বিশেষ প্রতিবেদক, দৈনিক কার্টুনুস: ডিসেম্বরের এক শীতের রাত। রাষ্ট্র পরিচালনার গুরুগম্ভীর কেন্দ্রবিন্দু হিসাবে পরিচিত মন্ত্রিপাড়ার বাতাসে যখন কেবল ফাইলের গন্ধ, প্রোটোকলের দীর্ঘশ্বাস আর অন্তহীন বৈঠকের ক্লান্তি ভাসিতেছিল, ঠিক তখনই একদল দুঃসাহসী তরুণ ছাত্রনেতা এক অভাবনীয় চৌর্যকর্মের মাধ্যমে সেই গুমোট পরিবেশকে সজোরে নাড়া দিয়াছেন। আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের সুরক্ষিত সরকারি বাসভবন হইতে দুইটি তাগড়া ছাগলকে ‘চুরি’ করিয়া ভোজনবিলাসের যে লঙ্কাকান্ড তাঁহারা রচনা করিয়াছেন, তাহা এখন কেবল মন্ত্রিপাড়ার অন্দরেই নহে, বরং সারাদেশের রাজনৈতিক আড্ডায় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হইয়াছে। এই ঘটনাকে আপাতদৃষ্টিতে একটি সাধারণ চুরির ঘটনা বলিয়া মনে হইলেও, আমাদের গভীর অনুসন্ধানে ইহার বহুবিধ শিক্ষণীয় ও যুগান্তকারী দিক উন্মোচিত হইয়াছে।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রের সহিত কথা বলিয়া জানা যায়, সেই ঐতিহাসিক রাতে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উদীয়মান নেতা নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী এবং তাঁহার বিশ্বস্ত সহযোগী, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ‘মেহেদি আর্টিস্ট’ রিফাত রশিদ ওরফে বুবিস রিফাত এক অতি ‘সিরিয়াস’ আলোচনায় মগ্ন ছিলেন। আলোচনার বিষয়বস্তু কী ছিল, তাহা রহস্যাবৃত থাকিলেও হঠাৎই নাকি কারও একজনের মাথায় এই যুগান্তকারী ধারণাটি আসে—‘ভাই, অনেক তো ঝাল ফ্রাই ছাড়া গলাধঃকরণ করিলাম, চলেন না একটু ঝালের এন্তেজাম করি!’
যেই কথা, সেই কাজ। তাঁহাদের ‘ঝাল ফ্রাই’ এর লক্ষ্যবস্তু হিসাবে নির্ধারিত হয় আইন উপদেষ্টার আদরের দুইটি ছাগল, যাহারা রাষ্ট্রীয় চত্বরে ঘাস খাইয়া নিশ্চিন্ত জীবনযাপন করিতেছিল। সিনেমার টানটান উত্তেজনার প্লটের ন্যায় নাসীর ও রিফাত স্বল্প উচ্চতার দেয়াল টপকাইয়া উপদেষ্টার বাংলোর অভ্যন্তরে প্রবেশ করেন। বাহিরে তখন প্রস্তুত ছিল একটি চৌকস ‘রিসিভিং টিম’, যাহাদের দায়িত্ব ছিল উদ্ধারকৃত ছাগল দুইটিকে দ্রুত নিরাপদ স্থানে সরানো। পুরো দৃশ্যটি এতটাই নিখুঁতভাবে সম্পাদিত হয় যে, কেবল আবহ সঙ্গীতটুকুরই অভাব ছিল।
উদ্ধারকৃত ছাগল দুইটির মধ্যে একটির ভাগ্য সেই রাত্রেই নির্ধারিত হইয়া যায়। ভোজন রসিক নেতারা কালবিলম্ব না করিয়া সেটিকে কোরবানির সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু বিধি বাম! উপযুক্ত ধারালো অস্ত্রের অভাবে প্রথমে কার্যটি সম্পাদনে বেগ পাইতে হয়। তবে সংকটেই উদ্ভাবনের জন্ম হয়। আধুনিক যন্ত্রপাতির অনুপস্থিতিতে ছাত্রনেতারা আশ্রয় নেন দেশীয় ঐতিহ্যের কোলে, তাঁহারা শান দেওয়া বঁটির সাহায্যে কার্যসিদ্ধি করেন। আধুনিকতার এই মহাসংকট কালেও ঐতিহ্যকে আঁকড়াইয়া ধরিয়া কীভাবে লক্ষ্য অর্জন করা যায়, ইহা তাহার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তৎপরবর্তীকালে অবশ্য পেশাদারিত্বের পরিচয় দিতে কারওয়ান বাজার হইতে একজন কসাইকে গভীর রাত্রে ডাকিয়া আনা হয়। এই মহৎ উদ্যোগের মাধ্যমে একজন মেহনতি মানুষের রাত্রিকালীন কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করিয়া ছাত্রনেতারা যে দেশের অর্থনীতিতে এক ক্ষুদ্র অথচ গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখিয়াছেন, তাহা বলাই বাহুল্য। অতঃপর শুরু হয় মহা আয়োজন, ঝাল ফ্রাই এর দাওয়াত, রাতভর পার্টি, আর মাতাল হয়ে আসিফ নজরুলের পিণ্ডি চটকানোর মাধ্যমে এক ঐতিহাসিক ভোজের সমাপ্তি ঘটে।
এই দুঃসাহসিক অভিযানের সবচেয়ে চমকপ্রদ অধ্যায়টি রচিত হয় উপদেষ্টার বাংলোর সিসিটিভি ক্যামেরার সামনে। আইন উপদেষ্টা যখন পরদিন সকালে ছাগল খুঁজিতে গিয়া সিসিটিভি ফুটেজ চেক করেন, তখন তিনি এক অভূতপূর্ব দৃশ্যের সাক্ষী হন। ফুটেজে দেখা যায়, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতা নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী ও তাঁহার সহযোগী রিফাত রশিদ ক্যামেরার দিকে সরাসরি তাকাইয়া অবজ্ঞার সহিত ভেংচি কাটিতেছেন। তাঁহাদের ভাবভঙ্গি দেখিয়া মনে হইতেছিল, তাঁহারা যেন কোনো নজরদারির আওতায় নাই, বরং নিজেরাই একটি ঐতিহাসিক মুহূর্তকে ক্যামেরাবন্দী করিতেছেন। তাঁহারা বুঝাইয়া দিয়াছেন যে, রাষ্ট্রীয় নজরদারির ভয়ে ভীত না হইয়া, বরং তাহাকে প্ল্যাটফর্ম হিসাবে ব্যবহার করিয়া কীভাবে আত্মবিশ্বাসের সহিত পরিস্থিতি মোকাবেলা করিতে হয়। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ছাত্র-চোররা নিঃসন্দেহে এই ফুটেজ দেখিয়া অনুপ্রেরণা লাভ করিবে।
এই ঘটনা লইয়া আমরা কয়েকজন পুষ্টিবিজ্ঞানী, সমাজবিজ্ঞানী, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও অর্থনীতিবিদের সহিত কথা বলিয়াছি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রবীণ রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ইহাকে ‘ছাত্ররাজনীতির এক নতুন মাইলফলক’ হিসাবে অভিহিত করিয়াছেন। তাঁহাদের আলোচনা হইতে আসিফ নজরুলের ছাগল-কাণ্ডের কিছু উপকারিতা চিহ্নিত করা গিয়াছে। পুষ্টিবিজ্ঞানীদের মতে, ছাত্ররাজনীতির বন্ধুর পথে হাঁটিতে গিয়া উদীয়মান নেতাদের যে তীব্র প্রোটিনের ঘাটতি দেখা দেয় এবং মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটে, এই ‘অপারেশন ছাগল’ তাহা দূরীকরণে এক কার্যকর টোটকা। পুষ্টিকর ছাগলের মাংস যে কেবল তাঁহাদের শারীরিক পুষ্টি জোগাইয়াছে তাহা নহে, বরং মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটাইয়াছে, যাহা তাঁহাদেরকে জাতির সেবায় আরও ভালোভাবে আত্মনিয়োগ করিতে সহায়তা করিবে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের মতে, সম্পদ মুষ্টিমেয় কিছু মানুষের কুক্ষিগত থাকিবে, ইহা হইতে পারে না’ এই সমাজতান্ত্রিক দর্শনকে বাস্তবে রূপ দিয়াছেন এই ছাত্রনেতারা। উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের বাসভবনে দুইটি ছাগল কার্যত অলস জীবনযাপন করিতেছিল। অন্যদিকে, দেশের ভবিষ্যৎ কর্ণধারদের পেটে ছিল তীব্র ক্ষুধা। এই অভিযানের মাধ্যমে সম্পদের একটি ক্ষুদ্র অংশ হইলেও উচ্চস্তর হইতে নিম্নস্তরে প্রবাহিত হইয়াছে, যাহা একবিংশ শতাব্দীর সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির এক চমৎকার পাঠ্যপুস্তকীয় উদাহরণ এছাড়া, সুরক্ষিত এলাকা হইতে দেয়াল টপকানো, লক্ষ্যবস্তু শনাক্ত করা, ঝুঁকি বিশ্লেষণ এবং চোরদের দলটিকে সফলভাবে পরিচালনা করা এই প্রতিটি কাজই ছিল একেকটি বাস্তব প্রশিক্ষণ। ইহা যেকোনো সামরিক বা কর্পোরেট একাডেমির প্রশিক্ষণের চাইতেও কার্যকর। প্রতিকূল পরিবেশে কীভাবে মাথা ঠান্ডা রাখিয়া কার্যসিদ্ধি করিতে হয়, তাহার এক উজ্জ্বল নজির স্থাপন করিয়াছেন এই নেতারা।
এই ঘটনার সবচেয়ে সুদূরপ্রসারী যে দিকটি উন্মোচিত হইয়াছে, তাহা হইল আত্মবিশ্বাস। একজন প্রভাবশালী উপদেষ্টার সুরক্ষিত বাসভবন হইতে ছাগল চুরি করিয়া, তাহা ভক্ষণ করিয়া, এমনকি সিসিটিভিতে প্রমাণ রাখিয়া আসার পরেও নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীর নির্বিকার থাকাটা প্রমাণ করে যে, তাঁহাদের আত্মবিশ্বাস হিমালয় পর্বতকেও হার মানায়। একজন সমাজ বিশ্লেষকের মতে, “এই আত্মবিশ্বাসই তাঁহাদেরকে ভবিষ্যতে দেশের বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্প হইতে অনায়াসে হাজার কোটি টাকা চুরি করিতে সহায়তা করিবে। এই ছাগল-কাণ্ডটি ছিল কেবল একটি হাতেখড়ি, একটি ‘প্র্যাকটিক্যাল পরীক্ষা’ মাত্র। যাহারা এই পরীক্ষায় সফলভাবে উত্তীর্ণ হইয়াছেন, নিঃসন্দেহে দেশের উজ্জ্বল (!) ভবিষ্যৎ তাঁহাদেরই হাতে।”
যদিও এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ আইন উপদেষ্টা বিষয়টি লইয়া উপদেষ্টা পরিষদে অভিযোগ করিয়াছিলেন এবং আরেকজন তরুণ উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বিব্রত হইয়া ছাগল কিনিয়া দেওয়ার প্রস্তাব দিয়াছিলেন, কিন্তু শেষ পর্যন্ত বিষয়টির কোনো কূলকিনারা হয় নাই। রমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জানাইয়াছেন, তাঁহার দায়িত্বকালে এমন কোনো ‘ছাগল কেস’ দায়ের হয় নাই। সম্ভবত, সকলেই এই ঐতিহাসিক ঘটনার মাহাত্ম্য অনুধাবন করিতে পারিয়াছেন।
#Cartunus Daily, #অন্তর্বর্তী সরকার, #অপারেশন ছাগল, #আইন উপদেষ্টা, #আইন উপদেষ্টার ছাগল চুরি, #আসিফ নজরুল, #আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া, #উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ, #কার্টুনুস ডেইলি, #চুরি করে ছাগল খাওয়া, #ছাগল-কান্ড, #জাতীয় নাগরিক পার্টি, #ডার্ক কমেডি, #দৈনিক কার্টুনুস, #নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, #বাংলা স্যাটায়ার, #বাংলাদেশের ছাত্ররাজনীতি, #বুবিস রিফাত, #মন্ত্রিপাড়ার ঘটনা, #রমনা থানা, #রাজনৈতিক রম্য, #রাজনৈতিক স্যাটায়ার, #রিফাত রশিদ