ইতিহাসের মহানায়ক নয়, গোলাম আযম এদেশের শ্রেষ্ঠ বিশ্বাসঘাতক

ইতিহাসের মহানায়ক নয়, গোলাম আযম এদেশের শ্রেষ্ঠ বিশ্বাসঘাতক। Ghulam Azam is not a hero of history; he is the country's greatest traitor. ইতিহাসের মহানায়ক নয়, গোলাম আযম এদেশের শ্রেষ্ঠ বিশ্বাসঘাতক। Ghulam Azam is not a hero of history; he is the country's greatest traitor.

গোলাম আযম ইতিহাসের মহানায়ক নয়, গোলাম আযম এদেশের শ্রেষ্ঠ বিশ্বাসঘাতক

ইতিহাসের পাতায় কিছু নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকে, আর কিছু নাম লেখা থাকে কলঙ্কের কালিতে। যখন কোনো জাতিকে আত্মপরিচয়ের জন্য রক্তগঙ্গায় ভাসতে হয়, তখন সেই জাতির বিরুদ্ধে দাঁড়ানো ব্যক্তিকে কোনো যুক্তি বা পারিবারিক আখ্যানে নায়ক বানানো যায় না। গোলাম আযম নামটি বাংলাদেশের ইতিহাসে তেমনই এক কলঙ্কিত অধ্যায়, যিনি মহানায়ক তো ননই, বরং এদেশের ইতিহাসে বিশ্বাসঘাতকতার নিকৃষ্টতম উদাহরণ। তাকে ‘শ্রেষ্ঠ বিশ্বাসঘাতক’ বলার কারণ হলো, তার বিরোধিতা কেবল রাজনৈতিক ছিল না; ছিল আদর্শিক, পরিকল্পিত এবং নৃশংস, যা নিজ দেশের মাটির সঙ্গে, মানুষের সঙ্গে এবং অস্তিত্বের সঙ্গে ছিল এক চূড়ান্ত বেইমানি।

বাঙালির অস্তিত্বের বিরুদ্ধে আদর্শিক যুদ্ধ

বিশ্বাসঘাতকতার প্রথম ধাপ ছিল আদর্শিক। গোলাম আযম এবং তার দল জামায়াতে ইসলামী বাঙালির ভাষা, সংস্কৃতি এবং স্বাধিকারের সংগ্রামকে শুরু থেকেই ‘ইসলামবিরোধী’ ও ‘হিন্দুস্তানের চক্রান্ত’ বলে আখ্যা দিয়েছিল। যখন বাঙালিরা নিজেদের অধিকারের জন্য লড়ছিল, তখন তিনি ধর্মের বর্ম ব্যবহার করে সেই লড়াইকে কলুষিত করতে চেয়েছেন। তিনি এবং তার অনুসারীরা প্রচার করেছেন যে, বাঙালি জাতীয়তাবাদ ইসলামের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এই আদর্শিক অবস্থান থেকেই তিনি মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছেন এবং কোটি কোটি মানুষের মুক্তির আকাঙ্ক্ষাকে পদদলিত করে অখণ্ড পাকিস্তানের দাসত্বকে শ্রেয় মনে করেছেন। একজন নেতা যখন নিজ জনগোষ্ঠীর পরিচয়কেই অস্বীকার করেন, তখন তার চেয়ে বড় বিশ্বাসঘাতকতা আর কী হতে পারে?

ঘাতক তৈরির কারখানা: পরিকল্পিত নৃশংসতা

গোলাম আযমের বিশ্বাসঘাতকতা কেবল ভাষণে বা বিবৃতিতে সীমাবদ্ধ ছিল না। তিনি পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সহযোগী হিসেবে এক ভয়ংকর সাংগঠনিক কাঠামো তৈরি করেছিলেন। তার প্রত্যক্ষ নেতৃত্বে গঠিত ‘শান্তি কমিটি’, ‘আল-বদর’ ও ‘আল-শামস’ ছিল কার্যত ঘাতক তৈরির কারখানা। এই সংগঠনগুলোর কাজ ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা করা, নিরীহ বাঙালিদের ওপর নির্যাতন চালানো এবং পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে পথ দেখিয়ে গণহত্যায় সহায়তা করা। সবচেয়ে নারকীয় বিশ্বাসঘাতকতা ছিল আল-বদর বাহিনীর সৃষ্টি, যার মূল উদ্দেশ্যই ছিল বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করে দেওয়া। দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান – শিক্ষক, চিকিৎসক, সাংবাদিক, সাহিত্যিকদের রাতের আঁধারে ঘর থেকে তুলে নিয়ে হত্যা করা হয়েছিল। এই পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে গোলাম আযম নিশ্চিত করতে চেয়েছিলেন, বাংলাদেশ স্বাধীন হলেও যেন আদর্শিক ও বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে পঙ্গু হয়ে থাকে। নিজ দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে মেধাহীন করার চেয়ে ঘৃণ্য বিশ্বাসঘাতকতা আর কিছু হতে পারে না। এই হত্যাকাণ্ড কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছিল না, ছিল তার সুদূরপ্রসারী ষড়যন্ত্রের অংশ।

আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিজ দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র

দেশের মাটিতে রক্তের হোলিখেলায় মেতে ওঠার পাশাপাশি গোলাম আযম আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও বাংলাদেশের বিরুদ্ধে সক্রিয় ছিলেন। তিনি মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে সফর করে বোঝানোর চেষ্টা করেছেন যে, বাংলাদেশে (পূর্ব পাকিস্তানে) যা ঘটছে তা কোনো মুক্তিযুদ্ধ নয়, বরং ‘ইসলাম রক্ষার যুদ্ধ’। তিনি বিশ্বদরবারে পাকিস্তানি সামরিক জান্তার চালানো গণহত্যাকে বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন এবং মুক্তি সংগ্রামীদের ‘দুষ্কৃতকারী’ হিসেবে তুলে ধরেছেন। যখন বিশ্ববাসী বাঙালিদের ওপর চালানো নৃশংসতায় স্তম্ভিত, তখন তিনি নিজ দেশের মানুষের আর্তনাদকে অস্বীকার করে হানাদারদের পক্ষে সাফাই গেয়েছেন। এই কাজটি ছিল নিজ জন্মভূমির পিঠে ছুরি মারার সামিল।

কলঙ্কের স্থায়ী ঠিকানা: ইতিহাসের আঁস্তাকুড়

কোনো সন্তানের আবেগ দিয়ে পিতার অপরাধকে আড়াল করা যায় না। ইতিহাস ব্যক্তিগত ডায়েরি নয়, এটি একটি জাতির সামষ্টিক স্মৃতি আর ত্যাগের দলিল। সেই দলিলে গোলাম আযম একজন গণহত্যাকারী, ষড়যন্ত্রকারী এবং সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বিশ্বাসঘাতকদের একজন। তার নাম বাংলাদেশের ইতিহাসে থাকবে, তবে শ্রদ্ধার পাত্র হিসেবে নয়, ঘৃণার প্রতীক হিসেবে। যারা তাকে নায়ক বানাতে চায়, তারা মূলত একাত্তরের পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে চায় এবং ত্রিশ লক্ষ শহীদের আত্মত্যাগকে উপহাস করতে চায়। কিন্তু ইতিহাস তার রায় দিয়ে দিয়েছে। গোলাম আযমের ঠিকানা ইতিহাসের পাতায় নয়, তার স্থান ইতিহাসের আঁস্তাকুড়েই।

#, #, #, #, #, #, #, #, #, #, #, #, #, #, #, #, #, #, #, #, #, #, #, #, #, #, #, #, #, #, #, #

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *