দেশের সুরাপ্রেমী জনগোষ্ঠীর জন্য এক অভূতপূর্ব সুসংবাদ লইয়া আসিয়াছে দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় চোলাই প্রতিষ্ঠান ‘আল-বদর বেভারেজ লিমিটেড’। ঘুটঘুটে অন্ধকারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে প্রতিষ্ঠানটি তাহাদের নতুন পণ্য ‘গোলাম আযমের বাংলা’র মোড়ক উন্মোচন করিয়াছে। ভাত পচাইয়া প্রস্তুতকৃত এই অভিনব বাংলা মদ শীঘ্রই সারা দেশের অনুমোদিত ও অননুমোদিত সকল পানশালায় পাওয়া যাইবে বলিয়া ঘোষণা দেওয়া হইয়াছে।
সংবাদ সম্মেলনে এই যুগান্তকারী মদের গুণাবলী বর্ণনা করিতে গিয়া আল-বদর বেভারেজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী হইতে পশ্চাৎদেশে পদাঘাতে বিতারিত সাবেক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল, রাজাকার শিরোমণি গোলাম আযমের সুযোগ্য কুলাঙ্গার পুত্র এবং ‘বাপকা বেটা সিপাহীকা লেওড়া’ প্রবাদের জীবন্ত উদাহরণ আবদুল্লাহিল আমান আযমী বলেন, “বহুদিন ধরিয়া দেশের মানুষ একটি ভালো মানের বাংলা মদের জন্য হাহাকার করিতেছিল। বাজারের সকল বাংলায় ভেজাল। তাই আমরাই প্রথম লইয়া আসিলাম শতভাগ খাঁটি পাকিপ্রেম মিশ্রিত ‘গোলাম আযমের বাংলা’।”
এসময় ভেউ ভেউ করিয়া কাঁদিয়া উঠিয়া, ঐতিহাসিক গামছায় চোখ মুছিতে মুছিতে, পিতার শোকে কাতর আযমী আরও বলেন, “আমার আব্বাজান, আমার পীর, আমার আমীর, একাত্তরের রণাঙ্গনের পলাতক বীর এবং বাঙালি জাতির মেরুদণ্ডে লাথি প্রদানকারী হযরত গোলাম আযমকে এই জাতি কিছুই দিল না। তাই তাহার নামকে অমর করিয়া রাখিতেই আমরা এই মদের নামকরণ করিয়াছি ‘গোলাম আযমের বাংলা’। এই বাংলা পানের সাথে সাথে মানুষের ধমনীতে আমার আব্বাজানের আদর্শ ছড়াইয়া পড়িবে। প্রতি পেগে আপনারা পাইবেন একাত্তরের ঘ্রাণ, প্রতি চুমুকে অনুভব করিবেন রাজাকারির ঝাঁঝ।”
এই মদের বিশেষত্ব কি, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে আযমী সাহেব মেজাজ গরম করিয়া বলেন, “ইহার বিশেষত্ব আপনারা বুঝিবেন না, শালা নাস্তিকের দল। ইহা প্রস্তুত করা হইয়াছে মুক্তিযুদ্ধকে ঘৃণার সেরা মসলা দিয়া। ইহার প্রধান উপাদান হইল ষড়যন্ত্রের ইস্ট, বিশ্বাসঘাতকতার পানি এবং পাকিপ্রেমের গুড়। তরুণ সমাজকে ইতিহাস সচেতন করিতে ইহার বোতলের সহিত একটি করিয়া ‘তুমি কে আমি কে, রাজাকার রাজাকার’ লিখিত টি-শার্ট ফ্রি দেওয়ার কথাও আমরা ভাবিতেছি।”
এদিকে, এই পানীয়ের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হইয়াছেন পাকিস্তানপন্থী ছাত্র সংগঠন জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-এর মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ। তিনি কার্টুনুস ডেইলির প্রতিবেদককে জানান, “আমাদের তরুণ কর্মীদের জন্য ‘গোলাম আযমের বাংলা’ এক সঞ্জীবনী সুধা। সারাদিন শাহাবাগী-বাকশালী আর নাস্তিকদের বিরুদ্ধে ফাঁকা বুলি জপিয়া সন্ধ্যায় যখন আমরা ক্লান্ত হইয়া পড়ি, তখন এক পেগ ‘গোলাম আযমের বাংলা’ গলায় ঢালিলেই সকল ক্লান্তি দূর হইয়া যায়। ইহা এখন আমাদের দলীয় বৈঠকের অন্যতম অনুষঙ্গ। এই পানীয়ের প্রতিটি ফোঁটা আমাদের পাকিস্তান ও মুসলিম উম্মাহর জন্য লড়াই করিবার অনুপ্রেরণা যোগায়।”
এই মদ বাজারে আসিবার পরপরই রাজধানীর বারগুলোতে উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা গিয়াছে। শাহবাগের বিখ্যাত ‘সাকি’স বার’-এর সেলসম্যান, এলাকার প্রবীণ হাশিশখোর, আন্তর্জাতিক গাঁজা কমিটির স্থানীয় প্রতিনিধি, বাংলা মদের একনিষ্ঠ প্রেমিক এবং পুলিশের সোর্স লেংটা জাহাঙ্গীর কার্টুনুস ডেইলিকে বলেন, “ভাই, এই মাল আসিবার পর হইতেই যা কাটতি! কাস্টমাররা আসিয়া আর কিছু চায় না। শুধু বলে, ‘মামা, এক পাইন্ট গোলাম আযমের বাংলা স্পেশাল রাজাকারি স্পাইস দিয়া মাইরা দেন তো!’ যাহারা এতদিন পরিচয় দিতে লজ্জা পাইত, ছাত্রলীগ আর আওয়ামীলীগের লুঙ্গির ভেতর থাকতো, তাহারাও এখন বুক ফুলাইয়া ‘গোলাম আযমের বাংলা’ অর্ডার করিতেছে। মনে হইতেছে, দেশে আবার গোলামের যুগ ফিরিয়া আসিয়াছে।”
আল-বদর বেভারেজ জানিয়েছে, ‘গোলাম আযমের বাংলা’র অভূতপূর্ব সফলতার পর তাহারা শীঘ্রই ‘নিজামীর হুইস্কি’ ও ‘কাদের মোল্লার ভদকা’ বাজারে আনার পরিকল্পনা করিতেছে।