কৌতুক প্রতিযোগিতাকে ঘিরে আন্তর্জাতিক সংকট: দর্শকদের গণহারে ‘বাস্তবতা বিভ্রম’ রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা।
নিজস্ব প্রতিবেদক: একটি নিরীহ কৌতুক প্রতিযোগিতা কীভাবে একটি দেশের মানসিক স্বাস্থ্য এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কে গভীর সংকট তৈরি করতে পারে, তার জলজ্যান্ত উদাহরণ হয়ে উঠেছে ‘আন্তর্জাতিক কৌতুক প্রতিযোগিতা-২০২৫’। যে প্রতিযোগিতাটিকে শুরুতে বাংলাদেশের জন্য একটি বিরাট সম্মান হিসেবে দেখা হচ্ছিল, সেটিই এখন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানসিক স্বাস্থ্য বিভাগের জন্য মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সংস্থাটি আশঙ্কা প্রকাশ করেছে, এই প্রতিযোগিতার ফাইনালিস্টদের কৌতুক এতটাই বাস্তবঘনিষ্ঠ যে, তা দেশের বিপুলসংখ্যক দর্শককে ‘বাস্তবতা বিভ্রম’ (Reality Delusion Disorder) নামক এক নতুন ও জটিল মানসিক রোগে আক্রান্ত করতে পারে।
প্রতিযোগিতার ফাইনাল পর্বে থাকা দুই মহারথী, গ্রামীণ ব্যাংকের বিশ্ববিখ্যাত কিস্তিবাজ, জিরোতত্ত্বের জনক ও মাইনাস সূত্রের ফেরিওয়ালা, গণতন্ত্রের স্নাইপার ও সংস্কারের কসমেটিক সার্জন, ‘বিশ্ব আমাদের দুয়ারে আসিবে’ তত্ত্বের প্রধান উদ্ভাবক ও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ডক্টর মুহম্মদ ইউনূস এবং ‘আমার ওপর আস্থা রাখুন’ কর্পোরেশনের সিইও ও পাঁচই আগস্টের ‘মেটিকুলাস ডিজাইনের’ প্রধান আর্কিটেক্ট, জেনারেল সাহেব ওয়াকার উজ জামান তাঁদের পরিবেশনা দিয়ে বিচারক ও দর্শক উভয়কেই একযোগে সম্মোহিত ও বিধ্বস্ত করে দিয়েছেন।
আমাদের অনুসন্ধানী দল দর্শকদের মানসিক অবস্থা এবং প্রতিযোগিতার প্রভাব নিয়ে গভীর অনুসন্ধান চালিয়েছে। জানা গেছে, ডক্টর ইউনূসের পারফরম্যান্স ছিল দুই পর্বে বিভক্ত। তিনি প্রথমে অর্থনীতির ওপর একটি হালকা চালের কৌতুক দিয়ে পরিবেশনা শুরু করেন। তিনি বলেন, “ দেশের শেয়ারবাজার নিয়ে অনেকেই হতাশ। তারা বলছেন, সব শেয়ারের দাম পড়ে যাচ্ছে। আমি বলি, কী যে বলেন! দাম পড়ছে না, শেয়ারগুলো আসলে ‘মাইক্রো’ হয়ে যাচ্ছে। আমরা ক্ষুদ্রঋণের নীতিকে অনুসরণ করে দেশের অর্থনীতিকে ‘ক্ষুদ্র অর্থনীতি’তে পরিণত করছি। খুব শীঘ্রই দেশের প্রতিটি নাগরিক একটি করে দেউলিয়া কোম্পানির মালিকানায় একটি করে ‘মাইক্রো-শেয়ার’ পাবে। এর চেয়ে বড় অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তি আর কী হতে পারে?”
এই কৌতুক প্রচারিত হওয়ার পর মতিঝিলের রাস্তায় ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের কান্নার রোল পড়ে যায়। তবে দেশের শীর্ষস্থানীয় কিছু অর্থনীতিবিদ এটিকে ‘গ্রামীণ অর্থনীতির বিশ্বায়ন’ আখ্যা দিয়ে ডক্টর ইউনূসের ভূয়সী প্রশংসা করেন। একজন বিনিয়োগকারী, যিনি নিজের নাম-পরিচয় গোপন রাখার শর্তে আমাদের বলেন, “আমার সব টাকা এখন ‘মাইক্রো’ হয়ে গেছে। আগে পরিবার নিয়ে রেস্তোরাঁয় খেতাম, এখন ‘মাইক্রো-ক্রেডিট’ কার্ড দিয়ে চায়ের দোকানে সিঙ্গাড়া খাই। এটাই হয়তো স্মার্ট বাংলাদেশের স্মার্ট অর্থনীতি।”
তবে ড. ইউনূসের আসল আঘাতটি আসে এরপর, যা প্রতিযোগিতার ইতিহাসে ‘শতাব্দীর সেরা কৌতুক’ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। তিনি মুক্তিযুদ্ধ ও ইতিহাস প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে বলেন:
“কিছুদিন আগে এক বয়স্ক মুক্তিযোদ্ধা আমার কাছে এসে কান্নাকাটি করে বললেন, ‘স্যার, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দেশ স্বাধীন করেছিলাম। আজ মনে হচ্ছে আমার সব ত্যাগ বৃথা যাচ্ছে, খুব অসম্মানিত বোধ করছি।’ আমি তাঁর কথা শুনে বললাম, ‘বাবা, আপনি তো আচ্ছা বোকা! এখনো অতীত নিয়ে পড়ে আছেন? সম্মান, ত্যাগ—এগুলো তো পুরোনো দিনের কথা। আমরা আপনাদের জন্য ‘মুক্তিযোদ্ধা আত্মকর্মসংস্থান প্যাকেজ’ চালু করেছি। প্রত্যেক প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাকে আমরা একটি করে ছাগল কেনার জন্য ক্ষুদ্রঋণ দেব। আপনারা সেই ছাগল পালন করে দুধ বিক্রি করবেন, দেশের পুষ্টির চাহিদা মেটাবেন, ঋণের কিস্তি শোধ করবেন। দেশের জন্য এর চেয়ে বড় সম্মান আর কী হতে পারে? ত্যাগের চেয়ে স্মার্ট উদ্যোক্তা হওয়া অনেক বেশি গৌরবের’।”
এই কৌতুকটি বলার সাথে সাথেই গোটা দেশ যেন কয়েক মুহূর্তের জন্য স্তব্ধ হয়ে যায়। দর্শকসারিতে বসা মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের সদস্যরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। অন্যদিকে, নতুন প্রজন্মের কিছু রাজাকারের নাতিপুতি এই আইডিয়াকে যুগান্তকারী আখ্যা দিয়ে দাঁড়িয়ে হাততালি দিতে শুরু করে।
অন্যদিকে, জেনারেল ওয়াকার উজ জামানও তাঁর সেরা কৌতুকটি পরিবেশন করেন দেশজুড়ে চলা ‘মবের মুল্লুক’ পরিস্থিতি নিয়ে। তিনি তাঁর বিখ্যাত ‘কোনো মব সহ্য করা হবে না’ উক্তির নতুন ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন:
“আমাকে অনেকে বলে, দেশে নাকি চুরি-ডাকাতি, ছিনতাই আর গণপিটুনির উৎসব চলছে। তারা বলে, ‘জেনারেল সাহেব, আপনি বলেছিলেন কোনো মব সহ্য করবেন না, কিন্তু এখন তো পাড়ায় পাড়ায় মব!’ আমি তাদের অজ্ঞতায় হাসি। আমি বলেছিলাম, কোনো একটি বা অসংগঠিত মব সহ্য করা হবে না। এখন দেখুন, আমাদের মেটিকুলাস ডিজাইনের ফলে মবের বিকেন্দ্রীকরণ ঘটেছে। শত শত ছোট ছোট ‘স্বাধীন মব’ এখন স্থানীয় পর্যায়ে সুশৃঙ্খলভাবে সম্পদ পুনর্বণ্টনের কাজ করছে। এটা তো ‘কমিউনিটি লেভেল রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট’! একটি বড় মবের বদলে শত শত ছোট মব থাকাটাই তো স্থিতিশীলতার লক্ষণ। আপনারা শুধু আস্থা রাখুন, আর নিজেদের সম্পদকে ‘কমিউনিটি রিসোর্স’ হিসেবে দেখার অভ্যাস করুন।”
জেনারেল সাহেবের এই নতুন তত্ত্ব শোনার পর সারাদেশে চুরি-ডাকাতির শিকার হওয়া মানুষেরা নতুন করে ভাবতে শুরু করেছে। অনেকেই এখন ছিনতাইকারীকে নিজের ভাই ভেবে বলছেন, “ভাই, আমার সম্পদ পুনর্বণ্টন করার জন্য ধন্যবাদ।” এই কৌতুকের পর দেশের বিভিন্ন এলাকায় ‘সেরা সংগঠিত মব’-এর জন্য পুরস্কার ঘোষণা করা হতে পারে বলেও গুঞ্জন উঠেছে।
এই প্রতিযোগিতার প্রভাব পড়েছে আন্তর্জাতিক সম্পর্কেও। ঢাকার দূতাবাসপাড়ায় চরম বিভ্রান্তি বিরাজ করছে। ইউরোপের একটি দেশের রাষ্ট্রদূত নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, “আমরা দ্বিধায় আছি। বাংলাদেশে যা ঘটছে, তা কি একটি ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়, নাকি একটি বিশ্বমানের কমেডি ফেস্টিভ্যাল? আমরা কি ত্রাণ পাঠাব, নাকি প্রতিযোগিতার জন্য শুভেচ্ছাবার্তা পাঠাব, তা নিয়ে আমাদের রাজধানীতে জরুরি সভা চলছে।”
ডক্টর ইউনূসের “বিশ্ব আমাদের কাছে আসবে” তত্ত্বের প্রায়োগিক রূপ দেখে বিদেশি কূটনীতিকরা আরও বিভ্রান্ত। সম্প্রতি জানা গেছে, বেশ কয়েকটি দেশ বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা প্রক্রিয়া বন্ধ করে দিয়ে উল্টো তাদের দেশের নাগরিকদের বাংলাদেশ ভ্রমণে সতর্কতা জারি করেছে। সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, “বাংলাদেশে ভ্রমণ করলে আপনি কৌতুক ও বাস্তবতার পার্থক্য হারিয়ে ফেলতে পারেন, যা আপনার মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।”
সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা প্রতিযোগিতার বিচারকমণ্ডলীর। জানা গেছে, ফাইনালিস্টদের পারফরম্যান্স দেখে বিচারকরা দলবেঁধে পদত্যাগ করেছেন। তাদের মুখপাত্র জানিয়েছেন, “আমরা আর পারছি না। গতকাল রাতে বাড়ি ফিরে দেখি, আমার স্ত্রী বলছে গ্যাসের দাম বেড়ে গেছে। আমি উত্তরে হেসে ফেলেছি, কারণ আমার মনে হয়েছে এটাও নিশ্চয়ই কোনো কৌতুক। আমার বাস্তবতা বোধ নষ্ট হয়ে গেছে। আমরা সবাই এখন থেরাপিস্টের শরণাপন্ন হয়েছি।”
সর্বশেষ খবরে জানা গেছে, ‘আন্তর্জাতিক কৌতুক প্রতিযোগিতা ২০২৫’ স্থগিত হওয়ায় ডক্টর ইউনূস ও জেনারেল ওয়াকার উজ জামান হতাশ নন। তারা এখন তাদের এই পরিবেশনা নিয়ে একটি ‘ওয়ার্ল্ড ট্যুর’-এর পরিকল্পনা করছেন। এই খবরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নতুন করে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। তাদের প্রথম শো পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও, ভারত সরকার জানিয়েছে, “আমাদের নিজেদের কৌতুকের স্টকই যথেষ্ট। বাইরের কমেডিয়ান আপাতত প্রয়োজন নেই।”