মানবিক করিডোর নয়, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিক্রির ‘লজিস্টিকস হাব’ স্থাপন করা হবে | Not a Humanitarian Corridor, but a 'Logistics Hub' to Sell Off the Chittagong Hill Tracts

ভূ-রাজনৈতিক প্রতিবেদক, কার্টুনুস ডেইলি: জুলাই মাসের এক বিশেষ ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে, শত শত ছাত্র-জনতাকে ৭.৬২ স্নাইপার দিয়া হত্যার ‘মেটিকুলাস ডিজাইন’ বাস্তবায়ন করিয়া যিনি ক্ষমতার মসনদে আরোহণ করিয়াছেন, সেই শান্তিতে নোবেল বিজয়ী, অশান্তির করিডোর প্রকল্পের ঠিকাদার, মেটিকুলাস ডিজাইনের প্রধান প্রকৌশলী, ডিপ স্টেটের বিশ্বস্ত দালাল এবং ‘চিলে কান নিয়া গেছে’ থিওরির জনক, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আসল উদ্দেশ্য দিন দিন স্পষ্ট হইতেছে। তিনি মায়ানমারের রাখাইনে ‘মানবিক করিডোর’ স্থাপনের নামে মূলত পার্বত্য চট্টগ্রামকে বাংলাদেশ হইতে বিচ্ছিন্ন করিয়া ডিপ স্টেটের হাতে তুলিয়া দেওয়ার এক গভীর নীলনকশা বাস্তবায়ন করিতেছেন। তাঁহার দেশ বিক্রির ফর্দ হইতে সেন্ট মার্টিন দ্বীপও বাদ যায় নাই বলিয়া অন্য একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গিয়াছে, তবে পার্বত্য চট্টগ্রাম প্রকল্পটিই বর্তমানে তাঁহার প্রধান অগ্রাধিকার।

এই এলাহি কারবার লইয়া যখন দেশজুড়ে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বহিতেছে, তখন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং সেই ঝড়কে ফ্যানের বাতাস বলিয়া উড়াইয়া দিতে গিয়া নিজেরাই রম্যরসের পাত্রে পরিণত হইয়াছে। গত মঙ্গলবার রাজধানীর যমুনা বাসভবনে দেশের তিন বাহিনীর প্রধানদের লইয়া এক জরুরি বৈঠকে বসেন ইউনূস ষাঁড়। বৈঠকের পর, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের প্রধান রম্যরস পরিবেশক, সত্যকে ‘আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি’ নামক চাদরে ঢাকিবার নিপুণ কারিগর, আল্লামা শফিকুল আলম এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানান, “দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি লইয়া আলোচনা হইয়াছে। তিন বাহিনীর প্রধানগণ প্রধান উপদেষ্টাকে একটি সামগ্রিক প্রতিবেদন দিয়াছেন। তিনি তাহাদের কর্মকাণ্ডে যারপরনাই খুশি হইয়াছেন।”

কিন্তু বিপত্তি বাধে অন্যখানে। ‘আইনশৃঙ্খলা’ বিষয়ক বৈঠকে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা, এবং ‘শর্তসাপেক্ষে সম্মত’ নামক কূটনৈতিক মতবাদের জনক, আল্লামা মো. তৌহিদ হোসেনের উপস্থিতি সকলের মনে খটকা তৈরি করে। সাংবাদিকরা তাঁহাকে প্রশ্ন করিলে তিনি প্রথমে আমতা আমতা করিয়া বলেন, “সীমান্ত বিষয়ক কিছু আলোচনা ছিল, তাই আমি উপস্থিত ছিলাম।” তাঁহার এই বক্তব্যে প্রেস উইংয়ের ‘আইনশৃঙ্খলা’ তত্ত্ব গো-হারা হারিয়া যায়। পরে তাঁহাকে করিডোর ইস্যুতে চাপ দেওয়া হইলে তিনি বলিয়া বসেন, “জাতিসংঘ রাখাইনে মানবিক করিডোর চায়। আমরা কিছু শর্তসাপেক্ষে নীতিগতভাবে সম্মত আছি।” তিনি আরও যোগ করেন, “আরাকান আর্মির মতো নন-স্টেট অ্যাক্টরের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক যোগাযোগ না থাকিলেও দেশের স্বার্থে যোগাযোগবিচ্ছিন্ন থাকা যাইবে না।”

দুই রকম কথা শুনিয়া জাতির আক্কেল গুড়ুম। একদিকে প্রেস উইং বলিতেছে, ‘করিডোর লইয়া কোনো আলোচনাই হয় নাই’, অন্যদিকে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলিতেছেন, ‘আমরা শর্তসাপেক্ষে রাজি’। এই নিয়া যখন চায়ের কাপে তুমুল ঝড়, তখন জাতীয় প্রেসক্লাবের এক গোলটেবিল বৈঠকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য, করিডোর-শঙ্কায় কাতর মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ বলিয়া উঠেন, “এই দুর্বল সরকারের পেছনে জনগণ নাই। তাহারা করিডোরের নামে কী করিতেছে, জাতি কিছুই জানে না। আমরা কি কোনো যুদ্ধে জড়াইয়া পড়িতেছি?” তাঁহার পাশেই বসা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব আল্লামা রুহুল কবির রিজভী বলেন, “এই সরকার আমেরিকার সঙ্গে চুক্তি করিয়া দেশের সার্বভৌমত্ব কবরে পাঠাইতেছে।”

এই সকল অভিযোগ যখন বাতাসে ভাসিতেছে, তখন ভূ-রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বিষয়টিকে আরও জটিল বলিয়া বর্ণনা করিতেছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বিশেষজ্ঞ বলেন, “বিষয়টি এত সহজ নহে। ইহা এক মারাত্মক ভূ-রাজনৈতিক খেলা। এই খেলার মাঠ হইতে চলিয়াছে বাংলাদেশ।”

তিনি একটি সাদা বোর্ডে আঁকিবুঁকি কাটিয়া বুঝাইয়া বলেন, “দেখুন, একদিকে চীন কিয়াউকপিউ বন্দরে ৯ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করিয়া ‘লিটল চীন’ বানাইয়া বসিয়া আছে। আরেকদিকে ভারত কালাদান প্রকল্প দিয়া ‘সেভেন সিস্টার্স’ হইতে থাইল্যান্ড পর্যন্ত বাণিজ্য করিতে চায়। আবার রাশিয়া হইল মায়ানমার জান্তার অস্ত্রের যোগানদাতা। এখন আমেরিকা যদি আরাকান আর্মিকে দিয়া রাখাইন দখল করিয়া ‘ইন্ডিপেন্ডেন্ট রাখাইন স্টেট’ বানাইতে চায়, আর সেই কাজে বাংলাদেশকে ‘বেজ ক্যাম্প’ হিসাবে ব্যবহার করে, তবে রাশিয়া, চীন ও ভারত কি বসিয়া বসিয়া পপকর্ন খাইবে?”

তিনি আরও যোগ করেন, “এই করিডোর দিয়া শুধু মানবিক সাহায্য যাইবে না, যাইবে যুদ্ধাস্ত্র। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী নাকি করিডোর পাহারা দিবে। ইহাকে বলে ‘প্রক্সি ওয়ার’। বাংলাদেশ নিজের অজান্তেই এক বহু পক্ষীয় যুদ্ধের মধ্যে ঢুকিয়া পড়িতেছে। এর ফলাফল হইবে, বাংলাদেশ ৭ ইঞ্চি সাইজ লইয়া এই খেলায় ঢুকিবে, কিন্তু বাহির হইবে তিন ইঞ্চি সাইজ লইয়া।”

এইরূপ ভয়াবহ তথ্য ফাঁস হইবার পর যখন দেশের আমজনতা, বুদ্ধিজীবী ও চায়ের দোকানের রাজনীতিবিদেরা নড়িয়াচড়িয়া বসেন, এবং ‘দেশ বিক্রি হইতে দেওয়া হইবে না’ বলিয়া স্লোগান তুলিতে শুরু করেন, ঠিক তখনই জাতির ত্রাণকর্তা হিসেবে আবির্ভূত হন স্বয়ং ড. ইউনূস।

শুক্রবার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে তিনি তাঁহার স্বভাবসুলভ শান্ত ও সৌম্য চেহারায় বলেন, “রাখাইনের জন্য বাংলাদেশ করিডোর দিয়া দিয়াছে বলিয়া একটি অপপ্রচার চালানো হইতেছে। আমি সুস্পষ্টভাবে বলিতে চাই, এটি সর্বৈব মিথ্যা। ইহা চিলে কান নিয়া যাওয়ার গল্প।”

তিনি আরও যোগ করেন, “জাতিসংঘের মহাসচিব একটি প্রস্তাব দিয়াছিলেন মাত্র। বিষয়টি প্রস্তাব পর্যায়েই রহিয়াছে। যাহারা অসত্য কল্পকাহিনি বানাইয়া মানুষকে বিভ্রান্ত করিতেছে, আপনারা তাহাদের কথায় কান দিবেন না। আগে নিজের কানটা ধরিয়া দেখুন, উহা জায়গামতো আছে কিনা।”

প্রধান উপদেষ্টার এই ভাষণের পর জাতি আরও বিভ্রান্তিতে পড়িয়াছে। একদল কানে হাত দিয়া দেখিতেছে, উহা সত্যি সত্যি জায়গামতো আছে কিনা। আরেকদল ভাবিতেছে, কান যদি জায়গামতো থাকে, তবে চিলটা কী নিয়া গেল? সেন্ট মার্টিন?

জাতি এখন এক মহাকাব্যিক দ্বিধার মধ্যে রহিয়াছে। তাহারা কি নিজের কান লইয়া ব্যস্ত থাকিবে, নাকি চিলের পিছনে দৌড়াইবে? আর এই সুযোগে যদি পার্বত্য চট্টগ্রাম ‘মানবিক লজিস্টিকস হাব’-এর আড়ালে অপরের ঘাঁটিতে পরিণত হয়, তবে সেই দায় কে লইবে? ইউনূস ষাঁড়, প্রেস উইং, নাকি সেই পৌরাণিক চিল?