এনসিপির এপিসি-বিলাস: দেশ গড়তে পদযাত্রা মুহূর্তেই পরিণত হলো জান বাঁচাতে দৌড়যাত্রায়

এনসিপির এপিসি-বিলাস: দেশ গড়তে পদযাত্রা মুহূর্তেই পরিণত হলো জান বাঁচাতে দৌড়যাত্রায়। NCP's APC-Luxury: The 'March to Build the Nation' Instantly Turned Into a 'Run to Save Lives'. এনসিপির এপিসি-বিলাস: দেশ গড়তে পদযাত্রা মুহূর্তেই পরিণত হলো জান বাঁচাতে দৌড়যাত্রায়। NCP's APC-Luxury: The 'March to Build the Nation' Instantly Turned Into a 'Run to Save Lives'.

বিশেষ প্রতিবেদক, দৈনিক কার্টুনুস: গোপালগঞ্জের মাটিতে ‘কবর সংস্কার’ নামক মহৎ উদ্দেশ্য লইয়া গিয়া গণধোলাইয়ের শিকার হইবার পর জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) বীর সেনানিরা যে ঐতিহাসিক বীরত্ব প্রদর্শন করিয়াছেন, তাহা পলায়নবিদ্যার ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে নহে, বরং প্ল্যাটিনামের অক্ষরে লেখা থাকিবে। জাতির পিতার কবর ভাঙিতে গিয়া জনতার তাড়া খাইয়া এই সকল বীর পুঙ্গবেরা যেভাবে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে আশ্রয় লইয়াছিলেন এবং পরিশেষে সেনাবাহিনীর শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত সাঁজোয়া যানে (এপিসি) চড়িয়া গোপালগঞ্জ ত্যাগ করিয়াছেন, তাহা দেখিয়া স্বয়ং হিটলারও নাকি গোয়েবলসকে বলিয়াছেন, “এই বুদ্ধিটা আমার মাথায় কেন আসিল না?”

গোপালগঞ্জের সেই ঐতিহাসিক দিবসের বিকালবেলা। শহরের পৌর পার্কে ‘গণতন্ত্র উদ্ধার’ এবং ‘কবর সংস্কার’ এর মতো দ্বৈত কর্মসূচি পালন শেষে এনসিপির নেতাকর্মীরা যখন ভাবিতেছিলেন যে এইবার বুঝি দুই-চারটা সেলফি তুলিয়া ফেসবুকে ছাড়িয়া দিলেই মিশন সফল, ঠিক তখনই ‘জয় বাংলা’ স্লোগান সহকারে গোপালগঞ্জের আমজনতা ঝাড়ু, লাঠি এবং ভালোবাসার মুগুর লইয়া তাহাদের দিকে তাড়া করে। এই আকস্মিক ‘জনতার ভালোবাসায়’ এনসিপির নেতারা দিশেহারা হইয়া পড়েন। তাহাদের ‘দেশ গড়তে পদযাত্রা’ মুহূর্তেই ‘জান বাঁচাতে দৌড়যাত্রা’য় পরিণত হয়।

এই পর্যায়ে কাহিনীর মহানায়ক, জাতীয় নাগরিক পার্টির প্রধান ট্যাংরা মাছ, সেনাবাহিনীর এপিসিকে উবার ভাবিয়া কল করা বিপ্লবী এবং পলায়নবিদ্যাকে কৌশলবিদ্যা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করিবার জাতীয় অধ্যাপক জনাব নাহিদ ইসলাম ও তাহার তিন রত্ন, মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম, মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ এবং সদস্যসচিব আখতার হোসেন, পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে যাইয়া আশ্রয় প্রার্থনা করেন। সেখানে তাহারা দীর্ঘক্ষণ ধরিয়া দেশের ভবিষ্যৎ লইয়া গভীর চিন্তায় মগ্ন ছিলেন, নাকি পরবর্তী নির্বাচনে কোন আসন হইতে দাঁড়াইলে পালানোর সুবিধা হইবে তাহা লইয়া গবেষণা করিতেছিলেন, তাহা অবশ্য জানা যায় নাই।

অবশেষে যখন পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হইয়া উঠে, তখন তাহাদের উদ্ধারে নামানো হয় সেনাবাহিনীর এপিসি। ভিডিও ফুটেজে দেখা গিয়াছে, এনসিপির বীর নেতারা মুখ শুকনা করিয়া, যেন কোনোমতে ইজ্জত বাঁচাইয়া পালাইতে পারিলে বাঁচেন, এমন ভাব লইয়া এক এক করিয়া এপিসিতে উঠিতেছেন। তাহাদের ভাবভঙ্গি দেখিয়া মনে হইতেছিল, তাহারা কোনো রাজনৈতিক নেতা নহেন, বরং স্কুলের পরীক্ষায় ফেল করিয়া বাবার মারের ভয়ে পলায়নরত কিশোর।

পরবর্তীতে এক সাক্ষাৎকারে এই ‘কৌশলগত পশ্চাদপসরণ’ লইয়া প্রশ্ন করা হইলে এনসিপি নেতা নাহিদ ইসলাম একটি জগৎবিখ্যাত দার্শনিক উক্তি প্রদান করেন। তিনি বলেন, “আমরা পালাইনি। আমরা কোনো যুদ্ধ করতে যাইনি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যে নির্দেশনা দিয়েছে, আমরা তা মেনেই চলেছি।” তাহার এই বক্তব্য শুনিয়া রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা বিভ্রান্তিতে পড়িয়া গিয়াছেন। তাহারা এখন গবেষণা করিতেছেন যে, জনতার তাড়া খাইয়া সেনাবাহিনীর ট্যাংকে চড়িয়া পলায়নকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ভাষায় ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নির্দেশনা মানা’ বলা যায় কিনা। নাহিদ ইসলাম আরও যোগ করেন, “গোপালগঞ্জে আমরা বুঝতে পেরেছি যে মুজিববাদী ফ্যাসিবাদ এখনো বহাল আছে।” তবে তিনি ইহা পরিষ্কার করেন নাই যে, সেনাবাহিনীর এপিসির শীতল বাতাস তাহার নিকট কেমন লাগিয়াছে।

এদিকে এই ঐতিহাসিক পলায়নকাণ্ড লইয়া যখন সারা দেশ রসিকতায় মত্ত, তখন এক মর্মান্তিক ঘটনা ঘটিয়া যায় দিনাজপুরে। সেখানকার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক), ফেসবুকের এক লাইনের স্ট্যাটাসে চাকুরি হারানো একমাত্র শহীদ জনাব মোসফেকুর রহমান ফেসবুকে লিখিয়াছিলেন, “ট্যাংকের এসি খুব আরামদায়ক শুনেছি।” এই এক লাইনের ‘উচ্চমার্গীয় রসিকতা’ সহ্য করিতে পারে নাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র (বৈছা) আন্দোলনের কর্মীরা। বৈছার কর্মীরা এই পুলিশ কর্মকর্তার গ্রেপ্তার ও ফাঁসির দাবিতে মব লইয়া পুলিশ সুপারের কার্যালয় ঘেরাও করে। তাহাদের মতে, এই পুলিশ কর্মকর্তা এনসিপি নেতাদের পলায়নকে লইয়া ট্রল করিয়া একটি ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ করিয়াছেন। তাহাদের ভাবখানা এমন যে, দেশে এখন হইতে কৌতুক করা বা রসিকতা করা নিষিদ্ধ। কেহ রসিকতা করিলে তাহাকে ডিজিটাল মব জাস্টিসের আওতায় আনা হইবে। অবশেষে চাপের মুখে সেই পুলিশ কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করা হয়।

এই ঘটনায় আমরা কী বুঝিলাম? আমরা বুঝিলাম, এই সোনার বাংলায় আপনি রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে তাণ্ডব চালাইতে পারিবেন, জনতার তাড়া খাইয়া ট্যাংকে চড়িয়া পালাইতে পারিবেন এবং সেই পলায়নকে ‘কৌশলগত’ বলিয়া চালাইয়া দিতে পারিবেন। কিন্তু সেই পলায়ন লইয়া রসিকতা করিতে পারিবেন না। রসিকতা করা এখন দেশের এক নম্বর অপরাধ। এনসিপি নেতারা যেখানে ‘দেশ গড়িতে’ বাহির হইয়া এপিসিতে চড়িয়া নিজেদের ইজ্জত লইয়া টানাটানি করিতেছেন, সেখানে একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে সামান্য রসিকতার জন্য বলি হইতে হইলো। ইহাই কি নতুন বাংলাদেশের আসল রূপ? যেখানে বীরত্ব পালায় ট্যাংকে চড়িয়া, আর রসিকতা হারায় চাকরি খোয়াইয়া।

#, #, #, #, #, #, #, #, #, #, #, #, #, #, #, #, #, #, #, #, #, #, #, #, #, #, #, #

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *