কে পেল আকাশ, কে পেল ভাগাড়? ‘গোলাম আজমের বাংলা’ ইস্যুতে রায় জনগণের!

কে পেল আকাশ, কে পেল ভাগাড়? 'গোলাম আজমের বাংলা' ইস্যুতে রায় জনগণের! | Who Got the Sky, Who Got the Landfill? The People's Verdict on the 'Ghulam Azam's Bangla' Issue!কে পেল আকাশ, কে পেল ভাগাড়? 'গোলাম আজমের বাংলা' ইস্যুতে রায় জনগণের! | Who Got the Sky, Who Got the Landfill? The People's Verdict on the 'Ghulam Azam's Bangla' Issue!

বাংলার আকাশে-বাতাসে কান পাতলেই শোনা যায় এক অমর পঙক্তিমালা, “যতদূরে যাও পাখি, দেখা হবে ফের, স্বাধীন ঐ আকাশটা শেখ মুজিবের।” কিন্তু হায়! এ কোন কাল পড়িলো! দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে যখন স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি মহোল্লাসে নিজেদের আখের গোছাতে ব্যস্ত, ঠিক তখনই তারা হাত বাড়িয়েছে ইতিহাসের পাতা থেকে শুরু করে কবিতার খাতা পর্যন্ত। সদ্য ক্ষমতা দখলকারী নব্য রাজাকারদের ‘ইতিহাস ও সংস্কৃতি পুনরুদ্ধার সেলের’ স্বঘোষিত মহাপরিচালক এবং সংস্কৃতি উপদেষ্টা,  আল্লামা বউ ব্যবসায়ী হুজুরে কেবলা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী  এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে সজোরে ঘোষণা দেন, “ভাইসব ও ভগিনীগণ, এবং অন্যান্য আজব প্রাণিগণ! বহু বছরের ঘাম ঝরানো গবেষণায় আমাদের আঁতেল টিম আবিষ্কার করেছে যে, ‘স্বাধীন ঐ আকাশটা শেখ মুজিবের’ – এই কথাটা আসলে একটা ঐতিহাসিক টাইপিং মিস্টেক! আসলে হবে, ‘স্বাধীন ঐ আকাশটা গোলাম আযমের!'” বউ ব্যবসায়ী হুজুরে কেবলার এই ‘ঐতিহাসিক’ ঘোষণার পর পরই সম্মেলন কক্ষে উপস্থিত চ্যালা-চামুণ্ডারা ‘মারহাবা, মারহাবা’ ধ্বনিতে ফেটে পড়ে। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রেসক্লাবের এক পরিচ্ছনা কর্মি কার্টুনুস ডেইলিকে জানায়, “এই ঘোষণার ধাক্কায় প্রেস ক্লাবের সামনের কাঠাল গাছে বসা সব কাক নাকি একযোগে কা-কা করতে করতে অজ্ঞান হয়ে নিচে পড়ে গিয়েছিল।”

সংস্কৃতি উপদেষ্টার এই ‘আকাশ ফাটানো’ সত্যকে আরও মজবুত করতে মঞ্চে হাজির করা হয় ইতিহাসের আন্তর্জাতিক পাইকারি বিক্রেতা, ডিজিটাল দাওয়াতুল ইন্টারনেটের আমির, ভার্চুয়াল রণাঙ্গনের বীরউত্তম, কি-বোর্ড কুতুব, ফেসবুকীয় জ্ঞানসমুদ্রের স্বঘোষিত টাইটানিক, লাইক-কমেন্টের সাইক্লোন, পিনাকী ‘সবজান্তা তিন ইঞ্চি’ ভট্টাচার্যকে। তিনি তার তৈলাক্ত মুখে আরও তেল মেখে বললেন, “আপনাগো সংস্কৃতিওয়ালা বড় ছাব, উনি তো এক্কেরে কলিজা ঠান্ডা করা খাঁটি কতাখান কইচেন বাহে! পরপেছার গোলাম আযম ছাব! আহা! উনার লাহান এমন ‘আসমানী কলিজার’ আদমি আর কয়ডা দ্যাখা যায়? উনার নামে আসমানখান যদি পট্টা করি না দেওয়া হোতো, তাইলে তো সৃষ্টির উপুরেই এক্কেরে বেকায়দা জুলুম করা হোতো, হামরা কি বুঝি না? উনার যে দ্যাশের লাইগ্যা পরাণডা পুড়তো, বিশেষ করি হেই আস্ত পাকিস্তানটার জন্যি উনি যে কাইন্দনড্যা কান্দছিলেন, আর বাংলা কতার উপুরে উনার যে দরদ উথলায়া পড়তো… আরে বাপু কতা কও না ক্যা! এইরাম ‘দেশপ্রেমের’ জন্যি খালি আসমান ক্যা, এই গোটা দুনিয়াদারি, আসমান-জমিন-পাতাল সব উনার নামে খারিজা করি দেওয়াই উচিত আছিল!”

এইদিকে, এই ‘নবআবিষ্কৃত’ কবিতার লাইনের সমর্থনে দেশের ‘সংস্কৃতিবান’ মহলও নাকি একাট্টা। সাইমুম শিল্পীগোষ্ঠীর পরিচালক, আল্লামা জাহিদুল ইসলাম এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, “আহা! কী চমৎকার মিল! গোলাম আযমে আকাশ! শুনলেই মনটা কেমন জানি ‘পাক পাক’ হয়ে যায়! যারা এতদিন ভুল ব্যাখ্যা করে বঙ্গবন্ধুকে এই আকাশের মালিকানা দিয়ে রেখেছিল, তাদের বিচার হওয়া উচিত।” তিনি আরও জানান, এই উপলক্ষে তারা একটি ‘আযমের আকাশ’ শীর্ষক গান প্রতিযোগিতার আয়োজন করতে যাচ্ছে। প্রতিযোগিতার জন্য গানের মূল বিষয়বস্তু হবে – ‘গোলাম আজমের উর্দু প্রেম ও অখণ্ড পাকিস্তানের জন্য তার বিরহের সুর‘। গানের কথায় বাংলা শব্দের ব্যবহার যথাসম্ভব কম রাখার জন্য বিশেষ পুরস্কারের ঘোষণাও দেওয়া হয়েছে।

কিন্তু বাধ সেধেছে আমজনতা। বিশেষ করে যারা ইতিহাসের অলি-গলিঘুপচি ঘেঁটে দু’চার লাইন সত্য জেনে ফেলেছেন, তাদের মধ্য থেকে এক নতুন স্লোগান ভাইরাসের মতো ছড়িয়ে পড়েছে। পাড়ার রক থেকে শুরু করে ফেসবুকের ওয়াল পর্যন্ত ছেয়ে গেছে সেই লাইন, “যতদূরে যাও শূকর, দেখা হবে ফের, স্বাধীন এই ভাগারটা গোলাম আযমের!” কে বা কারা এই লাইনের উদ্ভাবক, তা নিয়ে গবেষণা চলছে। তবে ‘নুনুস ডেইলি’ নামক এক ফেসবুক পেজ থেকে এই লাইনটি প্রথম পোস্ট করা হয় বলে জানা যায়। সাথে যুক্ত করা হয়েছে একটি কার্টুন, যেখানে দেখা যাচ্ছে, গোলাম আযম এক বিশাল আবর্জনার স্তূপের উপর দাঁড়িয়ে একপাল হৃষ্টপুষ্ট শূকরছানাকে হাত নেড়ে তাদের ‘স্বাধীন ভাগাড়ে’ স্বাগত জানাচ্ছে।

এদিকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধকে কেন্দ্র করে ৭০টিরও বেশি বই এর লেখক ইকবাল কবির কার্টুনুস ডেইলির প্রতিবেদককে বলেন  “এই যে গোলাম আজমকে নিয়ে এত টানাটানি, তার ‘আকাশপ্রমাণ’ মহত্ত্বের কিছু নমুনা তো আমাদের জানাই আছে! তিনি নাকি ছিলেন ‘ভাষাসৈনিক’! তা কোন ভাষার সৈনিক ছিলেন তিনি, বাংলা না উর্দু?। তার পেয়ারের পত্রিকা ‘দৈনিক সংগ্রাম’ যখন লেখে যে, সেনাবাহিনী শহীদ মিনার ধ্বংস করে ‘মসজিদ গড়ে শহিদদের প্রতি যথার্থ সম্মান প্রদর্শনের চেষ্টা করেছেন জেনে দেশবাসী খুশি হয়েছে’, তখন তার ভাষা ও শহীদপ্রীতি দুটোই পরিষ্কার হয়ে যায়! ১৯৭১ সালে তার ভূমিকা তো আরও ‘আকাশছোঁয়া’! শান্তি কমিটি গঠন, আল-বদর, আল-শামস বাহিনী তৈরিতে তার অবদান, মুক্তিযোদ্ধাদের ‘দুষ্কৃতকারী’ আখ্যা দিয়ে তাদের অস্তিত্ব বিলোপের আহ্বান, এসবই কি তাকে আকাশের মালিকানা দেয়? দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকা যখন আল-বদরকে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ‘সাক্ষাৎ আজরাইল’ বলে প্রশংসা করে, তখন সেই আকাশের রং কেমন হবে, তা সহজেই কল্পনা করা যায়। তাই আজ যখন নতুন করে গোলাম আযমের নামে আকাশের ইজারা দেওয়ার পাঁয়তারা চলছে, তখন জনগণ কিন্তু ঠিকই চিনে নিয়েছে কার জন্য আকাশ আর কার জন্য ভাগাড়। কারণ শূকরছানারাও ভালোই জানে, আবর্জনার স্তূপই তাদের আসল ঠিকানা, নীল আকাশ নয়। আর সেই ভাগাড়ের মালিকানা যদি গোলাম আযমের নামে লিখে দেওয়া হয়, তাতে খুব বেশি আপত্তিও জানাবে না জনগণ।”

কার্টুনুস ডেইলির প্রাপ্ত সর্বশেষ খবর অনুযায়ী, ভাগাড় উন্নয়ন কর্পোরেশনের সদ্য নিযুক্ত চেয়ারম্যান, আলহাজ সান্ডা বরকত ঘোষণা দিয়েছেন, গোলাম আযমের নামে যদি কোন ভাগাড় উৎসর্গ করে সরকার, তাহলে ভাগাড়টিকে একটি আন্তর্জাতিক মানের ‘ঐতিহাসিক আবর্জনা পর্যটন কেন্দ্র’ হিসেবে গড়ে তোলা হবে। সেখানে আগত শূকরছানাদের জন্য বিশেষ ছাড়ের ব্যবস্থাও রাখা হবে।

By Cartunus Daily

Cartunus Daily delivers cartoons that add a touch of humor and perspective to the latest happenings in Bangladesh. Our goal is simple: to make you smile. We’re not connected to any brand, business, or public figure—just here for some fun & fresh insights.