প্রতিটি মানুষেরই ডাস্টবিন থেকে তথ্য পাওয়ার অধিকার আছে: ডাস্টবিন শফিক। Every person has the right to get information from the dustbin: Dustbin Shafiq.

নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়কে ঘিরে সাম্প্রতিক সময়ে নানা গুঞ্জনের ডালপালা গজিয়ে উঠলেও এবার সকল গুঞ্জনের অবসান ঘটাতে স্বয়ং মাঠে নেমেছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব। এক যুগান্তকারী সংবাদ সম্মেলনে তিনি ঘোষণা দিয়েছেন, এখন থেকে রাষ্ট্রের সকল গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রথাগত মিডিয়ার বদলে আধুনিক ও পরিবেশবান্ধব ডাস্টবিনে প্রকাশ করা হবে। এই ঘোষণায় হলুদ সাংবাদিক মহলে আনন্দের বন্যা বয়ে গেলেও সাধারণ জনগণ চরম বিভ্রান্তিতে পড়েছেন বলে জানা গেছে।

মঙ্গলবার বিকেলে জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে আয়োজিত এক তড়িঘড়ি সংবাদ সম্মেলনে এই বৈপ্লবিক ঘোষণা দেন শান্তিতে নোবেল জয় করিয়া দেশে অশান্তি আমদানি করা ক্ষুদ্রঋণের জনক ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ডক্টর মুহম্মদ ইউনূসের প্রেস এবং স্ট্রেস সচিব, ফরাসি বার্তা সংস্থার সাবেক ব্যুরো চীফ, ‘মব’ কে ‘প্রেসার গ্রুপ’ নামকরণের মহান আবিস্কারক ও সাংবাদিকতার ব্যর্থতা বিষয়ক গবেষক ডাস্টবিন পাগলা আল্লামা শফিকুল আলম

সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে ধবধবে সাদা শার্ট ও চোখেমুখে একরাশ বিরক্তি নিয়ে ডায়াসে ওঠেন আল্লামা শফিকুল আলম। উপস্থিত সাংবাদিকদের দিকে তাকিয়ে তিনি বলেন, “আপনারা এখানে কী করছেন? আপনাদের তো এখন শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ডাস্টবিনের পাশে থাকার কথা।” তার এমন মন্তব্যে সাংবাদিকরা একে অপরের মুখ চাওয়া-চাওয়ি করতে থাকলে তিনি হুংকার দিয়ে বলেন, “আপনারা দেখছি কিছুই বোঝেন না। যুগ পাল্টে গেছে, তথ্যের সংজ্ঞাও পাল্টে গেছে। এখন আর কাগজে ছাপা অক্ষরে সত্য পাওয়া যায় না, সত্য এখন উচ্ছিষ্টের মতো, ডাস্টবিনে পড়ে থাকে। তাকে খুঁজে বের করতে হয়।”

তিনি আরও যোগ করেন, “আমাদের প্রধান উপদেষ্টা, অর্থনীতির কিংবদন্তী মহাপুরুষ ও সাদা পাঞ্জাবির ফেরেশতা ডক্টর মুহম্মদ ইউনূস একজন বিশ্বমানের দার্শনিক। তিনি যখন বলেন ‘দেশ পরিষ্কার করতে হবে’, তখন আপনারা ভাবেন তিনি ঝাড়ু দেওয়ার কথা বলছেন। ছি ছি! কী সংকীর্ণ মানসিকতা! এর মাধ্যমে তিনি আসলে ‘তথ্যগত পরিচ্ছন্নতা’র কথা বুঝিয়েছেন। পুরনো, বাতিল ও মিথ্যা তথ্য ঝেঁটিয়ে বিদায় করে ডাস্টবিন থেকে তাজা ও খাঁটি ‘উচ্ছিষ্ট সত্য’ তুলে আনার কথাই তিনি বলেছেন। আর এই মহান দায়িত্ব পালনের জন্যই তিনি আমাকে নিয়োগ দিয়েছেন।”

এই পর্যায়ে একজন নবীন সাংবাদিক, যিনি কি-না সবেমাত্র রিপোর্টিংয়ের ক, খ শিখছেন, কাঁপা কাঁপা গলায় প্রশ্ন করেন, “স্যার, তাহলে আমাদের কাজটা ঠিক কী হবে? আমরা কি ডাস্টবিন থেকে খবর সংগ্রহ করে অফিসে পাঠাব?”

প্রশ্নের উত্তরে মুচকি হেসে ডাস্টবিন শফিক বলেন, “এক্সেলেন্ট প্রশ্ন! আমি আপনাদের মতো তরুণদের কাছ থেকেব এটাই আশা করি। হ্যাঁ, আপনাদের এখন থেকে আর প্রেস ক্লাবে বা সচিবালয়ে ঘুরঘুর করতে হবে না। আমরা শহরের গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে মোড়ে ‘প্রধান উপদেষ্টার সার্টিফায়েড তথ্য ডাস্টবিন’ স্থাপন করব। প্রতিদিন সকালে সেখানে সরকারের পক্ষ থেকে দিনের প্রধান প্রধান ‘তথ্য-উচ্ছিষ্ট’ ফেলে আসা হবে। আপনাদের কাজ হবে সেই ডাস্টবিন ঘেঁটে সঠিক তথ্যটি খুঁজে বের করা। যার খোঁজার ক্ষমতা যত ভালো, সে তত বড় সাংবাদিক।”

তিনি সাংবাদিকদের সুবিধার্থে একটি ট্রেনিং ওয়ার্কশপেরও ঘোষণা দেন। “আপনাদের সুবিধার্থে আমরা ‘গার্বেজ জার্নালিজম: ডাস্টবিন থেকে সত্য উত্তোলন‘ শীর্ষক একটি মাসব্যাপী কর্মশালার আয়োজন করতে যাচ্ছি। সেখানে আমি নিজে আপনাদের প্রশিক্ষণ দেব। কীভাবে পচা কলার খোসার পাশ থেকে ব্রেকিং নিউজ খুঁজে বের করতে হয়, কিংবা ছেঁড়া কাগজের টুকরো থেকে দেশের অর্থনৈতিক পূর্বাভাস পাওয়া যায়, তার হাতে-কলমে শিক্ষা দেওয়া হবে।”

এই যুগান্তকারী ঘোষণায় উপস্থিত প্রবীণ সাংবাদিকেরা চরম হতাশায় ভেঙে পড়েন। তাদেরই একজন, ‘দৈনিক আবোল তাবোল’ পত্রিকার প্রধান প্রতিবেদক, যিনি সারাজীবন শুধু চা-সিঙাড়া খেয়ে আর বড় বড় মন্ত্রীদের নামে তৈলমর্দন করে কাটিয়ে দিয়েছেন, তিনি হাউমাউ করে কেঁদে উঠে বলেন, “স্যার, এই বয়সে এসে কি ডাস্টবিন ঘাঁটাঘাঁটি করা সম্ভব? আমার তো হাই প্রেশার, ডাস্ট অ্যালার্জি আছে। তাছাড়া, আমার সাদা পাঞ্জাবিটাও তো নষ্ট হয়ে যাবে।”

তার কান্নায় বিন্দুমাত্র বিচলিত না হয়ে আন্তর্জাতিক গুজব সংস্থার সাবেক ঢাকা প্রতিনিধি আল্লামা শফিকুল আলম বলেন, “আবেগ দিয়ে সাংবাদিকতা চলে না, জনাব। দেশের জন্য, দশের জন্য আপনাদের এই ত্যাগ স্বীকার করতেই হবে। আর পোশাকের কথা বলছেন? আমরা আপনাদের জন্য বিশেষ ‘জার্নালিস্ট পিপিই’র ব্যবস্থা করব। গামবুট, রাবারের গ্লাভস আর নাকবন্ধনী পরেই আপনারা তথ্য সংগ্রহে নামবেন। ভাবুন, ব্যাপারটা কতটা রোমাঞ্চকর!”

এদিকে প্রেস সচিবের এই ঘোষণার পর প্রধান উপদেষ্টা ডক্টর মুহম্মদ ইউনূস তার দপ্তরে বসে ঘটনা শুনে ভিমড়ি খেয়েছেন বলে একটি বিশ্বস্ত সূত্র জানিয়েছে। দারিদ্র্য জাদুঘরের স্বপ্নদ্রষ্টা ও গণমানুষের ধৈর্য্য পরীক্ষক ডক্টর ইউনূস নাকি তার ব্যক্তিগত সহকারীর কাছে আফসোস করে বলেছেন, “আমি তো শুধু পরিচ্ছন্নতা অভিযান শুরুর কথা বলেছিলাম। শহরের রাস্তাঘাট, অফিস-আদালত পরিষ্কার করার কথা। এই শফিক ছেলেটা আমার সহজ সরল কথাকে কোথায় নিয়ে গেল? এখন তো শুনছি সে নাকি ডাস্টবিন থেকে সংবিধানের সংশোধনী খুঁজে বের করারও ঘোষণা দিয়েছে!”

সূত্রটি আরও জানায়, ডক্টর ইউনূস তৎক্ষণাৎ প্রেস সচিবকে তলব করেন। উত্তেজিত উপদেষ্টা প্রেস সচিবকে জিজ্ঞাসা করেন, “শফিক, এসব কী শুনছি আমি? প্রেস ব্রিফিং ডাস্টবিনে কেন? আমি কী বলেছিলাম আর তুমি কী প্রচার করছো?”

জবাবে সম্পূর্ণ শান্ত ও নির্বিকার গলায় ডাস্টবিন পাগলা শফিকুল আলম বলেন, “স্যার, আপনি হলেন গ্লোবাল আইকন। আপনার কথার সাধারণ অর্থ করলে আপনার সম্মান থাকে না। আপনার প্রতিটি কথার ভেতরে একটি ‘ডিপার মিনিং’ বা গূঢ় অর্থ লুকিয়ে থাকে, যা বের করার দায়িত্ব আমার। ‘পরিষ্কার’ শব্দটি দিয়ে আপনি যে আসলে ‘তথ্যের স্বচ্ছতা’ বুঝিয়েছেন, এই গভীর দর্শনটা আমি ছাড়া আর কে বুঝবে? তাই তো আমি আপনার দর্শনকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে ‘গার্বেজ জার্নালিজম’ বা ‘ডাস্টবিন সাংবাদিকতা’র মতো একটি যুগান্তকারী ধারণা প্রবর্তন করেছি। দেখুন স্যার, সারা বিশ্বের মিডিয়া এখন আমাদের এই কনসেপ্ট নিয়ে কথা বলছে। একেই বলে মার্কেটিং।”

প্রেস সচিবের মুখে এমন দার্শনিক ব্যাখ্যা শুনে প্রধান উপদেষ্টা আরও বিভ্রান্ত হয়ে পড়েন। তিনি কপালে হাত দিয়ে বসে পড়েন এবং শুধু বলতে থাকেন, “হে সৃষ্টিকর্তা, আমাকে নোবেল দিয়েছিলে ভালো কথা, কিন্তু সাথে এই প্রেস সচিবকে কেন গছিয়ে দিলে? আমি এখন এই ‘ডাস্টবিন সাংবাদিকতা’র দায় কীভাবে এড়াব?”

সর্বশেষ পাওয়া খবরে জানা গেছে, প্রেস সচিব ডাস্টবিন শফিক তার নতুন তত্ত্ব নিয়ে একটি বই লেখার কাজ শুরু করে দিয়েছেন। বইটির নাম রাখা হয়েছে, “সত্য যখন ডাস্টবিনে”। এছাড়াও তিনি জাতিসংঘে ‘গার্বেজ জার্নালিজম’কে একটি মৌলিক মানবাধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য একটি প্রস্তাব পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তার মতে, প্রতিটি মানুষেরই ডাস্টবিন থেকে তথ্য পাওয়ার অধিকার আছে।