মব নয়, প্রেসার গ্রুপ! শফিকুল আলমের যুগান্তকারী তত্ত্বে দেশজুড়ে স্বস্তির সুবাতাস | Not a Mob, but a Pressure Group! A Breath of Fresh Air Across the Country Thanks to Shafiqul Alam's Revolutionary Theory.মব নয়, প্রেসার গ্রুপ! শফিকুল আলমের যুগান্তকারী তত্ত্বে দেশজুড়ে স্বস্তির সুবাতাস | Not a Mob, but a Pressure Group! A Breath of Fresh Air Across the Country Thanks to Shafiqul Alam's Revolutionary Theory.

নিজস্ব প্রতিবেদক: অবশেষে মিলল স্বস্তি। দেশবাসী এতদিন যা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রাতে ঘুমাতে পারছিল না, সেই সমস্যার এক সহজ, সুন্দর ও শ্রুতিমধুর সমাধান আবিষ্কৃত হয়েছে। জুলাই ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত সরকারের সরাসরি পৃষ্ঠপোষকতায় সারাদেশে চলমান যে কর্মকান্ডকে এতদিন অজ্ঞতাবশত ‘মব ভায়োলেন্স’ বা ‘গণপিটুনি’ বলে ভুল করা হচ্ছিল, তা আসলে মব ভায়োলেন্স নয়। এটি একটি ‘প্রেসার গ্রুপ’-এর গণতান্ত্রিক কার্যক্রম। এই যুগান্তকারী তথ্যটি জনসমক্ষে এনেছেন দেশের বর্তমান অবৈধ সরকারের প্রধান উপদেষ্টা, শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ও দেশে অশান্তি আনয়নকারী প্রকল্পের ঠিকাদার, ড. মুহম্মদ ইউনূসের প্রেস সচিব, গোয়েবলসীয় মিথ্যাচার পদ্ধতির আধুনিক রূপকার, শব্দার্থবিদ্যার স্বঘোষিত আইনস্টাইন ও মব-তত্ত্বের নতুন জনক আল্লামা শফিকুল আলম

বৃহস্পতিবার রাজধানীর এক অভিজাত মিলনায়তনে ‘গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও সাংবাদিকদের সুরক্ষা’ শীর্ষক এক সেমিনারে বক্তৃতা দেওয়ার সময় আল্লামা শফিকুল আলম এই বৈপ্লবিক তত্ত্ব পেশ করেন। তিনি বলেন, “আপনারা যাকে ‘মব’ বলছেন, আমি তাকে মব বলছি না, এটি ‘মব নয়, প্রেসার গ্রুপ’। এই গ্রুপ এমনি এমনি তৈরি হয়নি। গত ১৫ বছরে তাদের ওপর যে পরিমাণ অবিচার হয়েছে, তার কারণেই এই প্রেসার গ্রুপ তৈরি হয়েছে। তাদের বুকে জমে থাকা কনসার্ন থেকেই এই প্রেসার তৈরি হচ্ছে।”

এই তথ্য প্রকাশের পর থেকেই দেশের চিন্তাশীল মহল, সুশীল সমাজ এবং চায়ের দোকানের বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে আনন্দের বন্যা বয়ে যাচ্ছে। এতদিন যারা গণপিটুনির ভয়ে বাড়ির বাইরে বের হতে পারছিলেন না, তারা এখন ‘প্রেসার গ্রুপ’-এর সাক্ষাৎ পেতে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন। রাজধানীর মগবাজারের জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের পাশের গলির বাসিন্দা, সদ্য গঠিত ‘বাংলাদেশ চাপ প্রয়োগকারী সংঘ’-এর সভাপতি জনাব চাপাতী উল্লাহ এক আবেগঘন সাক্ষাৎকারে আমাদের প্রতিবেদককে জানান, “আহ্! কী শান্তি! এতদিন লোকে আমাদিগকে মব, গুণ্ডা, রগ কাটা, লুটেরা বলত। মনটা খারাপ হইয়া যাইত। কিন্তু আল্লামা শফিকুলের বয়ানের পর আমরা এখন নিজেদের ‘প্রেসার গ্রুপ’-এর সদস্য হিসেবে পরিচয় দিতে পারতেছি। কী সুন্দর একটা নাম! শুনলেই কেমন একটা করপোরেট করপোরেট ভাব আসে। আমরা এখন আমাদের গ্রুপের জন্য ভিজিটিং কার্ড ছাপানোর অর্ডার দিয়েছি। আমার কার্ডে লেখা থাকবে, ‘চাপাতী উল্লাহ, সিনিয়র প্রেসার এক্সিকিউটিভ’।”

তিনি আরও জানান, তাদের সংঘ এখন দেশব্যাপী ‘সঠিক ও কার্যকরভাবে চাপ প্রয়োগের কৌশল’ শীর্ষক কর্মশালার আয়োজন করার কথা ভাবছে। এই কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে আল্লামা শফিকুলকে আমন্ত্রণ জানানো হবে।

এদিকে প্রেস সচিবের মব নয় প্রেসার গ্রুপ তত্ত্বে যারপরনাই খুশি হয়েছেন স্বয়ং প্রধান উপদেষ্টা, গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ও গণতন্ত্রের সমাধির স্থপতি ড. ইউনূস। এক গোপন বৈঠকে তিনি আল্লামা শফিকুলকে জড়িয়ে ধরে বলেন, “শফিক, তুমি একটা জিনিয়াস! আমি ক্ষুদ্রঋণ দিয়ে মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির পথ দেখিয়েছি, আর তুমি ‘প্রেসার গ্রুপ’ তত্ত্ব দিয়ে “তাদের” রাজনৈতিক মুক্তির পথ দেখালে! দুটোই তো চাপাচাপির ব্যাপার। মাইক্রোক্রেডিট হল অর্থনৈতিক চাপ, আর এটা হল পলিটিক্যাল চাপ। ব্যাপারটা আমার মাথায় আগে আসেনি কেন? এই তত্ত্বও নোবেল পাওয়ার যোগ্য!”

শোনা যাচ্ছে, ড. ইউনূস এখন ‘প্রেসার গ্রুপ’ মডেলটি একটি নতুন সামাজিক ব্যবসা হিসেবে বিশ্বব্যাপী রপ্তানি করার পরিকল্পনা করছেন। অনুন্নত দেশগুলোতে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি এখন ঋণ দেওয়ার পাশাপাশি ‘প্রেসার গ্রুপ’ তৈরির সরঞ্জাম ও প্রশিক্ষণ প্যাকেজ সরবরাহ করবেন।

তবে এই ‘প্রেসার গ্রুপ’ তত্ত্বের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তোলায় সম্প্রতি চাকরি হারিয়েছেন দেশের তিনটি প্রথম সারির টেলিভিশন চ্যানেলের তিনজন সাংবাদিক। সদ্য ক্ষমতা দখলকারী নব্য রাজাকারদের ‘ইতিহাস ও সংস্কৃতি পুনরুদ্ধার সেলের’ স্বঘোষিত মহাপরিচালক এবং সংস্কৃতি উপদেষ্টা,  আল্লামা বউ ব্যবসায়ী হুজুরে কেবলা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর এক সংবাদ সম্মেলনে তারা এই অপ্রিয় প্রশ্ন করে বসেন।

চাকরিচ্যুত এক সাংবাদিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “আমি তো শুধু জিজ্ঞেস করেছিলাম, মব জাস্টিসের নামে মানুষ হত্যা করা কি জুলাইয়ের চেতনার সঙ্গে যায়? উত্তরে উপদেষ্টামশাই এমনভাবে তাকালেন, যেন আমি তার সিনেমার ক্লাইম্যাক্স নষ্ট করে দিয়েছি। আর এর পরপরই ‘জুলাই রেভল্যুশনারি অ্যালায়েন্স’ নামক এক ফেসবুকভিত্তিক ‘প্রেসার গ্রুপ’ আমাদের চ্যানেল ঘেরাও করার হুমকি দেয়। মালিকপক্ষ আর কী করবে? প্রেসার সামলাতে না পেরে আমাদেরকেই চাকরি থেকে অব্যাহতি দিয়ে দিল। এখন বুঝতে পারছি, প্রেসার গ্রুপের কার্যকারিতা কত মারাত্মক!”

এই ঘটনার পর জনাব ফারুকী এক ফেসবুক পোস্টে জানিয়েছেন, “প্রত্যেক চ্যানেলের নিজস্ব পলিসি আছে। বিষয়টা আমি না, বিষয়টা জুলাই এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের পলিসির ব্যাপার।” তার এই বক্তব্য থেকে পরিষ্কার বোঝা যায়, ‘প্রেসার গ্রুপ’-এর চাপ প্রয়োগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করাই এখন গণমাধ্যমের প্রধান পলিসি।

অবশ্য সরকারের ভেতরে এই ‘প্রেসার গ্রুপ’ নিয়ে কিছুটা মতভেদও দেখা যাচ্ছে। কিছুদিন আগেই স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মব জাস্টিসের বিরুদ্ধে কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন। কিন্তু প্রেস সচিবের নতুন ব্যাখ্যার পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এখন একটি নতুন সার্কুলার জারি করার কথা ভাবছে। নতুন সার্কুলার অনুযায়ী, এখন থেকে কোনো ঘটনাকে ‘গণপিটুনি’ বলা যাবে না। বলতে হবে ‘অতিরিক্ত চাপ প্রয়োগে দুর্ঘটনা’। একইভাবে ‘লুটপাট’-কে বলা হবে ‘অননুমোদিত সম্পদ পুনর্বণ্টন’ এবং ‘খুন’-কে বলা হবে ‘বাধ্যতামূলক জীবনাবসান’। এই গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনের জন্য ‘শব্দার্থ ও পরিভাষা পরিবর্তন মন্ত্রণালয়’ নামে একটি নতুন মন্ত্রণালয় খোলার কথাও শোনা যাচ্ছে, যার উপদেষ্টা হিসেবে আল্লামা শফিকুল আলমের নাম সর্বাগ্রে বিবেচিত হচ্ছে।

সারাদেশে ‘প্রেসার গ্রুপ’-এর জয়জয়কার। রাজশাহীতে ছাত্রলীগের সাবেক নেতাকে ‘প্রেসার’ দিয়ে হত্যা করা হয়েছে। ঢাকা ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে দুজনকে ‘প্রেসারাইজ’ করে পরপারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। খাগড়াছড়িতে শিক্ষককে ‘চাপ প্রয়োগ’ করতে করতে মেরে ফেলা হয়েছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে গত কয়েক মাসে ১১৯ জনকে ‘প্রেসার’ দিয়ে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু অ্যাটর্নি জেনারেল বলেছেন, দেশে কোনো বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটেনি। তার কথা যে কতখানি সত্য, তা আল্লামা শফিকুলের তত্ত্বের পরই স্পষ্ট হল। যা ঘটেছে, তা বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড নয়, বরং ‘বিচারবহির্ভূত চাপাচাপি’।

জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে আল্লামা শফিকুল আলমের ‘প্রেসার গ্রুপ’ তত্ত্ব এক আলোকবর্তিকা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। এখন আর দেশের আইনশৃঙ্খলা নিয়ে চিন্তার কিছু নেই। কারণ দেশে কোনো সহিংসতা নেই, আছে শুধু চাপ আর চাপ। জনগণ এখন সুখে-শান্তিতে একে অপরের ওপর চাপ প্রয়োগ করে একটি সুন্দর ও চাপমুক্ত সমাজ গঠনে এগিয়ে যাবে, এমনটাই আশা করছেন বিশ্লেষকরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *