্থাৎ জনগণকে) বোঝাতে চাইছেন যে, বাজারের স্থিতিশীলতার জন্য পুরনো খেলোয়াড়দের বদলে একজন ‘শক্তিশালী সিইও’র হাতেই সব শেয়ার থাকা উচিত।
সম্প্রতি এক জুম মিটিংয়ে ডক্টর ইউনূস তাঁর আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের আশ্বস্ত করে বলেছেন, “ডোন্ট ওরি। বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাজারে আমরা যে ‘ডিসরাপশন’ এনেছি, তাতে স্বল্পমেয়াদে কিছু অস্থিরতা দেখা গেলেও দীর্ঘমেয়াদে এর রিটার্ন অন ইনভেস্টমেন্ট (ROI) হবে সর্বোচ্চ। আমরা একটি ‘টেকসই একনায়কতন্ত্র’ মডেল নিয়ে কাজ করছি, যা ভবিষ্যতে অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের জন্য একটি আদর্শ ‘বিজনেস কেস স্টাডি’ হবে।”
সুতরাং, আপনি যখন দেখছেন একদল লোক কাউকে জুতোর মালা পরাচ্ছে বা থানায় আগুন দিচ্ছে, তখন একে নিছক বিশৃঙ্খলা ভাবার কোনো কারণ নেই। এটি আসলে একটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির বিপণন কৌশলের অংশ, যার সিইও একজন নোবেলজয়ী এবং যার পণ্য হলো আপনার আমার বাকস্বাধীনতা ও গণতন্ত্রকে একটি প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানিতে রূপান্তরিত করা।