মব নহে, ইহারা প্রেসার গ্রুপ; প্রেসার না দিলে গণতন্ত্রের ভাত রান্না হয় না: ড. ইউনূস | It's Not a Mob, It's a Pressure Group; Democracy's Rice Doesn't Cook Without Pressure: Dr. Yunus.

নিজস্ব প্রতিবেদক: সারাদেশে চলমান গণধোলাই, গণপিটুনি ও গণউৎপাতকে ‘মব ভায়োলেন্স’ আখ্যা দেওয়ায় তীব্র ক্ষোভ ও হতাশা ব্যক্ত করেছেন গ্রামীণ ব্যাংকের বিশ্ববিখ্যাত কিস্তিবাজ, জিরোতত্ত্বের জনক ও মাইনাস সূত্রের ফেরিওয়ালা, গণতন্ত্রের স্নাইপার ও সংস্কারের কসমেটিক সার্জন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহম্মদ ইউনূস। তিনি জাতির প্রতি প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে বলেছেন, “এগুলোকে মব বলছেন কেন? এরা তো গণতন্ত্রের প্রেসার কুকার। প্রেসার না দিলে কি আর গণতন্ত্রের ভাত রান্না হয়?”

গতকাল যমুনাতে এক গোপন বৈঠকে দেশের আইনশৃঙ্খলা ও শব্দচয়ন পরিস্থিতি পর্যালোচনা সভায় তিনি এই গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করেন। বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার স্বঘোষিত মিথ্যাবাদী প্রেস সচিব, ‘মব’ কে ‘প্রেসার গ্রুপ’ নামকরণের মহান আবিস্কারক, সাংবাদিকতার ব্যর্থতা বিষয়ক গবেষক, ডাস্টবিন পাগলা আল্লামা শফিকুল আলম; প্রধান উপদেষ্টার জ্যেষ্ঠ সহকারী প্রেসসচিব, ‘মব’ শব্দের মাঝে লুকিয়ে থাকা আওয়ামী ন্যারেটিভ শনাক্তকারী, ফেসবুকীয় সমাজতত্ত্ববিদ হযরত ফয়েজ আহম্মদ; এবং সদ্য ক্ষমতা দখলকারী নব্য রাজাকারদের ‘ইতিহাস ও সংস্কৃতি পুনরুদ্ধার সেলের’ স্বঘোষিত মহাপরিচালক এবং সংস্কৃতি উপদেষ্টা,  আল্লামা বউ ব্যবসায়ী হুজুরে কেবলা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী সহ আরও অনেকে।

সভার শুরুতে ড. ইউনূস তার স্বভাবসুলভ শান্ত ও কোমল গলায় বলেন, “আপনারা সবাই দেখছেন, দেশটা একটা পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। জুলাইয়ের পর থেকে স্কুল-কলেজ-ভার্সিটি-মাদ্রাসার ছাত্ররা রাস্তায় নেমে এসেছে। ১৫ বছর ধরে নির্যাতিত এই ছাত্ররা তাদের পুঞ্জীভূত ক্ষোভ প্রকাশ করছে। কোথাও হয়তো দু-চারটা কিল-ঘুষি হচ্ছে, দু-একজন প্রাক্তন ছাত্রলীগ নেতা কিংবা নিরীহ পথচারী চোর সন্দেহে পরপারে চলে যাচ্ছেন। এটাকে স্বৈরাচারের দোসররা ‘মব ভায়োলেন্স’ বলে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে। এটা ঠিক নয়।”

উপস্থিত সকলে মাথা নেড়ে সায় দিলে তিনি আরও বলেন, “এরা মব নয়, এরা জাতির জাগ্রত বিবেক। এরা প্রেসার গ্রুপ। এরা অন্যায়-অবিচার দেখলেই প্রেসার ক্রিয়েট করছে। এই যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষককে ধাওয়া দেওয়া, হাসপাতালের ডাক্তারকে পেটানো, খুতবায় সুদ নিয়ে বলায় মসজিদের ইমামকে কোপানো, এসবই তো সিস্টেমের উপর এক প্রকার স্বাস্থ্যকর চাপ। এই চাপ না থাকলে সিস্টেম যে অকেজো হয়ে যাবে।”

এ পর্যায়ে মঞ্চে আসেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেসার, থুক্কু, প্রেস সচিব আল্লামা শফিকুল আলম। তিনি একটি পাওয়ারপয়েন্ট প্রেজেন্টেশন চালু করে বলেন, “স্যার একদম ঠিক কথা বলেছেন। আমি এটাকে ‘প্রেসার গ্রুপ’ থিওরির মাধ্যমে আরও পরিষ্কার করতে চাই।” স্লাইডে একটি প্রেসার কুকারের ছবি দেখিয়ে তিনি বলেন, “দেখুন, প্রেসার কুকারের ভেতরে চাপ তৈরি হয় বলেই শক্ত চাল নরম ভাতে পরিণত হয়। তেমনি আমাদের এই ‘প্রেসার গ্রুপ’ গুলো সিস্টেমের বুকে চাপ সৃষ্টি করে ‘ফ্যাসিবাদী’ শক্ত উপাদানগুলোকে নরম করে দিচ্ছে। তারা নিজের হাতে আইন তুলে নিচ্ছে না, তারা শুধু আইনের প্রয়োগকে ত্বরান্বিত করার জন্য একটু ‘প্রেসার’ দিচ্ছে। যে সাংবাদিক ভাইয়েরা এটা বুঝতে পারছেন না, বুঝতে হবে গত পনেরো বছরে তাদের সাংবাদিকতার গোড়ায় গলদ ছিলো।”

তার বক্তব্য শেষ হতে না হতেই মাইক্রোফোন কেড়ে নেন ফেসবুকীয় সমাজতত্ত্ববিদ হযরত ফয়েজ আহম্মদ। তিনি উত্তেজিত গলায় বলেন, “শফিক ভাই ‘প্রেসার গ্রুপ’ বলে বিষয়টাকে কিছুটা হালকা করে ফেলেছেন। মূল সমস্যা আরও গভীরে। ‘মব’ শব্দটাই একটা গভীর ষড়যন্ত্রএটা একটা আওয়ামী ন্যারেটিভ।”

উপস্থিত সুধীজনেরা একে অপরের দিকে তাকালে তিনি ব্যাখ্যা করে বলেন, “আপনারা বুঝছেন না। যারা কথায় কথায় ‘মব’ ‘মব’ করে চিল্লাচ্ছে, তাদের প্রোফাইল ঘেঁটে দেখুন, তারা সবাই ‘সফট আওয়ামী লীগার’। এরা সরাসরি নৌকা নৌকা বলে স্লোগান দেয় না, কিন্তু সরকারের ভালো কাজ, যেমন ধরুন এই স্বতঃস্ফূর্ত গণ-চাপ প্রয়োগকে ‘মব’ বলে হেয় করে। এরা দু-একটা বিচ্ছিন্ন পিটুনিকে ‘মব’ আখ্যা দিয়ে জুলাইয়ের মহান বিপ্লবকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চাইছে।”

হযরত ফয়েজ আরও বলেন, “মাথায় রাখবেন, সুযোগসন্ধানী মহল সব সময়ই থাকে। যে কোনো প্রতিবাদ, ছোটখাটো সংঘাত, এমনকি ট্রাফিক জ্যামে হর্ন বাজালেও এরা ‘মব বিহেভিয়ার’ বলে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। এদের চিহ্নিত করতে হবে। আমরা এই ‘মব’ শব্দের ব্যবহার নিষিদ্ধ করার জন্য শিগগিরই একটি গেজেট প্রকাশ করার কথা ভাবছি।”

এ সময় সভায় উপস্থিত কান ফেরত চলচিত্রকার মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, “আপনারা কেউই বিষয়টার শৈল্পিক বা দার্শনিক দিকটা দেখছেন না। এটা আসলে একটা পারফরম্যান্স আর্ট। এই যে একজন মানুষকে দশজন মিলে পেটাচ্ছে, আর একজন ভিডিও করছে, এটা একটা মেটাফর। এটা হলো পুরনো ক্লেদাক্ত সমাজকে পিটিয়ে নতুন এক সমাজের জন্ম দেওয়ার শৈল্পিক রূপ। যে সাংবাদিক ভাইয়েরা এইস মেটাফোর না বুঝে প্রশ্ন করেন, ‘এতে কি সমস্যা দীর্ঘায়িত হচ্ছে না?’, তারা আসলে এই পারফরম্যান্স আর্টের গভীরতা বুঝতে অক্ষম। তারা জুলাইয়ের স্পিরিট ধারণ করেন না। তাই কোনো চ্যানেল কর্তৃপক্ষ যদি নিজেদের এডিটোরিয়াল পলিসি অনুযায়ী এমন ‘আর্ট না বোঝা’ সাংবাদিককে চাকরিচ্যুত করে, সেটা তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এর সাথে আমার প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ার কোনো সম্পর্ক নেই।”

তিনি দীপ্ত টিভি, চ্যানেল আই ও এটিএন বাংলার মালিকপক্ষকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, “তারা সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রমাণ করেছেন যে শিল্পের চেয়ে বড় কিছু নেই, জুলাই চেতনার চেয়ে পবিত্র কিছু নেই। ‘জুলাই রেভলিউশনারি অ্যালায়েন্স’ নামক যে স্বতঃস্ফূর্ত সাংস্কৃতিক কর্মীরা ওই সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মার্চ করার হুমকি দিয়েছিল, তারা আসলে এই পারফরম্যান্স আর্টেরই অংশ।”

সভা চলাকালীন পেছনের সারিতে বসা মফস্বলের এক নাগরিক, যার নাম কপালপোড়া করিম, ভয়ে ভয়ে হাত তুলে দাঁড়ান। তাকে কথা বলার অনুমতি দিলে তিনি কাঁপা কাঁপা গলায় বলেন, “স্যার গত সপ্তাহে, চালের দাম বিশ্ববাজারে কমলেও আমাদের বাজারে বাড়ছে কেন জিজ্ঞেস করায় আমাকে ‘সাবেক সরকারের এজেন্ট’ সন্দেহে একদল ‘প্রেসার গ্রুপ’ খুব চাপ দিয়েছে। আমার কিডনিতে এখন প্রেসার বেড়ে গেছে। ডাক্তার বলেছে ডায়ালাইসিস লাগবে। আমি এখন কী করব?”

প্রশ্ন শুনে ডক্টর ইউনূস মুচকি হেসে বলেন, “দেখুন, পরিবর্তনের জন্য কিছু ত্যাগ তো স্বীকার করতেই হবে। আপনার কিডনিতে যে প্রেসার পড়েছে, সেটা আসলে গণতন্ত্রের জন্যই পড়েছে। একে ইতিবাচকভাবে নিন। আর হ্যাঁ, এখন থেকে বাজারে গিয়ে কোনো প্রশ্ন করবেন না। যা দাম চায়, দিয়ে চলে আসবেন। প্রশ্ন করলেই অপ্রয়োজনীয় প্রেসার তৈরি হয়, যা নতুন শাসনব্যবস্থায় কাম্য নয়।”

প্রেস সচিব শফিকুল আলম যোগ করেন, “আপনি যে এমন একটা প্রশ্ন ফট করে বলে ফেললেন, এতেই বোঝা যায় আপনার মাঝেও ‘সফট আওয়ামী ন্যারেটিভ’ কাজ করছে। আপনি আসলে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার জন্য এখানে এসেছেন।”

সভার শেষে সিদ্ধান্ত হয়, এখন থেকে ‘মব ভায়োলেন্স’ বা ‘গণপিটুনি’ শব্দগুলো ব্যবহার করা দণ্ডনীয় অপরাধ বলে গণ্য হবে। এর পরিবর্তে পরিস্থিতি বিবেচনায় ‘স্বতঃস্ফূর্ত গণ-চাপ’, ‘জুলাই চেতনায় উদ্বুদ্ধ জনতার প্রতিক্রিয়া’, ‘প্রেসার গ্রুপের সংশোধনমূলক কার্যক্রম’ অথবা ‘আওয়ামী ন্যারেটিভের বিরুদ্ধে শৈল্পিক প্রতিরোধ’—এই শব্দগুচ্ছ ব্যবহার করতে হবে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, এখন থেকে কেউ গণপিটুনির শিকার হলে হামলাকারীদের না ধরে ভুক্তভোগী কেন ওই পরিস্থিতিতে পড়েছিলেন, তিনি কোনো ‘ন্যারেটিভ’ ছড়াচ্ছিলেন কি না, বা তার কোনো প্রশ্ন সিস্টেমে ‘প্রেসার’ তৈরি করেছিল কি না তা তদন্ত করে দেখতে হবে।

ড. ইউনূস সমাপনী ভাষণে বলেন, “আমরা একটি সহনশীল ও মানবিক সমাজ চাই, যেখানে কেউ কাউকে ‘মব’ বলে অপমান করবে না। সবাই সবাইকে ‘প্রেসার গ্রুপ’ হিসেবে সম্মান করবে। মনে রাখবেন, চাপেই বাপ হয়। মানে, বাপের মতো শাসনব্যবস্থা তৈরি হয়।”