জুলাই ষড়যন্ত্রের রক্তমাখা ‘উপহার’ ও ড. ইউনূসের উল্লাস: কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী, রংপুরের কসাই ও ১৪শ’ বাঙালির হত্যাকারী এ. টি. এম. আজহারুল ইসলামের মুক্তিতে ‘পূর্ব পাকিস্তান’-এর স্বপ্নে বিভোর জাতিদ্রোহীরা!
কার্টুনুস ডেইলি প্রতিবেদক, ঢাকা: অবশেষে সকল প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে কারাগার থেকে মুক্তি লাভ করেছেন একাত্তরের রণাঙ্গনের মহান যুদ্ধাপরাধী, আলবদর বাহিনীর রংপুর শাখার প্রতিষ্ঠাতা কমান্ডার, টাউন হলের নারী নির্যাতন কেন্দ্রের স্বপ্নদ্রষ্টা, ঝাড়ুয়ার বিল ও দমদম ব্রিজের গণহত্যার মহানায়ক, মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত কসাই এটিএম আজহারুল ইসলাম। তার এই মুক্তিতে বাংলাদেশে আনন্দের বন্যা বয়ে না গেলেও বন্ধুরাষ্ট্র পাকিস্তানে ব্যাপক ভোজের আয়োজন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পাকিস্তানের জাতীয় ভোজ ও আনন্দ মন্ত্রণালয়।
শুক্রবার এক বর্ণাঢ্য ও আবেগঘন পরিবেশে কারাগারের ফটক থেকে আজহারুল ইসলামকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়ে বরণ করে নেন বর্তমান সরকারের উপদেষ্টাদের একটি বিশেষ প্রতিনিধি দল ও পাকিস্তানপন্থী নব্য রাজাকারদের আঁতুড়ঘরে জন্ম নেওয়া জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনপিসি) নেতারা। এ সময় তাকে দেখে উপস্থিত সকলে কান্নায় ভেঙে পড়েন এবং সমস্বরে বলতে থাকেন, “তুমি কে? আমি কে? রাজাকার, রাজাকার।” উত্তরে সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধী আজহারুল ইসলামও অশ্রুসজল চোখে বলেন, “তোমরাও আমার, আমিও তোমাদের। আলহামদুলিল্লাহ, জুলাই সফল হয়েছে।”
কারাফটকে আয়োজিত এক সংক্ষিপ্ত সংবাদ সম্মেলনে এই মুক্তির জন্য জুলাই-আগস্টের স্নাইপার ষড়যন্ত্রকে ধন্যবাদ জানান শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অশান্তির অগ্রদূত, ক্ষুদ্রঋণের আড়ালে মহাজনী কারবারের প্রবর্তক এবং বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম শ্রেষ্ঠ স্বৈরশাসক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, “আজ আমাদের আনন্দের দিন, ইতিহাসের ভুল সংশোধনের দিন। ১৯৭১ সালে কিছু অতি উৎসাহী ভারতীয় দালাল ঝামেলা না করলে আজ আমরা পাকিস্তানের অংশ হিসেবে শান্তিতেই থাকতাম। আজহার ভাইয়ের মতো পাকপ্রেমিকদের দীর্ঘকাল কারাগারে আটকে রেখে যে পাপ করা হয়েছে, আমরা তার প্রায়শ্চিত্ত করছি।” হুহু করে কেঁদে উঠে ড. ইউনূস আরও বলেন, “আমার স্নাইপার ভাইয়েরা, রাজাকারের নাতিপুতিরা যদি জীবন বাজি রেখে জুলাই মাসে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে না দিত, তবে আজহার ভাইয়ের মতো এমন একজন জাতীয় বীরকে আমরা মুক্ত করতে পারতাম না। তারা শুধু আমাকে ক্ষমতায় বসায়নি, তারা একাত্তরের মহান রাজাকারদেরও বিজয়ী করেছে। এজন্য আমি বঙ্গবন্ধুর ৩২ নম্বরের ভাঙা বাড়িটিতে একটি ‘জুলাই স্মৃতিস্তম্ভ’ নির্মাণের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি।”
এদিকে, মুক্তি পেয়েই নিজের পুরোনো স্মৃতি রোমন্থন করতে শুরু করেন এটিএম আজহারুল ইসলাম। সাংবাদিকদের সামনে আবেগাপ্লুত হয়ে তিনি বলেন, “মানুষ খালি ঝাড়ুয়ার বিলের গণহত্যার কথা বলে। মাত্র তো ১৪০০ লোক মেরেছিলাম। তখন যদি জানতাম এই পূর্ব পাকিস্তানটা নাস্তিক আর মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে চলে যাবে, তাহলে আল্লাহর কসম, একটাকেও জিন্দা রাখতাম না।”
এ সময় ইতিহাস ও সংস্কৃতি পুনরুদ্ধার সেলের’ স্বঘোষিত মহাপরিচালক এবং সংস্কৃতি উপদেষ্টা, আল্লামা বউ ব্যবসায়ী হুজুরে কেবলা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী তাকে সান্ত্বনা দিয়ে বলেন, “ভাইজান, আপসোস করবেন না। যা হওয়ার হয়ে গেছে। এখন আবার নতুন করে কাজ শুরু করতে হবে। আপনার অভিজ্ঞতা আমাদের পাথেয়।”
এসময় নিজের যৌবনের স্মৃতিচারণ করে একাত্তরের এই লম্পট বলেন, “আহারে, কী দিন ছিল! রংপুর টাউন হলটাকে আমরা বানিয়েছিলাম একটা সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সেরা সেরা নারীদের ধরে এনে সেখানে পাকিস্তানি অফিসারদের মনোরঞ্জনের ব্যবস্থা করতাম। এতে দুই দেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক বিনিময় হতো, ভ্রাতৃত্বের বন্ধন দৃঢ় হতো। আর ওরা এটাকে বলে ধর্ষণ! আরে বাবা, সংস্কৃতি না বুঝলে যা হয়! এখন তো শুনি টাউন হল খালি পড়ে আছে। ভাবছি, সরকারের কাছে আবেদন করে ওটাকে আবার আগের মতো একটি পূর্ণাঙ্গ ‘সাংস্কৃতিক বিনিময় কেন্দ্র’ হিসেবে চালু করব। উপদেষ্টা সাহেবরা কি বলেন?”
উপদেষ্টারা সমস্বরে “জি জি, খুব ভালো প্রস্তাব” বলে চিৎকার করে উঠলে আজহারুল ইসলাম আরও উৎসাহিত হয়ে বলেন, “আমার নেতৃত্বে আলবদর বাহিনীর ৭০ জন সদস্য কী পরিশ্রমটাই না করেছে! কারমাইকেল কলেজের ওই নাস্তিক প্রফেসরগুলাকে যখন দমদম ব্রিজের ওপর দাঁড় করিয়ে ব্রাশফায়ার করি, তখন মনে হচ্ছিল যেন বেহেশতের দরজা খুলে গেছে। আহা! সেই শব্দ, সেই রক্তের ফোয়ারা! আজকের তরুণেরা তো এসবের মর্মই বুঝবে না।”
এ পর্যায়ে জাতীয় নাগরিক পার্টির মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল), কায়েদে আজম জিন্নাহর হারানো ভাবশিষ্য, গণতন্ত্রকে বাতুলতা আখ্যাদানকারী দার্শনিক এবং আম-জনতার ভোটকে সময়ের অপচয় ঘোষণাকারী আল্লামা হাসনাত আব্দুল্লাহ এগিয়ে এসে আজহারের হাতে একটি নতুন পাকিস্তানি পতাকা তুলে দিয়ে বলেন, “হুজুর, এই নিন। আপনার সেই প্রিয় পতাকা। ত্রিশ লক্ষ ভারতীয় দালালের রক্তে ভেজা বাংলার মাটিতে আবার আমরা এই পতাকা উড়াব। আর কোনো মুক্তিযোদ্ধা বা তাদের বংশধরেরা এই দেশে কথা বলতে পারবে না। বললেই আমরা তাদের ‘স্বৈরাচারের দালাল’ বলে জেলে ভরে দিব, যেমনটা আমরা ৫ই আগস্টের পর থেকে করে আসছি।”
এই কথায় উল্লাসিত হয়ে আজহারুল ইসলাম বলেন, “একাত্তরে আমরা আমাদের কাজ সমাপ্ত করতে পারিনি, কিন্তু তোমরা, রাজাকারের নাতিপুতিরা, পেরেছো। সাবাশ! বাপের বেটারা! আমাদের অপূর্ণ কাজ তোমরা পূর্ণ করছে। তবে আমার একটা দুঃখ রয়েই গেল। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে সপরিবারে হত্যার পর আমি সৌদি আরব থেকে দেশে ফিরে এসেছিলাম। ভেবেছিলাম এবার বুঝি সব ঠিক হবে। কিন্তু জিয়াউর রহমান সাহেব আমাদের রাজনীতিতে ফেরালেও ঠিকমতো যত্নআত্তি করেননি। এখন ড. ইউনূস সাহেব সেই দায়িত্ব নিয়েছেন। আল্লাহ উনাকে দীর্ঘজীবী করুন এবং আরও বেশি করে প্রকৃত ইতিহাস জনগণের কাছে তুলে ধরার তৌফিক দিন।”
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত এক ঘাড়তেড়া সাংবাদিক এসময় আজহারুল ইসলামকে প্রশ্ন করেন, “আপনার বিরুদ্ধে তো ১৪ জন বীরাঙ্গনাকে ধর্ষণের অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছিল এবং আদালত আপনাকে ২৫ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছিল। এ ব্যাপারে আপনার অনুভূতি কী?”
প্রশ্নের উত্তরে খ্যাক খ্যাক করে হেসে উঠে আজহারুল বলেন, “অনুভূতি খুবই ভালো। আসলে সংখ্যাটা আরও অনেক বেশি ছিল, প্রসিকিউশন প্রমাণ করতে পারেনি। বীরাঙ্গনা! কী সুন্দর নাম, তাই না? শেখ সাব তাদের এই উপাধি দিয়েছিলেন। আমরা তো তাদের সেই উপাধি অর্জনে সহায়তা করেছি মাত্র। তাদের উচিত আমাদের ধন্যবাদ জানানো।”
সংবাদ সম্মেলন শেষে সরকারের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয়, এটিএম আজহারুল ইসলামকে ‘জাতীয় ইতিহাস ও গণহত্যা বিষয়ক উপদেষ্টা’ পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তার প্রথম কাজ হবে পাঠ্যপুস্তক থেকে মুক্তিযুদ্ধের ‘মিথ্যা’ ইতিহাস মুছে ফেলে সেখানে আলবদর, রাজাকার ও পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বীরত্বগাঁথা অন্তর্ভুক্ত করা এবং ঝাড়ুয়ার বিলের মতো স্থানগুলোকে ‘জাতীয় সংহতি উদ্যান’ হিসেবে ঘোষণা করা। এই ঘোষণায় উপস্থিত জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতারা “তুমি কে? আমি কে? রাজাকার, রাজাকার” স্লোগানে ৬০০ স্কয়ার ফিটের সংবাদ সম্মেলন কক্ষ প্রকম্পিত করে তোলেন।