
বিশেষ প্রতিবেদক, দৈনিক কার্টুনুস: উপদেষ্টা পুত্র এবং তার হেডমাস্টার পিতার যৌথ দুর্নীতির খবর জাতীয় দৈনিকে সচিত্র প্রকাশিত হওয়ায় বাপ-বেটার মধুর সম্পর্কে তীব্র তিক্ততা দেখা দিয়েছে। পুত্রের আনাড়িপনার কারণে নিজেদের সুসংগঠিত ‘মাফিয়াতন্ত্র’ প্রকাশ্যে চলে আসায় উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের উপর চরম ক্ষুব্ধ হয়েছেন তার পিতা ও আকুবপুর ইয়াকুব আলী ভূইয়া পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, জনাব মো. বিল্লাল হোসেন।
ঘটনার সূত্রপাত ঘটে গতকাল সকালে, উপদেষ্টার গুলশানের সুরক্ষিত দুর্গে। আকুবপুর থেকে কালো কাঁচের পাজেরোতে চড়ে ভোরবেলাতেই পুত্রের ফ্ল্যাটে হাজির হন হেডমাস্টার বিল্লাল সাহেব। তার হাতে ছিল সেদিনের তাজা পত্রিকা, যার প্রথম পাতায় বড় বড় করে ছাপা হয়েছে দুটি খবর। একটিতে লেখা, “উপদেষ্টা আসিফের ডোনেশন কেলেঙ্কারি, ভিডিও ভাইরাল!” অন্যটিতে ঠিক তার পাশেই শিরোনাম, “মা-ছেলে-মেয়েকে পিটিয়ে হত্যা, উপদেষ্টার পিতার আশ্রয়ে মূল আসামি!” দুটি নিউজের মাঝখানে জ্বলজ্বল করছে বাপ-বেটার হাস্যোজ্জ্বল দুটি ছবি।
এই যুগলবন্দী দেখেই মেজাজ হারান বিল্লাল মাস্টার। তিনি কোনো প্রকার ভূমিকা ছাড়াই সরাসরি পুত্রের বেডরুমে ঢুকে পড়েন এবং কানে ধরে তাকে হিড়হিড় করে ড্রয়িং রুমে নিয়ে আসেন। এরপর পত্রিকার পাতা পুত্রের চোখের সামনে মেলে ধরে হুংকার দিয়ে বলেন, “এই গাধা! এই! সুদাইতে উপদেষ্টা হইছস তুই? তোর জন্য আজ আমার ছবিটাও পেপারে চলে আসলো! তোকে ঢাকায় পাঠিয়েছি নেটওয়ার্ক শক্ত করতে, আর তুই করেছিস কী, বসে বসে আমাদের সাজানো মাফিয়াতন্ত্রের গোড়ায় পানি ঢেলে দেওয়া দেখছিস!”
কানমলার চোটে দিশেহারা উপদেষ্টা পুত্র মিনমিন করে বলেন, “বাবা, আমি কী করব? ওরা ভিডিও ফাঁস করে দিয়েছে!”
“ভিডিও ফাঁস করেছে তো কী হয়েছে?” বাপের গর্জন যেন ছাদ কাঁপিয়ে দেয়। “আমি এত কষ্ট করে মা-ছেলে-মেয়ে তিনটাকে ‘মাদক ব্যবসায়ী’ ট্যাগ দিয়ে, দিনে-দুপুরে পিটিয়ে-কুপিয়ে পাথর দিয়ে থেঁতলে দিলাম, যাতে এলাকায় আমাদের মাফিয়াতন্ত্রের বিরুদ্ধে কেউ টুঁ শব্দটি করতে না পারে। খুনিটাকে আমার স্কুলের স্টোররুমে লুকিয়ে রেখেছি! আর তুই দেশের বাপ-মা হওয়ার পরেও সামান্য মিডিয়া কন্ট্রোল করতে পারলি না! যা দেখছি এখন তো সাংবাদিকরা আমার স্কুলের স্টোররুমও চেক করতে চলে আসবে!, আর তুই বসে বসে নীলা মার্কেটের হাসের মাংস খাবি”
তিনি রাগে গজগজ করতে করতে বলেন, “দুর্নীতি করবি, খুন করবি, শেল্টার দিবি, সব ঠিক আছে। কিন্তু মিডিয়ার সামনে এত বেফাঁস কথা বলতে তোকে কে বলেছে? তোকে না বলেছিলাম, চেহারাটা সব সময় একটু মায়া মায়া করে রাখবি, ভাব দেখাবি যেন দেশের চিন্তায় তোর রাতের ঘুম হারাম! অভিনয়টাও তো ঠিকমতো শিখলি না! আনাড়ি সাংবাদিকের প্রশ্নেই নীলা মার্কেট থেকে শুরু করে ওয়েস্টিনের কথা পর্যন্ত বলে দিলি!”
উপদেষ্টা পুত্র এবার করুণ সুরে আত্মপক্ষ সমর্থনে বলেন, “বাবা, আমি তো ভেবেছিলাম ‘ডোনেশন’ বললে সবাই এটাকে সৎ কাজই ভাববে! আধুনিক রাজনীতিতে এই সিস্টেমই তো চলছে।”
“চুপ কর, সিস্টেমের বাচ্চা!” বিল্লাল মাস্টার ধমক দিয়ে ওঠেন। “তোকে আর আধুনিক রাজনীতি শেখাতে হবে না। তোর দায়িত্ব ছিল আমার লাইন ক্লিয়ার রাখা, আর তুই নিজেই আর লাইন কাতার ব্যবস্থা করছিস। তোর জন্য এখন আমার স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচন নিয়েও ভাবতে হচ্ছে!”
এরপর তিনি পুত্রের কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিস করে চূড়ান্ত হুমকি দেন, “শেষবারের মতো বলছি, মিডিয়া ম্যানেজ কর। এরপর যদি কোনো পত্রিকায় আমাদের বাপ-বেটার ছবি একসাথে দেখি, তাহলে আকুবপুরে যে পাথরগুলো এখনও বেঁচে আছে, সেগুলো তোর মাথায় ভাঙব! তোকে হেডমাস্টারের ‘বিশেষ ব্যবহারিক ক্লাস’ কাকে বলে, সেটা আমি হাতে-কলমে বোঝাব!”
এই চরম হুঁশিয়ারি দিয়ে বিল্লাল মাস্টার হনহন করে বেরিয়ে যান। যাওয়ার আগে তার বিশ্বস্ত খুনিকে ফোন দিয়ে নির্দেশ দেন, “এলাকার সাংবাদিক কয়েকটাকে ডেকে আমার স্কুলে নিয়ে আয়। ওদের জন্য একটা ‘বিশেষ অ্যাসেম্বলি’র ব্যবস্থা করতে হবে।”