তুমি কি আমাকে লাগাতে দিবা? ‘লাগানো’ প্রস্তাবের তদন্তে প্লেটো-কামসূত্র ঘাটছে এনসিপির উচ্চপর্যায়ের কমিটি।
নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে যখন রাষ্ট্র সংস্কার, জাতীয় ঐক্যমত কমিশন আর অর্থনৈতিক সংকট নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার চলছিল, ঠিক তখনই সকল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে আছড়ে পড়ল নতুন এক দার্শনিক প্রশ্ন— “তুমি কি আমাকে লাগাতে দিবা?”। জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-র অন্দরে উত্থাপিত এই যুগান্তকারী প্রশ্নটি এখন রাজপথের স্লোগান, টকশোর শিরোনাম এবং ফেসবুক আদালতের প্রধান বিচার্য বিষয় হয়ে উঠেছে। এই এক প্রশ্নেই থরথর করে কাঁপছে নতুন রাজনীতির ভবিষ্যৎ, আর দলের নেতারা পড়েছেন মহাচিন্তায়।
এই ঐতিহাসিক প্রস্তাবের উত্থাপক, জুলাই ষড়যন্ত্রের মহান কামলা, পরিবর্তনের অগ্রদূত, জাতীয় রাজনীতিতে ‘লাগানোর’ গুরুত্ব অনুধাবনকারী একমাত্র দার্শনিক ও এনসিপির যুগ্ম লাগায়ক সারোয়ার তুষারের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি দলের এক নারী কর্মীকে সাংগঠনিকভাবে আরও ঘনিষ্ঠ করার মানসে এই প্রস্তাব দেন। তবে তুষারপন্থী বিশ্লেষকদের মতে, ইহা কোনো যৌন প্রস্তাব নহে, বরং দুই বিপ্লবী আত্মার আদর্শিক ফিউশন ঘটানোর এক মেটাফিজিক্যাল আহবান।
ঘটনার অপর দিকে অবস্থান করছেন প্রয়াত উপদেষ্টার সাবেক পুত্রবধূ ও জ্বলন্ত আগুনের উপর দিয়ে হেঁটে আসা নারী, রেকর্ডিং-এ পারদর্শী ও ফাঁসকরণে অদ্বিতীয়া, ২৬ জন কাজের লোকের সাবেক মালকিন ও সতীত্বের পরীক্ষায় স্বঘোষিত গোল্ড মেডালিস্ট নীলা ইস্রাফিল। তার অডিও রেকর্ডার থেকে নিঃসৃত এই আলাপন এখন রাজনীতির উত্তপ্ত কড়াইয়ে ঘি ঢেলে দিয়েছে।
এ ব্যাপারে কারণ দর্শানোর নোটিশ হাতে পেয়ে বিমর্ষ তুষার আমাদের প্রতিবেদকের সাথে একান্তে আলাপকালে জানান, ‘আমি এক গভীর রাজনৈতিক চক্রান্তের শিকার। আমি আর্টসের ছাত্র, রূপক আর উপমা দিয়ে কথা বলাই আমার অভ্যাস। আমি আসলে জানতে চেয়েছিলাম, আপনি কি আপনার বিপ্লবী চেতনাকে আমার বিপ্লবী চেতনার সাথে লাগাতে দেবেন? একটি আদর্শের সাথে আরেকটি আদর্শের সংযোগ ঘটাতে চেয়েছিলাম। কিন্তু উনারা বিষয়টাকে বায়োলজিক্যাল পর্যায়ে নামিয়ে এনেছেন। এটা আমার বিরুদ্ধে চরিত্রহননের ক্যাম্পেইন ছাড়া আর কিছুই না।’
তিনি আরও যোগ করেন, ‘আমার তিন মাস আগের ব্যক্তিগত কথোপকথন কাটছাঁট করে পরিপ্রেক্ষিতহীনভাবে অনলাইনে ছেড়ে দিয়ে আমাকে অপদস্থ করার মধ্যে কোনো গৌরব নাই। একিলিস হেক্টরকে বধ করেও সম্মান দেখিয়েছিলেন। আর আমার রাজনৈতিক বিরোধীরা আমার ব্যক্তিগত আলাপকে জাতীয় ইস্যু বানাচ্ছে। আমি ভুলের ঊর্ধ্বে না, তবে আমার নামে ছড়ানো স্ক্রিনশটগুলো ভুয়া। আমি এখন আরও পরিশীলিত হওয়ার চেষ্টা করছি।’
এদিকে, এনসিপির প্রধান কার্যালয়ে এক থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। দলের কিংকর্তব্যবিমূঢ় আহ্বায়ক ও শৃঙ্খলা কমিটির সাইলেন্ট মোড পর্যবেক্ষক নাহিদ ইসলামকে উদ্ভ্রান্তের মতো পায়চারি করতে দেখা গেছে। তিনি দলের কর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন, এখন থেকে একে অপরের সাথে কথা বলার সময় ‘লাগানো’ শব্দটি সম্পূর্ণ বর্জন করতে হবে। এমনকি দেয়ালে পোস্টার লাগানোর সময়ও কর্মীদের ‘পোস্টার সাঁটানো’ শব্দটি ব্যবহার করতে বলা হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলের এক নেতা জানান, ‘নাহিদ ভাই খুব বিপদে আছেন। কালকে এক কর্মী এসে জিজ্ঞেস করেছিল, ভাই আজকের মিটিংয়ের অ্যাজেন্ডা কি দলের সংগঠনে লাগানো হয়েছে? এই কথা শুনেই নাহিদ ভাই জ্ঞান হারান। পরে মাথায় পানি ঢেলে তাকে জাগিয়ে তোলা হয়।’
এই সংকটময় মুহূর্তে মুখ খুলেছেন রাজনৈতিক অঙ্গনের নারীদের এভেইলেবিলিটি বিষয়ক গবেষক শেখ তাসনিম আফরোজ ইমি। তিনি তার ফেসবুক পোস্টে বলেন, ‘সমস্যাটা এপ্রোচে। রাজনৈতিক অঙ্গনের নারীদেরকে এভেইলএবল মনে করাটা সমস্যা। নিজের যোগ্যতার প্রমাণ দিতে আলফা মেলদের ‘ফেভারিট’ হওয়ার সংস্কৃতি বদলাতে হবে। নেতৃত্ব দেওয়ার যোগ্যতার চাইতে ফ্লার্টিং স্কিল যদি যোগ্যতার মানদণ্ড হয় তাহলে কখনোই পরিবর্তন আসবে না।’ তার এই পোস্টে লাইক-কমেন্টের বন্যা বয়ে গেলেও, দলের কর্মীরা নিজেদের মধ্যে বলাবলি করছেন, ‘আগে তো লাগানোর প্রস্তাবের সুরাহা হোক, তারপর এভেইলেবিলিটি নিয়ে ভাবা যাবে।’
অন্যদিকে, ঘটনার কেন্দ্রবিন্দু নীলা ইস্রাফিল এক সংবাদ সম্মেলনে হুঙ্কার দিয়ে বলেন, ‘আমি জ্বলন্ত আগুনের উপর দিয়ে হেঁটে আসা চরিত্র। আমি লেক্সাস ছেড়েছি, ২৬ জন কাজের লোকের মায়া ত্যাগ করেছি, শ্বশুরের বিভৎস চেহারা দেখেছি, ১৯টা মামলা মোকাবিলা করেছি, কিন্তু এমন ‘লাগানোর’ প্রস্তাব দেখিনি। এই প্রস্তাব আমার সতীত্বের পরীক্ষার ফাইনাল এক্সাম ছিল।’ তিনি আরও বলেন, ‘তুষার আমাকে ডিবির ভয় দেখিয়েছিল, বলেছিল ডিবি নাকি তাকে আমার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করেছে আর সে বলেছে আমি তার গার্লফ্রেন্ড। আমি তো তখনই বুঝেছিলাম, ডাল মে কুছ কালা হ্যায়। তাই নিরাপত্তার স্বার্থে কল রেকর্ড করি। পরে সেই অডিও মানবাধিকারকর্মী লেনিন ভাই ও সাংবাদিক সায়ের ভাইকে দিয়ে রাখি, যেন আমার কিছু হলে তারা জাতির সামনে সত্য তুলে ধরতে পারেন।’
এই ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর এনসিপির অভ্যন্তরে গঠিত হয়েছে এক উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি। কমিটির প্রধান কাজ হলো ‘লাগানো’ শব্দটির সাংগঠনিক, রাজনৈতিক, দার্শনিক ও শারীরিক তাৎপর্য খুঁজে বের করা। কমিটির এক সদস্য নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, ‘আমরা খুবই কঠিন দায়িত্ব পেয়েছি। আমরা বিভিন্ন অভিধান, প্লেটোর রিপাবলিক থেকে শুরু করে কামসূত্র পর্যন্ত ঘেঁটে দেখছি। তুষার ভাইয়ের প্রস্তাবটি কোন ক্যাটাগরিতে পড়ে, তা নির্ধারণ করা জরুরি। এটা কি নিছকই ‘কুপ্রস্তাব’ নাকি ‘গভীর রাজনৈতিক দর্শন’—এই প্রশ্নের উত্তর না পাওয়া পর্যন্ত নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন অধরাই থেকে যাবে।’
এই পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন এনসিপির নারী নেত্রীরা। বিশেষ করে দলের যুগ্ম আহ্বায়ক তাজনূভা জাবিনকে নিয়ে কুৎসিত ট্রল করা হচ্ছে। যদিও তিনি বারবার বলছেন, অডিওর নারী তিনি নন, কিন্তু কে শোনে কার কথা! শোনা যাচ্ছে, এখন এনসিপির যেকোনো নারী নেত্রীকে ফোন ফোন দিলেই নেত্রীরা ফোন কানে লাগানোর আগেই বলছেন, ‘দয়া করে লাগানোর কথা বলবেন না, অন্য কোড ওয়ার্ড ব্যবহার করেন।’
সর্বশেষ পাওয়া খবরে জানা গেছে, সারোয়ার তুষার তার ফেসবুক পোস্টে নিজেকে আরও পরিশীলিত করার ঘোষণা দেওয়ার পর একটি পার্সোনালিটি ডেভেলপমেন্ট কোর্সে ভর্তি হয়েছেন। সেখানে তাকে শেখানো হচ্ছে, কীভাবে ‘লাগানো’ শব্দটি ব্যবহার না করে মনের ভাব প্রকাশ করা যায়। তার ঘনিষ্ঠ সূত্র জানিয়েছে, তিনি এখন ‘তুমি কি আমাকে লাগাতে দিবা’-র পরিবর্তে বলছেন, ‘আমরা কি পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে একটি সমন্বিত ও সংযুক্ত ভবিষ্যৎ নির্মাণ করতে পারি?’ যদিও এই নতুন বাক্য শুনে তার কোচ তাকে আরও সহজবোধ্য হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। দেশের আপামর জনতা এখন এনসিপির তদন্ত কমিটির রিপোর্টের দিকে তাকিয়ে আছে। জাতি জানতে চায়, নতুন রাজনীতি কি শেষ পর্যন্ত ‘লাগাতে’ পারবে, নাকি শুরুতেই এর ফিউজ উড়ে যাবে!