বেগম রোকেয়া মুরতাদ কাফির: রাবি শিক্ষকের কলঙ্কজনক মন্তব্য

ইউনূস আমলে ফিজিক্স ল্যাবে ফতোয়া চর্চা: বেগম রোকেয়া দিবসে রাবি শিক্ষকের কলঙ্কজনক মন্তব্য। Fatwas in the Physics Lab Under Yunus's Regime: RU Teacher’s Disgraceful Remarks on Begum Rokeya Day. ইউনূস আমলে ফিজিক্স ল্যাবে ফতোয়া চর্চা: বেগম রোকেয়া দিবসে রাবি শিক্ষকের কলঙ্কজনক মন্তব্য। Fatwas in the Physics Lab Under Yunus's Regime: RU Teacher’s Disgraceful Remarks on Begum Rokeya Day.

হটাৎ কেন বেগম রোকেয়া মুরতাদ কাফির বলে সরব হলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক খন্দকার মুহাম্মদ মাহমুদুল হাসান?

বিশেষ প্রতিবেদক, দৈনিক কার্টুনুস: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিজিক্স ল্যাবে এক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটিয়াছে। বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের ব্ল্যাকহোল, কোয়ান্টাম মেকানিক্স কিংবা হিগস বোসন কণা লইয়া বিজ্ঞানীরা যখন হাবুডুবু খাইতেছেন, ঠিক তখনই বাংলার মাটিতে এক যুগান্তকারী আবিষ্কার সাধিত হইয়াছে। ফিজিক্সের সূত্র ব্যবহার করিয়া, প্রিজম দিয়া আলোর প্রতিসরণ না মাপিয়া, এক সহযোগী অধ্যাপক মাপিয়া ফেলিয়াছেন মহিয়সী নারী বেগম রোকেয়ার ‘ঈমান’। ফলাফল আসিয়াছে ‘মুরতাদ কাফির’। এই আবিষ্কারের পর সারা দেশের ‘সহিহ’ পুরুষ সমাজের মধ্যে এক স্বস্তির নিঃশ্বাস এবং বিজয়ের উল্লাস বহিয়া যাইতেছে। এতদিন যেই কথাটি বুকে চাপিয়া, দাঁতে দাঁত কামড়াইয়া সহ্য করিতে হইত, তাহা আজ পদার্থবিজ্ঞানের ল্যাবরেটরি হইতে সনদপ্রাপ্ত হইয়াছে।

বেগম রোকেয়া, এই নামটির মধ্যেই যেন পুরুষতন্ত্রের জন্য এক ভয়াবহ আতঙ্ক লুকাইয়া আছে। তিনি কি চাহিয়াছিলেন? তিনি চাহিয়াছিলেন নারীরা মানুষ হউক। আর ঠিক এইখানেই বাধিয়া গেল সংঘাত। নারী যদি মানুষ হইয়া যায়, তবে তো সমস্যা। নারী হইবে ‘দাসী’, নারী হইবে ‘অবরোধবাসিনী’, নারী হইবে স্বামীর পায়ের তলার মাটি। কিন্তু বেগম রোকেয়া আসিয়া সেই মাটিতে ভূমিকম্প ঘটাইয়া দিয়াছিলেন। তিনি হাতে কলম ধরাইয়া দিয়াছিলেন, বই পড়িতে শিখাইয়াছিলেন। আর এই বই পড়ার কুফল আজ হাড়ে হাড়ে টের পাইতেছে বাংলার সহিহ পুরুষ সমাজ। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই মহান শিক্ষক, যিনি নিশ্চিতভাবেই ফিজিক্সের জটিল সমীকরণের ফাঁকে ফাঁকে নারীবাদী চক্রান্তের গন্ধ পাইতেন, তিনি অনুধাবন করিলেন, এই মহিলা তো আমাদের সুখের দুনিয়ায় আগুন লাগাইয়া দিয়াছে!

ঘটনার গভীরে গিয়া দেখা যায়, এই ক্ষোভের উৎস অনেক গভীরে। বাংলার ঐতিহ্যবাহী পুরুষতান্ত্রিক সমাজে একজন পুরুষের আজন্ম লালিত স্বপ্ন থাকে চারটি বিবাহ করা। সকালবেলা এক বউ পা টিপিয়া দিবে, দুপুরবেলা আরেক বউ গরম ভাত বাড়িয়া দিবে, বিকালবেলা তৃতীয় বউ পান সাজিয়া দিবে এবং রাত্রে চতুর্থ বউ সহবাস করিবে। কেহ কোনো প্রশ্ন করিবে না। কেহ বলিবে না, “ওগো, আজ শরীর ভাল নাই, সহবাস করিব না।” বলিলেই পিঠের উপর দু-চার ঘা বসাইয়া দেওয়া যাইবে, ইহাই তো ছিল শান্তি। ম্যারিটাল রেপ বা বৈবাহিক ধর্ষণ বলিয়া কোনো শব্দ অভিধানে ছিল না, উহা ছিল অধিকার। কিন্তু হায়! বেগম রোকেয়া আসিয়া এই সুখের দুনিয়ায় এসিড ঢালিয়া দিলেন।

নারীরা যখন হইতে ‘সুলতানার স্বপ্ন’ পড়িতে শুরু করিল, তখন হইতেই পুরুষের দুঃস্বপ্ন শুরু হইল। যেই মেয়েটির ক্লাস ফাইভ পাস করিয়া রান্নাঘরে ঢুকিবার কথা, সে এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়া পদার্থবিজ্ঞান পড়ে। যেই মেয়েটির বাল্যবিবাহ হইয়া বারো বছর বয়সে দুই সন্তানের জননী হওয়ার কথা, সে এখন নিজের ক্যারিয়ার লইয়া ভাবে। স্বামীর ধমক খাইয়া যে মেয়েটির ভয়ে জবুথবু হওয়ার কথা, সে এখন উল্টো আইন দেখায়, নারী নির্যাতনের মামলা ঠুকিয়া দেয়। এই যে নারীর মেরুদণ্ড সোজা হইয়া দাঁড়ানো, নিজের অধিকার আদায়ে সচেষ্ট হওয়া, ইহা কি কোনো ‘সহিহ মুমিন’ পুরুষের সহ্য হয়? তাই তো আজ সেই ক্ষোভ আগ্নেয়গিরির মতো ফাটিয়া পড়িয়াছে ফিজিক্সের সহযোগী অধ্যাপকে স্ট্যাটাসে।

বিগত স্বৈরাচারী সরকারের আমলে এই ‘সহিহ’ কথাগুলো বলা যাইত না। তখন নাকি নারী অধিকার আর প্রগতিশীলতার এক অদ্ভুত জোয়ার চলিতেছিল। কোনো হুজুর বা কোনো শিক্ষক যদি নারীর চার দেয়ালে বন্দি থাকার ফতোয়া দিত, তবে সেই ‘স্বৈরাচার’ সরকার খড়গহস্ত হইতো। বিচারের ভয় ছিল, চাকরির ভয় ছিল, এমনকি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের জুজু ছিল। কিন্তু আজ দিন বদলাইয়াছে। তথাকথিত ‘দ্বিতীয় স্বাধীনতার’ পর হইতে, অর্থাৎ ডক্টর ইউনূসের নেতৃত্বাধীন বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় আসার পর হইতে, এই ‘মোল্লা-জঙ্গি’ গোষ্ঠী যেন অক্সিজেনের সিলিন্ডার পাইয়াছে। তাহারা এখন বুক ফুলাইয়া, দাড়ি ঝুলাইয়া নারীর বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করিতে পারিতেছে।

এই মহান শিক্ষক হয়তো ভাবিয়াছেন, ৫ আগস্টের পর তো দেশ স্বাধীন হইয়াছে, এখন আর রোকেয়াকে সম্মান দেওয়ার দায়বদ্ধতা নাই। এখন আমরা আবার সেই মধ্যযুগে ফিরিয়া যাইব, যেইখানে নারী মানেই ভোগ্যপণ্য। তিনি হয়তো তাহার ল্যাবে বসিয়া হিসাব কষিয়া দেখিয়াছেন, নারীর শিক্ষার হার বৃদ্ধির সাথে সাথে পুরুষের ‘চার বিয়ের’ সম্ভাবনা ব্যাস্তানুপাতিক হারে কমিতে থাকে। অর্থাৎ, E=mc^2 সূত্রের মতোই একটি নতুন সূত্র আবিষ্কৃত হইয়াছে: W(e) = 1/P(m)। যেখানে W(e) হইল নারীর শিক্ষা (Women Education) এবং P(m) হইল পুরুষের মাস্তানি (Patriarchal Maastani)। নারীর শিক্ষা যত বাড়িবে, পুরুষের মাস্তানি তত কমিবে। এই মহাজাগতিক সত্য উদ্ঘাটন করার পর তিনি আর চুপ থাকিতে পারেন নাই। তাই বেগম রোকেয়াকে ‘কাফির’ ঘোষণা করিয়া তিনি মূলত পুরুষতন্ত্রের শেষ দুর্গটি রক্ষা করিতে চাহিয়াছেন।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, যাহাকে আমরা ইংরেজিতে ফেসবুক বলি, সেখানে এখন এক অদ্ভুত পরিস্থিতি। একদল ‘সহিহ’ ভাই ব্রাদার ওই শিক্ষকের সমর্থনে লাফালাইফি করিতেছেন। তাহাদের যুক্তি বড়ই চমৎকার। তাহারা বলিতেছেন, “রোকেয়া পর্দা মানিতেন না, তাই তিনি কাফির।” অথচ রোকেয়া সারা জীবন পর্দা মানিয়াই নারী শিক্ষার জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরিয়াছেন। কিন্তু এই অন্ধ ভক্তকূলের কাছে ইতিহাসের সত্যের চেয়ে হুজুরের মুখের কথাই বেশি মূল্যবান। তাহারা মনে করেন, নারী যদি শিক্ষিত হয়, তবে সে প্রশ্ন করিবে। আর প্রশ্ন করা মানেই বেয়াদবি। প্রশ্ন করা মানেই স্বামীর কর্তৃত্বকে চ্যালেঞ্জ করা। তাই রোকেয়াকে পাঠ্যপুস্তক হইতে ঝেঁটিয়ে বিদায় করা এবং তাহাকে সামাজিকভাবে ‘মুরতাদ’ প্রতিপন্ন করা এখন সময়ের দাবি হইয়া দাঁড়াইয়াছে।

বর্তমান ‘অবৈধ’ অন্তর্বর্তী সরকার, যাহারা জঙ্গিদের সাথে লইয়া রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করিয়াছে, তাহাদের নীরবতা এই সাহসকে আরও উস্কাইয়া দিতেছে। বিগত সরকারের আমলে আমরা দেখিতাম, নারী অবমাননার বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি। কিন্তু এখন? এখন মনে হইতেছে, রাষ্ট্র নিজেই চায় নারীরা ঘরে ঢুকিয়া যাক। নারীরা চাকরি ছাড়িয়া দিক, বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়া বন্ধ করুক। কারণ, নারীরা বাহিরে থাকিলে ‘ফিতনা’ ছড়ায়। আর ফিতনা বন্ধ করার একমাত্র উপায় হইল নারীদের বাক্সবন্দি করা। বেগম রোকেয়া সেই বাক্সের তালা ভাঙিয়াছিলেন বলিয়াই আজ তাহার উপর এত আক্রোশ।

কল্পনা করুন একটি দৃশ্য: এক স্বামী অফিস হইতে ফিরিয়া দেখিলেন, স্ত্রী রান্না না করিয়া বেগম রোকেয়ার ‘অবরোধবাসিনী’ পড়িতেছেন। স্বামী হুকুম দিলেন, “এক গ্লাস পানি দাও।” স্ত্রী বই হইতে মুখ তুলিয়া বলিলেন, “নিজে ঢালিয়া খাও, হাত নাই?” এই যে ‘বেয়াদবি’, ইহার জন্য কি রোকেয়া দায়ী নহেন? অবশ্যই দায়ী। আজ যদি রোকেয়া নারী শিক্ষার স্কুল না খুলিতেন, তবে ওই স্ত্রী হয়তো ভয়ে কাঁপিতে কাঁপিতে গ্লাসে পানি তো দিতেনই, সাথে পা ধুইয়া সেই পানি পান করিতেন। সেই ‘স্বর্গীয়’ সুখ হইতে পুরুষকে বঞ্চিত করার অপরাধে রোকেয়াকে ‘কাফির’ বলা তো লঘু দণ্ড। তাহাকে তো ফিজিক্সের ল্যাবে উচ্চ ভোল্টেজের কারেন্ট দিয়া শক দেওয়া উচিত ছিল, যদি তিনি বাঁচিয়া থাকিতেন।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক হয়তো ভাবিয়াছেন, তিনি এক ঢিলে দুই পাখি মারিবেন। এক, রোকেয়াকে বিতর্কিত করিবেন, এবং দুই, নিজেকে ‘সহিহ আকিদার’ ধারক ও বাহক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করিবেন। তাহার এই সাহসী পদক্ষেপে অনুপ্রাণিত হইয়া হয়তো কাল কেমিস্ট্রি ডিপার্টমেন্টের কোনো শিক্ষক আসিয়া বলিবেন, “সুফিয়া কামালও নাস্তিক ছিলেন কারণ তিনি এসিডের ক্ষারত্ব লইয়া কবিতা লেখেন নাই।” পরশু হয়তো ম্যাথমেটিক্সের শিক্ষক বলিবেন, “প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন করিয়াছেন, কিন্তু পর্দা করেন নাই, তাই তাহার ফাঁসি হালাল ছিল।” এইভাবে আমরা ধীরে ধীরে এক ‘পবিত্র’ অজ্ঞতার দিকে আগাইয়া যাইব।

এই যে মোল্লা-জঙ্গি গোষ্ঠী আজ মাথাচাড়া দিয়া উঠিয়াছে, তাহাদের মূল ভয় কিন্তু ধর্মে নয়, তাহাদের মূল ভয় ক্ষমতায়। নারীর হাতে ক্ষমতা গেলে, নারীর হাতে অর্থ গেলে, পুরুষের একচ্ছত্র আধিপত্য থাকে না। তাই তাহারা ধর্মকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে। তাহারা রোকেয়াকে কাফির বলে, তসলিমাকে দেশ ছাড়া করে, মালালা ইউসুফজাইকে গুলি করে। কারণ ইহারা জানে, কলম তরবারির চেয়েও শক্তিশালী। আর সেই কলম যদি নারীর হাতে থাকে, তবে তো কথাই নাই। বিগত সরকারের আমলে এই গোষ্ঠী গর্তে লুকাইয়া ছিল। কিন্তু এখন তাহারা গর্ত হইতে বাহির হইয়া আসিয়াছে। তাহারা দেখিতেছে, দেশ চালাইতেছেন এমন এক ব্যক্তি যিনি হয়তো নোবেল পাইয়াছেন, কিন্তু দেশের মৌলবাদী শক্তিকে নিয়ন্ত্রণ করার কোনো সদিচ্ছা বা ক্ষমতা তাহার নাই। বরং তাহার আমলেই মাজারে হামলা হইতেছে, ভাস্কর্য ভাঙা হইতেছে, আর এখন মনীষীদের চরিত্র হনন করা হইতেছে।

শিক্ষার্থীদের প্রতিক্রিয়াও দেখার মতো। একদল শিক্ষার্থী, যাহারা হয়তো জীবনে রোকেয়ার কোনো বইয়ের মলাটও উল্টাইয়া দেখে নাই, তাহারাও এখন ওই শিক্ষকের সুরে সুর মিলাইয়া বলিতেছে, “স্যার ঠিকই বলিয়াছেন।” ইহারা সেই প্রজন্ম, যাহারা ফেইসবুকের রিলস দেখিয়া জ্ঞান অর্জন করে এবং ওয়াজ শুনিয়া বিজ্ঞান শিখে। ইহাদের কাছে যুক্তি নাই, আছে শুধু অন্ধ বিশ্বাস। অন্যদিকে প্রগতিশীল শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ করিতেছে, কিন্তু সেই প্রতিবাদের ভাষা বড়ই ক্ষীণ। কারণ, ক্যাম্পাসে এখন লাঠিসোঁটা আর মব বাহিনীর দাপট কিছুটা কমিলেও, আছে ‘ট্যাগিং’ খাওয়ার ভয়। কিছু বলিলেই ‘ট্যাগ’ খাইয়া যাইতে হইবে। হয়তো নাস্তিক ট্যাগ, নয়তো স্বৈরাচারের দোসর ট্যাগ।

তবে আসল কথা হইল, বেগম রোকেয়াকে গালি দিয়া এই শিক্ষক বা তাহার সাঙ্গপাঙ্গরা রোকেয়ার উচ্চতা এক ইঞ্চিও কমাইতে পারিবে না। রোকেয়া তো সেই নক্ষত্র, যার আলোয় আলোকিত হইয়া আজও খন্দকার মুহাম্মদ মাহমুদুল হাসান নামের এই জঙ্গি-মোল্লা শিক্ষকের ক্লাসে মেয়েরা তার সামনে বসিয়াই ক্লাস করে। ওই শিক্ষক কি পারিবেন তাহার ক্লাসের সব মেয়েদের বের করিয়া দিতে? পারিবেন না। কারণ রাষ্ট্রযন্ত্র অচল হইয়া যাইবে। নারী ছাড়া সমাজ অচল। কিন্তু এই সহজ সত্যটি মানিয়া লইতে তাহাদের পুরুষতান্ত্রিক ইগোতে আঘাত লাগে। তাই তাহারা মাঝেমধ্যে এমন ‘বুলশিট’ কথা বলিয়া নিজেদের অস্তিত্ব জানান দেয়।

শেষ পর্যন্ত এই ঘটনা আমাদের চোখে আঙুল দিয়া দেখাইয়া দিল, সমাজ হিসেবে আমরা কোথায় আছি। আমরা স্মার্টফোন ব্যবহার করি, কিন্তু চিন্তায় সেই মধ্যযুগেই পড়িয়া আছি। বেগম রোকেয়া যেই লড়াই শুরু করিয়াছিলেন একশ বছর আগে, সেই লড়াই আজও শেষ হয় নাই। বরং নতুন করিয়া শুরু হইলো। এখন লড়াইটা কেবল অশিক্ষার বিরুদ্ধে নয়, লড়াইটা এখন অপশিক্ষার বিরুদ্ধেও। লড়াইটা ফিজিক্স ল্যাবে বসিয়া ধর্ম বিচারের বিরুদ্ধে।

এই শিক্ষক হয়তো আজ রাত্রে খুব শান্তিতে ঘুমাইবেন এই ভাবিয়া যে, তিনি ইসলামের এক মহান খেদমত আঞ্জাম দিয়াছেন। কিন্তু তিনি জানেন না, তাহার এই বক্তব্যের ফলে হাজারো তরুণী আরও বেশি করিয়া বেগম রোকেয়াকে পড়িবে, জানিবে এবং তাহার আদর্শে বলীয়ান হইবে। মোল্লাতন্ত্র চায় নারীকে অন্ধকারে রাখিতে, কিন্তু আলো একবার ঢুকিলে তাহা আর রোখা যায় না। ফিজিক্সের ভাষায় যাহাকে বলে ‘এনট্রপি’, বিশৃঙ্খলা বাড়িবেই। নারীর জাগরণের এই বিশৃঙ্খলা পুরুষতন্ত্রের সাজানো বাগান তছনছ করিয়া দিবে, ইনশাল্লাহ। ততদিন পর্যন্ত বেগম রোকেয়া ‘কাফির’ হইয়াই থাকুন, আর আমরা ‘সহিহ মুমিন’ হইয়া মূর্খতার সাগরে ডুব সাঁতার খেলি। জয় হোক মূর্খতার, জয় হোক অন্ধকারের।

#, #, #, #, #, #, #, #, #, #, #, #, #, #, #, #, #, #, #, #, #

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *