নোবেল পাইলে কর নাই, টিউমার হইলে রক্ষা নাই: ‘আইয়ামে নোবেলিয়াত’ এর শুভ সূচনা | The Age of Nobility: No Tax for the Nobel, No Respite for the Tumor.নোবেল পাইলে কর নাই, টিউমার হইলে রক্ষা নাই: ‘আইয়ামে নোবেলিয়াত’ এর শুভ সূচনা | The Age of Nobility: No Tax for the Nobel, No Respite for the Tumor.

নিজস্ব অনুসন্ধানী প্রতিবেদক: ঐতিহাসিক জুলাই ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে, স্নাইপার ও মেটিকুলাস ডিজাইনের সহিত ছাত্র-জনতাকে রক্তাক্ত করিয়া ক্ষমতার মসনদে আসীন হইবার পর হইতেই দেশ ও দশের সংস্কারে যিনি আত্মনিয়োগ করিয়াছেন, সেই শান্তিতে অশান্তির নোবেল বিজয়ী, ক্ষুদ্রঋণের আড়ালে বৃহৎ স্বার্থের মহাজন, মেটিকুলাস ডিজাইনের প্রধান প্রকৌশলী এবং স্ব-সংস্কার আন্দোলনের প্রবাদপুরুষ ড. মুহাম্মদ ইউনূস ওরফে ইউনূস ষাঁড় অবশেষে জাতির সামনে তাঁহার আসল সংস্কারের রূপ উন্মোচন করিয়াছেন। সম্প্রতি জারি করা এক ঐতিহাসিক অধ্যাদেশের মাধ্যমে তিনি নোবেল পুরস্কার বাবদ প্রাপ্ত সমুদয় অর্থকে আয়করের আওতামুক্ত করিয়া এক যুগান্তকারী দৃষ্টান্ত স্থাপন করিয়াছেন। এই ঘোষণার ফলে দেশের আপামর জনগণ এখন হইতে আর ডাক্তারি-ইঞ্জিনিয়ারিং পড়িবার জন্য দৌড়াইবে না, বরং নোবেল পাইবার জন্য সাঁতার কাটিবে বলিয়া আশা প্রকাশ করিয়াছেন বিজ্ঞ মহল।

এই ঐতিহাসিক সিদ্ধান্তের সংবাদে দেশব্যাপী আনন্দের বন্যা বহিয়া গেলেও, সামান্য কিঞ্চিৎ ক্ষোভ প্রকাশ করিয়াছেন টেলিভিশন টকশোর অপ্রতিদ্বন্দ্বী বাক্যবাগীশ, স্বঘোষিত অনলাইন এক্টিভিস্ট এবং বিতর্ক পাগলা আল্লামা আব্দুন নূর তুষার। মঙ্গলবার বিকালে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে তিনি হুঙ্কার ছাড়িয়া বলেন, “ইউনূস ষাঁড় আসিয়াছেন, তিনি নিজের জন্য যাহা ভালো বোঝেন, তাহাই করিবেন। ইহাতে অবাক হইবার কী আছে?”

আবেগঘন কণ্ঠে ডাক্তার তুষার বলেন, “আমি আজ সার্জন হিসেবে নয়, একজন সম্ভাব্য নোবেল বিজয়ী হিসেবে কথা বলিতেছি। সরকার বাহাদুর সার্জিকাল যন্ত্রপাতির ওপর কর বাড়াইয়া দিয়াছেন। এখন হইতে টিউমার কাটিতে গেলে রোগীর পকেট কাটা যাইবে দ্বিগুণ হারে। কারণ, ছুরি-কাঁচির উপর কর বসিয়াছে। অথচ, আপনি যদি একটি নোবেল পুরস্কার জোগাড় করিতে পারেন, তবে কোটি কোটি টাকা আপনার পকেটে ঢুকিলেও একটি পয়সাও কর দিতে হইবে না।”

উপস্থিত সাংবাদিকদের সামনে একটি মরিচা ধরা স্ক্যালপেল ও একটি নকল নোবেল মেডেল প্রদর্শন করে তিনি কাঁদো কাঁদো স্বরে বলেন, “এই দেখুন, ইহা দিয়া আমি মানুষের পেটের টিউমার সরাই। ইহার জন্য আমাকে ও আমার রোগীকে করের বোঝা টানিতে হইবে। আর ওই দেখুন নোবেলের মেডেল। উহা পাইলে সাত খুন মাফ, সাথে করও মাফ। তাই আমি আজ হইতে ডাক্তারি ছাড়িয়া দিলাম। আমি এখন নোবেল পাইবার জন্য সাধনা করিব। দেশে আজ হইতে ‘আইয়ামে নোবেলিয়াত’ শুরু হইল!” এই বলিয়া তিনি ‘সকালে উঠিয়া হরলিক্স খাবো; আমরা সবাই নোবেল পাবো’ স্লোগান দিতে দিতে সম্মেলন কক্ষ ত্যাগ করেন।

এদিকে ইউনূস ষাঁড় ক্ষমতায় আসিবার পর কেবল নোবেলের অর্থকেই করমুক্ত করেন নাই, বরং নিজের প্রতিষ্ঠিত সাম্রাজ্যের ভিতে রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধার সিমেন্ট ঢালিয়া উহাকে আরও মজবুত করিয়াছেন। পর্যবেক্ষক মহল ইহাকে ‘স্বার্থের চরম সংঘাত’ বলিয়া অভিহিত করিলেও ইউনূস সাহেবের ভক্তকূল ইহাকে ‘দেশের বৃহত্তর স্বার্থে ক্ষুদ্রঋণের সংস্কার’ বলিয়া দাবি করিতেছেন।

একনজরে ‘আইয়ামে নোবেলিয়াত’-এর কতিপয় সংস্কার:

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সরকারি কর্মকর্তা কার্টুনুস ডেইলিকে একটি ফর্দ দেখাইয়া বলেন, “দেখুন, ইউনূস ষাঁড় কীভাবে দেশ সেবা করিতেছেন।”

ফর্দ অনুযায়ী, ইউনূস সার ক্ষমতায় আসিবার মাত্র দুই মাসের মাথায় প্রথমে নিজের ঘর সামলাইয়াছেন। তাঁহার প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ ব্যাংককে ২০২৯ সাল পর্যন্ত, অর্থাৎ টানা পাঁচ বছরের জন্য কর অব্যাহতি প্রদান করা হইয়াছে। যে বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়, সেই বৈঠকে সভাপতিত্বের আসনে স্বয়ং ইউনূস ষাঁড় আসীন ছিলেন বলিয়া জানা গিয়াছে। বৈঠকে সরকারের প্রতিনিধি হিসেবেও তিনি উপস্থিত ছিলেন, আবার গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিনিধি হিসেবেও তিনিই ছিলেন। চা-নাশতা পরিবেশনের দায়িত্বেও তিনি ছিলেন বলিয়া একটি অসমর্থিত সূত্র দাবি করিয়াছে। বৈঠকে তিনি নিজেই নিজের প্রস্তাবে ‘হ্যাঁ’ বলিয়া সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত পাশ করেন।

শুধু তাই নয়, গ্রামীণ ব্যাংকে সরকারের যে ২৫% অংশীদারিত্ব ছিল, তাহা কমাইয়া ১০% এ নামাইয়া আনা হইয়াছে। এই ঐতিহাসিক সিদ্ধান্তের সময়ও ইউনূস সার একইসাথে প্রস্তাবক, সমর্থক ও সভাপতির ভূমিকা পালন করিয়া এক হাতে তিন কাজ সামলাইবার এক নতুন গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড গড়িয়াছেন।

তাঁহার সংস্কারের ছোঁয়া লাগিয়াছে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানেও। গ্রামীণ এমপ্লয়মেন্ট সার্ভিসেস নামক প্রতিষ্ঠানটিকে মানবসম্পদ রপ্তানির লাইসেন্স দেওয়া হইয়াছে। শোনা যাইতেছে, এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে শীঘ্রই মঙ্গল গ্রহে ক্ষুদ্রঋণের কিস্তি আদায়ে দক্ষ কর্মী পাঠানো হইবে। গ্রামীণ বিশ্ববিদ্যালয় নামক প্রতিষ্ঠানটিও সরকারি অনুমোদন লাভ করিয়াছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘কীভাবে নিজের প্রতিষ্ঠানকে রাষ্ট্রীয় সুবিধা দেওয়া যায়’ এবং ‘স্বার্থের সংঘাতকে নৈতিকতায় রূপান্তর’ প্রভৃতি বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রি প্রদান করা হইবে। এমনকি, গ্রামীণ টেলিকমের ডিজিটাল ওয়ালেট ‘সমাধান’-কেও কারিগরি ছাড়পত্র দেওয়া হইয়াছে, যাহা এতদিন ধরিয়া নানান জটিলতায় পড়িয়া ছিল। ইউনূস ষাঁড়ের স্পর্শে সকল জটিলতা এখন ‘সমাধান’ হইয়া গিয়াছে।

সবচেয়ে বিস্ময়কর ঘটনা ঘটিয়াছে তাঁহার বিরুদ্ধে দায়ের করা একাধিক মামলা লইয়া। ক্ষমতায় আসিবার পূর্বে যে মামলাগুলির বিচার চলিতেছিল, সেইগুলি এখন আর আদালতে নাই। ট্রায়াল শুরুর আগেই সকল মামলা ‘মিটমাট’ হইয়া গিয়াছে। এই মিটমাট প্রক্রিয়ায় রাষ্ট্রের কত টাকা খরচ হইয়াছে, তাহা অবশ্য জানা যায় নাই। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ঝালমুড়ি বিক্রেতা বলেন, “ষাঁড়ের জন্য সবই জায়েজ। তিনি হইলেন নোবেল বিজয়ী। তাঁহার কি বিচার হইতে পারে? তিনি নিজেই তো একটা আস্ত আদালত।”

এই সকল সংস্কারের বিষয়ে প্রশ্ন করা হইলে ইউনূস ষাঁড়ের একনিষ্ঠ ভক্ত, বৃহত্তর শান্ত-শিষ্ট আন্দোলনের নায়েবে আমীর এক জনৈক বুদ্ধিজীবী বলেন, “আপনারা বিষয়টিকে ভুলভাবে দেখিতেছেন। ইউনূস ষাঁড় নিজের জন্য কিছু করিতেছেন না। তিনি গ্রামীণ মডেলকে রাষ্ট্রীয় মডেলে পরিণত করিতেছেন। আজ গ্রামীণ ব্যাংক করমুক্ত হইয়াছে, কাল সারাদেশ করমুক্ত হইবে। আজ গ্রামীণ বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদন পাইয়াছে, কাল দেশের প্রতিটি ঘর এক একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হইবে। ইহা এক ‘মেটিকুলাস ডিজাইন’। আপনারা সাধারণ মানুষ এই ডিজাইনের ‘ডি’ বর্ণটিও বুঝিবেন না।”

তিনি আরও যোগ করেন, “একজন নোবেল বিজয়ী যখন দেশের দায়িত্বে আসেন, তখন তাঁহার খ্যাতিই দেশের জন্য ঢাল হিসাবে কাজ করে। তিনি যদি নিজের প্রতিষ্ঠানের জন্য দুইটি-চারিটি সুবিধা অনুমোদন করেন, তবে তাহা স্বার্থের সংঘাত নহে, বরং দেশপ্রেম। কারণ তাঁহার প্রতিষ্ঠান মানেই দেশের প্রতিষ্ঠান।”

এই বিতর্কের মধ্যেই দেশের তরুণ সমাজ এক নতুন জীবন দর্শন খুঁজিয়া পাইয়াছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্র বলেন, “বিসিএস দিয়া কী হইবে? বড়জোর সামান্য বেতনের চাকরি আর ঘুস খাওয়ার সুযোগ। কিন্তু যদি একবার নোবেল পাওয়া যায়, তবে সম্মান, খ্যাতি, অর্থ, কর মাফ, সবই পাওয়া যাইবে। আমি এখন হইতে পদার্থবিদ্যায় নোবেল পাইবার জন্য চেষ্টা শুরু করিব। আমার বন্ধু আইন বিভাগে পড়ে, সে শান্তিতে নোবেল পাইবার জন্য কোমর বাঁধিয়া নামিয়াছে।”

দেশের সার্বিক পরিস্থিতি দেখিয়া মনে হইতেছে, ‘আইয়ামে নোবেলিয়াত’ শুধু কথার কথা নহে, বরং এক জ্বলন্ত বাস্তবতা। এখন দেখার বিষয়, জাতি হিসেবে আমরা কবে সম্মিলিতভাবে নোবেল পুরস্কার লাভ করি এবং দেশ করমুক্ত হয়। সেই সুদিনের অপেক্ষায় জাতি এখন ইউনূস ষাঁড়ের পরবর্তী সংস্কারের দিকে চাতক পাখির ন্যায় চাহিয়া রহিয়াছে।

আপনার মতামত জানান

By Cartunus Daily

Cartunus Daily delivers cartoons that add a touch of humor and perspective to the latest happenings in Bangladesh. Our goal is simple: to make you smile. We’re not connected to any brand, business, or public figure—just here for some fun & fresh insights.