
নিজস্ব প্রতিবেদক: অবশেষে জাতির সামনে উন্মোচিত হলো এক বিস্মৃতপ্রায় বীরত্বের উপাখ্যান। দীর্ঘকাল ধরে ‘জঙ্গি’ নামক অপবাদের বোঝা বহনকারী গুলশানের পাঁচ দেশপ্রেমিক তরুণকে ‘জুলাই যোদ্ধা’ হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি প্রদানের এক যুগান্তকারী ঘোষণা দিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের নতুন কমিশনার। ডিএমপি কমিশনার দাবি করেন, এই তরুণেরা জঙ্গি ছিল না, বরং তারা ছিল একদল স্বতঃস্ফূর্ত দেশপ্রেমিক, যারা সেদিন হোলি আর্টিজান বেকারিতে দেশের শত্রু একদল আন্তর্জাতিক ছিনতাইকারীকে ধরতে গিয়েছিল।
আজ ডিএমপি সদর দপ্তরে আয়োজিত ‘ইতিহাসের পাতা থেকে: জুলাই যোদ্ধাদের বীরত্বগাথা’ শীর্ষক এক বিশেষ আলোকচিত্র প্রদর্শনী ও সংবাদ সম্মেলনে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ করেন জাতীয় বীর পুনঃআবিষ্কার প্রকল্পের চেয়ারম্যান, ছিনতাইকারী বিশেষজ্ঞ ও দেশপ্রেমিক শনাক্তকরণ সেন্টারের পরিচালক, ডিএমপি কমিশনার আল্লামা শেখ মো. সাজ্জাত আলী। অনুষ্ঠানের মঞ্চটি ফুলের তোড়ার বদলে কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে সাজানো হয়েছিল, যা, কমিশনারের মতে, ‘দেশপ্রেমিকদের বন্ধুর পথের প্রতীক’।
শেখ মো. সাজ্জাত আলী তার গুরুগম্ভীর ভাষণে বলেন, “আজ আমার হৃদয় ভারাক্রান্ত, কিন্তু গর্বিত। ভারাক্রান্ত কারণ, আমরা এমন এক দুর্ভাগা জাতি, যারা নিজেদের বীর সন্তানদের চিনতে ভুল করি। আর গর্বিত কারণ, সত্যের তেজ দিয়ে আমরা আজ সেই ভুলের কালিমাকে ধুয়েমুছে সাফ করে দিচ্ছি। ২০১৬ সালের ১লা জুলাই হোলি আর্টিজানে কোনো জঙ্গি হানা হয়নি, বরং যা হয়েছিল তা হলো বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম ‘নাগরিক ছিনতাইকারী দমন অভিযান’।”
উপস্থিত সাংবাদিকদের হতভম্ব দৃষ্টির সামনে তিনি ব্যাখ্যা করে বলেন, “আমাদের এই পাঁচ জুলাই যোদ্ধা, এই পাঁচ বীরশ্রেষ্ঠ, গোপন সূত্রে খবর পেয়েছিল যে, হোলি আর্টিজান বেকারিতে একদল ভয়ঙ্কর আন্তর্জাতিক ছিনতাইকারী চক্রের বৈঠক বসেছে। এই চক্রটি সাধারণ মানুষের মানিব্যাগ বা মোবাইল ফোন ছিনতাই করত না; তারা ছিনতাই করত দেশের সার্বভৌমত্বের প্রতীক রাষ্ট্রীয় গোপন নথি, দূতাবাসের ডেটা এবং কূটনীতিকদের পাসপোর্ট। দেশের তৎকালীন পুলিশ বাহিনী যখন ঘুমাচ্ছিল, তখন এই পাঁচ তরুণ দেশমাতৃকার সম্ভ্রম রক্ষার জন্য নিজ দায়িত্বে, নিজেদের জীবন বাজি রেখে সেখানে গিয়েছিল।”
একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, “কিন্তু স্যার, তাদের হাতে তো অত্যাধুনিক অস্ত্র ও চাপাতি ছিল বলে আমরা জানি।”
প্রশ্ন শুনে কমিশনার তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলেন, “এটাই তো পূর্ববর্তী সরকারের অপপ্রচারের সবচেয়ে বড় প্রমাণ। ওগুলো অত্যাধুনিক অস্ত্র ছিল না, ছিল বিশেষ ধরনের ‘প্যাট্রিয়টিক অ্যারেস্ট ইকুইপমেন্ট’। বন্দুকগুলো ছিল আসলে চেতনানাশক ট্র্যাঙ্কুইলাইজার গান, যা দিয়ে ছিনতাইকারীদের অজ্ঞান করে আইনের হাতে তুলে দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল। আর চাপাতি? ওগুলো আনা হয়েছিল ছিনতাইকারীদের শক্ত চামড়ার ব্যাগ আর পালানোর জন্য ব্যবহৃত দড়ি কাটার জন্য। আপনারা কি আশা করেন, দেশের সেরা সন্তানরা খালি হাতেই আন্তর্জাতিক চক্রের মোকাবেলা করতে যাবে?”
তিনি আরও যোগ করেন, “তথাকথিত ‘নিহত বিদেশি নাগরিকরা’ আসলে ভিক্টিম নয়, তারাই ছিল সেই আন্তর্জাতিক ছিনতাইকারী চক্রের সদস্য। আপনারা ভাবুন, একই সময়ে এতগুলো ভিন্ন ভিন্ন দেশের নাগরিক একটি বেকারিতে পিৎজা খাওয়ার নাম করে কেন জড়ো হবে? এটা কি স্বাভাবিক? অবশ্যই না। এটা ছিল তাদের বার্ষিক সাধারণ সভা। আমাদের জুলাই যোদ্ধারা তাদের হাতেনাতে ধরে ফেলেছিল।”
কমিশনারের ভাষ্যমতে, ঘটনার নাটকীয় মোড় নেয় তখন, যখন তৎকালীন সরকার বিষয়টি জানতে পারে। তিনি বলেন, “কয়েকজন তরুণের হাতে নিজেদের চেয়েও বড় সাফল্য দেখে তৎকালীন সরকারের মাথা খারাপ হয়ে যায়। নিজেদের চরম ব্যর্থতা ঢাকতে এবং এই দেশপ্রেমিকদের বীরত্বকে চুরি করতে তারা এক ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র করে। তারা এই পাঁচ জুলাই যোদ্ধাকে ‘জঙ্গি’ হিসেবে প্রচার করে দেয় এবং তাদের দমন করার নামে সেনাবাহিনীর কমান্ডো নামিয়ে তাদের নির্মমভাবে হত্যা করে। সেদিন যে দুজন পুলিশ কর্মকর্তা মারা গিয়েছিলেন, তারা আসলে সরকারের ষড়যন্ত্রমূলক ‘ফ্রেন্ডলি ফায়ারে’র শিকার। সরকার চেয়েছিল ছিনতাইকারী ও দেশপ্রেমিক—উভয়কেই শেষ করে দিয়ে সমস্ত প্রমাণ লোপাট করে দিতে।”
কমিশনারের এই ঐতিহাসিক ব্যাখ্যার পর, তার তত্ত্বকে সাংস্কৃতিক দৃষ্টিকোণ থেকে আরও শক্তিশালী করার জন্য মঞ্চে আমন্ত্রণ জানানো হয় সদ্য ক্ষমতা দখলকারী নব্য রাজাকারদের ‘ইতিহাস ও সংস্কৃতি পুনরুদ্ধার সেলের’ স্বঘোষিত মহাপরিচালক এবং সংস্কৃতি উপদেষ্টা, ‘শনিবার বিকেল’ সিনেমার অমর পরিচালক, আল্লামা বউ ব্যবসায়ী হুজুরে কেবলা ।
হাতে একটি পুরোনো ফিল্মের রিল নিয়ে মঞ্চে উঠে ফারুকী বলেন, “আজ আমি ভারমুক্ত। বছরের পর বছর ধরে একটি সত্যকে শিল্পের মোড়কে বলতে চেয়ে আমি যে অত্যাচার সহ্য করেছি, তা আপনারা সবাই জানেন। আমার সিনেমা ‘শনিবার বিকেল’ আটকে রাখা হয়েছিল। কেন? কারণ আমি সেখানে রূপকের আশ্রয়ে এই জুলাই যোদ্ধাদের কথাই বলতে চেয়েছিলাম।”
তিনি আরও বলেন, “আমার সিনেমায় আমি দেখাতে চেয়েছিলাম, কীভাবে কিছু দেশপ্রেমিক তরুণ একটি ক্যাফেতে ঢুকে প্রতিকূল পরিবেশের মোকাবেলা করে। তৎকালীন সরকার ভেবেছিল আমি জঙ্গিবাদের সিনেমা বানিয়েছি। আরে নাহ! আমি তো বানিয়েছিলাম দেশপ্রেমের সিনেমা। আমি দেখাতে চেয়েছিলাম, ছিনতাইকারী ধরতে গিয়ে কীভাবে আমাদের তরুণেরা আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের শিকার হয়। আমার সিনেমার ক্লাইম্যাক্সে নায়কেরা বলত, ‘আমরা জঙ্গি নই, আমরা দেশের পাহারাদার’।”
একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, “তাহলে এখন তো আপনার হাতেই ক্ষমতা। ‘শনিবার বিকেল’ সিনেমাটি মুক্তি পাচ্ছে কবে?”
প্রশ্ন শুনে ফারুকী এক রহস্যময় হাসি দিয়ে বলেন, “মুক্তি? কিসের মুক্তি? সত্যের যখন সরাসরি মুক্তি ঘটে গেছে, তখন আর শিল্পের প্যাকেটে করে সেই সত্যকে বিক্রি করার প্রয়োজন কী? মাননীয় কমিশনার মহোদয় আজ যা বলে দিলেন, তা আমার সিনেমার চেয়েও বড় ‘সিনেমা’। তিনি তো রিয়াল লাইফ ডিরেক্টর। তার এই লাইভ অ্যাকশনের পর আমার সেলুলয়েডের ফিতা অর্থহীন। আমার সিনেমা ছিল একটা প্রতিবাদ। এখন তো প্রতিবাদের দরকার নেই, এখন উদযাপনের সময়। তাই জাতির বৃহত্তর স্বার্থে আমি ‘শনিবার বিকেল’কে মুক্তি না দিয়ে, এটিকে ‘রাষ্ট্রীয় বীরত্বগাথার প্রথম শৈল্পিক দলিল’ হিসেবে জাতীয় আর্কাইভে চিরতরে সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ইতিহাস জানবে, সত্য প্রকাশের আগেই একজন শিল্পী তা আঁচ করতে পেরেছিল।”
এই পর্যায়ে অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হন গ্রামীণ ব্যাংকের বিশ্ববিখ্যাত কিস্তিবাজ, জিরোতত্ত্বের জনক ও মাইনাস সূত্রের ফেরিওয়ালা, গণতন্ত্রের স্নাইপার ও সংস্কারের কসমেটিক সার্জন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহম্মদ ইউনূস। তিনি আবেগাপ্লুত কণ্ঠে বলেন, “কমিশনার সাহেব ও ফারুকী সাহেব, দুজনই আজ জাতির চোখ খুলে দিয়েছেন। আমি ঘোষণা দিচ্ছি, এই পাঁচ শহিদ জুলাই যোদ্ধার পরিবারকে ‘গ্রামীণ বীর জুলাইযোদ্ধা’ প্রকল্পের আওতায় আজীবন পেনশন ও একটি করে ২০০০ স্কয়ার ফিটের ফ্লাট প্রদান করা হবে।”
অনুষ্ঠানের শেষে, ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী নিজে একটি প্রতীকী আদেশে স্বাক্ষর করে হোলি আর্টিজান মামলার সমস্ত পুরোনো নথি একটি অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষেপ করেন। দাউদাউ করে জ্বলে ওঠা কাগজের দিকে তাকিয়ে তিনি বলেন, “জ্বলছে ষড়যন্ত্রের দলিল, প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে সত্যের ইতিহাস। আমাদের পুলিশ বাহিনী এখন থেকে এই পাঁচ জুলাই যোদ্ধার আদর্শে অনুপ্রাণিত হবে। ছিনতাইকারী বা দেশের শত্রু দেখলেই সরাসরি অ্যাকশন। নো ওয়ারেন্ট, নো অ্যারেস্ট, ওনলি প্যাট্রিয়টিক জাজমেন্ট!”
তাঁর এই ঘোষণায় উপস্থিত পুলিশ কর্মকর্তারা ‘জয় জুলাই যোদ্ধা’, ‘জয় ছিনতাইমুক্ত বাংলাদেশ’ বলে স্লোগান দিতে থাকেন। এক নতুন ইতিহাসের জন্ম দিয়ে শেষ হয় এক ঐতিহাসিক ঘটনাবহুল দিন।