উপদেষ্টাদের ঘনঘন বিদেশ সফর: গিনেস বুকে নাম উঠছে প্রধান উপদেষ্টার, দেউলিয়া হচ্ছে দেশ।
বিশেষ প্রতিবেদক, দৈনিক কার্টুনুস: অবশেষে বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশ এক নতুন উচ্চতায় আসীন হইতে চলিয়াছে। উন্নয়ন, সুশাসন কিংবা অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি দিয়া নহে, বরং রাষ্ট্রীয় খরচে সল্প মেয়াদকালে সর্বোচ্চ সংখ্যকবার আকাশভ্রমণের মাধ্যমে এই গৌরব অর্জিত হইতেছে। আমাদের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিশ্ব পর্যটক প্রধান উপদেষ্টা মহোদয় মাত্র চৌদ্দ মাসে তেরোবার বিদেশ সফর করিয়া এক অভূতপূর্ব নজির স্থাপন করিয়াছেন। বিশেষজ্ঞরা মনে করিতেছেন, এই গতি বজায় রাখিতে পারিলে অচিরেই তিনি বিশ্বের সর্বোচ্চসংখ্যকবার বিমান আরোহণকারী রাষ্ট্রপ্রধান হিসাবে গিনেস বিশ্ব রেকর্ডে নাম লেখাইবেন।
সম্প্রতি শত সদস্যের এক বিশাল পিকনিক পার্টি, থুক্কু, প্রতিনিধি দল লইয়া তিনি জাতিসংঘ অধিবেশনে গমন করিলে দেশবাসী আনন্দে আত্মহারা হইয়া পড়ে। তাহারা ভাবিতে থাকে, আহা, কতদিনে এমন একজন বিশ্ব পর্যটক নেতা আসিয়াছেন, যিনি দেশের টাকা খরচ করিয়া বিশ্ব দেখিবেন এবং বিশ্বকে দেখাইবেন যে, শত সংকটের মধ্যেও পিকনিকের আমেজ কমিতে দেওয়া চলিবে না। এই ঐতিহাসিক সফরে দেশের কী কী স্বার্থ উদ্ধার হইয়াছে, সেই বিষয়ে অবশ্য কিঞ্চিৎ ধোঁয়াশা রহিয়াছে। তবে একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করিয়াছে, প্রতিনিধি দলের সদস্যরা নিউইয়র্কের টাইম স্কয়ারের আলোকসজ্জা দেখিয়া যারপরনাই মুগ্ধ হইয়াছেন এবং দেশের উন্নয়নে এমন আলোকসজ্জার গুরুত্ব লইয়া গভীর চিন্তাভাবনা করিয়াছেন।
এই বিশাল ভ্রমণকারী দলের যৌক্তিকতা লইয়া কতিপয় নিন্দুক ও ‘অবাধ্য’ নাগরিক প্রশ্ন তুলিলে প্রধান উপদেষ্টার কালোতালিকা বিষয়ক প্রেস সচিব, মহাজ্ঞানী শফিকুল আলম মহোদয় কিঞ্চিৎ রুষ্ট হন। তিনি তাঁহার নিজস্ব সামাজিক মাধ্যমে এক পোস্টে বুঝাইয়া দেন, আগের সরকারের আমলে আরও বেশি লোক লইয়া পিকনিকে যাওয়া হইত। সেই তুলনায় এইবারের দল অনেক ছোট এবং ‘লক্ষ্যভেদী’। যদিও ‘লক্ষ্য’টা যে ঠিক কী, তাহা তিনি স্পষ্ট করেন নাই। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রেস উইংয়ের এক কনিষ্ঠ সদস্য জানাইয়াছেন, এবারের প্রধান লক্ষ্য ছিল প্রধান উপদেষ্টাকে সকল প্রকার কঠিন প্রশ্ন হইতে সুরক্ষিত রাখা, যেকারণে কেবল প্রেস উইংয়েরই পাঁচজন অতন্দ্র প্রহরী সফরে গিয়াছিলেন। তাঁহাদের কাজ ছিল, কোনো সাংবাদিক সফরের অর্জন বিষয়ে প্রশ্ন করিলেই তাঁহাকে মিষ্টি করিয়া বলিবেন, ‘আপনার প্রশ্নটি আমরা কালোতালিকাভুক্ত করিয়া রাখিলাম, সময়মতো দেখিয়া লওয়া হইবে।’
এদিকে কেবল প্রধান উপদেষ্টাই নহেন, তাঁহার সহযোগী উপদেষ্টাগণও বিশ্ব পর্যটনের এই মহাযজ্ঞে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করিতেছেন। তথ্য উপদেষ্টা হইতে শুরু করিয়া ছাত্র উপদেষ্টারা পর্যন্ত বিভিন্ন ‘অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ’ দাওয়াতে যোগ দিতে সংযুক্ত আরব আমিরাত হইতে সুইজারল্যান্ড, মরক্কো হইতে যুক্তরাজ্য পর্যন্ত নিরন্তর উড়িয়া বেড়াইতেছেন। তাঁহাদের এই সকল সফরের গুরুত্ব এতটাই বেশি যে, দূতাবাস আয়োজিত চা-চক্র কিংবা কোনো অখ্যাত সংগঠনের সেমিনারে অংশগ্রহণ করিয়া তাঁহারা দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হইতে উজ্জ্বলতর করিতেছেন। এই সকল সফরের মাধ্যমে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান কতদূর অগ্রসর হইয়াছে বা দেশের অর্থনৈতিক সংকট কাটিতেছে কি না, সেই প্রশ্ন করাও আজকাল একপ্রকার রাষ্ট্রদ্রোহিতা হিসাবে গণ্য হইতেছে।
সাবেক আমলাদের মধ্যে কেহ কেহ এই বিষয়ে ক্ষীণ কণ্ঠে আপত্তি জানাইয়া বলিয়াছেন, ‘মনে হইতেছে উনারা পিকনিকে যাইতেছেন।’ এই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় উপদেষ্টাদের পিকনিক ব্যবস্থাপনা কমিটির এক সদস্য জানাইয়াছেন, ‘আপনারা বিষয়টিকে এত হালকাভাবে লইতেছেন কেন? ইহা একটি রাষ্ট্রীয় পিকনিক। দেশের হাজার কোটি টাকা খরচ করিয়া আমরা বিশ্বকে দেখাইয়া দিতেছি যে, আমরা কতটা সুখী ও ভ্রমণবিলাসী জাতি। ইহা একপ্রকার বিনিয়োগ। এই বিনিয়োগের ফলে ভবিষ্যতে হয়তো বিভিন্ন দেশ আমাদের উপদেষ্টাদের সম্মানসূচক ‘বিশ্ব পর্যটক’ উপাধি প্রদান করিবে।’
প্রধান উপদেষ্টার ঘনঘন বিদেশ সফর বিষয়ে আরও বিস্তারিত জানিতে চাহিলে প্রধান উপদেষ্টার বাণী-সংকোচন দপ্তরের এক কর্মকর্তা এই প্রতিবেদককে একটি কালো ডায়েরি দেখাইয়া মৃদু হাসিয়া বলেন, ‘বেশি প্রশ্ন করিবেন না। সফরের অর্জন কী, তাহা সময় হইলে জাতি জানিতে পারিবে। আপাতত আপনারা আমাদের পরবর্তী সফরের জন্য দোয়া করুন। আমরা ভাবিতেছি, পরবর্তী গন্তব্য হইবে অ্যান্টার্কটিকা। সেখানকার পেঙ্গুইনদের সহিত দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি লইয়া মতবিনিময় করা অত্যন্ত জরুরি হইয়া পড়িয়াছে।’
#Cartunus Daily, #অন্তর্বর্তী সরকার, #উপদেষ্টা পরিষদ, #কালোতালিকা, #জনগণের টাকা, #জাতিসংঘ, #জাতিসংঘ অধিবেশন, #টিআইবি, #দৈনিক কার্টুনুস, #প্রধান উপদেষ্টা, #প্রধান উপদেষ্টার ঘনঘন বিদেশ সফর, #প্রেস সচিব, #বিদেশ সফর, #বিলাসী ভ্রমণ, #বিশাল বহর, #মুহাম্মদ ইউনূস, #রম্য প্রতিবেদন, #রাষ্ট্রীয় অর্থের অপচয়, #শফিকুল আলম, #সরকারি সফর, #সাংবাদিক নির্যাতন