
এই সবুজ পাসপোর্টে কেউ ভিসাও দিচ্ছে না: হতাশ শবনম ফারিয়ার নেতৃত্বে নতুন বিপ্লবের ডাক
বিশেষ প্রতিবেদক, দৈনিক কার্টুনুস: দেশের অভিনয় জগতের কর্পোরেট রমণী, ফেসবুক স্ট্যাটাস বিশেষজ্ঞ শবনম ফারিয়া তাঁর সবুজ পাসপোর্টের ভবিষ্যৎ নিয়ে গভীর হতাশা ও আক্ষেপ প্রকাশ করেছেন। সম্প্রতি এক ফেসবুক পোস্টে “এমন এক দেশে জন্ম, কার কাছে বিচার দেব, জানি না” বলে হাহাকার করে তিনি জানিয়েছেন, এই সবুজ পাসপোর্টে এখন আর কেউ ভিসাও দিচ্ছে না। তাঁর এই কান্না ভেজা ঘোষণায় দেশের লক্ষ লক্ষ ‘কই যামু’ চিন্তায় নিমগ্ন তরুণের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ শুরু হয়েছে বলে জানা গেছে।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় গুলশানের এক কফি শপে আয়োজিত এক অতীব জরুরি সংবাদ সম্মেলনে শবনম ফারিয়া এ বিষয়ে তাঁর বিস্তারিত কর্মপরিকল্পনা তুলে ধরেন। কফির কাপে ঝড় তুলে তিনি বলেন, “আমার আর ভালো লাগে না। একদল টাকা মেরে কানাডা-আমেরিকায় সেকেন্ড হোম বানিয়ে ভেগে যাচ্ছে, আরেক দল ‘জুলাই চুদি‘ লিখে সেই শোক কমাচ্ছে। মাঝখানে আমরা যারা একটু হাওয়া বদল করতে চাই, সামান্য ইউরোপ-আমেরিকা ঘুরতে চাই, তাদের কপালে ভিসা জুটছে না। এই সবুজ রঙ কি আমাদের জন্য কাল হলো?”
হুহু করে কেঁদে উঠে ‘কই যামু’ সংঘের সম্ভাব্য সভানেত্রী শবনম ফারিয়া বলেন, “কিছু বললেই বিপদ। এক পক্ষ বলে ডলার খেয়েছি, আরেক পক্ষ বলে ফ্যাসিবাদের দালাল। আরে বাবা, আমি তো শুধু ভিসা চেয়েছি! ডলার খাইলে তো আর ভিসার জন্য এই আকুতি করতে হতো না, এতদিনে ডক্টর ইউনুস সাহেবের মতো প্যারিসের আইফেল টাওয়ারের নিচে বসে কফি খেতে পারতাম।”
এই পর্যায়ে তিনি শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ক্ষুদ্রঋণের জনক ও বৃহৎ প্রস্থানের কারিগর, গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা এবং প্যারিসের সম্ভাব্য স্থায়ী বাসিন্দা ডক্টর মুহম্মদ ইউনুসের উদাহরণ টেনে আনেন। আবেগঘন কণ্ঠে ফারিয়া বলেন, “দেখুন, উনারও তো সবুজ পাসপোর্ট। কিন্তু তিনি কীভাবে তরতর করে প্যারিস চলে গেলেন? আর আমরা ভিসার জন্য আবেদন করলে এমনভাবে তাকায় যেন পাসপোর্ট না, একটা তেলাপোকা জমা দিয়েছি। নিশ্চয়ই পাসপোর্টের ভেতরে কোনো শুভঙ্করের ফাঁকি আছে। উনার পাসপোর্টে হয়তো অদৃশ্য কালিতে ‘ভিআইপি পলাতক’ লেখা আছে, যা আমাদেরটায় নেই।”
দেশের সুশীল সমাজ ও দূতাবাসগুলোর ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন এই অভিনেত্রী। তিনি বলেন, “ঢাকাস্থ মার্কিন জমিদার, গণতন্ত্রের একনিষ্ঠ ফেরিওয়ালা, ভিসা নীতির মোড়ল এবং সেন্টমার্টিন দ্বীপের অপ্রকাশিত ক্রেতা মহামান্য পিটার হাস সাহেব সারাদিন দেশের গণতন্ত্র নিয়ে চিন্তা করেন, সুশীলদের সাথে চা খান, কিন্তু আমাদের মতো সাধারণ শিল্পীদের মনের বেদনা বোঝেন না। আমি উনার কাছে বিনীত অনুরোধ জানাই, আমাদের জন্য ‘অভিনেতা কোটায়’ ভিসা চালু করুন।”
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেন, সরকার পরিবর্তনের আন্দোলনেও তো আপনি সোচ্চার ছিলেন, এখন সেই সরকারের কাছে বিচার চাইছেন না কেন?
জবাবে মেজাজ গরম করে ফারিয়া বলেন, “আরে কার কাছে বিচার দেব? বিচার দেওয়ার মতো কেউ কি আছে? একদল আরেক দলকে চোর বলে, কিন্তু দিন শেষে সবাই মিলেমিশে ভাগাভাগি করে খায়। আমাদের মতো সাধারণ মানুষের স্থান শুধু ফেসবুকের কমেন্ট বক্সে। আমরা হলাম নীরব দর্শক, যারা শুধু রঙিন তামাশা দেখি আর দীর্ঘশ্বাস ফেলি।”
তিনি আরও যোগ করেন, “আমার একার পক্ষে এই অবিচারের বিরুদ্ধে লড়া সম্ভব নয়। তাই আমি আজ এই সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে সকল হতাশাগ্রস্ত, ভিসা বঞ্চিত, দেশত্যাগে ইচ্ছুক কিন্তু অপারগ সবুজ পাসপোর্টধারীদের নিয়ে একটি নতুন প্ল্যাটফর্ম গঠনের ঘোষণা দিচ্ছি। আমাদের সংগঠনের নাম হবে – ‘বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক পলায়ন প্রত্যাশী সংঘ’ (বাপ্প সংঘ)।”
এই ঘোষণার সাথে সাথে সম্মেলন কক্ষে উপস্থিত ভিসা প্রত্যাশী বেকার, ব্যবসায়ী ও তরুণদের মধ্যে ব্যাপক হাততালির রোল পড়ে যায়। ‘বাপ্প সংঘ’-এর উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করে ফারিয়া বলেন, “আমাদের প্রথম ও প্রধান দাবি হবে, পৃথিবীর সকল দেশে বাংলাদেশী সবুজ পাসপোর্টধারীদের জন্য ভিসা অন অ্যারাইভাল চালু করতে হবে। যদি তা সম্ভব না হয়, তবে অন্ততপক্ষে ‘হতাশা কোটায়’ দশ বছরের মাল্টিপল এন্ট্রি ভিসা নিশ্চিত করতে হবে। আমরা আমাদের দাবি আদায়ে প্রয়োজনে শাহবাগ থেকে গুলশান ২ নম্বর গোলচত্বর পর্যন্ত ‘পাসপোর্ট হাতে লং মার্চ’ কর্মসূচী পালন করব।”
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি জানান, খুব শীঘ্রই ‘বাপ্প সংঘ’-এর পক্ষ থেকে পিটার হাসের বাসভবন অভিমুখে একটি ‘ভিসা আবেদনপত্র মিছিল’ করা হবে। মিছিলে সবার হাতে প্ল্যাকার্ড থাকবে, যাতে লেখা থাকবে – “হাস সাহেব, কথা বলেন, ভিসার দুয়ার খুলে দেন।”
সবশেষে, পুনরায় কান্নায় ভেঙে পড়ে শবনম ফারিয়া বলেন, “আমার আর কিছুই চাওয়ার নাই। শুধু একটু মুক্তি চাই। এই দেশের জ্যাম, দুর্নীতি, আর অনলাইন পলিটিক্যাল বিশ্লেষকদের হাত থেকে বেঁচে থাকার জন্য কয়েকটা দিনের জন্য হলেও বাইরে যেতে চাই।”