রক্তচক্ষু বনাম গ্রাফিতির স্পর্ধা: কার্টুনুস ডেইলির পোস্টার সিরিজে ইউনুস রেজিমের পতনের প্রতিধ্বনি
বিশেষ প্রতিবেদক, দৈনিক কার্টুনুস: বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায়, শাসকের গদি যখনই নড়বড়ে হতে শুরু করে, তখনই দেওয়ালগুলো কথা বলতে শুরু করে। একসময় চুনকাম করা দেওয়ালে আলকাতরা দিয়ে লেখা হতো স্লোগান, আর এখন ফাইবার অপটিক্সের হাইওয়ে ধরে সেই স্লোগান উঠে এসেছে ডিজিটাল স্ক্রিনে। তবে মাধ্যম বদলালেও মেজাজ বদলায়নি, বরং আরও ধারালো হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে ‘কার্টুনুস ডেইলি’ যে ৫টি পোস্টারের একটি সিরিজ প্রকাশ করেছে, তা কেবল কিছু জেপিজি বা পিএনজি ফাইল নয়; এগুলো এক একটি ভিজ্যুয়াল গ্রেনেড, যা সরাসরি আঘাত হেনেছে বর্তমানের তথাকথিত ‘সুশীল স্বৈরাচার’ বা ‘সিভিল অটোক্রেসি’-র মজ্জায়। ডক্টর ইউনুসের নেতৃত্বাধীন এই অন্তর্বর্তীকালীন (নাকি অনন্তকালীন?) সরকারের বিরুদ্ধে জনমনে যে পুঞ্জীভূত ক্ষোভ জমেছে, তাকেই এক জ্যামিতিক ও নান্দনিক রূপ দিয়েছে এই পোস্টার সিরিজ। একজন শিল্পবোদ্ধা হিসেবে এই সিরিজটিকে ব্যবচ্ছেদ করলে দেখা যায়, এখানে পলিটিক্যাল স্যাটায়ার বা রাজনৈতিক রম্য এবং রেভোলিউশনারি আর্ট বা বিপ্লবী শিল্পের এক অদ্ভূত সংমিশ্রণ ঘটেছে।
রঙের মনস্তত্ত্ব: লাল, হলুদ ও অন্ধকারের সিম্ফনি
এই পোস্টার সিরিজের দিকে তাকালে প্রথমেই যে বিষয়টি ধাক্কা দেয়, তা হলো এর কালার প্যালেট বা রঙের বিন্যাস। শিল্পী এখানে সচেতনভাবেই ‘ভিজ্যুয়াল ভায়োলেন্স’ তৈরি করতে চেয়েছেন। পোস্টারগুলোতে লালের আধিক্য চোখে পড়ার মতো। এই লাল রং কোনো রোমান্টিকতা বা ভালোবাসার লাল নয়; এটি বিপদের, এটি রক্তের এবং এটি রাজপথের উত্তাপের প্রতীক। এর সঙ্গে কন্ট্রাস্ট বা বৈপরীত্য তৈরি করতে ব্যবহার করা হয়েছে উজ্জ্বল হলুদ রং। গ্রাফিক ডিজাইনের ভাষায় হলুদকে বলা হয় ‘অ্যাটেনশন সিকার’ বা দৃষ্টি আকর্ষণকারী। ইউনুস রেজিমের নানা অসঙ্গতি ও ব্যর্থতার দিকে আঙুল তুলতে এই হলুদ রঙের ব্যবহার অত্যন্ত সার্থক। আর ব্যাকগ্রাউন্ডে বা আবহে যে কালো ও কালচে খয়েরি রঙের ব্যবহার, তা ফুটিয়ে তুলেছে বর্তমান সময়ের নৈরাজ্য আর অনিশ্চয়তাকে। টেক্সচার হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে ‘হাফ-টোন’ বা বিন্দুর বুনন, যা আমাদের মনে করিয়ে দেয় ৭০ বা ৮০-র দশকের সেই সস্তা কাগজে ছাপা লিফলেটগুলোর কথা, যেগুলো একসময় বিপ্লবের বারুদ ছড়িয়ে দিত পাড়ায় পাড়ায়। কার্টুনুস ডেইলি সেই রেট্রো স্টাইল বা পুরোনো মেজাজকে ফিরিয়ে এনেছে আধুনিক ভেক্টরের মোড়কে।
অর্থনীতির কঙ্কাল ও ‘চ্যাটের বাল’ তত্ত্ব
সিরিজের সবচেয়ে আলোচিত এবং হয়তো সবচেয়ে বিতর্কিত পোস্টারটি হলো—”৮০ টাকা কেজি চাল, ইউনূস কোন চ্যাটের বাল”। একজন নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ক্ষমতায় থাকার পরও যখন মানুষকে ৮০ টাকা দরে চাল কিনে খেতে হয়, তখন ভদ্রতার মুখোশ খুলে ফেলা ছাড়া জনতার আর কোনো উপায় থাকে না। এখানে ব্যবহৃত ‘চ্যাটের বাল’ শব্দবন্ধটি নিয়ে সুশীল সমাজে হয়তো নাসিকা কুঞ্চিত হতে পারে, কিন্তু শিল্পের বিচারে এটি হলো ‘ল্যাঙ্গুয়েজ অফ দ্য অপরেসড’ বা শোষিতের ভাষা। যখন পেটে ভাত থাকে না, তখন মানুষ আর অক্সফোর্ডের ডিকশনারি মেনে কথা বলে না। পোস্টারের চিত্রে আঁকা বৃদ্ধ ও বৃদ্ধার মুখের রেখাগুলোতে যে ডিটেইলিং বা খুঁটিনাটি কাজ করা হয়েছে, তা অনবদ্য। তাদের কোটরগত চোখ আর চোয়ালের হাড়গুলো বলে দিচ্ছে, মাইক্রোক্রেডিটের জাদুকর আসলে ম্যাক্রো-লেভেলে বা জাতীয় পর্যায়ে মানুষকে ভিখারি বানানোর প্রজেক্ট হাতে নিয়েছেন। এই পোস্টারটি ইউনুস সাহেবের আন্তর্জাতিক ইমেজের গালে এক চপেটাঘাত। এটি প্রমাণ করে যে, বিদেশি ডিগ্রির চেয়ে এক কেজি চালের ওজন অনেক বেশি।
নিরোর বাঁশি বনাম ইউনুসের দোতারা
“কলকারখানায় কাজ নাই, ইউনূস দোচার টাইম নাই” এই পোস্টারটি স্যাটায়ারের এক ধ্রুপদী উদাহরণ। রোম যখন পুড়ছিল, সম্রাট নিরো তখন বাঁশি বাজাচ্ছিল, এই ঐতিহাসিক রেফারেন্স বা অনুষঙ্গকে এখানে দেশীয় প্রেক্ষাপটে ‘চো*দা’ বা ‘দোচা’ দিয়ে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। ইউনুস সরকারের প্রধান যখন দেশের জ্বলন্ত সমস্যাগুলো রেখে বিদেশ সফর, সেমিনার আর ফটোসেশনে ব্যস্ত, তখন এই পোস্টারটি যেন আয়না হয়ে দাঁড়িয়েছে। পোস্টারে শ্রমিকদের যে অভিব্যক্তি ফুটিয়ে তোলা হয়েছে, তাতে মিশে আছে অসহায়ত্ব আর ক্রোধের মিশেল। টাইপোগ্রাফি বা ফন্টের ব্যবহারে এখানে এক ধরনের অস্থিরতা কাজ করছে, যা শ্রমিকদের মনের অস্থিরতাকেই রিপ্রেজেন্ট বা প্রতিনিধিত্ব করে। “কাজ নাই” আর “টাইম নাই” এই দুটি অংশের মাধ্যমে শিল্পী দেখিয়েছেন এক চরম প্যারাডক্স বা কূটাভাস। একদিকে উৎপাদন বন্ধ, অন্যদিকে দালালদের নির্লজ্জ ইউনূস বন্দনা, ১০ লক্ষ মানুষ যখন কাজ হারিয়ে বেকার তখন এইসব দালালি “দোচার” সময় তাদের নাই। এই পোস্টারটি কেবল অর্থনৈতিক দেউলিয়াত্ব নয়, বরং শাসকের নৈতিক দেউলিয়াত্বকেও নগ্ন করে দিয়েছে।
দড়ি টানাটানি: ক্ষমতার ভারসাম্যহীনতা
“দড়ি ধরে মারো টান, ইউনুস হবে খান খান” এই পোস্টারটিতে ফিজিক্স বা পদার্থবিজ্ঞানের সূত্র আর পলিটিক্স বা রাজনীতির সমীকরণকে এক করা হয়েছে। জনতার ঐক্যবদ্ধ শক্তিকে দেখানো হয়েছে। এখানে দড়িটি হলো ‘পাওয়ার ডায়নামিক্স’ বা ক্ষমতার মেরুকরণের প্রতীক। ইউনুস রেজম যে কাঁচের ঘরের মতো ভঙ্গুর, তা ‘খান খান’ শব্দটির মাধ্যমে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। গ্রাফিক্সে দড়ির টানের যে টেনশন বা টানটান উত্তেজনা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে, তা দর্শকের মনেও এক ধরনের অ্যাড্রেনালিন রাশ তৈরি করে। মনে হয়, এই বুঝি দড়ি ছিঁড়ল, এই বুঝি মসনদ উল্টে পড়ল। এখানে কোনো নির্দিষ্ট নেতার ছবি নেই, আছে আমজনতার মুখ। এটি বুঝিয়ে দিচ্ছে যে, এই আন্দোলন কোনো দলের নয়, এটি ‘মাস আপরাইজিং’ বা গণঅভ্যুত্থানের দিকে মোড় নিচ্ছে। ইউনুস সাহেবের তথাকথিত ‘রিফর্ম’ বা সংস্কার যে জনতার এক টানেই ধুলিসাৎ হয়ে যেতে পারে, সেই হুঁশিয়ারিই এখানে প্রধান উপজীব্য।
ইউনিফর্মের প্রতি নৈতিক আল্টিমেটাম
সিরিজের সবথেকে ঝুঁকিপূর্ণ এবং সাহসী কাজ হলো “পক্ষ নিলে রক্ষা নাই”। এখানে সরাসরি রাষ্ট্রীয় বাহিনী পুলিশ, বিজিবি এবং সেনাবাহিনীকে অ্যাড্রেস বা সম্বোধন করা হয়েছে। পোস্টারের ভিজ্যুয়ালে শিকল ছেঁড়ার যে নাটকীয়তা, তা অভাবনীয়। লাল আগুনের আভায় মানুষের চিৎকার করে শিকল ভাঙার দৃশ্যটি মনে করিয়ে দেয় যে, ভয়ের দেওয়াল একবার ভেঙে গেলে আর কোনো বন্দুকই কাজে আসে না। শিল্পী এখানে ইউনিফর্মধারীদের বিবেকের কাছে প্রশ্ন রেখেছেন। এটি কেবল হুমকি নয়, এটি একটি ভবিষ্যদ্বাণী। ইতিহাস বলে, জনতা যখন ক্ষেপে যায়, তখন কার বন্দুক কার দিকে ঘুরবে, তার কোনো গ্যারান্টি থাকে না। এই পোস্টারটি সেই ‘ক্রিটিক্যাল মোমেন্ট’ বা সন্ধিক্ষণকে ধরে রেখেছে, যেখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, তারা কি স্বৈরাচারের পাহারাদার হবে, নাকি জনতার সেবক হবে। গ্রাফিক্সে শিকলের প্রতিটি লিংকে যে ডিটেইল বা সূক্ষ্মতা, তা পরাধীনতার প্রতীক হিসেবে অত্যন্ত শক্তিশালী।
পিক্সেলের চেয়ে ভারী কিছু
কার্টুনুস ডেইলির এই পোস্টার সিরিজকে যদি কেবল স্যোশাল মিডিয়া কন্টেন্ট হিসেবে দেখা হয়, তবে ভুল হবে। এগুলো হলো এই সময়ের দলিল। ইউনুস রেজিমের স্বৈরাচারী আচরণের বিরুদ্ধে এগুলো এক একটি চার্জশিট। একজন শিল্পবোদ্ধা হিসেবে আমি বলব, এই পোস্টারগুলোতে যে আর্ট ডিরেকশন বা শিল্প নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, তা হারিয়ে যাবে না, ভবিষ্যতের বাংলাদেশেও এই সিরিজ নিয়ে আলাপ হবে। কিন্তু এর চেয়েও বড় কথা হলো এর ‘মেসেজ’ বা বার্তা। ইউনুস সাহেব হয়তো ভাবছেন, মিডিয়া কন্ট্রোল করে বা সাংবাদিকদের মুখ বন্ধ করে তিনি পার পেয়ে যাবেন। কিন্তু তিনি ভুলে গেছেন, ডিজিটাল যুগে দেওয়াল অফুরন্ত, আর কালি কখনো ফুরায় না। এই পোস্টারগুলো এখন মানুষের মোবাইলে মোবাইলে, ইনবক্স থেকে ইনবক্সে ঘুরছে।
এই সিরিজটি প্রমাণ করে যে, ইউনুস সরকারের পায়ের তলায় মাটি নেই, আছে কেবল কিছু বিদেশি বুলি আর ফাঁকা বুলি। “বাধা দিলে বাধবে লড়াই, আমরা কি আর ইউনুসরে ডরাই” এই লাইনটি এখন আর পোস্টারে সীমাবদ্ধ নেই, এটি এখন জাতীয় স্লোগানে পরিণত হওয়ার অপেক্ষায়। পরিশেষে বলা যায়, এই পোস্টার আর্টগুলো ইউনুস রেজিমের জন্য এক অশনি সংকেত। রঙ-তুলি আর গ্রাফিক্স ট্যাবলেট দিয়ে যে বড় রাজনৈতিক বিস্ফোরণ ঘটানো সম্ভব, কার্টুনুস ডেইলি হয়তো তার সূচনাটা করে দিল। স্বৈরাচার যত শক্তিশালীই হোক, শিল্পের সত্যের কাছে তাকে মাথা নত করতেই হয়। আর সেই সত্য হলো, জনতাই সার্বভৌম, কোনো নোবেল বিজয়ী তল্পিবাহক নয়।
#Cartunus Daily, #আমরা কি আর ইউনূসরে ডরাই, #ইউনুস বিরোধী পোস্টার, #ইউনুস হঠাও, #ইউনূস কোন চ্যাটের বাল, #ইউনূস চোদার টাইম নাই, #ইউনূস হবে খান খান, #কলকারখানায় কাজ নাই, #কার্টুনুস ডেইলি, #গ্রাফিক্যাল প্রতিবাদ, #জনরোষের পোস্টার, #ড. ইউনূস, #ডিজিটাল আর্ট আন্দোলন, #দড়ি ধরে মারো টান, #দৈনিক কার্টুনুস, #পক্ষ নিলে রক্ষা নাই, #পোস্টার ক্যাম্পেইন, #প্রতিবাদী আর্ট, #বাধা দিলে বাধবে লড়াই, #বিপ্লবী পোস্টার, #রাজনৈতিক গ্রাফিক্স, #স্বৈরাচার নিপাত যাক, #স্বৈরাচারী ইউনুস সরকার