
বিশেষ প্রতিনিধি, লন্ডন ডেস্ক: কর্মীদের আদিম ও প্রস্তরযুগীয় কর্মকাণ্ডে তীব্র হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন একুশে আগস্ট গ্রেনেড শিল্প সমিতির আজীবন সভাপতি, হাওয়া ভবনের প্লেবয় প্রিন্স, জাতীয়তাবাদী পাথুরিয়া বিদ্বেষী সংঘের প্রধান পৃষ্ঠপোষক এবং লন্ডনে পলাতক চিকিতসাধীন আওলাদে আমীর বড় গুণ্ডে তারেক রহমান। ঢাকার বাবুবাজারে দলের কতিপয় অতি উৎসাহী চ্যালা-চামুণ্ডা একজন ব্যবসায়ীকে হত্যা করতে গিয়ে গ্রেনেড বা অন্ততপক্ষে আধুনিক কোনো আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার না করে মামুলি পাথর ব্যবহার করায় তিনি এই হতাশা ব্যক্ত করেন। বিষয়টিকে তিনি তার সুমহান ও গৌরবোজ্জ্বল সন্ত্রাসী ঐতিহ্যের প্রতি চরম অবমাননা হিসেবে দেখছেন।
মঙ্গলবার লন্ডনের কিংস্টন এলাকার একটি বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্টের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে পায়চারি করতে করতে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে আওলাদে আমীর বলেন, “আজ আমার হৃদয় ভারাক্রান্ত। নিজের দলের কর্মীদের এমন অধঃপতন আমি আর চোখে দেখতে পারছি না। আমি কি এই দিন দেখার জন্য হাওয়া ভবনে আমার সোনার ছেলেদের গ্রেনেড ছোড়ার প্রশিক্ষণ দিয়েছিলাম? আমার সারা জীবনের সাধনা, আমার বাবার প্রতিষ্ঠিত দলের সুনাম, আমার মায়ের আঁচলের নিচের আশ্রয়, সবই আজ ধুলোয় মিশিয়ে দিচ্ছে এই সব অর্বাচীন, প্রস্তরযুগীয় কর্মীরা।”
এসময় তারেকের চোখ দিয়ে টপটপ করে অশ্রু গড়িয়ে পড়তে দেখা যায়। পাশে দাঁড়ানো ব্যক্তিগত সহকারী টিস্যু পেপার এগিয়ে দিলে তিনি তা দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে বাষ্পরুদ্ধ কণ্ঠে বলেন, “আপনারা ভাবুন, আমার ব্র্যান্ড ইমেজটা কোথায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে! আমি হচ্ছি গ্রেনেডের ফেরিওয়ালা, আর্জেস গ্রেনেডের মতো অত্যাধুনিক প্রযুক্তির প্রদর্শক। আমার নাম শুনলে মানুষ শক্তিশালী বিস্ফোরণের কথা চিন্তা করে, চারদিকে বারুদের গন্ধ পায়, ছিন্নভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গের কথা ভাবে। আর আমার কর্মীরা কি না সেই আদিম যুগের মানুষের মতো পাথর মেরে মানুষ খুন করছে! ছি ছি ছি! এর চেয়ে লজ্জার আর কী হতে পারে? আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম যখন খবর ছাপবে যে, ‘তারেক রহমানের কর্মীরা পাথর ছুড়ে মানুষ মারে’, তখন আমার ইজ্জতটা কোথায় থাকবে? আমার মেয়ে তার বন্ধুদের কী বলে মুখ দেখাবে?”
হুহু করে কেঁদে উঠে তিনি আরও যোগ করেন, “আমি তো ওদের জন্য কম করিনি। অনলাইন কোর্সের ব্যবস্থা করেছিলাম, ‘ঘরে বসে শিখুন অত্যাধুনিক বিস্ফোরক তৈরি ও ব্যবহার’ নামে একটা সেশনও চালু করেছিলাম। কথা ছিল, তারা সেগুলো শিখে দেশের মাটিতে প্রয়োগ করবে। কিন্তু তারা শিখলোটা কী? তারা শিখেছে ঢিল ছোড়া! আরে বাবা, তোরা যদি ঢিলই ছুড়বি, তাহলে আমার দলে কেন? তোরা তো পাড়ার ক্রিকেট টিমে নাম লেখালেই পারতিস!”
এদিকে তারেকের এই ঐতিহাসিক ও সময়োপযোগী ভাষণের পর রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই তারেকের এই ‘দূরদৃষ্টিসম্পন্ন’ উদ্বেগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। বিশেষ করে, সাবেক নৌকা ও হালের ধানের শীষের যাত্রী, রাজনৈতিক আবহাওয়া অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, টকশোর গরম মশলা আল্লামা গোলাম মাওলা রনি এ বিষয়ে একটি কলাম লিখেছেন।
তার কলামে তিনি উল্লেখ করেন, “তারেক রহমান সাহেব যা বলেছেন, তা নিয়ে হাসাহাসির কিছু নেই। এর মধ্যে গভীর দর্শন ও রাজনীতি লুকিয়ে আছে। তিনি মূলত বলতে চেয়েছেন, সবকিছুরই একটা স্ট্যান্ডার্ড বা মানদণ্ড থাকা উচিত। সন্ত্রাস করলেও সেই সন্ত্রাসের একটা ক্লাস থাকতে হয়। যখন দলের কর্মীরা পাথর ছুড়ে মানুষ মারে, তখন প্রতিপক্ষও ‘তারেক রহমান শাউয়া’ বা ‘পুটকি মার’ এর মতো অশ্লীল স্লোগান দেওয়ার সাহস পায়। অর্থাৎ, সন্ত্রাসের স্ট্যান্ডার্ড নেমে গেলে রাজনৈতিক স্লোগানের স্ট্যান্ডার্ডও নেমে যায়। যদি তারা গ্রেনেড বা অন্তত একে সাতচল্লিশ ব্যবহার করতো, তাহলে প্রতিপক্ষ সমীহ করে চলত। তারা স্লোগান দেওয়ার আগে দশবার ভাবত। তখন হয়তো তাদের স্লোগান হতো, ‘হিমু হইতে সাবধান, তারেক রহমান!‘”
আল্লামা রনি আরও যুক্তি দেখান, “আপনারা দেখুন, খুচরা পাথুরিয়াদের এই কর্মকাণ্ডের কারণে আজ দেশের পুরো রাজনৈতিক সংস্কৃতিই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। চাঁদা আদায়েও কোনো ক্রিয়েটিভিটি নেই। আগে হাওয়া ভবনে যেমন নান্দনিক উপায়ে চাঁদা ও উন্নয়ন কর আদায় করা হতো, এখনকার ছোকরারা কি তার কিছু জানে? তারা জানে শুধু পাথর মারতে। এতে করে দলেরই বদনাম হচ্ছে। তাই আওলাদে আমীরের এই হতাশা যৌক্তিক। তিনি একজন ভিশনারি নেতা, তিনি জানেন কিসে দলের মঙ্গল।”
অন্যদিকে, বাবুবাজারের ওই ঘটনায় আটক হওয়া এক কর্মীর সাথে কারাগারে যোগাযোগ করা হলে তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “হুজুর যে আমাগো ওপর এমন বিলা হইব, তা কি আর জানতাম! আমরা তো হুকুম পাইয়াই কামে নাইমা পড়ছি। হাতের কাছে পাথর পাইছি, তাই দিয়াই অ্যাকশন শুরু করছি। আমরা তো ভাবছিলাম, চাঁদা পাইলেই হুজুর খুশি হইব। কিন্তু উনি যে অস্ত্রের কোয়ালিটি লইয়া এমন চেইতা যাইব, তা কে জানত! এখন তো জেলে বইসা নিজের চুল নিজেই ছিঁড়তে ইচ্ছা করতেছে। দুইটা গ্রেনেড হাতে থাকলে আজ হুজুরের চোখের মণি হইয়া থাকতাম।”
তারেক রহমান তার বক্তব্যে কর্মীদের জন্য নতুন দিকনির্দেশনাও দিয়েছেন। তিনি ঘোষণা করেছেন, অবিলম্বে “জাতীয়তাবাদী শক্তি: প্রস্তরযুগ থেকে পারমাণবিক যুগে উত্তরণ” শীর্ষক একটি বিশেষ প্রশিক্ষণ কর্মশালার আয়োজন করা হবে। এই কর্মশালায় উত্তীর্ণ সেরা কর্মীদের পাকিস্তানে উচ্চতর প্রশিক্ষণের জন্য পাঠানো হবে এবং তাদের পরিবারের জন্য বিশেষ রেশনের ব্যবস্থা করা হবে।
তিনি হুংকার দিয়ে বলেন, “আমার কর্মীদের আমি ফেলনা মনে করি না। তারা ভুল করেছে, আমি তাদের শুধরে দেব। আগামী দিনে আমার দলের প্রতিটি কর্মী হাতে রিমোট কন্ট্রোল বোমা আর কাঁধে রকেট লঞ্চার নিয়ে ঘুরবে। পাথর বা ইটের মতো ছিঁচকে অস্ত্র আমার দলে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলো। যদি এরপরও কাউকে পাথর হাতে দেখা যায়, তাহলে তাকে দল থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হবে।”
ভাষণের শেষে তিনি নিহত সোহাগের পরিবারের প্রতি কোনো সমবেদনা না জানিয়ে বরং তার দলের যে কর্মীরা এই ‘নিম্নমানের’ কাজ করে নিজেদের ও দলের সম্মানহানি করেছে, তাদের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে এনে শাস্তি দেওয়ার দাবি জানান, যাতে ভবিষ্যতে আর কেউ দলের ব্র্যান্ড ইমেজ নষ্ট করার সাহস না পায়।