গণভোট ঘিরে হ্যাঁ-না যুদ্ধ: বিষপানে আপত্তি নেই, বিএনপির বিরোধ সময়সূচিতে

গণভোট ঘিরে হ্যাঁ-না যুদ্ধ: বিষপানে আপত্তি নেই, বিএনপির বিরোধ সময়সূচিতে। The Yes-No War on the Referendum: For BNP, the Poison Isn't the Problem, the Timetable Is. গণভোট ঘিরে হ্যাঁ-না যুদ্ধ: বিষপানে আপত্তি নেই, বিএনপির বিরোধ সময়সূচিতে। The Yes-No War on the Referendum: For BNP, the Poison Isn't the Problem, the Timetable Is.

গণভোট ঘিরে সামাজিকমাধ্যমে হ্যাঁ না যুদ্ধ: জুলাই সনদে জামায়াতের অবস্থান স্পষ্ট, বিএনপি’র হাস্যকর লুকোচুরি

বিশেষ প্রতিবেদক, দৈনিক কার্টুনুস: দেশজুড়ে এক অভূতপূর্ব ডিজিটাল গৃহযুদ্ধের দামামা বেজে উঠেছে। রণাঙ্গনের নাম ফেসবুক, আর যুদ্ধাস্ত্র হলো ‘হ্যাঁ’ এবং ‘না’ লেখা দুইটি শব্দ। উপলক্ষ্য? ‘অপবিত্র জুলাই সনদ’ নামক একখানা সংবিধানবিরোধী দলিলের উপর গণভোট। এই সনদটিকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিকল্প মহৌষধ হিসেবে প্রচার করা হচ্ছে। তবে এই মহৌষধ সেবনের দিনক্ষণ বা তফসিল নিয়েই বেধেছে মূল গণ্ডগোল। একদল বলছে, এখনই এই বিষ সেবন করতে হবে, আরেক দল বলছে, শীতকালে করলে হজম ভালো হবে। কিন্তু সনদটি যে আদতে বিষ, সে বিষয়ে একপক্ষ গর্বিত আর অন্যপক্ষ লুকোচুরিতে ব্যস্ত।

এই মহাযুদ্ধের একপক্ষে অবস্থান নিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। তাদের অবস্থান স্পষ্ট, কোনো রাখঢাক নেই। যারা একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধের সরাসরি বিরোধিতা করে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সাথে হাত মিলিয়ে ৩০ লাখ বাঙালি হত্যার অংশ নিয়েছিল, তাদের কাছে এই ‘অপবিত্র জুলাই সনদ’ তো আকাশের চাঁদ হাতে পাওয়ার মতো। তারা এই অপবিত্র দলিলের পক্ষে বুক ফুলিয়েই মাঠে নেমেছে। তাদের পেজগুলো থেকে ‘হ্যাঁ বলুন’ পোস্টার এমনভাবে ছড়ানো হচ্ছে, যেন এটি কোনো হালাল পণ্য বিক্রির বিজ্ঞাপন। তাদের ভাবখানা এমন, এই ‘হ্যাঁ’ ভোটের মাধ্যমেই একাত্তরের পরাজয়ের প্রতিশোধ সম্পন্ন হবে। তাদের এই অবস্থানে কোনো দ্বিধা নেই, কারণ তারা যা, তা প্রকাশ করতে কখনোই লজ্জা পায়নি।

কিন্তু রণাঙ্গনের অপর প্রান্তে বীরদর্পে দাঁড়িয়ে থাকা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), যারা নিজেদের মুক্তিযুদ্ধের ঘোষকের দল বলে দাবি করে, সেই স্বাধীনতা যুদ্ধের বিরুদ্ধের ‘অপবিত্র জুলাই সনদ’ নিয়ে তাদের অবস্থান দেখলে মনে হয় তারা মুখে কুলুপ এঁটে এক ধরনের রাজনৈতিক ‘মিনিমিন’ খেলায় মেতেছে। তারা বলছে, ‘না!’ কিন্তু কিসে না? মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী এই ষড়যন্ত্রে? ৭২-এর সংবিধানবিরোধী এই প্রস্তাবে? নাহ! তাদের সব আপত্তি গণভোটের তারিখে

তারা বলছে, গণভোট অবশ্যই হতে পারে, তবে সেটা নির্বাচনের আগে নয়, নির্বাচনের দিন হতে হবে। তাদের মহাসচিব, প্রখ্যাত দিনক্ষণ বিশারদ জনাব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তার ফেসবুকে লিখেছেন, নির্বাচনের আগে গণভোট করাটা অপ্রয়োজনীয়, অযৌক্তিক এবং অবিবেচনা প্রসূত। তার কথায় এটা স্পষ্ট যে, বিবেচনা প্রসূত সময়ে, যৌক্তিক পরিবেশে এই গণভোট হতে তাদের কোনো আপত্তি নেই। অর্থাৎ, দেশের সার্বভৌমত্ব ও সংবিধানের বুকে ছুরি চালালে তাদের আপত্তি নেই, তবে ছুরিটা যেন ভোঁতা না হয় এবং সঠিক সময়ে চালানো হয় এটাই তাদের মূল দাবি। বিএনপির এই অবস্থান দেখে রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং বিশেষজ্ঞরা একযোগে বিষম খেয়েছেন। যে দল তাদের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষক বলে দাবি করে, সেই দল এখন স্বাধীনতার ভিত্তিকে অস্বীকারকারী এক দলিলের পক্ষে এমন নির্লজ্জ অবস্থান নিয়েছে!

রাজাকারের নাতিপুতিদের নিয়ে গঠিত নব্য পাকিস্তানপন্থী কিংস পার্টি এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক জনাব নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বিএনপির এই লুকোচুরি খেলা দেখে ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন, ‘হ্যাঁ’ ভোটের মাধ্যমে জন্ম নেওয়া বিএনপি যদি ‘না’ ভোটে অনড় থাকে, তবে তাদের রাজনৈতিক মৃত্যু ঘটবে ‘না’ ভোটের মধ্য দিয়ে। তার এই কথায় বিএনপির নেতারা গভীর চিন্তায় পড়েছেন। তারা এখন ভাবছেন, তাহলে কি ‘না’ বলাটাও ঝুঁকিপূর্ণ? এর চেয়ে কি লুকুচুরি বাদ দিয়ে উলঙ্গ হয়ে সরাসরি ‘হ্যাঁ’র পক্ষে অবস্থান নেওয়াই ভাল হতো, তা নিয়ে দলের সর্বোচ্চ পর্যায়ে গভীর আলোচনা চলছে বলে গোপন সূত্রে জানা গেছে।

এই হ্যাঁ-না’র ডিজিটাল কুস্তির মাঝে পড়ে সাধারণ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের, অসাম্প্রদায়িক চেতনার মানুষেরা পড়েছেন মহাফাঁপড়ে। মতিঝিলের এক প্রবীণ চা বিক্রেতা, বারেক মিয়া তার দোকানের সামনে বসে থাকা উৎসুক জনতার উদ্দেশ্যে বলেন, ‘ভাইসব, ঘটনাটা বুঝেন। চোর দুইজন। একজন (জামায়াত) খোলাখুলি কইতাছে, আমি এখনই সিন্ধুক ভাঙুম, সাহস থাকলে ঠেকা। আরেকজন (বিএনপি), যে নিজেকে বাড়ির কেয়ারটেকার দাবি করে, সে কইতাছে, না রে ভাই, এখন ভাঙলে লোকজন দেখে ফেলবে, বাড়ির কর্তা ঘুমাইলে তারপর ভাঙুম। কিন্তু দুইজনই যে সিন্ধুক ভাঙতে একমত, হেইডা কি আপনারা বুঝেন নাই?’

বারেকের কথায় উপস্থিত জনতা মাথা নাড়ে। তারা বুঝতে পারছে, জামায়াত হলো সেই ডাকাত যে প্রকাশ্যে ডাকাতি করতে চায়। আর বিএনপি হলো সেই ধুরন্ধর সহযোগী, যে একটু সুযোগ বুঝে কাজ সারতে চায়। কিন্তু দিন শেষে উভয়ের লক্ষ্যই এক – মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশের সিন্ধুক খালি করা।

এই বিতর্কের আগুনে ঘি ঢেলেছেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন। তিনি বলেছেন, এই গণভোট আর নির্বাচন নিয়ে দীর্ঘসূত্রিতার কারণে দেশের স্থিতিশীলতা বিপন্ন হচ্ছে। তার কথা শুনে হ্যাঁ-না শিবিরের নেতারা মুচকি হেসেছেন। তাদের এক মুখপাত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আগে দেশের আদর্শ ঠিক হবে, নাকি অর্থনীতি? আমরা আদর্শ প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে আছি। দুই-চার বছর অর্থনীতি না হয় আইসিইউতে থাকলো!’

সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত, ‘গণভোট ঘিরে হ্যাঁ-না যুদ্ধ’ জয়ে উভয় পক্ষই নিজ নিজ পোস্টে লাইক-কমেন্টের সংখ্যা বাড়িয়ে চলেছে। এক পক্ষ আরেক পক্ষকে ‘দেশের শত্রু’ বলে গালি দিচ্ছে। অথচ সাধারণ মানুষ আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে দেখছে, একদলের জার্সিটা প্রকাশ্যে পাকিস্তানের, আর অন্যদল বাংলাদেশের জার্সি গায়ে দিয়ে পাকিস্তানের হয়ে খেলার পাঁয়তারা করছে। তারা সবাই মিলে ‘অপবিত্র জুলাই সনদ’ নামক একটি আত্মঘাতী গোল দেওয়ার জন্য প্রস্তুত। একজন খোলাখুলি গোল দিতে চায়, আরেকজন চায় অফসাইডের সুযোগ নিয়ে গোল করতে, কিন্তু দিনশেষে বলটা যে বাংলাদেশের জালেই জড়াবে, তা নিয়ে কারো সন্দেহ নেই।

#, #, #, #, #, #, #, #, #, #, #, #, #, #, #, #, #, #, #, #, #, #, #, #, #

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *